যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ার বিপক্ষে জনমত তৈরি করতে জামাত তাদের সর্বস্ব সাংগঠনিক শক্তি নিয়োগ করেছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচারপত্র বিলি, কেনো যুদ্ধাপরাধের বিচার করা যাবে না - এ সম্পর্কিত আইনি ব্যাখ্যা mম্বwjZ পুস্তিকা, লিফলেট ও বুকলেট বিতরণ সহ তারা নতুন করে তাদের সহযোগী সদস্য সংগ্রহ করার জন্য করতে পুরুষের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক মহিলা নেতা কর্মীদের মাঠে নামিয়েছে। যে এলাকায় জামাতের সাংগঠনিক শক্তি দূর্বল সেখানে পার্শ্ববর্তী জেলা বা উপজেলা থেকে সার্বক্ষণিক কর্মী বাহিনী এনে এ প্রচারনা চালানো হচ্ছে। প্রচারণায় আকৃষ্ট করতে মিলাদ মাহফিল, তাফসিরুল কোরআন অনুষ্ঠান এমনকি তাবলীগ জামাতের আদলে এক মসজিদ থেকে আরেক মসজিদে রাত্রী যাপন করছে জামাতের নেতা কর্মীর দল। এসব প্রচারণায় বর্তমাণ সরকার ইসলামের শত্রু ও দেশ থেকে ইসলাম ধর্মকে উৎখাত করতে চায় এমন কথাও বলা হচ্ছে।
এদিকে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাঠগড়ায় জামাত নেতাদের যাতে না দাঁড়াতে হয় এ লক্ষ্যে সরকারের উপড় আন্তর্জাতিক ভাবে চাপ সৃষ্ঠির জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে বৃটেন ও আমেরিকার দু’টি সংস্থাকে লবিস্ট হিসেবে নিয়োগ করেছে বলে জামাতের একটি নির্ভরযোগ্য সুত্র নিশ্চিত করেছে।
বিভিন্ন জেলা থেকে পাওয়া তথ্য ও জামাত নেতা-কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সরকার যুদ্ধাপরাধিদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করলে সবচে’ ক্ষতিগ্রস্ত হবে জামায়াতে ইসলামী। এ অবস্থায় তাদের সংগঠন তছনছ হয়ে যাওয়ার আশংকা থেকে দেশ ব্যাপী তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ার বিপক্ষে জনমত গড়ার ব্যাপক কর্মসূচী হাতে নেয়। এসব কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে দাওয়াত সপ্তাহ, প্রচারপত্র বিতরণ, খুলি ও মসজিদ বৈঠক, বাড়ি বাড়ি প্রচারণা সহ গৃহিণীদের উদ্বদ্ধকরণ।
জামাত মনে করে, বাড়ির গৃহিণীদের বিষয়টি বোঝাতে সমর্থ হওয়া গেলে এই গৃহিণীরাই তাদের স্বামী-সন্তানদের যুদ্ধাপরাধের বিপক্ষে অবস্থান নিতে সক্ষম হবে। এ ধারণা থেকেই এই কর্মসূচীকে প্রাধান্য দিতে জামাত তাদের বিপুল সংখ্যক নারী নেতা-কর্মীদের মাঠে নামিয়েছে। বিভাগ ওয়ারি কর্মূচির আওতায় বর্তমাণে তারা এখন উত্তরাঞ্চলে তাদের ক্র্যাশ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে বলে জামায়াতে ইসলামীর একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
গত শনিবার গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা থেকে আসা ৭০ জনের একটি মহিলা জামাত নেতা-কর্মীর দলকে দেখা গেছে কুড়িগ্রামের উলিপুর পৌর এলাকার বিভিন্ন বাসা বাড়িতে তারা তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছেন। ৭০ জনের এই দলটি ৭ থেকে ১০ জনের গ্রুপে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন বাড়িতে অবস্থান নেয়ার পর সেখানে কোরআন তাফসীর ও ইসলাম সম্পর্কিতক আলোচনা হবে এমন ঘোষণা দেয়। এজন্য তারা পাড়ায় পাড়ায় মহিলাদের নির্দিষ্ট স্থানে ও সময়ে উপস্থিত থাকার জন্য দাওয়াত দেয়া হয়। সেখানে ধর্ম নিয়ে প্রাথমিক আলোচনার পর তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি সুকৌশলে উপস্থাপন করা হয়।
দাওয়াতে অংশ নেয়া একাধিক গৃহিণী জানান, সেখানে উপস্থিত হওয়ার পর বলা হয় - এ সরকার ক্ষমতায় থাকলে মুসলমানরা তাদের ধর্ম পালন করতে পারবে না। দেশ থেকে ইসলামকে উৎখাত করে ফেলবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে দেশের আলেম-ওলেমা ও পীর মাশায়েখদের ফাঁসিতে ঝোলানো হবে। তাই মুসলমান নারী হিসেবে প্রতেকের কর্তব্য তাদের স্বামী ও সন্তানকে বোঝানো- এই অবস্থা থেকে দেশকে রক্ষা করা দরকার। এমনি ধর্মীয় অনুভুতিকে কাজে লাগিয়ে জামাত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ার বিপক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছে। একই ধরণের প্রচার কার্যক্রমের খবর পাওয়া গেছে, নীলফামারী, রংপুর, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট ও বগুড়া থেকেও।
