somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থী(৪) শেষ পর্ব।

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১২:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খুব কার্যকরীভাবে গত তিনদশক একটা বামপন্থী জোটের নেতৃত্ব দেয়ার সংগে সংগে একটা রাজ্যে ধারাবাহিক ভাবে শাসন ক্ষমতায় থাকা এবং আরও দুটি রাজ্যে মাঝে মধ্যে ছেদ ঘটলেও প্রায় একই সময়কাল যাবৎ রাজ্য-শাসন ক্ষমতায় থাকার অভিজ্ঞতা হয়েছে একটি কম্যুনিস্ট দলের যার নাম সিপিআই(এম)। দলটির নামেই রয়েছে তার সর্বভারতীয় পরিচয়। শুধু এই দল নয়, সব কম্যুনিস্ট দলই অন্ততঃ নামে 'সর্বভারতীয়'। কিন্ত জন্মের পর থেকে এই দলটি শুধু নয়, কোনো দলই কোনোভাবেই তাদের নাম ছাড়া আর কোনো ভাবেই সর্বভারতীয়ত্ব অর্জন করতে পারেনি। কেন পারেনি আর এই না পারার বিষয়টা নিয়ে কোনো কালে কোনো কম্যুনিস্টপার্টির ভেতরে বা বাইরে সেই অর্থে কোনো কার্যকরী অনুসন্ধান,গবেষণা হয়েছে বলে শোনা যায়নি। যদি হয়েও থাকে তবে তা ব্যর্থ হয়েছে নিশ্চিত। মার্কসীয় তত্ত্বের আধারে গঠিত এই দলগুলো প্রাথমিকভাবে ভারত নামক দেশটির অর্থনৈতিক শ্রেণী নির্ধারণ করতে গিয়ে কপিবুক মার্কসিজমের চর্চাটাই করেছেন। ফলে তত্বের প্রয়োগ এবং বিকাশে অসামঞ্জষ্য রয়ে যায় বরাবর। দেশটি যে অনেক ধর্মের, অনেক ভাষার, অনেক জাতির, অনেক সমাজ ইতিহাস প্রকৃতির একটা নাতিদৃঢ সমাহার--তা তেমন ভেবে দেখা হয়েছে বলে মনে হয় না। যা দেখা হয়েছে তা যেন বাইরে থেকে দেখা---ভেতরে বসবাসজাত দেখা নয় । ফলে শুরু থেকেই একধরণের বিচ্ছিন্ন এলিটিজমের ছায়া ঘেরা নেতৃত্ব । যে নেতৃত্ব এবং চালিকাশক্তি সবসময়ই মধ্যবিত্তের দ্বারা অধিকৃত থেকে যায়। আর যেহেতু ভারতীয় প্রেক্ষিতে বঙ্গীয় মধ্যবিত্তরা ঔপনিবেশিক কারণে কিছুটা অগ্রগামী ছিলো,সেহেতু ভারতের মত একটি উপনিবেশে তৎকালে কম্যুনিজমের চর্চাকারীদের মধ্যে বাঙালির সংখ্যাটাই অধিক ছিলো। এর উপরে গোদের উপর বিষফোঁড়ার মত রয়ে যায় 'আন্তর্জাতিকতা'। যে কোনো প্রতিবেদনের শুরুতেই থাকবে আন্তর্জাতিকতা । আর তার নিরিখেই সব ব্যাখ্যা । এই পদ্ধতিটা কখনই সংশয়ের উর্ধে নয় ।

