somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

A BEHAVIORAL RESEARCH ON Homo sapiens: CHAPTER - POKE

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.
যায়গাটা অনেক রোমান্টিক, তাইনা শিশু?
ফতুল্লা রেলস্টেশনের উত্তর দিকে বিশাল দীঘীর পাড়ে এক প্রেমিক পুরুষকে পাশে নিয়ে রেললাইনে বসে আছি। মাঝে মধ্যে মনে হয়, লাইলি-মজনুর মজনু যেন কবর থেকে উঠে এসে দিব্যি বসবাস করছে। তবে আমি শিওর, মজনু নিশ্চয়ই এতটা সুদর্শন ছিলনা। এই প্রেমিক পুরুষ শিশি তার প্রেমিকা তানজিনা ছাড়া আর কিছু বুঝেনা। দিনে চব্বিশ ঘন্টা, সপ্তাহে সাত দিন তার চিন্তাই মাথায় লাটিমের মত ঘোরে।
আমি বললাম, হ্যা, রোমান্টিক।
তান কে নিয়ে যদি এখানে নৌকা ভ্রমণ করতে পারতাম! কি মজাই না হত।
তান-টা আবার কে?
ও, তোমাকে তো বলাই হয় নি- তানজিনার নামটা ছোট করে তান করে দিয়েছি। এত বড় নামে সবসময় ডাকা যায়?
আমরা খুব ছোটবেলা থেকে বন্ধু। কিন্তু একজন আরেকজনকে তুমি করে ডাকি। ওর নাম আসলে শিশির। আমি আমার নামের সাথে মিলিয়ে ছোট করে দিয়েছি। র-বাদ দিয়ে খালি শিশি। শিশু-শিশি। ওর সাথে আমার আচার ব্যবহারেও কিছু মিল আছে। যার মধ্যে অন্যতম হল আমাদের দুজনেরই বন্ধু কম। ছোটবেলা থেকেই আমরা মানুষজনের সাথে মেশি কম। স্কুলে একারনেই আমাদের নাম হয়ে গিয়েছিল ‘মেউঙ্গা।’ আমি মেউঙ্গা-১, আর ও মেউঙ্গা-২। যদিও মেউঙ্গা শব্দের অর্থ বাংলা একাডেমি বা সংসদ কোন ডিকশনারিতেই পাইনি।
আমি বললাম, আরও একটু ছোট করলে ডাকতে আরও সুবিধা হত। আ-কার আর ন-টা বাদ দিয়ে শুধু ‘ত’। সহজে উচ্চারণ করা
খারাপ না। দেখি চিন্তা-ভাবনা করে। আচ্ছা, তোমাকে তো বলাই হয়নি তান কে নিয়ে আমি একটা কবিতা লিখেছি। শুনবে?
শোনাও।



তান
তোমার জন্য কাঁটতে পারি আমার কান
সেই কান দিয়ে তোমায় বানিয়ে দিব
বানারসি পান।

