ইলিশের কেজি ১ টাকা।
নিজস্ব সংবাদদাতা: ভরা বর্ষায় এবার ব্যাপক আকারে ইলিশ ধরা পড়ার কারণে জেলেদের মধ্যে আনন্দের বান। কিন্তু বাঁধ সেধেছে হঠাত ট্রাক ধর্মঘট। ঢাকা সহ দেশের অন্যান্য স্থানে এবং কোলকাতায় পাঠানের জন্য ঝাকে ঝাকে ইলিশের ট্রলার বরিশাল ঘাটে এসে বিপাকে পড়েছে। মজুদ মাছের তুলনায় বরফের পরিমান কম হওয়ায় মাছ পচে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে ১ টাকা কেজিতেও ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। বরিশালের ঘরে ঘরে ইলিশ ভাজার মৌ মৌ গন্ধ। দৈনিক ইত্তেফাক: ২৮ জুন ১৯৮৯।
দিন তারিখটা কাল্পনিক। তবে সংবাদের ভাষা এখনও চোখে জ্বল জ্বল করছে। বরিশালবাসীর কাছে ইলিশ এমনিতেই অফুরন্ত। তারপরও ইলিশের মওসুমে ট্রাক ধর্মঘটের জন্য কাতর অপেক্ষা। এতে ব্যবসায়ীদের বারটা বাজলে তাতে কি? নগরবাসী ডিমভরা ইলিশের ঝাঝে পরিতৃপ্ত জীবন উপভোগ। আহ কি যে দিন ছিল তখন! যদিও ১ টাকা দরে ইলিশ বিক্রি হওয়াটা অতিরঞ্জিত। দু’এক টাকায় হয়তো পাওয়া যেত, তবে তা প্রায় পচে, গলে যাওয়া মাছ। ১০/১৫ টাকায় ৭০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ওজনের ফ্রেশ মাছ পাওয়া যেত। আর ২০/২৫ টাকায়তো পেল্লাই সাইজের মাছ। ট্রাক ধর্মঘট উঠে গেলে আবার মাছ লাপাত্তা।
ইলিশ মাছের ভরা মৌসুমে পোর্ট রোডে ঘোরাফেরা করতাম যদি পরিচিত কেউ হঠাত পেছন থেকে ডাক দেয়, এই আশায়
ইলিশ কেনার মধ্যেও কিন্তু আর্ট ছিল। বিক্রেতার ইলিশের কানকোর মধ্যে দিয়ে নারিকেলের ছোবড়া দিয়ে রিং বানিয়ে দিত যাতে আঙুলে ঝুলিয়ে ইলিশ বহন করা যায়। ব্যাগের মধ্যে নিলে ইলিশের জাত থাকেনা। আর ঝুলিয়ে নিলে পাব্লিকের প্রশ্নবানে ক্রেতা জর্জরিত হলেও উপভোগ্য ছিল। ইলিশ আঙুলে ঝুলিয়ে নিয়ে যাবেন, আর দশজনে দাম জিজ্ঞাসা করবেনা এমনটা এ তল্লাটে হতে দেয়া যাবেনা। রাজার সাথে বাজী ধরে শুধু গোপাল ভাড়ই একবার কারো জিজ্ঞাসা ছাড়া বাজার থেকে ইলিশ ঝুলিয়ে রাজ প্রাসাদে আসতে পেরেছিল। শুধু নিন্মাঙ্গের পরিধেয় বস্ত্রটা মাথায় উঠাতে হয়েছিল
ইলিশের স্বাদ নিয়ে আমাদের মধ্যে নানামুখি বিতর্ক প্রচলিত। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ লোক পদ্মার ইলিশের সর্বোতকৃষ্টতার পক্ষপাতি। টিটাগাংয়ের পাব্লিক আবার গোত্তা সাইজের ইলিশ পছন্দ করে। কিছু নারী আছে বিশালধারী কিন্তু কমনীয়তা কম, চিটাগাংয়ের ইলিশ ঠিক সেরকম। যমুনার ইলিশ সবচেয়ে কুশ্রী, দেখতে যেমন স্বাদেও ঠিক তেমনি। পদ্মার ইলিশ আসলেই বেস্ট। তন্বী তরুণীর মতো পেলব, কমনীয়তায় ভরপুর, আবার সৌন্দর্য্যও অতুলনীয়
ইলিশের ভরা মৌসুমে বরিশাল নগরবাসীর রান্নাঘর এখন আর ইলিশের গন্ধে মৌ মৌ করেনা। প্রযুক্তির উন্নয়ন ইলিশ প্রক্রিয়াজতকরণেও চলে এসেছে। তাই আর এ শহরে ইলিশের অনুপস্থিতি শুধু হাহাকার বাড়ায়। নগরবাসীর সামনে দিয়েই প্যাকেটজাত হয়ে ইলিশ চলে যায় কলকাতাবাসীর সেবায়। বছর দুয়েক আগে বেহালায় এক খাবার দোকানে খাবার মেন্যু দেখে বললাম ইলিশ নেই। দোকানী জানালো দাদা ইলিশতো আপনাদের দেশের মাছ। আপনারা খেয়ে পড়ে যখন ছোট খাট দু একটি পাঠান তা আমাদের পাতে পড়ে। হোটেলে বিক্রি করার মতো সৌভাগ্য কি আমাদের আছে। মনে মনে গালি দেই ’হারামজাদা’ উল্টো গান গাচ্ছিস। আমাদের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে আমাদের মুখের গ্রাস কেড়ে খাচ্ছিস আবার মশকরা করছিস। ক্ষমতাসীনদের মধ্যে বিন্দুমাত্র দেশপ্রেম থাকলে ইলিশের জন্য শুধু ওপার বাংলা থেকে লুল ফেলেই জীবন কাটাতি।
অট. ইলিশের কথা মনে হলেই সাদেক আলী (আসল নামটা মনে নেই)র কথা মনে পড়ে, আর মনে পড়ে জাটকা মাছ নিধন বন্ধে তার বিজ্ঞাপনটি। মাছের গুষ্ঠি দেখাও ফাল, লগে আনছি কারেন্ট জাল................ঝাকে ঝাকে জাটকা, ইলিশ খামু টাটকা, ইলিশ মাছের পোনারে, টাকার খবর সোনারে। সাদেক আলীকে খুব মিস করি। না ফেরার দেশে ভালো আছে নিশ্চয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১৩ বিকাল ৩:১১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