তবু ৭২ থেকে ৭৭ সময়টা এই দেশটার পক্ষে যেমন দুঃসময় তেমনি বিশেষভাবে পঃবঙ্গের পক্ষেও। কারণ তখন এখানে চলছে কংগ্রেসী শাসন। নকসালনিধনের পাশাপাশি সিপিএম নিধনটাও চলছিলো। তখনকার মত নকসালরা রণে ভঙ্গ দিলেও আনডারগ্রাউন্ডে থেকে সিপিএম তার সাংগঠনিক লড়াইটা জারী রাখলো। এরই মধ্যে জারি হয়েছে জরুরী অবস্থা । সম্পূর্ণ নতুন অভিজ্ঞতা । জরুরী অবস্থা দেশ যখন বর্হিদেশের সংগে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে তখন জারী হয় জানি। কিন্তু এটা একেবারেই আভ্যন্তরীণ বিষয়। কী এমন কারণ ঘটলো যে জরুরী জারি করতে হলো---কেউই খুব পরিষ্কার নয়। বরং জরুরী অবস্থা জনিত দেশের পরিবর্তিত পরিস্থতি বেশ অনুভব করা যাচ্ছে। বোঝা যাচ্ছিলো যে খবরের কাগজগুলো বেশ বোবা হয়ে গেছে। পরস্পর শোনা যায় যে অনেক সাংবাদিক, রাজনৈতিক কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে---আর সব গ্রেপ্তারই ভারত রক্ষা আইনে। সব ধরণের গণতান্ত্রিক কাজকর্ম বন্ধ। তবে সাধারণ মানুষ যারা ক্ষমতা বৃত্তের বাইরে থাকেন তাদের একটা আপাত লাভ হয়েছিলো। যেমন লোকঠকানো বাজার ব্যবস্থাটা হঠাৎই খুব নিয়মানুগ হয়ে উঠলো। প্রতি বাজার দোকানে মূল্যমানের তালিকা তথা মজুতের তালিকা বিজ্ঞাপিত করতে হতো। অফিস আদালত সঠিক সময়ে খোলা বন্ধ করা এবং ঠিকঠাক পরিষেবা প্রদান চালু হলো। ট্রেন যাতায়াতে অভুতপূর্ব সময়ানুবর্তিতা দেখা গেল। এই ধরণের পরিস্থিতির কারণে একশ্রেণীর মানুষের মধ্যে জরুরী অবস্থা পক্ষে একটা সমর্থণও তৈরী হয়ে যায়।

যাই হউক এই পরিস্থিতিটা খুব বেশী দিন টিঁকতে পারেনি। ভারতের মত একাট বিশাল দেশের ভালোটাও কোনো একমাত্রিক ব্যবস্থার দ্বারা করা যে সম্ভব নয় তা প্রমান হয়ে গেল । ধীরে ধীরে জনরোষ দানা বাঁধতে শুরু হলো। তার মূল কারণ ছিলো যে ঐরকম একাট ক্ষমতা পেয়ে শাসকদলের অনেক নেতা তার অপব্যবহার করা শুরু করলো । তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ইন্দিরা পুত্র সঞ্জয় গান্ধী। তার উল্লেখযোগ্য কীর্তি, ---শহরাঞ্চলে বস্তিবাসীদের তোলার জন্য বুলডজার চালিয়ে তাদের ঘরবাড়ি মাটিতে মিশিয়ে দেয়া,---জন্ম নিয়ন্ত্রণের নামে বলপূর্বক নারীপুরুষদের বন্ধ্যাকরণ করা----ইত্যাদি নানাবিধ ক্ষমতার নগ্ন ব্যবহার ।

জরুরী অবস্থার মাধ্যমে ইন্দিরাগান্ধী যে কেন্দীভুত ক্ষমতাকেন্দ্রটি গড়ে তুলেছিলেন তা আর তাকে ততটা সাহায্য করেনি। পরবর্তীতে এই সিদ্ধান্তটা যে ভুল ছিলো তা তিনি এক প্রকার স্বীকারও করেছিলেন ।

৭৭ সনে কেন্দ্রে জনতা সরকার অধিষ্ঠিত হলো। আর তার পরপরই রাজ্যে নির্বাচন। পঃবঙ্গে ক্ষমতায় এলো সিপিএম এর নেতৃত্বে বামফ্রন্ট। আজ পর্যন্ত ক্ষমতায় তারাই। এই দীর্ঘ ক্ষমতা ভোগের মধ্য দিয়ে সিপিএম তথা বামফ্রন্ট আজ একটি ক্ষয়িষ্ণু জোট মাত্র । অথচ এই রাজ্যের মানুষকে দারুণ আশাবাদী করে তোলা তাদের ক'টি কাজ যেমন ভূমি সংস্কার,অপারেশন বর্গা, এবং ত্রিস্তর পঞ্চায়েতি ব্যবস্থা , তাদের রক্ষাকবচ হিসেবে আজ আর কাজ করছেনা। এর কারণ আর কেউ না জানুক তারা অন্ততঃ খুব ভালো জানে। ফলে যেন তেন প্রকারে টিঁকে থাকার লড়াইতে তাদের আর ঠিক চেনা যাচ্ছেনা ।

পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থী(১)
পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থী(২)
পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থী(৩)
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১২:৪২
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×