প্রযুক্তিপ্রেমীদের জন্য তিনটি সুখবর৷ প্রথমত, মহাখালীতে ৪৭ একর জমির ওপর স্থাপিত হবে আইটি পার্ক৷ দ্বিতীয়ত, খুলনায় ৮১ একরে হবে আইটি ভিলেজ এবং তৃতীয়ত, কালিয়াকৈরে হাইটেক পার্কের কাজ এগিয়ে চলেছে৷ আপাতত বাংলাদেশের প্রযুক্তিপ্রেমীদের এই সুখবরের কথাই জানাচ্ছেন -
এম. এ. হক অনু ও সুমন ইসলাম৷
রাজধানীর মহাখালীতে আইটি পার্ক এবং খুলনায় একটি আইটি ভিলেজ তৈরির পরিকল্পনা করছে সরকার৷ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে এগিয়ে নিয়ে এর সুফল ঘরে তুলতেই এমন চিন্তাভাবনা চলছে৷ তবে এই দুটো প্রকল্পই রয়েছে একেবারে প্রাথমিক অবস্থায়৷ সুনির্দিষ্টভাবে এখনো কিছু হয়নি৷ বিষয়টি নিয়ে দেনদরবার, আলোচনা চলছে৷ খুব শিগগিরই কিছু হচ্ছে না এমন আভাসও মিলছে৷ তবে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে প্রস্তাবিত হাইটেক পার্ক স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলেছে৷ আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সেখানে প্রাথমিক অবকাঠামো তৈরির কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ এরপর দ্বিতীয় পর্যায়ে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আহ্বান জানান হবে৷ কমপিউটার জগৎকে দেয়া একান্ত সাক্ষাত্কারে এ তথ্য জানিয়েছেন বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সচিব শেখ মো: ওয়াহিদুজ্জামান৷
তিনি বলেছেন, কালিয়াকৈরে আমরা মৌলিক অবকাঠামো তৈরি করে দেবো৷ তারপর বিনিয়োগকারীরা সেখানে গড়ে তুলবে কৃষিভিত্তিক প্রাণপ্রযুক্তি ও জিন প্রকৌশল, গাড়ি, ধাতু, ওষুধ ও সরঞ্জাম, তৈরি পোশাক, বস্ত্র, প্লাস্টিক, যন্ত্রপাতি, ইলেকট্রনি পণ্য, কমপিউটার হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার, যোগাযোগ যন্ত্রপাতি, তথ্যপ্রযুক্তি সেবা, মানবসম্পদ উন্নয়ন, পরামর্শ সেবা সংশ্লিষ্ট শিল্প প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি৷ আমাদেরকে আগে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আমরা আসলে কী চাই৷ এরপর সে অনুযায়ী কাজ চালিয়ে যেতে হবে৷ পুরো কাজটি করতে হবে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে৷ মডেল তৈরিও করতে হবে বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে৷ এজন্য বসতে হবে ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন, বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক অর্থ যোগানদাতা প্রতিষ্ঠানসমূহের সাথে৷ বসার কাজটা এ মাসের শেষ নাগাদই হবে৷ তাছাড়া জমি পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয়টিও রয়েছে৷ তবে এ ধরনের একটি পার্ক তৈরি করতে দীর্ঘদিন প্রয়োজন হওয়ার কথা নয়৷ ডিসেম্বরের মধ্যেই অবকাঠামো হয়ে যাবে৷ বিদ্যুৎ ও টেলিফোন সুবিধা নিশ্চিত হবে৷ রাস্তার কাজও শেষ হবে৷
শেখ মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান
সচিব জানান, বিকেন্দ্রীকরণের ফলে আগামী ৫/১০ বছরে বিশ্ব কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেটা বুঝতে হবে৷ ভবিষ্যৎ চাহিদা বুঝে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷ ইপিজেডের মতো সুশৃঙ্খলভাবে মডেল তৈরি করতে হবে৷ সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠতে পারে৷
