somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কইতে নারি সই :: তানবীরা তালুকদার

২৮ শে জুন, ২০০৮ দুপুর ২:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তানবীরা তালুকদার

কইতে নারি সই


ঘুমের মধ্যে বার বার মাথাটা এপাশ ওপাশ করছে বালিশে , একটা কিসের যেনো ছটফটানী ঘেমে যাচ্ছে সুমনা। তৃষনায় বুকটা শুকিয়ে জিহবা পর্যন্ত আড়ষ্ট হয়ে আছে। কি যেনো একটা স্বপ্ন দেখে যাচ্ছে যা নিজেও ঠিক বুঝতে পারছে না কিন্তু ঘুমের মধ্যেই মনে মনে ওর একটা অনুভূতি হচ্ছে যে সুখকর কোন স্বপ্ন এটা নয়। সারা শরীর শক্ত হয়ে আছে নড়তে চড়তে পারছে না। অস্বস্তিতে ধড়ফড় করতে করতে ঘুম ভেঙ্গে গেলো সুমনার। মুখের মধ্যে একটা ভীষন তেতো স্বাদ, গা টা গুলিয়ে গুলিয়ে উঠছে। এমনিতেই যখন ওর পীযুষের সাথে দেখা করার কথা থাকে টেনশনে কদিন আগে থেকেই ও ঘুমাতে পারে না, খেতে পারে না। অতিরিক্ত আনন্দ থেকে কেমন যেনো ঘোরের মধ্যে চলে যায়, অচেনা একটা ভয় লাগতে থাকে। সারাক্ষন মনে হয় এই বুঝি সবার কাছে ধরা পড়ে গেলো, সবাই যেনো ওকে সন্দেহের চোখে দেখছে। বুঝে ফেলছে কেনো সুমনা এতো চঞ্চল, গোপন খুশীটি এবার ধরা পড়ে যাবে। যদিও সুমনা আনন্দ লুকিয়ে সবার সাথে প্রচন্ড স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে, যেমন রোজ কলেজে যায় তেমন কলেজেই যাচ্ছে আজ ভাবটা ধরে রাখে, আজ কোন বিশেষ দিন নয়, বিশেষ কেউ আসার কথা নয় তার কাছে সেই মুখোভাবটা প্রচন্ড ভাবেই ফুটিয়ে রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু আজকের অনুভূতিটা সেরকম সুখ মাখানো কষ্টানুভুতি নয়। মাথায় প্রচন্ড যন্ত্রনা যেনো মাথার শিরা সব এখুনি ফেটে রক্ত পড়বে। মাথা তুলে বসতে পারছে না এতো ভার লাগছে উপড়ের অংশটাকে। কাতর গলায় আর না পেরে মাকে ডাকল, মা ও মা শুনে যাও, শুনছো?