এদিকে, সুন্দরগঞ্জ থেকে সুফিয়া বেগম নামের এক জামাত নেত্রী সমকালকে জানান, সুন্দরগঞ্জ এলাকায় জামাতের অবস্থান ভালো হওয়ায় সেখান থেকে তাদেরকে পার্শ্ববতী উপজেলা উলিপুরে তাদের একটি টিমকে পাঠানো হয়েছে। তারা ৬/৭ দিন এই এলাকায় থেকে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা শেষে আবার নিজ এলাকায় ফিরে যাবেন। এরপর পরবর্তী নির্দেশ এলে সেই মোতাবেক আরেক এলাকায় কার্যক্রম শুরু করবেন। তিনি আরো জানান, এ পর্যন্ত তারা গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ি উপজেলার বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় যুদ্ধাপরাধের বিচার বিরোধী প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। উলিপুরে আসা এ দলটি জামাতের সার্বক্ষণিক নারী কর্মী বলেও সমকালকে উল্লেখ করেন।
এদিকে জামাতের বিলিকৃত পুস্তিকা পড়ে দেখা গেছে, কেনো যুদ্ধাপরাধের বিচার করা যাবে না এ সংক্রান্ত আইনি ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। জামায়াত নেতৃত্বের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ মিথ্যা বানোয়াট উদ্দ্যেশ্য প্রণোদিত নামের ওই পুস্তিকার ১৪ ও ১৫ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করে দুই তৃতীয়াংশেরও অধিক আসনে জয়লাভ করার পর আওয়ামিলীগ ও তার পরামর্শ দাতারা এই জোট ভাঙ্গার জন্য অন্য কৌশল হিসেবেই যুদ্ধাপরাধী ইস্যুটি সামনে নিয়ে আসে এবং ব্যাপকভাবে জামায়াত বিরোধী প্রচার অভিযান শুরু করে। সংবাদপত্র, স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল ছাড়াও সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম গঠণ করে কোটি কোটি টাকা খরচ করে জামায়াতের বিরুদ্ধে একটি প্রচার যুদ্ধ পরিচালনা করে। ..... শুধু রাজনৈতিকভাবে জামায়াত নেতাদের হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য যুদ্ধাপরাধ এর রাষ্টীয়ভাবে মিমাংসিত ইস্যুকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে’।
১৯৭৩ যুদ্ধাপরাধ সংক্রান্ত ট্রাইবুনাল সম্পর্কে ওই পুস্তিকায় আরো বলা হয়, ... ঐ আইনতো ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধী বলে চিহ্নিত পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তাদের জন্য করা হয়। এখন যদি ঐ আইনে বিচারের নামে প্রহসন করা হয় এবং ট্রাইবুনাল গঠন করে শাস্তি দেয়ার অপচেষ্টা চালানো হয়, তাহলে তা হবে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ঘৃণ্য পন্থায় মানবতা ও মানবাধিকার বিরোধী পদক্ষেপ। কারণ বাদী পক্ষের নিযুক্ত বিচারকের আদালতে কখনো সুবিচার পাওয়ার আশা করা যায় না।
এই পুস্তিকা আমীরে জামায়াতের আহবান ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, চিন্তা গবেষনার ক্ষেত্রে এক ব্যাপক বিপ্লব... নামে একটি ফ্ল্যাপ্ ও সহযোগী সদস্য ফরম বিলি করা হচ্ছে।
জামাতের একটি নির্ভরযোগ্য সুত্র নিশ্চিত করেছে, সরকার যাতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে জামাতের কোনো নেতা কর্মীর নামে মামলা বা বিচার করতে না পারে এ লক্ষ্যে বর্তমান সরকারে উপর আন্তর্জাতিকভাবে চাপ সৃষ্ঠির জন্য বৃটেন ও আমেরিকার দু’টি সংস্থাকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে লবিস্ট নিয়োগ করেছে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১০:১০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





