somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গ্রামীনফোনের অন্দর মহল- ৫ (শেষ)

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১০ বিকাল ৪:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পর্ব: Click This Link রিস্ট্রাকচার হল জিপির অতি পরিচিত পরিভাষা, যেমনটি কস্ট কাটিং! তবে বাস্তবে পিয়ন, দারোয়ানের ওভারটাইম কর্তন ছাড়া কস্ট কাটিংয়ের আর কোন বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ দেখা যায়নি। তেমনি মহা দাপুটে রথীমহারথীকে এডভাইসার বা হেড অব আর্থকোয়াক ধাঁচের পদ দিয়ে 'খাসী' বানানো ও তদপরিবর্তে অচেনা অজানা যুবক যুবতীর ভাগ্যে হঠাৎ বিরা....ট পদবী জুটে যাওয়া ছাড়া আমজনতার জন্য তাৎপর্যপূর্ন পরিবর্তন কখনো হয়নি। ২০০৫ সাল পর্যন্ত সেলস এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন, কাস্টমার সার্ভিস, টেকনিক্যাল, আইটি, মার্কেটিং, এইচ আর এসব ভাগে বিভক্ত হয়ে যেভাবে কাজ চলছিল তাতে অত্যন্ত ভাল ফলই ছিল। তবে বোধ হয় কারো কারো দ্রুত 'লাইমলাইটে' আসাটা হচ্ছিল না। অন্তত: সেলসের ক্ষেত্রে এটাই বলা যায়। বিজনেস কাস্টমারের জন্য কর্পরেট সেলস ও ব্যক্তি শ্রেনীর ক্রেতাকে খুচরা দোকানীদের মাধ্যমে ডিস্ট্রিবিউশন সেলস নামক উইংয়ের মাধ্যমে। না, এতে কুলোলনা! খোলা হল এস এম ই নামক আরেকটি বস্তু। তার আবার তিন ভাগ- ডাইরেক্ট, ইনডাইরেক্ট ও ডেভেলোপমেন্ট। যথারীতি ডাইরেক্ট ও ইনডাইরেক্টের মাথাভারী সচিবালয় আর ডেভেলপমেন্ট নামক দলটি পুরোটাই সচিবালয়! এদের যে আরো কত আন্ডা বাচ্চা ইউনিট- তার ইয়ত্তা নেই, খোদ জননীও জানেনা! মোদ্দা কাজটা হল- বিরাট কোম্পানীর নিচের স্তরে ছোট ছোট কম্পানীর কাছে মাল বেচবে ডাইরেক্ট; আরো ছোট নিতান্তই নামগোত্রহীন তথাকথিত কোম্পানীর (যার ব্যাখ্যা আগের পর্বে আছে) কাছে ডিলারের মাধ্যমে মাল বেচবে ইনডাইরেক্ট। অন্যসব করবে রিটেইল টিম। তো বাবা- এত কাহিনী করার দরকার কি? সনাতন কর্পরেট ও রিটেইল টিমের শক্তি, সংখ্যা বাড়ালেই তো ল্যাটা চুকে যায়! ল্যাটা আসলে চুকেছে আরো ২ দফা ভাংগা-গড়ার পরে। কর্পরেট ও ডাইরেক্ট মিলে বর্তমানে এসব কাজের জন্য একটাই টিম আছে- তা হল ডাইরেক্ট সেলস!! আর গোটা এসএমই বিলুপ্ত!