মা তখন সবে ঘুম থেকে উঠে স্নিগ্ধ ভোরের আমেজ গায়ে মেখে রোজকার সকালের প্রাত্যহিক কাজের তদারকী করছেন। কারো ঘুমের যাতে অসুবিধে না হয় সেজন্য মা প্রায় নিঃশব্দ পায়ে চলাফেলা করলেও তার চলাফেরার একটা মৃদ্যু মিষ্টি আওয়াজ সুমনা ঘুম থেকে রোজই টের পায়। ভোরের দিকে তখন ঘুমটা হালকা হয়ে আসে, সামান্য সে যতো সামান্যই হোক, নড়াচড়া অনুভব করা যায়। কিন্তু ভোরের আলসেমী গায়ে মেখে সুমনা বেশীরভাগ সময়ই শুয়ে থাকে, উঠে না বেলা না চড়লে। এতো ভোরে সুমনার গলা পেয়ে অবাক হয়ে মা সুমনার কাছে এলেন। এসেই আতকে উঠে বললেন কি হয়েছেরে তোর? এমন চোখ - মুখ লাল কেনো? সুমনা বলল, বুঝতে পারছি না তো মা। মা এসে কপালে হাত রাখলেন। প্রায় অস্ফুট স্বরে চিৎকার করে উঠলেন, একি গাতো দেখি জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। কি করে হলো? ক্লান্ত গলায় সুমনা বলল, জানি না। একগ্লাস পানি দাও না, মা বড্ড তেষ্টা পেয়েছে। মা পানি এনে সুমনাকে খাইয়ে আদর করে কপালে হাত বুলিয়ে শুইয়ে দিতে যেয়ে আবার চিৎকার করলেন একিরে কপালে এটা কি? সুমনারও কি রকম একটা অস্বস্তি মতো লাগছিল ব্যাথা ব্যাথা কপালে, কিন্তু এতো আলসেমী লাগছিল যে হাত দিয়ে সেটা ধরে দেখার ইচ্ছেও করছিল না। মা বুঝে গেলেন সুমনার পক্স হয়েছে। বললেন, নাস্তা বানিয়ে দিচ্ছি, খেয়ে শুয়ে থাকো, কোথাও যেতে হবে না কদিন, পড়া, কোচিং সব বন্ধ। বাড়ি থেকে বেরোনো বন্ধ শোনা মাত্র সুমনার ষষ্ঠ ইন্দ্রীয় সজাগ হয়ে উঠল। আজ তাকে যেকোরেই হোক বেরোতেই হবে, তারপর তিন মাস না বেরোলেও চলবে। কিন্তু সে কথাতো আর মাকে বলা যায় না। তাই সে সমানে মাকে বলে যাচ্ছে, এমনিতেই একটু গা টা গরম হয়েছে, জ্বর টর কিছু নয়তো। সে দিব্যি ভালো আছে। মা বেশী ভাবছে ওকে নিয়ে, আজ কোচিং এ স্যার জরুরী কিছু
পড়াবেন, কিছুতেই তা মিস করা যাবে না। কিন্তু মা অভিজ্ঞ চোখে দেখে বললেন, তোর জামাটা ওপরেতোলতো দেখি পেটটা একটু। জামা উপড়ে তুলতেই দেখা গেলো পেটের মধ্যে তিনটে , চারটে




পানিওয়ালা বড় বল হাসি মুখে সুমনার দিকে তাকিয়ে আছে। মা নিশ্চিত করে দিয়ে গেলেন যে পক্সই হয়েছে, নট নড়ন - চড়ন, এই অবস্থায়।

পাড়ার কোচিং এ পড়তে যেয়ে পীযুষের সাথে আলাপ সুমনার। যদিও কথা বলতে তেমন কিছুই হয়নি কখনও তার সাথে, শুধু দূরে থেকেই দুজন দুজনকে দেখেছে। চোখে চোখ রাখার বাইরে আলাপ বেশী দূর এগোয়নি তখনও। কিন্তু একদিন সুমনা অবাক হয়ে লক্ষ্য করল পী্যুষ না আসলে পড়ায় মন বসছে না সুমনার। বার বার দরজার দিকে চোখ চলে যায় এই বুঝি এলো, এই বুঝি এলো। পরে আর থাকতে না পেরে বন্ধুদের জিজ্ঞেসই করে ফেলতো পীযুষ এলো না আজ? পীযুষেরও প্রায় সেরকমই অবস্থা। দু পক্ষের ইচ্ছায় মন দেয়া নেয়া হয়ে গেলো অতি দ্রুত। আস্তে আস্তে পড়া শেষ করে খুব ভালো রেজাল্ট করে পী্যুষ বড় শহরে পড়তে চলে গেলো। আর রক্ষনশীল পরিবারের মেয়ে হওয়ায় ভালো রেজাল্ট সত্বেও সুমনার বাইরে যাওয়া হয়নি পড়তে, এখানেই নিজের শহরে সুমনা রয়ে গেলো। যোগাযোগ বলতে চিঠি আর মাঝে মধ্যে লুকিয়ে ফোন। আগে যেখানে রোজ দেখা হতো সেটা এখন কখন সখনোতে পৌছে গেছে। অথচ সারাদিন সুমনা তার ভাবনাতেই ব্যাকুল থাকে। দিন যায় রাত যায় তার পী্যুষের কথা ভেবে ভেবেই। এমনিতে সময়গুলোকে কি অসহ্য লম্বা লাগতে থাকে সারাবেলা সারাক্ষন, কিন্তু যে একবেলা পীযুষের সাথে সুমনার দেখা হয় সেই সময়টা যেনো হাওয়ার ভর দিয়ে পংঙ্খীরাজ ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে থাকে। চোখের পলক ফেলার আগে, পীযুষের বুকে মাথা গুজে দুদন্ড নিঃশ্বাস নেয়ার আগেই শেষ ঘন্টি বেজে উঠে। সুমনা কতো কি ভেবে রাখে পীযুষ এলে কি বলবে, কোন গল্পটা এখনও ওকে করা হয়নি কিন্তু পীযুষ সামনে এলে ও সব ভুলে যায়। আনন্দে সুমনার মাথাটাই এলোমেলো হয়ে যায়, স্বাভাবিক বুদ্ধিটাও কাজ করে না তখন যেনো।

