somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যুদ্ধাপরাধঃ ‘বিচার’ আর ‘শাস্তি’ এক জিনিস নয়

২২ শে নভেম্বর, ২০১১ রাত ৮:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এ কথা অবশ্যই সত্য যে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বর্তমানে একটি জাতীয় ইস্যূতে পরিণত হয়েছে। আন্তর্জাতিক ইস্যূ বললেও ভুল হবে না। সারা বাংলার গ্রামে-গঞ্জে, শহরে-নগরে, হাটে-মাঠে-ঘাটে আজ শুধু একই কথা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই, বিচার চাই, বিচার চাই। যে যাই বলুক, জামায়াত এবং বিএনপি’র এই নেতাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসছে, তার একটি বিহিত হওয়া উচিত। এতে করে দেশও কলংকমুক্ত হল আর আওয়ামীলীগেরও দুই একটা ইস্যূ কমলো। এক ঢিলে দুই পাখি, মন্দ কি? তবে ঢিল ছুড়লেই যে পাখি মরে না, তা বোধ করি এই মুহূর্তে আওয়ামীলীগের চেয়ে উত্তম উদাহরণ আর নেই। কারণ দুটো পাখি দুরের কথা, এখন তো একটা মারতেই মাথার ঘাম পা গড়িয়ে মাটিতে মিশে গেছে।

যাই হোক মূল কথা হল, যত সহজে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আওয়ামীলীগ আর পাবলিক ভেবেছিল, তা বুঝি আর এত সহজে হল না। তিন বছর শেষ, কেবল সাঈদির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়ে বিচার শুরু হবে হবে ভাব। এখন ভাবি, আগামী নির্বাচনে আওয়ামীলীগাররা কোন মিথ্যাচার করে ভোট চাবে। আবার ভাবি, এত চিন্তার কি আছে? এদের পক্ষেতো কোন কিছুই অসম্ভব না।

মজার বিষয় হল, অনেককে দেখেছি যারা ইতোমধ্যেই ‘বিচার’ আর ‘শাস্তি’ এই দুটো জিনিসকে গুলিয়ে ফেলেছেন। বিশেষত কিছু শিক্ষিত আর সমাজ সচেতন ব্লগার। যারা নাকি ব্লগে লেখালেখি আর মতামত প্রকাশ বাদ দিয়ে, ব্লগ থেকে ছাগু তাড়াতেই ব্যস্ত। যাই হোক যার যা কাজ! ;)

ইতিহাস বলে, বিচার আর শাস্তি দুটো ভিন্ন জিনিস। কারণ বিচার করলেই যে শাস্তি পেতে হবে এমন কোন নিশ্চয়তা নেই। যার সবচেয়ে ভালো উদাহরণ হতে পারে, ৯০’এর জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গন আদালত। অনেক চেষ্টা করেছেন কিন্তু পারেননি। গোলাম আযমের নাগরিকত্ব বাতিল করতে চেয়েছেন কিন্তু পারেননি। সেই গোলাম আযম এখনও বাংলার মাটিতে আছে কিন্তু জাহানারা ইমাম নেই। অনেক চেষ্টা করেও একটি অভিযোগও প্রমাণ করতে পারে নি। আমার জানামতে, গোলাম আযম ই একমাত্র ব্যক্তি হতে পারে, যার নাগরিকত্ব আইন দ্বারা প্রমাণিত। :((যাই হোক, গোলাম আযমের মত রাজাকারের কথা এত না বলাই ভাল।

যারা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটক রয়েছেন, সেই জামায়াত এবং বিএনপি’র নেতারা যে নির্দোষ, আমি সেই দাবি করছি না। কারণ তা আদালতেই প্রমাণিত হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তি হবে আর না হলে বেকুসুর খালাস। তবে আসামি যে অপরাধেই আটক হোক না কেন অথবা সে যে দলের বা যে আদর্শেরই হোক না কেন, তার যে ন্যূনতম সুবিচার পাওয়ার অধিকার আছে, তা তো সবাই বোঝে। কিন্তু আওয়ামীলীগাররা বোঝে না। এই বিচার প্রক্রিয়া যে অস্বচ্ছ এবং আন্তর্জাতিকমানের নয় তা তো আজ আন্তর্জাতিকভাবেই স্বীকৃত।