আমি বললাম, চমৎকার কবিতা তো! প্রেমের জন্য নিজের কান উৎসর্গ করা। কি মহান প্রেম। তান কে শুনিয়েছো এই কবিতা?
হ্যা শুনিয়েছি। কিন্তু কবিতাটা শেষ হতে না হতেই ও ‘রাবিশ’ বলে ফোন রেখে দিয়েছে। এখানে রাগ করার কি হল বল তুমি? কোন এক বিখ্যাত লোক যেন তার প্রেমিকার জন্য নিজের কান কেঁটে উৎসর্গ করেছিল, নামটা মনে করতে পারছি না।
কি জানি? মেয়েদের মনতো বোঝা কঠিন। আচ্ছা শিশি, আমার ভার্সিটি তো গতকাল বন্ধ হল। তোমার তো আরো আগেই বন্ধ হয়েছে। ঈদ পর্যন্ত তো তেমন কিছুই করার নেই। ফ্রি সময়ে কিছু একটা করা দরকার আমাদের। কি বল তুমি।
কি আর করব? তানের সাথেও তো সেভাবে যোগাযোগ করতে পারছি না। ওর দাদু এসেছে ওদের বাসায় বেড়াতে। ঈদ করে তারপরে যাবে। সে ওকে সবসময় চোখে চোখে রাখছে। আমার ব্যাপারটা মনে হয় আন্দাজ করতে পারছে। বাইরেও বেরোতে দিচ্ছে না। ওর সাথে ঘোরাঘুরি করতে পারলেও বন্ধটা কাজে লাগান যেত। কিন্তু দাদু বসের কাছে মনে হয় হেরে যাচ্ছি। তা, তুমি কি করতে চাচ্ছ, শিশু?
আমি বললাম, সেটাই তো চিন্তার বিষয়। রোজার মধ্যে তো সময়ই কাটে না। বিকেল না হতেই মনে হয় রোজায় ধরেছে। কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকলে ভাল হত।
শিশি বলল, চল তেলাপোকা দেখি।
কি দেখবে?
তেলাপোকা। আমাদের বাসায় প্রতিরাতে কমপক্ষে সত্তর হাজার তেলাপোকা ওড়াওড়ি করে। মাঝেমধ্যে আমার মশাড়ির মধ্যে ঢুকে বসে থাকে। গান শুনায়। তুমি কি জান যে তেলাপোকা গান গায়? চল আমরা কয়েকদিন তেলাপোকা পর্যবেক্ষণ করে ওদের আচরন সম্পর্কিত একটা রিপোর্ট বানাই। তারপর সে রিপোর্ট ইউরোপের বড় কোন সায়েন্টিফিক জার্নালে পাঠিয়ে দিব। কি বল শিশু?
ওয়াক থু! তেলাপোকা আমি দু চোখে দেখতে পারিনা। কলেজে বায়োলজি ল্যাবে এই তেলাপোকার কারনে মিজান স্যার আমাকে ‘শুয়োর’ বলেছে। তখন থেকে তেলাপোকা আমার শত্রু।জনম জনমের শত্রু। তেলাপোকা বাদ। চল আমরা এরচেয়ে মানুষ দেখি। ডেভিড জে শ্বার্টজ তার একটা বইয়ে বলেছেন সে তার মায়ের সাথে বসে বসে মানুষ দেখতেন। আমরাও মানুষ দেখে মানুষের আচরন সম্পর্কিত একটা রিপোর্ট বানিয়ে ফেলি।
শিশি বলল, সেটাই মনে হয় ভাল হবে। আচ্ছা, মানুষ দেখবে কিভাবে? শ্বার্টজ সাহেবের মত বসে বসে দেখলে তো কোন রিপোর্ট তৈরি করা যাবেনা। মানুষ তো আর আমাদের সামনে এসে এসে তাদের বৈশিষ্ট দেখিয়ে যাবে না। মানুষের হাটা-চলা দেখে কোন রিপোর্ট বানানো কি আর সম্ভব? তার চেয়ে এক কাজ করি চল।
কি কাজ?
মানুষের একটা নির্দিষ্ট আচরন নিয়ে থিসিসটা করি। মানুষের সাথে একটা নির্দিষ্ট আচরন করলে সে তার পরিপ্রেক্ষিতে কি আচরন করে তা নিয়ে গবেষনা করি। ধর, আমরা অনেকগুলো মানুষকে একই যায়গায়, একই রকম জোরো চিমটি দেব, তারপর তাদের প্রতিক্রিয়া রেকর্ড করব। না, চিমটি না, চিমটি দিলে ব্যাথা পাবে। আমরা গুতা দিব। একজন গুতা দিব, আরেকজন ডায়রিতে লিখে রাখব আচরন। প্রয়োজনে ছবিও তুলে রাখব।
আমি বললাম, গ্রেট আইডিয়া। তাহলে চল কাল থেকেই শুরু করি।
আচ্ছা তা করলাম। কিন্তু এ থিসিথের একটা নাম তো দেয়া দরকার। তোমার মাথায় কিছু আসছে?
উমম দাড়াও একটু ভাবি। আচ্ছা, A BEHAVIORAL RESEARCH ON Homo sapiens: CHAPTER - POKE নামটা কেমন?
শিশি বলল, একটু ভারিক্কি ভাব আছে, তবে খারাপ না। আচ্ছা, আমাদের রিসার্চটা কোথায় চালাব? তান দের বাসার আশেপাশে করলে ভাল হত না?
আমি কঠিন গলায় বলার চেষ্টা করলাম, না, ওখানে গলির মধ্যে এত মানুষ কোথায় পাব? তারচেয়ে চল কমলাপুর স্টেশনে করি। ওখানে ঘরমুখো হাজার হাজার মানুষ পাওয়া যাবে। খুব সহজেই করা যাবে।
শিশি বলল, হুম, তা-ই ভাল। আচ্ছা, আমাদের তো অনেক কিছু লাগবে এটা করতে। ডায়রি, কলম। আচ্ছা, খোঁচাটা হাত দিয়ে না দিয়ে অন্য কিছু দিয়ে দিলে ভাল হয়না? হাতে তো ঝঃধঢ়যুষড়পড়পপঁং ব্যাকটেরিয়া থাকা অস্বাভাবিক না। থিসিস করতে গিয়ে মানুষের শরীরে ব্যাকটেরিয়া ছড়ানো কোন কাজের কথা না।
হুম, গুড পয়েন্ট। আমরা অ্যালুমিনিয়ামের একটা গোলমাথা স্টিক কিনব। একজনকে গুতা মারার পরে একবার করে সেটা স্টেরিলাইজ করতে হবে। বলাতো যায়না, কে কোন মাইক্রোঅর্গানিজম নিয়ে ঘুরছে! আচ্ছা, তাহলে স্টেরিলাইজ করার জন্য এসিড আর একটা লাইটারও কিনতে হবে।
শিশি বলল, তাহলে তো আমাদের অনেক কাজ। কাল সকাল থেকে আমাদের দম ফেলার সময় নেই। চল এখনি কিনে নিয়ে আসি।
আমি উঠে হাঁটতে হাঁটতে বললাম, আমার তো অনেক উত্তেজিত লাগছে। এরকম একটা থিসিস পাবলিশ করা থাকলে বাইরের ভার্সিটিগুলো আমাদের পিএইচডি করতে ডেকে নিয়ে যাবে।
আমরা দুটো ডায়রি, দুটো কলম, দুটো পেন্সিল, দুটো ছোট ছোট ফ্লাক্স (চা খেতে, তখন রোজার কথা মনে ছিলনা), ০.৫ মোলার হাইড্রোক্লোরিক এসিড, একটা লাইটার কিনলাম। অ্যালুমিনিয়ামের স্টিক পেলাম না। স্টেইনলেস স্টিলের দুটো গোলমাথা পাইপ কিনলাম। দোকানদার পাইপ দিতে না চাইলেও, সে যে দাম চেয়েছে তাতে আমরা কোন দরদাম না করায় আমাদের দিলেন।
বাড়ি যাওয়ার পথে আমি বললাম, তাহলে আমাদের মিশন কিন্তু শুরু কাল সকাল থেকে। অনেক পরিশ্রম করতে হবে।
অবশ্যই শিশু, এরকম একটা কাজ অবশ্যই নিষ্ঠার সাথে করতে হবে।