সেই ভীষন প্রতীক্ষিত সময়ে পক্সের কথা শুনে সুমনা ব্যাকুল হয়ে কাদতে লাগল। সুমনার কান্না দেখে বাড়ির সবাই অবাক। সবাই ভাবছে সুমনা বুঝি পক্সের জন্য কেদে আকুল হচ্ছে। সুমনা গড়পড়তা বাংগালী মেয়েদের তুলনায় বেশ সুন্দরী। সাধারন বাংগালী মেয়েদের থেকে বেশ লম্বা, ছিপছিপে একহারা গড়নের, গোলগাল মিষ্টি পান পাতা মুখের ফর্সা সুমনার সুন্দরী হিসেবে পাড়াময় খ্যাতি আছে। বাড়ির লোকেরা ভাবছে, পক্স হয়েছে, মুখে দাগ পড়বে, সৌন্দর্য নষ্ট হবে সেই দুঃখে বুঝি সুমনা কেদে যাচ্ছে, কিন্তু সুমনা কাউকে কি করে বলে আজ পাক্কা তিনটি মাস পর পীযুষ বাড়ি আসছে, সুমনার সাথে দেখা করতে। সবাই জানে পীযুষ ওর বাবা মায়ের সাথে দেখা করতে বাড়ী আসছে কিন্তু সুমনাতো জানে কার জন্য পীযূষ এতো ঝক্কি নিয়ে বাড়ী আসছে ,তিন তিনটি মাস দেখা হয়নি দুজনার। আবার চলে যেতে হবে তাকে আজ রাতের ট্রেনেই। আজ চলে গেলে আবার কতোদিন দেখা হবে না দুজনার। সবাই স্বান্ত্বনা দিচ্ছে কাদিস না, পক্সের দাগ থাকে না, নখ দিয়ে না খুটলেই চলে যাবে দেখিস কদিনের মধ্যেই। আবার ওকে নিশচিত করার জন্য অব্যর্থ উপকারী সব ওষুধের নাম করছে, ডাবের পানি দিয়ে খুব ধুলেই পক্সের দাগ থাকে না কিংবা বেসন এর উপকারিতা অনেক ইত্যাদি ইত্যাদি। সুমনা না পারছে কইতে , না পারছে সইতে। কাউকে বলতে না পেরে আরো জোরে জোরে কাদতে লাগল, ওদিকে পীযুষযে তার অপেক্ষায় তাদের সেই প্রিয় বড় বড় জারুল গাছের ছায়া দিয়ে ঢাকা জায়গাটাতে , নদীর পাশটাতে উচাটন মন নিয়ে বসে আছে গো ..................।।


তানবীরা তালুকদার
২৬.০৬.০৮
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×