আসি মাল পৌছানোঁ নিয়ে। বলা প্রায় বাহুল্যই, জিপি বা টেলিকম গুলোর গ্রাহকের কাছে মাল পৌছানোঁ খুবই সোজা কাজ, যদি আমরা সাবান, আটা, ময়দা, ঔষধ এসব ব্যবসার সাথে তুলনা করি। নাম না জানা অনেক ভোগ্যপন্য কোম্পানী এক্ষেত্রে যে দক্ষতা অর্জন করেছে, এসব ইংরেজী কোম্পানীর কোট ও ভাবসর্বস্ব আমলারা তা নিয়ে হাসপাস করে বছরের পর বছর। শত কোম্পানির প্র্যাকটিস করা ডিস্ট্রিবিউশন ছক হুবহু কপি করে বিরাট 'হাতি ঘোড়া' উল্টিয়েছেন ওয়াজ করেন ও করান।
টেলিকমের মোটা দাগে এস কি ইউ ৩টি। সিম, স্ক্র্যাচ কার্ড ও ফ্লেক্সি। বর্তমানে ফ্লেক্সি পৌছানোই মূল চ্যালেন্জ। মজার ব্যাপার হল এটা একটা কাল্পনিক প্রডাক্ট। ফলে গ্রাহক থেকে টাকা পাওয়ার ব্যাপারটা নিশ্চিত হলেই গুলশানের সুশীতল প্রাসাদ থেকে সম পরিমান রিচার্জ করে দেয়া যায় এক ক্লিকের মাধ্যমে। আর ব্যাংক ব্যবস্থা বাংলাদেশে যতটা এগিয়েছে তাতে জেলা শহর থেকে টাকা পাঠানো মুহুর্তের কাজ মাত্র।
অথচ, ১ বন্ধু চাকরি করল এরকম- ২০০৬ সাল জুড়ে 'জিপিডিসি রোল আউট' মাঝে ২০০৭ সাল শান্তি আর ২০০৮ সাল জুড়ে 'জিপিডিসি ডিসপোজাল!' অর্থাথ সারাদেশে বিতরন কেন্দ্র- যেখান থেকে খুচরা দোকানীরা মাল নিয়ে যেত; আবার সারাদেশে ওগুলোর উৎখাত- তৎপরিবর্তে ডিস্ট্রিবিউটরের কর্মী দোকানে মাল পৌছে দেবে। এ ধরনেরই একটা উইং এখনো রয়ে গেছে, নাম লজিস্টিক্স সেন্টার। ঢাকা থেকে মাল কুরিয়ারে ওখানে যায়। ডিস্ট্রিবিউটররা ব্যাংকে ডিডি করে ওখান থেকে মাল নিয়ে যায়। প্রশ্ন হৈল- কুরিয়ারে মালটা আরেকটু গেলে ক্ষতি কি? সত্যিই বিচিত্র ব্যবস্থাপনা! এসব লজিস্টিক সেন্টারের কোনো কোনো কর্তা ব্যক্তি মাসের পর মাস অফিসে গড় হাজির বা সিকি হাজির থাকেন, কস্ট করে ২৫ তারিখে প্রায় লাখ খানেক টাকা বেতন উঠিয়ে নেন। আর যথারীতি এটার উপর ভর করে হেড অফিসে বিরাট সচিবালয় ও বাহারি নামের সেকশন, কর্নার!
যাই হোক ফিরি মূল যায়গায়। ২০০৭ এর শুরুতে সেলস, সার্ভিস ও মার্কেটিং এর মেঠো লোকজনকে নিয়ে মহাবিরাট বস্তু কায়েম করা হল- নাম রিজিওন, অর্থাথ হেড-অফিসের বাইরে ঢাকা সহ গোটা বাংলাদেশ এর আওতায়। যথারীতি এটার একটা সচিবালয় নাম- শক্তিবর্ধন টিম (অনুবাদ করলে তাই হয়)। মি. কালাপাহাড় বোস কে এটার প্রধান বানানো হল! ৩০০০ লোকের কোম্পানিতে প্রায় ২০০০ জনই এক টিম। বেচে গেল শুধু ইন্জিনিয়াররা। মাত্র ৭ মাস পরেই অপমৃত্যু ঘটে এহেন অদ্ভুত বস্তুর। তবে ভুত এখনো পুরো যায়নি। স্থুলকায় এক সেলস ডিপার্টমেন্ট, যার সচিবালয়ের ভারে সে নিজেই ন্যুজ।
