![]()
রাব্বি, রাজু আর রিফাত।বয়স ১০ ছাড়িয়েছে মাত্র। কুলির কাজ করে বরিশাল টার্মিনাল এ।গতকাল সন্ধ্যায় যখন সারাদিন নানান ধরনের ভ্রমণ করে পুরো ক্লান্ত বিধ্বস্থ ঠিক তখনি ওদের সাথে দেখা।দুষ্টুমি করছিলো রকেট ঘাটে বসে।আমি একজনকে ডাক দিলাম ব্যাথা করা পা দুটো চেপে দিতে।৩ জনই দৌড়ে এলো।তারপর দুজন দু হাত একজন পা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরলো।আমি একটা বেঞ্চিতে বসে চোখ বন্ধ করে ওদের সাথে আলাপ শুরু করলাম এবং বিষ্ময়করভাবে আবিষ্কার করলাম যে আমি অনেক ব্যাপারে এদের চেয়ে অনেক অজ্ঞ । ওদের সাথে ১ ঘন্টা কথা বলে আমি যা জানলাম :
দেশের জনগন : বাংলাদেশের সবচে কিপটে হলো নাকি নরসিংদির লোকজন।তারা ভিক্ষাতো দেয়ইনা বরং লাথি দেয়।আর কোরবানির মাংশ ওদের ভাষায় : নিজেরা জবা দেয় গরু, নিজেরাই খায়।
সবচে ভালো লালমনিরহাটের লোকজন।একেক জন প্রায় ১০০ গ্রাম কোরবানীর মাংশ দেয় ওদের।
কোরবানীর মাংশ : প্রতি কোরবানী ওরা এভারেজ জনপ্রতি ৪-৫ কেজি মাংশ পায়।আধা কেজি রেখে বাকীগুলো বিক্রি করে ২২০ টাকা কেজি দর।আর আধা কেজি কোন বস্তির কাউকে দিয়ে রান্না করিয়ে সবাই ভাগ করে খায়।
ভিক্ষার ভালো জায়গা : সবচে ভালো হলো ঢাকার হাইকোর্ট এর মাজার।ঈদ এর দিন সকালের এক সেশনে ১৮০-২০০ টাকা পায় একেকজন।এরপরই লেংটা পীরের মাজার।সেখানে অন্তত ১৫০ টাকা পাওয়া যায়।
যানবাহন : ওদের কাছে সারা বাংলাদেশ ঘুরে বেড়ানো কোন ব্যাপরই না।বাস, ট্রাক, ট্রেন, লঞ্চ-উঠে গেলেই হলো, কোন ভাড়া দিতে হয়না।ওদের আফসোস এয়ার পোর্ট এর গেটে আটকে দেয়।কোন মতে গেট পার হয়ে প্লেন এ উঠতে পারলেই নাকি প্লেন এ কোন ভাড়া লাগতো না।
শিক্ষা : ওদের ৩ জনের কাছে শিক্ষাটা একটা খেয়াল। ইচ্ছে হলেই ওরা চলে যায় চট্টগ্রামের অপারাজেয় বাংলাদেশ ইমারজেন্সি নাইস সেন্টার (এভাবেই ওরা বলেছে নামটা)।এখানে নাকি সকাল ৯ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত পড়াশুনা করলে ২ বেলা খাওয়া আর বিকেলে খেলাধুলা ফ্রি। মাস খানেক পর আবার পলায়ন।মোবাইল নম্বর, নিজের নাম এসব ইংরেজীতে লিখতে পারে।
অর্থ অনর্থের মূল নয় : সবচে আশ্চর্যের বিসয় ওদের আর্থিক ব্যবস্থাপনা।ওরা সারাদিন যে যাই কামাই করুক সব একসাথে রাখে। কেউ কামায় ৪০ টাকা কেউ ৯৫ টাকা কেউবা ১০ টাকা। সব টাকা একসাথে করে খাওয়া দাওয়া করে।সব খরচ শেষে দিন শেষে যা বাচে তা ৩ জনে ভাগ করে আবার পরদিন নুতন দিন শুরু করে। কোন কারনে কেউ কোন টাকা না কামাতে পারলেও সমস্য নেই। ওদের ভাষায়- ও টেকা না পাইলে ওর দোষ কি?
মা, মাগো : রাব্বি শরীরে ব্লেড এর অনেকগুলো কাটা দাগ।জানতে চাইলে বললো- মার কথা মনে হইলে নিজের শইল নিজে কাডি। ওর মা মারা গেছে ছোটবেলায়। মার কথা মনে হলেই খব কষ্ট হয় আর কষ্ট ভুলতে ব্লেড চালায় শরীরে। তবে আমাকে কথা দিয়ে আর কোনদিন শরীর পোচ দেবেনা।
আমি পুরো তন্ময় হয়ে ওদের কথাগুলো শুনলাম আর ওদের আর্থিক বিষয়টা নিয় ভাবলাম।অনেক শিক্ষিত মানুষও এমন ব্যবস্থাপনায় বেশীদিন টিকতে পারবেন না কিন্তু ওরা টিকে আছে ৩-৪ বছর ধরে এই পন্থায়।
কোরবানীর দিন আমার এ ৩ শিক্ষককে মাংশ নিতে দাওয়াত দিয়েছি কাজীপাড়া আসতে।ওরা এসে ফোন দেবে আমি পিক করে নেব বাস ষ্ট্যন্ড থেকে।
দেখা যাক ওরা আসে কিনা।প

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




