মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী সম্পর্কে আমরা সবাই কমবেশী অবগত। গত বুধবার তার ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়। তার ব্যক্তিগত জীবনি জানে না এমন লোক খোঁজা দুস্কর। তিনি হলেন আওয়ামী মুসলীম লীগের জন্মদাতা। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের মহানায়ক। তিনি আজীবন ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। ফারাক্কা বাধের মাধ্যমে বাংলাদেশকে মরুকরণের যে চক্রান্ত ছিল তার বিরুদ্ধে তিনি রুখে দাড়ান। বিভিন্ন সময় সরকারের গণবিরোধী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে জনতার পক্ষে সরব থেকে এ দেশের জনগনের কাছে ভাসানী এক অবিসংবাদী নেতা হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। কৃষক, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের পক্ষে আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ছিল বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর। এতো গেল ভাসানী সম্পর্কে সকলের নিকট অবগত করার ব্যর্থ চেষ্টা। দেশের মানুষের প্রতি তার ছিল অগাধ ভালবাসা তার পরিপ্রেক্ষিতেই তিনি দেশ ও দেশের মানুষের জন্য এতো কিছু করে গেলেন।
তিনি ভারত এবং বাংলাদেশে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন। তিনি ছিলেন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, মুসলিম মনীষী এবং দানবীর। সবচেয়ে বড় কথা তিনি নিজের নামে কোন প্রতিষ্ঠানই গড়েননি।
১৯৯৯ সালের ১২ই অক্টোবর তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্তোষে মওলানা ভসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় উদ্বোধন করেন। তখন তিনি বলেন, আমরা মওলানা ভাসানী প্রতিষ্ঠিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে হাতদিতে চাই না। তার পাশে একটি নতুন বিদ্যালয় উদ্বোধন করলাম। অথচ স্থান হিসেবে প্রহন করা হয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাষ্টি বোর্ডের নিজস্ব সম্পত্তি। যে সম্পত্তি গুলো মওলানা ভাসানী প্রতিষ্ঠা করে গেছেন স্কুল কলেজসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যর সাথে তার কাজের কতটুকু মিল ছিল তা সবাই বুঝতে পেরেছেন।
১. রাজধানীর বিজয় সড়নীতে প্রতিষ্ঠিত হয় মওলানা ভাসানী নভোথিয়েটার। যেখানে মহাকাশ সম্পর্কে সকলকে কিছু ধারনা দেওয়া চেষ্টা চলে। কিছু দিন আগে দেখলান ভাসানী নামটি আর নেই। সকলের পরিচিত নতুন একটি নাম এসেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার। ভাসানী কি দেশের জন্য কিছুই করেননি? কেন তার নামটি মুছে গেল? আরোও একটি নভোথিয়েটার কি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে করা যেত না? আরোও একটু অবাক হয়েছি যখন দেখলাম নভোথিয়েটারের ভেতরে টাঙ্গানো মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ছবিটি না দেখে। উচ্ছেদ হয়েছে তার ছবিটিও।
২. উত্তরায় সম্প্রতি মাওলানা ভাসানী মেডিকেল কলেজের নাম বদলে শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল ও হসপিটাল রাখা হয়েছে। গত ১ল জুন গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার বিষয়ক মন্ত্রী আ ফ ম রুহল হক আনুষ্ঠানিকভাবে এই নাম বদলান। ভাসানীর নামটি না মুছে উত্তরা দ্বিতীয় প্রকল্প অথবা তৃতীয় প্রকল্পে শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর নামে একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপন করলে কি তার আত্মা কষ্ট পেত?
যে দেশে পানি, বিদ্যুত, গ্যাস সমস্যা। তিন বেলা পেটপুরে খেতে পারেনা বস্তিবাসিরা, উন্নয়ন হয়নি অনেক কিছুরই। নিম্ন আয়ের দেশ আর সে দেশে ১১শ কোটি টাকা খরচ করে এয়ারপোর্টের নামটি বদলানোটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত। এই টাকা দিয়ে আরোও একটি নতুন এয়ারপোর্ট স্থাপন করতে কি সহজ হত না? তবে কেন এই নাম বদলানোর হিড়িক? নতুন স্থাপন করে মনের মত নাম দিতেই তো কারোও বাধা নেই। তবে কেন এই নাম বদলানোর আতঙ্ক? কবে এই দেশের মানুষের মূল্যবোধের পরিবর্তন আসবে?
আপেক্ষায় আছি সেই পরিবর্তনের.....

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