শেখ মো: ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, রাজধানীর মহাখালীতে আইটি পার্ক করার জন্য বিজ্ঞান ও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের যে ৪৭ একর জমি আছে, সেটা জানার পরই তিনি এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি ঢাকা জেলা প্রশাসক, এসি ল্যান্ড এডিসি ল্যান্ড ও অন্যান্য কর্মকর্তাকে নিয়ে সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন৷ সেখানে তিনি দেখেছেন বিশাল এলাকা দখল করে গড়ে উঠেছে অবৈধ স্থাপনা৷ সেখানে বাস করছে অন্তত এক হাজার পরিবারের ৫ হাজার মানুষ৷ এদেরকে উচ্ছেদ না করে সেখানে কিছুই করা যাবে না৷ এতগুলো লোককে হঠাৎ উঠিয়ে দেয়াও সহজ কাজ নয়৷ তাই বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে৷ তারা সেখানের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের যাবতীয় ব্যবস্থা নেবে৷ এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক হয়েছে বলেও জানা যায়৷ এরা অবৈধ অধিবাসীদের পুনর্বাসনের বিষয়টি নিয়েও ভাবছে৷
তিনি বলেন, পুরো জমির একটি চিত্র পেলে পরিকল্পনা করে দেখা হবে সেখানে কিভাবে আইটি পার্ক করা যায়৷ জমি খালি করার পর বা খালির সময় বিভিন্ন গোষ্ঠীর সাথে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হবে৷ সরকার একা কিছু করবে না৷ যা কিছু হবে বেসরকারি পর্যায়েই হবে৷ সরকার শুধু জায়গা দেবে এবং অবকাঠামো করে দেবে৷ তিনি বলেন, হতে পারে সরকার সেখানে একটি ৫০ তলা ভবন করে দিলো৷ তারপর সেই ভবন বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতি, বেসিস, আইএসপি অ্যাসোসিয়েশন, বিটিআরসি বা অন্যরা ভাগ করে নিয়ে কাজ করলো৷ যেহেতু দেশে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি খারাপ তাই সেখানে নির্বিঘ্নে বিদ্যুৎ সরবরাহের নিশ্চয়তা দেয়া হবে৷ অন্যান্য সুবিধাও সরকার দেবে৷
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান জায়গা চাইলে দেয়া যাবে কি-না তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না৷ কারণ কী শর্তে ভূমি মন্ত্রণালয় জায়গাটি দিয়েছে তা দেখতে হবে৷ সেখানে যদি অন্য কাউকে জমি দেয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকে তাহলে জমি বরাদ্দ দেয়া সম্ভব হবে না৷ উল্লেখ্য, বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতির সভাপতি মোস্তাফা জব্বার ৪৭ একর জমির মধ্যে ১৭ একর জমি বরাদ্দের জন্য বেটারবিজনেসফোরাম-এর মাধ্য আবেদন করেছেন৷ এর মধ্যে সমিতির নামে সাড়ে ৭ একর জমি বরাদ্দ হলে সেখানে তিনি বিসিএস কমপিউটার সিটির মতো একটি বড় রিটেইল মার্কেট, ইনকিউবেটরসহ আইসিটি ভিলেজ এবং একটি আইসিটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন৷ বাকি জমি বেসিস ও আইএসপিবি তাদের মতো করে ব্যবহার করবে৷
সচিব বলেছেন, বেসরকারি খাতেই ওই জমিতে কাজ হবে৷ বিসিএস, বেসিস, আইএসপি অ্যাসোসিয়েশন, বিটিআরসিসহ যারাই সেখানে প্রতিষ্ঠান বা হাব করতে চাইবে তারাই জমি পাবে৷
খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলের জায়গায়ও একটি আইটি ভিলেজ গড়ে তোলা হবে বলে সচিব জানিয়েছেন৷ মিলটি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হবে৷ সেখানে জমি রয়েছে ৮১ একর৷ (অন্য একটি সূত্র অবশ্য এ জমির পরিমাণ ১০৩ একর বলে জানিয়েছে)৷ তিনি বলেন, সোনালী ব্যাংক মিলটির কাছে যে ১২৭ কোটি টাকা পায়, সরকার তা দিয়ে দেবে৷ খুলনায় আইটি ভিলেজ হলে পুরো দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের বিশাল এলাকা এর আওতায় আসবে৷ এর ১৪৮ মাইলের মধ্যে রয়েছে কলকাতা৷ ফলে সেখান থেকেও আউট সোর্সিংসহ অন্যান্য আইটিবিষয়ক কাজ আসবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ বেসরকারিকরণ কর্তৃপক্ষের সাথে জমি হস্তান্তর বিষয়ে ইতোমধ্যে কথাবার্তা হয়েছে বলেও সচিব জানিয়েছেন৷