আইসিটি’র চেয়ারম্যান নিজামুল হক যে নিরপেক্ষ নন, এটা তো সবাই জানে। ৯০’এর গণ তদন্ত আদালতে তার ভূমিকা আদালতও স্বীকার করেছে। শুধু আইনি সীমাবদ্ধতার দোহাই দিয়ে তিনি সরছেন না। আমি বুঝি না, একজন শিক্ষিত ব্যক্তি হয়ে তিনি এটা কি করে পারেন।

অভিযোগ ব্যতিত কোন আসামীকে এক বছরের বেশি আটক রাখার বিধান আমাদের দেশের আইনে নেই। কিন্তু সেখানে কোন অভিযোগ গঠন না করেই, প্রায় দেড় বছর অনেককে আটকে রাখা হয়েছে। এমন কি জামিনের বিধান থাকা সত্ত্বেও তা সরকারের ইশারায় কার্যকর হচ্ছে না। এতে সরকারের মানবাধিকার লংঘন হয় কি না, আমার বুঝে আসে না।

৭৩’এর আইনেও অনেক ত্রুটি রয়েছে। যা ইতোমধ্যে অনেক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান উল্লেখ্য করেছে। সরকারের এ ব্যাপারে কোন মাথা ব্যাথা নেই।

আমি জানি, এসব অভিযোগ সরকারের কান পর্যন্ত পৌছাবে না। আমি শুধু শেষ দেখার অপেক্ষায় আছি। গতকাল প্রথম আলো পত্রিকায় দেখলাম, সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির দাবি করেছেন, এত সীমিতসংখ্যক আইনজীবি দিয়ে এত বড় মামলা চালানো যাই না। তিনি ট্রাইবুনাল এবং বিচারকের সংখ্যা বাড়ানোরও দাবি জানান। এখন প্রশ্ন হল, সরকার কি এই অবস্থা জানেন না? এই ট্রাইবুনাল আর বিচারক দিয়ে যে বিচার কার্য সম্ভব না, এই দাবি তো আজ নতুন না। সরকারের আইনজীবিদের যে অভিজ্ঞতার ঘাটতি রয়েছে তা তো সরকার ভাল মতোই বুঝতে পারছে। তার পরও কেন সরকার বিদেশী আইনজীবি আনছেন না? সুতরাং আমরা ভালোই বুঝতে পারছি আসল গলদটা কোথায়।

আমি অনেক বুদ্ধিজীবি আর সুশীল সমাজকে বলতে শুনেছি, যুদ্ধাপরাধীদের যে কোন চক্রান্ত যে কোন মূল্যেই নাকি রুখতে হবে। কিন্তু কোন প্রক্রিয়ায় রুখতে চান, তা ঠিক আমি বুঝি না। কিন্তু এটা সকলের মনে রাখা ভাল যে, একজন ব্যক্তি সে যত বড়ই অপরাধী হোক না কেন, তার বিরুদ্ধে সব চক্রান্ত আপনাকে আদালতে এসেই রুখতে হবে। বাইরে থেকে কিছু করতে পারবেন না। পেশী ব্যবহার করলে হিতে বিপরীতও হতে পারে।

শেষে দুই একটি কথায় বলব, সরকারের যদি কলিজা থাকে তাহলে বিদেশ থেকে যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে অভিক্ষ আইনজীবি ভাড়া করুক এবং জামায়াতকেও সুযোগ দিক। এতে করে তো বিচারই স্বচ্ছ হবে। আমি তো দোষের কিছু দেখি না।

আওয়ামীলীগাররা যদি পারে তাহলে প্রকাশ্যে বিচার করুক। দেখি কত সাহস। এতে বিচার আরো সুষ্ঠু হওয়ার কথা। পারলে আবার গণ আদালতে বিচার করুক। দেখি কেমন নৈতিক শক্তি এই অমানুষগুলোর।

আওয়ামীলীগ এত বড় বড় কথা বলে, যদি ক্ষমতা থাকে তাহলে তৃতীয় কোন দেশে আদালত তৈরী করুক। আমি বিশ্বাস করি, যাদের শক্তি হল অস্ত্র আর মিথ্যা, অন্তত তাদের পক্ষে এটা সম্ভব না।

এখন শুধু অপেক্ষার পালা আর একবার ইতিহাস রচনার।
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×