২.
যায়গাটা অনেক রোমান্টিক, তাইনা শিশু?
ঐ দিনের পরে আজকেই শিশির সাথে প্রথম দেখা। আজ ঈদ। ঈদের নামাজ পরে শিশিকে দেখলাম। ওর সাথে কোলাকুলি করে আবার আমরা এখানে এসে দীঘীর দিকে মুখ করে রেললাইনে বসে আছি।
আমি দুই লাইনের মধ্যে শুয়ে পড়তে পড়তে বললাম, হ্যা শিশি, রোমান্টিক। তোমার সাথে আমার শেষ যে দিন দেখা হল তার পর থেকে আমার ঘুম কি বেড়েছে জানো? আমি প্রতিদিন প্রায় পনের ঘন্টা করে ঘুমুচ্ছি। এখন এটা প্রায় অভ্যেস হয়ে গিয়েছে। এখন আমার প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে। তুমি বসে থাক, আমি ঘুমাই।
শিশি আমার পাশে শুতে শুতে বলল, তোমার সাথে আমার আসলেই খুব মিল। আমিও ঐ দিনের পর থেকে প্রতিদিন চোদ্দ ঘন্টা ঘুমাই আর একঘন্টা বিছানায় শুয়ে ত কে ফোনে ট্রাই করি। ফোন ধরেনা। দাদু বস সম্ভবত ওর ফোন কেড়ে নিয়েছে। আমি আসলেই দাদু বসের কাছে হেরে গিয়েছি। আমারও এখন অনেক ঘুম পাচ্ছে।
ঘুমে আমার চোখের পাতা ভারি হয়ে আসছে।
শিশি ঘুমধরা গলায় বলল, ঈদের দিন এ রুটে ট্রেন চলে না। সব ট্রেন কমলাপুরে ঘুমুচ্ছে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×