গত একঘন্টা ধরে বসে আছি, অথচ আহির এর খোজ নাই। বান্দরনী যে কি করতেছে আল্লাহ মালুম।
আমি এখন বসে আছি বনানী ১১ নাম্বার এর মাথার মুজিবার এর চা এর দোকানে। চার কাপ চা আর দুইটা বেনসন শেষ কিন্তু নবাবজাদীর টিকিটার ও দেখা নাই। আজ আসুক হারামীটা ওরে……
“মামী আসতে আজ এত দেরি করতাছে কেন, মামা” মুজিবার এর কথায় ফিরে চাইলাম….
“মাইয়া জাতটাই খারাপ” মুজিবার আবার বলল।
“তয় মামী ভালই, খারাপ না”
মুজিবার এর কথায় লাগাম দেয়া দরকার। এই লো্ক কথা বলা শুরু করলে থামান যায়না।
“হইসে থাম মামা, মামী জানলে তোমার কপালে খারাবি আছে। এখন আরেকটা বেনসন দাও” - আহির মামী ডাক পছন্দ করে না।আমার অবশ্য্ ভালই লাগে।
আহির আর আমি শুধু ভাল বন্ধুই, আর কিছু নই- আহির তাই বলে। আমিও উপর নিচে মাথা নাড়াই। কেন যে আমি এই আড়াই ফুট একটা মেয়েকে এত ভয় পাই কে জানে। আমি আর আহির এক সাথে আছি অনেকদিন, পাচ বছর ত হবেই। একটা মানুষ কে জানার জন্য সময়টা অনেক মনে হলেও আমার প্রায় মনে হয় আমি যেন ওকে এখনো বুঝে উঠতে পারি নাই।
মাঝে মাঝে আমার খুব অচেনা লাগে আহির কে, মনে হয় যেন একটা বই হাতে নিয়ে বসে আছি যার একটা পাতাও আমি পরিনি।
মনে পড়ে একবার হুট করে কল দিয়ে বলল, “আমাকে আর কল দিবি না, আমার সাথে আর কখনো কথা বলবিনা”। বলেই লাইনটা কেটে দিল। আমি তখন কি করব বুঝতে না পেরে বসে আছি। সেদিন রাতেই আবার কল দিল আহির, ফোনটা ধরেই বুঝলাম ও কাদছে। কিন্তু কি কারণে কাদছে তা বলেনা। আমিও আর আগ্রহ দেখাই নি। কি লাভ?
বন্ধু ভাগ্য আমার খুব ভাল ছিল না। কিন্তু আহির এর বেলায় ঠিক এর বিপরীত। ওর অনেক বন্ধু ছিল, তাদের সাথে ও অনেক কথা বলত, চলত। মাঝে মাঝে খুব খারাপ লাগত সত্যি কিন্তু ও ত আর আমার নয়।
পকেটে রাখা মোবাইল টা ঝাকুনি দিতেই বাস্তবে ফিরে আসলাম। আহির এর কল।
আহির আর আমি বসে আছি গুলশান লেকে। কথার ফাকে আহির জানাল তার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। জিজ্ঞাস করলাম, “তোর ইচ্ছা কি”?
“ছেলে ডাক্তার, আর দেখতেও ভাল। আমার সাথে কিছুদিন কথাও হয়েছে, ভালই ত মনে হচ্ছে”।
এমন উত্তর আমি আশা করি নাই। “ছেলে ডাক্তার আর আমি কি রিকশা চালাই? আমার চেহারা কি দিলদার এর মত? তার সাথে এত কথা বলতে ভাল লাগে তো তারে নিয়া ঘুরতে থাক। আমায় আর কল দিবি না। ওই কশাই এর কোলে বসে নাচতে থাক, এইখানে কি করিস? ফ্রেন্ডশিপ এর গুষ্টি কিলাই”। বলেই আমি উঠে হাটা দিলাম। পিছন ফিরে একবার দেখার ও দরকার মনে হল না। কি লাভ?
