somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পথে দেখা ৩ শিক্ষকের গল্প

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১০:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রাব্বি, রাজু আর রিফাত।বয়স ১০ ছাড়িয়েছে মাত্র। কুলির কাজ করে বরিশাল টার্মিনাল এ।গতকাল সন্ধ্যায় যখন সারাদিন নানান ধরনের ভ্রমণ করে পুরো ক্লান্ত বিধ্বস্থ ঠিক তখনি ওদের সাথে দেখা।দুষ্টুমি করছিলো রকেট ঘাটে বসে।আমি একজনকে ডাক দিলাম ব্যাথা করা পা দুটো চেপে দিতে।৩ জনই দৌড়ে এলো।তারপর দুজন দু হাত একজন পা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরলো।আমি একটা বেঞ্চিতে বসে চোখ বন্ধ করে ওদের সাথে আলাপ শুরু করলাম এবং বিষ্ময়করভাবে আবিষ্কার করলাম যে আমি অনেক ব্যাপারে এদের চেয়ে অনেক অজ্ঞ । ওদের সাথে ১ ঘন্টা কথা বলে আমি যা জানলাম :

দেশের জনগন : বাংলাদেশের সবচে কিপটে হলো নাকি নরসিংদির লোকজন।তারা ভিক্ষাতো দেয়ইনা বরং লাথি দেয়।আর কোরবানির মাংশ ওদের ভাষায় : নিজেরা জবা দেয় গরু, নিজেরাই খায়।
সবচে ভালো লালমনিরহাটের লোকজন।একেক জন প্রায় ১০০ গ্রাম কোরবানীর মাংশ দেয় ওদের।

কোরবানীর মাংশ : প্রতি কোরবানী ওরা এভারেজ জনপ্রতি ৪-৫ কেজি মাংশ পায়।আধা কেজি রেখে বাকীগুলো বিক্রি করে ২২০ টাকা কেজি দর।আর আধা কেজি কোন বস্তির কাউকে দিয়ে রান্না করিয়ে সবাই ভাগ করে খায়।

ভিক্ষার ভালো জায়গা : সবচে ভালো হলো ঢাকার হাইকোর্ট এর মাজার।ঈদ এর দিন সকালের এক সেশনে ১৮০-২০০ টাকা পায় একেকজন।এরপরই লেংটা পীরের মাজার।সেখানে অন্তত ১৫০ টাকা পাওয়া যায়।

যানবাহন : ওদের কাছে সারা বাংলাদেশ ঘুরে বেড়ানো কোন ব্যাপরই না।বাস, ট্রাক, ট্রেন, লঞ্চ-উঠে গেলেই হলো, কোন ভাড়া দিতে হয়না।ওদের আফসোস এয়ার পোর্ট এর গেটে আটকে দেয়।কোন মতে গেট পার হয়ে প্লেন এ উঠতে পারলেই নাকি প্লেন এ কোন ভাড়া লাগতো না।

শিক্ষা : ওদের ৩ জনের কাছে শিক্ষাটা একটা খেয়াল। ইচ্ছে হলেই ওরা চলে যায় চট্টগ্রামের অপারাজেয় বাংলাদেশ ইমারজেন্সি নাইস সেন্টার (এভাবেই ওরা বলেছে নামটা)।এখানে নাকি সকাল ৯ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত পড়াশুনা করলে ২ বেলা খাওয়া আর বিকেলে খেলাধুলা ফ্রি। মাস খানেক পর আবার পলায়ন।মোবাইল নম্বর, নিজের নাম এসব ইংরেজীতে লিখতে পারে।

অর্থ অনর্থের মূল নয় : সবচে আশ্চর্যের বিসয় ওদের আর্থিক ব্যবস্থাপনা।ওরা সারাদিন যে যাই কামাই করুক সব একসাথে রাখে। কেউ কামায় ৪০ টাকা কেউ ৯৫ টাকা কেউবা ১০ টাকা। সব টাকা একসাথে করে খাওয়া দাওয়া করে।সব খরচ শেষে দিন শেষে যা বাচে তা ৩ জনে ভাগ করে আবার পরদিন নুতন দিন শুরু করে। কোন কারনে কেউ কোন টাকা না কামাতে পারলেও সমস্য নেই। ওদের ভাষায়- ও টেকা না পাইলে ওর দোষ কি?

মা, মাগো : রাব্বি শরীরে ব্লেড এর অনেকগুলো কাটা দাগ।জানতে চাইলে বললো- মার কথা মনে হইলে নিজের শইল নিজে কাডি। ওর মা মারা গেছে ছোটবেলায়। মার কথা মনে হলেই খব কষ্ট হয় আর কষ্ট ভুলতে ব্লেড চালায় শরীরে। তবে আমাকে কথা দিয়ে আর কোনদিন শরীর পোচ দেবেনা।

আমি পুরো তন্ময় হয়ে ওদের কথাগুলো শুনলাম আর ওদের আর্থিক বিষয়টা নিয় ভাবলাম।অনেক শিক্ষিত মানুষও এমন ব্যবস্থাপনায় বেশীদিন টিকতে পারবেন না কিন্তু ওরা টিকে আছে ৩-৪ বছর ধরে এই পন্থায়।

কোরবানীর দিন আমার এ ৩ শিক্ষককে মাংশ নিতে দাওয়াত দিয়েছি কাজীপাড়া আসতে।ওরা এসে ফোন দেবে আমি পিক করে নেব বাস ষ্ট্যন্ড থেকে।

দেখা যাক ওরা আসে কিনা।প
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×