ওরা আমাদের ঢোলী...
‘আমি টাক্ডুম টাক্ডুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল...।’ উত্তরের ঢাকি আর ঢোলীরা এখন মনের আনন্দে ঢোল বাজায় না। হিন্দু সমপ্রদায়ের ক্রমাগত দেশত্যাগ ও তাদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় সহসা আর ঢাকি-ঢোলীদের ডাক পড়ে না। অভাবে-অনটনে এখন তাদেরই বাড়িতে এখন বিসর্জনের বাজনা বাজে। পিঠে আর পেটে পড়ে অনবরত ঢাকেরবারি । এমন ¯^‡Mvw³ এ অঞ্চলের ঢোলী সমপ্রদায়ের। দূর্গা পূজাকে সামনে রেখে পড়ে থাকা ফাঁটা ঢোল ও ঢাকের চামড়া ছাউনি, দল (টানা) বেধে চামরা টান করা ও তা রঙিন করে সাজানো এসব কিছুর জন্য যে প্রয়োজনীয় অর্থ সে টুকুরও সংস্থান নেই তাদের । পূজো কমিটির কাছে আগাম কিংবা কোনো সুদ খোরের কাছে টাকা নিয়ে যেন এ সমপ্রদায়ের ঐতিহ্য রক্ষা করছে, এ অঞ্চলের ঢোলীরা। শুধু মাত্র জীবনের তাগিদে।
দেশের সবচে’ দারিদ্র পীড়িত এলাকা কুড়িগ্রামের উলিপুরের ধরণীবাড়ি গ্রামের নিতাই ঢাকি। ঢাকে ময়ূরপুচ্ছ লাগিয়ে আর রং-বে রঙের পোষাক পড়ে যে অনুষ্ঠানে উৎসবের আনন্দ বইয়ে দিতো সেই নিতাই’র অনাহার আর বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু ঢাকের গুরুগম্ভীর বাজনার মতো ঢাকিদের কাছে শোকাবহ। পাথরের মতো ভারী। তার প্রতিবেশীরা জানায়. ক’বছর আগের কথা। দূর্গা পূজা আর ক’ দিন বাদেই। বৃদ্ধ বয়সে নিতাইয়ের শরীর তখন বেশ দূর্বল। দুধ খেয়ে শরীর সবল করবে, ঢাকের ওজন বইতে । এ জন্য আগাম নিতে সে হাত পাতলো এক পূজো কমিটির কাছে। প্রতিশ্রুতি দেয় ঢাক বাজিয়ে টাকা শোধ করবে। দেবতার কাছে মন গলে সবার। কিন্তু নিতাইতো মানুষ। তাই সে আগাম পেলো না। এরপর পূজো এলো। পাঁচদিন পূঁজো প্যান্ডেলে রাত কাটিয়ে আর ঢাক বাজিয়ে যখন বাড়ি ফেরে তখন তার শরীরে প্রবল জ্বর। জীবনের ভার বইবার মতো শক্তি তখন তার শরীরে আর নাই। রাতভর প্রলাপ বকার পর অবশেষে নিতাইয়ের কষ্টে মা দূর্গা সারা দিলেন। নিতাইকে টেনে নিলেন। সমাজের অনেকে বললো- নিতাইটা ¯^M©evmx হলো। এর পরের কাহিনী আরো শোকাবহ। ¯^vgxnviv স্ত্রী পড়লো আরো নিদারুন কষ্টে । অর্ধাহারে-অনাহারে থেকে থেকে সে তার ¯^vgxi সবচেয়ে প্রিয় ঢাক সেটি বেচে দিলো পানির দরে, ক্রেতা না থাকায়। এরপর একদিন হারিয়ে গেলো সে, কোথায় তা আজ পর্যন্ত কেউ জানেনা।
নিতাইয়ের মতো ঢাক বাজাতো ক্ষুদু দাস। সে মারা গেলে ঢাক ঘাড়ে তুলে নেয় তার ছেলে কমল। কিন্তু তখন আর ঢাক চলে না। এলাকায় পূজো পার্বণ কম। পিতৃপুরুষের পেশা ছেড়ে পানের দোকান ধরে। পুঁজি ভেঙ্গে খেতে খেতে তাও একদিন বন্ধ হয়ে যায়। বেকার কমল দেশ ছাড়ে একদিন । তার ভাই অমল, আর ঢাক কাঁধে নেয়নি। সে এখন মানুষের বাড়িতে ফুট ফরমাশ খাটে, রান্নার কাজ করে।
রংপুরের মমিনপুরের বাসিন্দা নরেশ, দিপেন ও সুনীল। ঢাক বাজিয়ে কেমন চলে - জবাবে তার জানায়, বংশ পরম্পরায় ঢাক বাজিয়ে চলতো তাদের সুখের সংসার। তখন রংপুরের নাম ছিলো রঙ্গপুর। এখন আর রঙ্গ নেই, সেই রসও নেই। বছরে তিন বার মাত্র ডাক আসে তাদের। দূর্গা, কালী আর mi¯^Zx পূজায়। তাই আর চলে না। ক্ষেতমজুরী দিয়ে কোনমতে বেঁচে আছেন তারা।
চিলমারীর রাণীগঞ্জের গিরীশ ঢাকির একটি বাজনদারের দল ছিলো। বিয়েবাড়ি, পূঁজো-পার্বণে তারা খুব ডাক পেতো । গিরীশ নিজে সানাই বাজাতো, ছেলে গৌরাঙ্গ বাজাতে ঢোল কিংবা ঢাক। করকা নামে ঢোকৃতির একটি বাদ্যযন্ত্র ছিলো সেটা বাজাতো তার ছোট ভাই বিষ্ণু । যা বাজালেই কর্ কর্ কর্ র্ র্ র্ করে উঠতো। সঙ্গে সঙ্গে ডুম্ ডুম্ করে বেজে উঠতো ঢোল। তারপর মেতে উঠতো বিয়ে বাড়ির এয়েতিরা। এখন এদের দলটি ভেঙ্গে গেছে। গ্রামে-গঞ্জে ডাক আসেনা বলে। এখন এরা সকলে চলে গেছে ইন্ডিয়ায়। দেশে বেড়াতে এসে স্মৃতি রোমন্থন করে এ কথাগুলো বললো গৌরাঙ্গ।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:৪৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





