somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গ্রামীণফোনের অন্দরমহল-৪

২২ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৫:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আগের পর্ব Click This Link
জনৈক পাঠক বিরক্ত হয়ে মন্তব্য করেছেন 'ডেস্ক পর্যন্ত যেতে আপনার কয়দিন লাগবে?' জ্বি জনাব, বাস্তবে আমার ২ মাস লেগেছিলো! এখন অনলাইনে কয়দিন লাগে তা দেখার বিষয়। ডেস্ক শব্দটা এসেছেই যখন তখন এ নিয়ে ক'টা কথা বলেই ফেলি। যে সংখ্যায় জিপিতে লোক নেয়া হয়, আর যে স্পিডে অরগানোগ্রাম চেন্জ হয় তাতে ডেস্ক পাওয়া বা তা পেলেও রক্ষা করা একটা যেমন কঠিন ব্যাপার, তেমনি আবার অনেক জায়গায় খালি ডেস্ক পড়ে থাকে! তবে ডেস্ক নিয়ে বেশ 'নিন্দনীয়' ঘটনা ঘটিয়েছিলেন এক কলিগ। বেচারা ৫ বছর চাকরি করার পর বহু আরাধ্য 'ডেপুটি ম্যানেজার' পদে প্রমোশন পেয়েছেন। ক'দিন খুশিতে বাক-বাকুম করলেও আগের ডেস্কে আগের চিরাচরিত কাজ করতে করতে আবার ক'দিনেই নেতিয়ে পড়লেন! বাই ডিফল্ট জিপির অফিসার কাজ করেন কমন প্লেসের দিকে পশ্চাৎদেশ রেখে সাধারন কিউবিকলে, ডিএম রা কমনপ্লেসের দিকে মুখ করে (অর্থাৎ ওদের পিসির মনিটরে কি আছে তা দেখা যায়না) দু'জন অথিতির চেয়ার সহ চেম্বারে, ম্যানেজার হলে ডিএমের মত তবে চেম্বারটা গ্লাসে ঘেরাও থাকবে আর তদুর্ধরা আরো বড় আকারের রুম এই যা! কলিগ ডিএম চেম্বার না পেয়ে (এবং কখনো পাবেননা জেনে) হঠাৎ একদিন অফিস ছুটির পরে ক্যু ঘটিয়ে দিলেন। পাশের নিরীহ কলিগের ডেস্ক অদল বদল করে, কোল্থেকে একটা টেবিল যোগাড় করে কায়ক্লেশে নিজের কটিদেশ ৯০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে পরদিন সকালে পুরোদস্তুর ডেপুটি ম্যানেজার হয়ে গেলেন!! স্থানচ্যুত অপর কলিগ পরদিন সকালে এহেন বিধ্বস্ত সাম্রাজ্য দেখে অনেক ফোসঁফাসঁ করলেও আমাদের ব্যাপক শান্তনার প্রলেপে ব্যাপারটা হজম করলেন।
তবে ডেস্ক নিয়ে গবেষনা ও এসব গবেষনার ভিত্তিতে প্রমোশন, কমিশন, আত্নীয়করন কম হয় নি। কোম্পানি রীতিমত পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছিল 'আর্কিটেক্ট' নিয়োগের জন্য, যার মূল কাজ হবে- ডেস্ক ডিজাইন করা!! এবং এটা একটা রেগুলার পজিশন!!! অর্থাৎ আজীবনের চাকরি। যেমন এখানে 'ভাত' খেয়ে যাচ্ছেন বেশ ক'জন ডাক্তার (হেলথ লাইনের কথা বলা হচ্ছেনা) হেলথ, সেফটি, সিক্যুরিটি এন্ড এনভায়রনমেন্ট নামে 'বিরাট' এক ডিপার্টমেন্ট সৃস্টি করে। রীতিমত একটা ফ্লোর দখল করা এ বিভাগের নেতৃত্ব দানকারী চিকিৎসক কলিগ এতই দক্ষ যে গতবছরই অনায়াসে জি এম প্রমোশন পেয়ে গেছেন। স্মর্তব্য, জিপির বৃহত্তম ডিপার্টমেন্ট (মতান্তরে সেকশন) রিজিওনাল সেলস, যেখানে প্রায় ১৮০০ লোক কাজ করে, এবং বলতে গেলে মাঠ পর্যায়ে টেকনোলজি টিম আর এ টিমটিই সারাদেশের মানুষের কাছাকাছি প্রতিদিন কোম্পানির কাজ করে যাচ্ছে, সে টিমটার নেত্বত্বেও আছেন (বা ছিলেন) একজন জি এম! তাহলে বুঝুন ডাক্তারের কেরামতি। একদিন ভোরে দেখা যাবে তিনি বা কোন এক আর্কিটেক্ট জিপির সি ই ও হয়ে বসে গেছেন! যাহোক ডেস্ক গবেষনার সর্বশেষ ফল হল- নো ডেস্ক পলিসি। ভার্সিটির লাইব্রেরীর মত (আরও ছোট টেবিল) ওপেন ওয়ার্কপ্লেস আর চারপাশে কমন লকার (দেখুন- ডেল ভিসতা অফিস)। যুক্তি হিসেবে জাপানী, স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অনেক সরেস উপমা পেশ করা হয়েছে। তবে এটুকু বলতে পারি বাংগালীমাত্রকেই তা হতাশ করবে। কেননা বাংগাল যথেস্ট ডেস্কপ্রেমিক ও তা কিছুটা হলেও প্রাইভেসী রক্ষা করে এমন।