জিপি হোক বা অন্য কোন টেলকোই হোক এ মুহুর্তে প্রধান কাজ ২টি। নেটওয়ার্ক সচল রাখা ও চাহিদামত ফ্লেক্সি সাপ্লাই। অত্যন্ত শিক্ষনীয় বিষয় হল- ঠিক এ দু' ধরনের মাঠ পর্যায়ের লোককেই প্রচুর খাটুনি খাটতে হয়। রিজিওনাল অপারেশন ও মেইনট্যানেন্স এর প্রকৌশলি এবং ডিস্ট্রিবিউশন পয়েন্টে কর্মরত জিপি কর্মীটি। দু:খ এবং অতি দু:খের ব্যাপার হল মর্যাদা, সুবিধা, সম্মান, ও প্রমোশনের বিচারে আজও এরা উপেক্ষিত উল্টা ডেস্ক, ইমেইল, মিটিং, কফি, ওয়ার্কশপ, রিপোর্ট- সর্বস্ব নন-বিজনেস লোকের ভিড়ে ও দাপটে বুঝাই দায় কে কি করছে! শুধু কি তা, কাস্টমারের সার্ভিসের চেয়ে সচিবালয়ের কর্তা, পাইক, পেয়াদাদের হরেক রকমের রিপোর্ট রিকয়ারমেন্ট পুরা করতে করতে তাদের প্রাণ ওস্ঠাগত।
বুঝতে হল, জানুন তৈমুর আলীর উল্থান কাহন। উত্তর-দক্ষিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ করে গ্রীস দুতাবাসে কদিন চাকুরি করেন। পরে ঢুকেন আইবিএতে। এ সময় সেখানে একটা চাকরী মেলা হয়। একটেল নামক কোম্পানির ককটেল রিক্রুটার কি যেন মনে করে তাকে ডাইরেক্ট ডেপুটি ম্যানেজার..। ৬ মাস পর তাকে ছাড়া জিপির মার্কেটিং চলছিল না! ম্যানেজারের কমে নেয়ও কি কৈরা। ১ বছর না ঘুরতেই ডিজিএম। আরেকটি বছর পার না হতেই জি এম (এজিএম নামক পদটি থেকে হযরতকে ওয়েইভার দেয়া হয়েছে)। এখন কি না কি স্ট্রাটেজি জাতীয় ডিপার্টমেন্টের প্রধান!!! প্রচুর খোজ খবর কৈরাও জানা গেল না অমন রূপের কি রহস্য।
এমনি অসংখ্য কেচ্ছা, রূপকথা আর হ্যাঁ রূপবতীর গল্পে ঠাসাঁ জিপির অন্দরমহল। সময়মত অফিসে যামু আর আমু, মোটা অংকের ট্যাকা বেতন গুনমু, ৫৭ বছর হলে ১ গাট্টি টাকা নিয়া অবসর নিমু বাদ বাকী যা হবার হোক- এ রকম পণ করলে এর চেয়ে বেটার কোম্পানি ইহধামে আর পাওয়া যাবেনা (দ্রস্টব্য: শুনছি কিছু পুরানা অফিসারের বেতন কমাইবো!!!)। এতদ্ভিন্ন ক্যারিয়ার, রেসপনসিবিলিটি ইত্যাদি যদি কেউ আমলে নেয় তাহলে এ অন্দরমহল এক মায়াপুরি। কুহেলিকা, ঘোরতর অনিশ্চয়তায় ভরপুর এক আধুনিক কামরুপ কামাখ্যা মাত্র। খুবই ভাল কাজের পরিবেশ, প্রায় সমবয়সী কলিগ, ইতস্তত: বিক্ষিপ্ত সুন্দরীদের ছোয়াঁ, কোলের বাচ্চার জন্য ডে কেয়ার, মুক্ত অনাবিল এক পরিবেশ। তবুও সারাক্ষন এক শংকা, অজানা এক অতৃপ্তি তাড়া করে বেড়ায় বন্য শুয়োরের মত। কি এক ছাতার চাকরি করি! জিপি সর্বাধিক সফল হয়েছে প্রযুক্তি বিকাশে আর সর্বাধিক ব্যর্থ হয়েছে কর্মরত মানুষদের বিকাশে। এটাই মোদ্দাকথা। (শেষ):|
২৩টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×