এদিকে কমপিউটার জগৎ-এর গত সেপ্টেম্বর সংখ্যায় বাংলাদেশে হাইটেক পার্ক কতদূর শিরোনামে এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়৷ সেখানে তুলে ধরা হয়েছিল নানা সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা৷ সেই প্রতিবেদনের ৮ মাস পর এখন বাস্তব অবস্থাটা কী সেটাই জানিয়েছেন গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলা সদরে ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র সংলগ্ন এলাকায় প্রস্তাবিত হাইটেক পার্কের প্রকল্প পরিচালক ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ৷ তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই তিনি প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ করতে সমর্থ হবেন৷ এরপর শুরু হবে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ৷ তখন বিদেশীদের ডেকে এনে আহ্বান করা হবে বিনিয়োগের জন্য৷ এজন্য একটি ডেভেলপার কোম্পানি খোঁজা হচ্ছে, যারা এ বিষয়টি দেখভাল করবে৷ আশা করা হচ্ছে, শিগগিরই এমন একটি কোম্পানি খুঁজে পাওয়া যাবে এবং ধীরে ধীরে বাস্তবায়ন হবে আমাদের স্বপ্নের হাইটেক পার্ক৷
ড. কামাল উদ্দিন বলেন, তারা এখন কাজ করছেন হাইটেক পার্ক প্রকল্পের ফার্স্ট ফেজ বা প্রথম পর্যায় নিয়ে৷ এ পর্যায়ের কাজ হলো দলিলপত্র ঠিক করা এবং মৌলিক অবকাঠামো তৈরি করা৷ দ্বিতীয় পর্যায়ে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হবে৷ প্রথম পর্যায়ের কাজের অংশ হিসেবে সীমানা প্রাচীর দেয়ার কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে৷ এরপর তৈরি করা হবে প্রধান ফটক এবং সংশ্লিষ্ট পথ৷ ৮-১০ মাসেও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ শেষ হলো না কেনো, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রকল্প পরিচালক আমলাতান্ত্রিক জটিলতার দিকে ইঙ্গিত দেন৷ তিনি বলেন, কাজটি দেখাশোনা করছে পিডবিউডি৷ কাজটি দ্রুত করার জন্য তাদেরকে নিয়মিত তাগাদাও দেয়া হচ্ছে৷ জনবল কম হওয়া সত্ত্বেও তারা সহায়তার চেষ্টা করছে৷
এদিকে প্রকল্প এলাকায় বহুমুখী কাজের জন্য যে তিনতলা ভবন নির্মাণের কথা রয়েছে, সে ভবনের একতলার ছাদ ঢালাই হবে শিগগিরই৷ নভেম্বরের মধ্যেই তৈরি হয়ে যাবে পূর্ণাঙ্গ তিনতলা ভবন৷ তখন দাপ্তরিকসহ অন্যান্য কাজ সেখানে বসেই করা যাবে৷ বিদেশী বিনিয়োগকারীদের ডেকে এনে বসিয়ে কথা বলা যাবে এবং প্রকল্প এলাকা ঘুরিয়ে দেখানো যাবে৷ মূল পরিকল্পনাটিও তাদেরকে দলিল দস্তাবেজসহ দেখানো যাবে৷ এতে তারা বিস্তারিত সুবিধা-অসুবিধা জানতে পারবে এবং বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেয়া তাদের পক্ষে সহজ হবে৷
প্রস্তাবিত হাইটেক পার্কের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে ২৩১ একর৷ ২০০৪ সালের ২৪ এপ্রিল সে সময়ের বিজ্ঞান ও আইসিটি মন্ত্রী ড. আবদুল মঈন খান আনুষ্ঠানিকভাবে পার্কের জমি হস্তান্তর অনুষ্ঠান করেছিলেন৷ হাইটেক পার্কের নকশা করেছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগ, ইউআরপি, পুরকৌশল, তড়িৎ কৌশল, যন্ত্রকৌশল এবং কমপিউটার বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকদের নিয়ে গঠিত একটি বিশেষজ্ঞ টিম৷ এই টিম এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিলের কয়েকজন কর্মকর্তা মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর এবং ভারতের বেশ কয়েকটি হাইটেক পার্ক ও টেকনোলজি পার্ক পরিদর্শন করে প্রস্তাবিত পার্কের নকশা করেন৷