রিকশায় বসে যাওয়ার সময় কেন যেন চোখ দুটো বার বার ভিজে যাচ্ছিলো। বার বার শুধু মনে হচ্ছিল, ইস আরো আগে যদি ভালবাসি কথাটা বলতাম।
এর পরের কয়েকদিন যে কিভাবে কাটল বুঝাতে পারবনা। অফিস এ আসি কিন্তু সারাদিন এ একটা কাজ ও করতে পারি না। দুইদিন পর টানা ১০ দিন এর ছুটি নিয়ে রাঙ্গামাটি চলে আসলাম। আমি আমার সিম গুলো পানিতে ফেলে দিয়ে কাপ্তাই লেকে চলা নৌকা দেখি, ভোরের আলোয় আমার ঘুমহীন রাতের মৃত্যু দেখি। আমি সারাদিন পাহাড় আর লেকে ঘুড়ে বেরাই, রাস্তায় যা পাই তাই খাই। নিজের অনুভুতিগুলোর উপর যেন কোন নিয়ন্ত্রন নেই। সন্ধ্যা নেমে আসলে আমার ভয় হয়। রাতগুলো এত বড় যেন এর শেষ নেই।
দিন ছয়েক পর যখন ঢাকা ফিরলাম, তখন আমার মাঝে যেন এক অন্য আমি। আমায় দেখে আমার ফ্লাটমেট এবং একমাত্র বন্ধু প্রায় বেহুস হয় হয় ভাব। বন্ধুকে শান্ত করে ফ্রেশ হয়ে আসলাম।
“আহির তর খোজে দুইদিন বাসায় আসছিল। কি হইসে? মাইয়া দেখি কাইন্দা কাইট্যা শ্যাষ”।
কথাটা শুনেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেল, “আজাইরা পেচাল বাদ দে, ত্যানা পেচাইস না”।
অনেকদিন ধরে ঘুমাতে পারি না। আজ কেন যেন মনে হল, ঘুমাতে পারব। বিছানায় যেতেই ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসল। ঘুমের মাঝে অনেক সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখছি। আমার মাথায় আহির হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। চোখ মেলে দেখি আহির আমার মাথার কাছে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর গরুর মত কাদতেছে। ওর চোখের পানি আমার মুখে এসে পরছে ফোটায় ফোটায়। বাহ স্বপ্নটাতো ভালই, আমি ওর চোখ মুছে দিতে যেইনা হাতটা বাড়িয়েছি, সাথে সাথে আমার মুখে কঠিন একটা থাপ্পর পড়ল। আমার ঘুম ভেঙ্গে গিয়ে অবাক চোখে আহির কে দেখছি আর ভাবছি, আমি কি স্বপ্ন দেখছি- না পাগল হয়ে গেছি?
আমি আহির এর দিকে চোখ বড় বড় করে বললাম, “তুই এইখানে কি করিস? আমি বাসায় কেমনে জানলি? তোর ডাক্তার কই? বিয়ের দাওয়াত দিতে আসছিস?”
আহির কাদতে কাদতে বলতে থাকে, “ তুই আমার সাথে এমন করলি কেন? কই গেছিলি আমায় একলা রেখে? এই কয়টা দিন আমার কেমন গেছে জানিস? তুই জানিস আমি তোরে কই কই খুজসি? তুই… তুই….” আর কথা বলতে পারে না, গলা ধরে আসে ওর।
আমার কেন জানি খুব কস্ট হতে থাকে, আস্তে করে আমার পাগলীটার কাধে হাত রাখি। পাগলীটা হঠা্ৎ করে আমার বুকে ঝাপিয়ে পরে ফোপাতে থাকে। আমার টি-শাট এর বামপাশটা নোনা জলে ভিজে ওঠে।
।
।
জানিনা কেন যেন আমার চোখ দুটোও জলে ভিজে উঠছে…।
[ জানি একটা অখাদ্য পোষ্ট দিয়েছি, মাফ করে দিবেন। আর আমার বাংলা বানানের অবস্থা খুবই খারাপ, আবারও ক্ষমাপ্রার্থী। ]
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০১৩ রাত ৯:০৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




