somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রংপুর অঞ্চেলর আদালত ও থানা থেকে যুদ্ধাপরাধী দালালদের মামলার নথি গায়েব

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১০:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :






গনহত্যা, খুন, ধর্ষন, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের অভিযোগে অভিযুক্ত স্বাধীনতা বিরোধী যুদ্বাপরাধী দালাল চক্রের বিচারের জন্য তৎকালীন দায়ের করা মামলার নথিপত্র খন্দকার মোস্তাক সরকারের আমলে সংশ্লিষ্ঠ থানা এবং আদালত থেকে গায়েব করা হয়েছে। স্বাধীনতার ৩৮ বছর পর আবার নতুন করে তাদের বিচারের দাবি ওঠায় রংপুর অঞ্চলের সংশ্লিষ্ঠ আদালত গুলোতে খোঁজ নিয়ে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় যুদ্ধাপরাধী কুখ্যাত রাজাকার, আলবদ্ত, আল্‌সামশ্‌ ও দালালদের বিচার করতে হলে আবার নতুন করে অভিযোগ সংগ্রহ করে মামলা রেকর্ড করতে হবে বলে এলাকার বিশিষ্ঠ আইনজীবিরা অভিমত ব্যাক্ত করেছেন।

জানাগেছে, স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে রংপুর জেলার পাঁচটি মহকুমার থানা ও আদালতে দালাল ও যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছিলো । আদালতে এসব মামলার বিচার কার্যক্রমও শুরু হয়েছিলো। সাধারণ ক্ষমা ও বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর মামলার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে গেলে দালালরা জেল থেকে মুক্তি পেতে শুরু করে। এরপর মুক্তি পাওয়া যুদ্ধাপরাধি দালালরা তৎকালীন সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতে থাকে। এরই অংশ হিসেবে তারা আদালত থেকে কাগজপত্র সরিয়ে ফেলে। শুধু আদালতই নয়, এসব দালালদের সংশ্লিষ্ঠ থানার পুলিশরা গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করলেও বর্তমানে থানাগুলোতেও এর কোনো নথিপত্রের হদিস পাওয়া যায়নি। থানাগুলোতে বর্তমান কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন ঐ সময় রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে অনেক কিছু ঘটে গেছে। এখন আমরা যারা কর্মরত আছি তারা এ সম্পর্কে কিছুই জানিনা। এছাড়া বর্তমান নিয়মানুযায়ি কোনো থানাতেই ১০ বছরের বেশী পুরাতন মামলা বা জিডি’র রেকর্ড-পত্র সংরক্ষণ করা হচ্ছে না’।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের ( তৎকালীন রংপুর জেলা ) তিনটি এলাকায় এদেশীয় দালাল রাজাকারদের সহযোগীতায় ৩টি এলাকায় বড় ধরনের গনহত্যা ও নারী ধর্ষনের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে বিহারীদের সহযোগী দালাল ও রাজাকাররা সৈয়দপুরে ট্রেন যোগে সাধারণ মানুষজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়ার নাম করে পথিমধ্যে ট্রেন থামিয়ে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়। যারা এই হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিলো তাদের অধিকাংশ হিন্দু ও মাড়োয়ারী। এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত অনেকে এখনো সৈয়দপুরে নিবিঘ্নে অবস্থান করছে। যারা ৭২’এ যুদ্ধাপরাধের জন্য আটক হয়ে জেলের ঘানি টেনেছিলো।

প্রথম প্রতিরোধের প্রহরে ৭১’র ২৮ মার্চ রংপুর ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও করার সময় নির্বিচারে গুলি চালিয়েছিলো পাক বাহিনী। এরপর ঐ ঘটনার জের ধরে রাজাকার ও আলসামশ্‌ বাহিনীর সহযোগীতায় ক্যান্টনমেন্ট এলাকা সংলগ্ন নিশবেতগঞ্জ, দহিগঞ্জ শ্মশ্বান ও দমদমা ব্রীজ এলাকায় চালানো হয় গনহত্যা। রাজাকার বাহিনীর সহযোগীতায় বিভিন্ন স্থান থেকে নারী যুবতীরদের ধরে এনে রংপুর টাউন হলে আটকে রাখা হতো। এরপর পাশবিক নির্যাতন চালানোর পর হত্যা করা হতো তাদের। এসব গনহত্যা চালানোর নেপথ্য নায়ক তৎকালীন রংপুর জেলার রাজাকার কমান্ডার দেশ স্বাধীেনর পর পালিয়ে থাকলেও বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর প্রকাশ্যে বেরিয়ে আসে। বর্তমানে তিনি সদর উপজেলার একটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।

সবচেয়ে বড় গনহত্যার ঘটনা ঘটে কুড়িগ্রামের উলিপুরের হাতিয়া ইউনিয়নে। স্বাধীনতার লাল সূর্য্য তখন পূব আকাশে উঁকি দিচ্ছে। ঈদের মাত্র কয়েক দিন আগে ২৭ নভেম্বর ভোর রাতে ঐ গ্রামটি ঘিরে ফেলে পাকসেনা ও রাজাকার বাহিনী। তখন গ্রামের মানুষরা কেবল সেহেরী খেয়ে ঘুমিয়েছে মাত্র। অনেককে ঘুমন্ত অবস্থায় মেরে ফেলা হয়, আবার অনেককে দাগারকুঠি নামক একটি মাঠে সারিবদ্ধ করে গুলি চালানো হয়। মাত্র ঘন্টা খানেকের ব্যাবধানে হত্যা করা হয় ’ ৭শ' ১৯ জন নিরীহ মানুষকে। এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ছিলো উলিপুর থানার শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান , হাতিয়া ইউনিয়নের এক সাবেক চেয়ারম্যান ও স্থানীয় মাদ্রাসার এক প্রিন্সিপাল। এদের মধ্যে শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান যুদ্ধাপরাধের জন্য আটক ছিলো। তার কুকর্মের দলিল-পত্র ঢাকাস্থ মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য জমা আছে। কিন্তু তিনিও রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে জেল থেকে বেরিয়ে আসেন।

সমপ্রতি থানা, রংপুর ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে ও জি, আর, ও শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৭২’এর অনেক সাধারণ মামলা মোকদ্দমার নথিজাত কাগজ পত্র পাওয়া গেলেও দালাল আইনে আটক ব্যাক্তিদের মামলার কোনো নথি-পত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি। একটি নির্ভরযোগ্য সুত্র জানায়, বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর আদালত থেকে ওই সব রেকর্ড-পত্র সরিয়ে ফেলা হয়। তবে সাংবাদিকদের কাছে এ ব্যাপারে কোর্ট সংশ্লিষ্ঠ কেউ মুখ খুলতে রাজী হননি।
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়ায় গনহত্যা ও দালাল আইনে আটক মামলার নথি-পত্র সম্পর্কে উলিপুর থানায় খোঁজ করলে থানার ওসি জানান, তার কাছে ১০ বছরের বেশী পুরাতন কোনো রেকর্ড সংরক্ষন করা নেই। শুধু তার থানা নয়, বর্তমান নিয়মানুযায়ি কোনো থানাই ১০ বছরের বেশী পুরানা কাগজ সংরক্ষন করে না। একই কথা বলেছেন রংপুর কোতোয়ালী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
এ ব্যাপারে রংপুরের বিশিষ্ঠ আইনজীবি এড. অশোক চক্রবর্তী জানান, মামলার নথি-পত্র গায়েব হওয়ায় যুদ্ধাপরাদীদের বিরুদ্ধে মামলা করতে হলে আবার নতুন করে অভিযোগ করতে হবে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×