ড. কামাল উদ্দিন বলেন, প্রস্তাবিত পার্কটি যাতে বাস্তবে রূপ নেয় সেজন্য তিনি ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগী হয়ে নানা কাজ করে যাচ্ছেন৷ যেখানে প্রধান ফটকটি হবে, তার ওপর দিয়ে চলে গেছে ৩৩ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন৷ ওই তার সরিয়ে না নেয়া পর্যন্ত প্রধান ফটক বসানো সম্ভব হচ্ছে না৷ উচ্চ ভোল্টেজের ওই তার সরাতে ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্ট বিভাগে চিঠি দেয়া হয়েছে৷ আশা করা হচ্ছে, অবিলম্বে তারা ওই তার সরিয়ে অন্য কোনো দিক দিয়ে নেবে৷ এই একই কারণে প্রধান সড়কটির কাজও আটকে গেছে৷ তার সরানোর কাজটি যাতে দ্রুত হয় সেজন্য নানামুখী চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি৷
প্রকল্প পরিচালক বলেন, ভবন নির্মাণের কাজটিও আরো দ্রুত হতে পারতো৷ কিন্তু স্থাপত্য বিভাগের ব্যস্ততা এবং অন্যান্য জটিলতার কারণে কাজের গতি কমে যায়৷ এরপরও অগ্রাধিকারভিত্তিতে বিষয়টি দেখতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করা হয়েছে৷ প্রকল্প এলাকার ওপর দিয়ে গেছে ১১টি রাস্তা৷ এর বেশিরভাগই পায়ে চলা৷ পিচঢালা পথও রয়েছে৷ এখন সমস্যা হলো হঠাৎ করে এই রাস্তাগুলো বন্ধ করে দেয়া যাচ্ছে না৷ বহু বছর ধরে স্থানীয়রা এ পথগুলো ব্যবহার করছে৷ হঠাৎ দেয়াল দিয়ে এগুলো বন্ধ করে দিলে মানুষ দুর্ভোগে পড়বে৷ তাই বিকল্প রাস্তা করে না দেয়া পর্যন্ত সীমানা প্রাচীরের কাজও পুরোপুরি করা যাচ্ছে না৷ স্থানীয় প্রশাসন বিকল্প সড়ক নিয়ে ভাবছে৷
দীর্ঘদিন জায়গাটি পতিত থাকায় কিছু অবৈধ দখলদার সেখানে ঘাঁটি গেড়ে বসবাস করছিল৷ এখন তাদেরকে বুঝিয়ে সেখান থেকে উঠিয়ে দেয়া হয়েছে৷ এ ব্যাপারে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে যথেষ্ট সহায়তা পাওয়া গেছে৷ প্রকল্প এলাকায় ৬৪ শতাংশ জায়গা নিয়ে মামলা রয়েছে৷ ওই জায়গার দখলদাররা বলছে, তাদের জমি অধিগ্রহণ করা হয়নি৷ অন্যদিকে সরকার বলছে অধিগ্রহণ হয়েছে৷ তাই বিষয়টি মামলা পর্যন্ত গড়িয়েছে৷ মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই জায়গায় প্রাচীর দেয়া যাচ্ছে না৷ এলাকার আরেকটি অংশে আখড়া গড়ে তুলেছে কিছু জটাধারী ব্যক্তি৷ তারা প্রতিদিন সন্ধ্যায় সেখানে গাঁজার আসর বসায় বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক৷ তারাও ওই অংশে প্রাচীর দেয়ার কাজে বাধা দিচ্ছে৷ সেখানে জমি কিছুটা নিচু হওয়ায় সারা বছরই পানি থাকে৷ এখনো আছে৷ পানি সেচে সেখানে প্রাচীর দেয়া হবে এবং ধর্মীয় আখড়া কোনো সমস্যা হবে না বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ৷
প্রাকৃতিক পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে একটি অংশে তৈরি করা হচ্ছে ক্রসড্রেনের৷ এ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে৷ সেখানে জাহানারা ইন্ডাস্ট্রি গ্রুপের আরসিসি দেয়ালও ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে৷ কারণ, অবৈধভাবে প্রকল্পের ভেতরে গড়ে তোলা হয়েছিল সেই দেয়াল৷
ড. কামাল উদ্দিন বলেন, সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং কাজ ছিল সুপরিচিত নির্মাণ প্রতিষ্ঠান আবদুল মোনেম লিমিটেডকে অবৈধ দখল থেকে উচ্ছেদ করা৷ এরা প্রকল্প এলাকার ৫২ একর জমি দখল করে ১৭ বছর ধরে স্থাপনা তৈরি করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল৷ কোনোভাবেই তাদের উঠিয়ে দেয়া যাচ্ছিল না৷ নানাভাবে এরা ফন্দি-ফিকির করে অস্তিত্ব রক্ষা করছিলো৷ এখন জরুরি অবস্থার সুযোগ নিয়ে বিশেষ পুলিশ দিয়ে তাদের অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে৷ এসি পাওয়া গেছে ৪০টি৷ এছাড়াও সেখানে নানা বিনোদন উপকরণ ছিল৷ বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহার কমে তারা প্রধান সড়ক থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়েছিল৷ শেষ পর্যন্ত তাদেরকে উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়েছে সেটাই বড় কথা৷
