**"অন্ধকার থেকে আলো: নীলার অনন্ত যাত্রা"**
নীলার জীবনে সবকিছু যেন একটার পর একটা ধস নামছিল। বাবার মৃত্যুর পর মা-ই ছিল তার একমাত্র ভরসা। কিন্তু মাস তিনেক আগে ক্যানসারে মা-ও চলে গেলেন। বিধ্বস্ত নীলা নিজেকে আটকে রাখে শীতল একটা ফ্ল্যাটের চার দেয়ালে—বাবা-মায়ের স্মৃতিতে ঠাসা। দিনের পর দিন সে শুধু জানালার পাশে বসে থাকে, নিচের রাস্তায় ছুটে চলা মানুষের দিকে তাকিয়ে। তাদের হাসি, কথা, ব্যস্ততা... সবই যেন তার থেকে হাজার মাইল দূরে।
একদিন বিকেলে ফেসবুকে হঠাৎ একটা মেসেজ আসে অজানা এক আইডি থেকে:
"তোমার প্রোফাইল পিক দেখে মনে হলো, তুমিও আমার মতো একা। যদি কষ্ট পেয়ে থাকো, গল্পটা শেয়ার করতে পারো। —রাহুল"*
নীলা প্রথমে অবাক হয়। তার প্রোফাইলে কোনো স্ট্যাটাস নেই, শুধু একটা ব্ল্যাক-অ্যান্ড-হোয়াইট ডিপিপি। তবুও রাহুল কীভাবে বুঝল সে একা? কৌতূহলে জবাব দিল: *"আপনি কে?"*
রিপ্লাই এল দ্রুত: *"আমি রাহুল। সাইকোলজি পড়ি। মানুষের মুখোশ দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে গেছি। তুমি সত্যি কথা লুকোও না, তাই খুঁজে পেয়েছি।"*
**ভালোবাসা নয়, বন্ধুত্ব**
রাহুলের সাথে কথার সূত্র ধরে নীলার দিনে যোগ হয় নতুন এক রুটিন। সকালে ঘুম ভাঙতেই রাহুলের মেসেজ: *"আজকে রোদ ভালো আছে, বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াও।"* বিকেলে আবার: *"তোমার প্রিয় গানটা শুনে আমাকে বলো কেনো সেটা প্রিয়।"* নীলা প্রথমে সন্দেহ করলেও ধীরে ধীরে খুলে বলে তার মা-বাবার কথা, নির্জনতার ভয়, আর আত্মহত্যার那些 চিন্তা যা তাকে রাত জাগায়।
রাহুল কোনো দিন বলে না, *"সব ঠিক হয়ে যাবে।"* বরং বলে: *"আজকে তুমি বেঁচে আছো, এটাই বড়
**মিথ্যে পরিচয়ের গল্প**
তিন মাস পর রাহুল প্রস্তাব দেয়: *"চলো, আজকে দেখা করি। তোমার প্রিয় কফি শপে।"* নীলা রাজি হয়। কফি শপে গিয়ে দেখে—একটা ফাকা টেবিলে বসে আছে এক মেয়ে, হুইলচেয়ারে। তার হাতে রাহুলের মতোই একটি নোটবুক।
*"আমিই রাহুল,"* মেয়েটি হাসে। *"আসল নাম রুপা। ফেসবুকে ছেলেদের আইডি বানাই, কারণ মেয়ে হয়ে কারও গভীর কথা শোনার সময় পাই না। সবাই সিম্প্যাথি চায়, সমাধান নয়।"*
নীলার চোখে পানি। রুপা বলে আমারও বাবা-মা নেই। পলিওর কারণে হাঁটতে পারি না। কিন্তু এই হুইলচেয়ারই আমাকে শিখিয়েছে—জীবন থেমে থাকে না। দেখো, তুমিও থেমে থাকোনি।"*
**জীবনের নতুন পাতা**
রুপার সাথে বন্ধুত্ব নীলাকে বদলে দেয়। সে আবার পেইন্টিং শুরু করে। রুপার প্রেরণায় নীলার আঁকা ছবিগুলো নিয়ে তারা অনলাইনে একটি পেজ খোলে—"Wheels and Wings"। সেখানে শারীরিক ও মানসিক সংগ্রামের গল্প শেয়ার করে হাজারো মানুষ।
এক বছর পর নীলার প্রথম আর্ট এক্সিবিশন। ওই দিন রুপাকে জড়িয়ে ধরে সে বলে: *"তুমিই আমাকে শিখিয়েছো, অন্ধকারই আলোর জন্ম দেয়।"*
**গল্পের শেষে:**
*"মানুষের পরিচয় তার যন্ত্রণায় নয়, যুদ্ধে। আমরা ভাঙি, ভেঙে নতুন হয়ে জাগি।