তাহলে ডেস্ক ছাড়া ২ মাস কেমন লাগত। এক কথায় বললে, খুব খারাপ। সকালে রুটিনমাফিক ফুলবাবু সেজে একটা জায়গায় যাচ্ছি। গিয়ে না আছে বসার জায়গা, না আছে কোন কাজ। এরকম ৪ মক্কেল পেয়েছি একটা কমন রুম যেটা কোনো একজন ম্যানেজার ইস্তফা দেয়ার কারনে (মতান্তরে, ...লীলা জাতীয় কারনে বাধ্যতামূলক অবসর) খালি ছিল। কাচঁ ঘেরা সে রুমে দিনভর আড্ডা, গীবত, দলবেধেঁ বিড়ি ফুকার জন্য সিড়ির চিপায় গমন এটাই কাজ হিসেবে পাওয়া গেল। আর ফাঁকে ফাঁকে বসের নসিয়ত, কিভাবে গ্রামীন ফোনে ক্যারিয়ার গঠন করা যায়! উল্লেখ করার মত 'বড় সড়' দায়িত্ব হল- ১৫০ টাকার স্ট্যাম্পে একগাদা এগ্রিমেন্ট প্রিন্ট করা। কোম্পানীর ডিলাররা 'কর্পোরেট সেলস' করেছে 'এসব' 'প্রতিস্ঠানের' কাছে। তার 'চুক্তি।' বিদগ্ধ পাঠক মহল ইতোমধ্যেই আচঁ করেছেন- এসব 'প্রতিস্ঠান' ও 'চুক্তি'র প্রায় পুরোটাই ভুয়া। আর ইয়া বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের, মস্তবড় ডিগ্রীধারী শত শত 'পোলা-মাইয়া'রে দিয়া জিপির বড়কর্তারা এ আকামটাই করিয়েছে।
চুরিটা এরকম। জিপি সারাদেশে ৮০/৯০ জন ডিলার নিয়োগ দিল কর্পোরেট সেলস করার জন্য অর্থাৎ বিজনেস সল্যুশন সিম বিক্রির জন্য। ডিলাররা কিছু সেলস রিপ্রেজেনটেটিভ নিয়োগ দিবে ও উক্ত সেলস রেপরা নির্ধারীত এলাকায় ঘুরে ঘুরে ছোট ও মাঝারি বাণিজ্যিক প্রতিস্ঠানের কাছে জিপির উক্ত সিম বিক্রি করবে। এক্ষেত্রে একটি চুক্তি সম্পাদিত হবে জিপি ও উক্ত প্রতিস্ঠানের মাঝে। চুক্তির ১ কপি জিপির কাছে, আরেক কপি উক্ত কাস্টমারের কাছে থাকবে। বলা-বাহুল্য এরকম ১টি চুক্তিপত্রের স্ট্যাম্প খরছই আছে প্রায়৫০০ টাকা, তা ১ টা কানেকশন নিলেও!
২/৪ টা ভালো 'সেল' যে এ পন্থায় হয়নি তা না, তবে সহস্রটাই ভুয়া। অর্থাৎ, ডিলাররা মাল উঠিয়ে এসআরকে গছিয়ে দিত। এসআর তার লাইন মত দোকানে মাল গুলা বন্টন করে দিত। দোকানদার ও কায়দামত মক্কেল পেলে, এগুলো বিজনেস সল্যুশন, এগুলোর লাইন আলাদা (!), ৫ টা এফ এন এফ এসব 'আলতু ফালতু' কথা বলে গছিয়ে দিত। আর ওদিকে এসআর মাল ডেলিভারী করেই বসে যেত ভুয়া ট্রেড লাইসেন্স, ভূয়া সিল, ভুয়া ফটো প্রস্তুতে। কদিন পরেই কাল্পনিক এসব 'কোম্পানী'র নাম প্রতি ২০/২৫ টি করে কানেকশন দেখিয়ে তা 'আমাদের' কাছে জমা দিত। আর তার পরে ফর্মেট মোতাবেক প্রিন্ট, সিল, সাইন দিয়ে তাদেরকে চুক্তি ফেরৎ দেয়া হল আমাদের কাজ। এটার নাম ছিল বিজনেস ডেভেলপমেন্ট!!
নির্লজ্জ ও বেহায়াপনার চরম সীমায় গিয়ে কোয়ার্টার ও বছর শেষে কেউকেটারা নিজেদের এসব বিরাট বিজনেস সাফল্যগাঁথা পাওয়ারপয়েন্টে আরও বড় কর্তাদের দেখিয়ে মোটা অংকের 'কেপিআই বোনাস ও ডিজিএম/এজিএম/জিএম পদ বাগিয়ে নিয়েছেন।' তবে অনেকেই শেষতক 'হিসেব' মেলাতে পারেননি- আল গায়েব হয়ে গেছেন, আবার অনেকে ঘাপটি মেরে নতুন পাওয়ার পয়েন্ট বানাচ্ছেন! আর হাতি-ঘোড়াদের উল্থান পতনের পদতলে 'মাত্র ক্যারিয়ার শুরু করা' হাজারো তরুন অনিশ্চয়তার অমানিষায় কুঞ্চিত কপালে ক্ষন গুনছেন আরেকটি 'রিস্ট্রাকচারের।' (চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৫:২৭
৩১টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×