আমাদের অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর মহাখালী টিঅ্যান্ডটির ৪৭ একর জায়গা ১৯৯৯ সালের অক্টোবরে বিজ্ঞান ও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করে ভূমি মন্ত্রণালয়৷ এরপর আর কোনো কাজ হয়নি৷ দীর্ঘ ৯ বছর পর জায়গাটি নিয়ে ফের তত্পরতা শুরু হয়েছে৷ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে অবিলম্বে সফটওয়্যার ও প্রযুক্তি উদ্যান করার দাবি প্রথম তুলেছিল কমপিউটার জগৎ ১৯৯৬ সালের আগস্টে৷ এরপর পত্রিকাটি এ বিষয়ে বহু প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷ কিন্তু যথাসময় কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি৷ সম্প্রতি যখন দেশে একটিমাত্র হাইটেক পার্ক নিয়ে তোড়জোড় চলে, তখন এশিয়ার এ অঞ্চলের ৪০টি দেশে প্রায় ১ হাজার দুই শয়েরও বেশি টেকনোলজি পার্কে পুরোদমে কাজ চলছে৷ এই তথ্যের সাথে তুলনা করলে বুঝা যায় বাংলাদেশ এক্ষেত্রে কতখানি পিছিয়ে আছে৷
ভারতের কেরালা রাজ্যের প্রযুক্তি উদ্যান গড়ে উঠেছে পাহাড়ঘেরা ঘন সবুজ পরিবেশে৷ সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক দূষণমুক্ত ক্যাম্পাসবিশিষ্ট এই প্রযুক্তি উদ্যানে এমনভাবে সব ব্যবস্থা করা হয়েছে যাতে একজন ব্যবহারকারী সেখানে প্রবেশ করেই তার কার্যক্রম শুরু করতে পারে৷ ১৯৯৫ সালে ১৮০ একর জায়গার ওপর উদ্যান স্থাপন শুরু হয়৷ এর মূল লক্ষ্য হলো উচ্চপ্রযুক্তির ইলেকট্রনিক্স ডিজাইন, ট্রেনিংয়ের কার্যক্রম পরিচালনা ও রফতানিমুখী সফটওয়্যার তৈরির জন্য অনুকূল পরিবেশ এবং প্রয়োজনীয় আনুষঙ্গিক কারিগরি সহায়তা ও পরামর্শ দেয়া৷
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মাল্টিন্যাশনাল প্রতিষ্ঠানগুলোর কেন্দ্রবিন্দু সিঙ্গাপুর সায়েন্স পার্কের অনুকরণে ভারতের কর্নাটকে গড়ে তোলা হয়েছে আইটি পার্ক৷ ৬৮ একর জমিতে বিস্তৃত এই পার্কে রয়েছে উচ্চমানের কাজের জন্য ১ লাখ ৭২ হাজার বর্গমিটার জায়গা, অফিস, রেসিডেনসিয়াল ইউনিট, দৈনন্দিন জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় সুবিধাসমূহ এবং বিনোদনের ব্যবস্থা৷ সেখানে নিজস্ব ২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে৷ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে টেলিফোন সংযোগের জন্য এক হাজার লাইনের এক্সচেঞ্জ বসানো হয়েছে৷ ১২ হাজার পর্যন্ত লাইন বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে৷ আরো রয়েছে নিজস্ব ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র, যার মাধ্যমে উচ্চগতিতে তথ্য আদান-প্রদানসহ ই-মেইল এবং ইন্টারনেটের সব সুযোগসুবিধা পাওয়া যাচ্ছে৷ পার্কটির কার্যক্রম চালানোর ফ্লোরের লে-আউট এমনভাবে করা হয়েছে যেন দ্রুত পরিবর্তনশীল আইটি শিল্পের সাথে তাল রেখে প্রয়োজনে ইচ্ছেমতো বর্গক্ষেত্রের পরিবর্তন করতে পার্কে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো অসুবিধা না হয়৷
--------------------------------------------------------------------------------

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




