somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধারাবাহিক উপন্যাস : রঙমহল , পর্ব - ৮

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ সকাল ১০:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ধারাবাহিক উপন্যাস : রঙমহল
= পার্থসারথি

কী বলছ, ঠাকুরপো,.. মনে যা আসে তাই বল,.. রাসময়ী দেবী অনিমেষের কথা একদম বিশ্বাস করছে না।
শোন এসব এখন ইতিহাস তবে বেশি দিনের পুরনো নয়। এইতো গত শতাব্দীতেও ছিল ; রাজা রামমোহন রায় , ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর আর লর্ড বেন্টিঙ্কের প্রচেষ্ঠায় এ জঘন্যতম রাহুগ্রাস থেকে আমরা মুক্তি পেয়েছি। তবে এর পথ পরিক্রমা খুবই কষ্টের আর ত্যাগের।
রাসময়ী দেবীর কন্ঠ থেকে অস্ফুট স্বর বের হয়ে আসে- ঠাকুরপো, তুমি এসব কী বলছ?
হ্যা, সত্যিই বলছি বউদি। আগের নিয়ম চালু থাকলে এখনও দেখতে পেতে কী নির্মম এ’ দৃশ্য! একটু কল্পনা কর।
মমতাময়ী দেবী চুপচাপ বসে আছেন। কারণ সতীদাহর কথা অনেক শুনেছেন তবে দেখেননি। সতীদাহের অনেক করুণ কাহিনীও শুনেছেন। ঘাটের মরাদের কাছে কণ্যাদায়গ্রস্ত পিতারা তাদের নিষ্পাপ কন্যাদেও তুলে দিতেন। কন্যাদায়গ্রস্ত পিতাদের কন্যারা জীবনে কোনকিছুই পেয়ে দেখেন নি। অভাবগ্রস্ত পিতাদের কাছে পায় নি ন্যূনতম আহারের নিশ্চয়তা। ঘাটের মরাদের কাছে হস্তান্তরের পর কোন কিছুই পায় নি। ঘাটের মরারা দেবে কী, ওরা তো নিতেই ব্যস্ত। শেষ পর্যন্ত নিষ্পাপ কন্যাদের সঙ্গে করে নিয়ে যেত। তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না,না? তবে মাকে জিজ্ঞ্যেস কর।
রাসময়ী দেবী শ্বাশুড়ীর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকান। মমতাময়ী দেবী চুপচাপ। নীরবতা সম্মতির লণ ; রাসময়ী দেবী সবই বুঝে নেন।
সমাজের এ কুতসিত রীতিকে রীতিমত কঠিন আইন করে তবে এর সমপ্তীর সূত্রপাত ঘটিয়েছিল। তারপর দীর্ঘ ইতিহাস। এইতো বড়জোড় সোয়াশ’ বছর হবে। ভাবতে পার! আর আজ আমরা একশ’ বছর পেরিয়েও পেছনের দিকে হেটে চলেছি। এর কোন মানে হয়?
মমতাময়ী দেবীর কন্ঠস্বর আলগা হয়ে আসে- অনি, এসব নিয়ে বেশি নাড়া-চাড়া করো না। অমঙ্গল বৈ মঙ্গল কখনও হবে না।
অনিমেষ বেশ শান্ত স্বরেই বলে- মা, তুমি ঠিক বলনি। নাড়াচাড়া পড়েছিল বলেই সতীদাহ প্রথার রাহুগ্রাস থেকে আমরা মুক্ত হতে পেরেছি। আর এই জাত-পাতের রাহুগ্রাসে আটকে থাকলে কখনও এগিয়ে যেতে পারব না।
রাসময়ী দেবী কৌত’হলের ছলেই বলে ফেলেন- তুমি এগিয়ে কোথায় যেতে চাও ঠাকুরপো ?
অনিমেষ বিজ্ঞের মত বলে চলে- আমাদের বাবা তো ব্যবসার কাজে বৃটিশদের সাথে মিশেছেন শুনেছি। শুনেছি উনি ওই ফিরীঙ্গিদের সাথে খেয়েছেন, কই বাবাকে তো কেউ কিছু বলেনি। এমন তো শুনিনি, বাবাকে এক ঘরে করে রেখেছিল।
মমতাময়ী দেবী এবার প্রতিবাদ করে ওঠেন- অনি, তোর বাবাকে নিয়ে কোন কথা বলবি না। উনি স্বর্গে গেছেন। উনাকে শান্তিতে থাকতে দে.,.।
না মা, আমি বাবাকে কিছুই বলিনি। বাবা যা করেছেন ঠিকই করেছেন। আমি বাবু নারায়ণ সরকারের ছেলে হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। কারণ আমার বাবার লেখাপড়ার গন্ডী অল্প হতে পারে। কিন্তু উনি মেধা, প্রজ্ঞায় আর মননশীলতায় ছিলেন অনেক উচু স্থানের সম্মানিত ব্যক্তিত্ব । আমি আমার বাবার আদর্শকে বুকে লালন করি; আমার কাছে ধর্ম নয় প্রথমে মানুষ আপন। তারপর ধর্মেও বাণী জীবনে প্রয়োগ করব। বেচে থাকলে ধর্মেও প্রয়োজন আছে। তবে সমাজের শাসিত কু-নিয়মের শৃংখলে আমি নিজেকে আটকিয়ে পঙ্গু করতে চাই না। এর চেয়ে পশুর জীবনও অধিক শ্রেয়। কারণ ওদেও খাবার-দাবার নিয়ে কখনও চিন্তিত থাকতে হয় না। মানুষই যদি হব তবে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ রেখে চলতে পারব না।
মমতাময়ী দেবী এবার চোখ রাঙিয়ে বলেন- অনি, তোকে মিশতে বারণ করিনি।
অনিমেষ বুঝতে পারেন ; কথা আর বাড়ানো উচিত হবে না। কারণ পরিবর্তন একদিনে হয় না। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ অপো করতে হয় ত্যাগের বিনিময়ে। মায়ের মনে সামান্যতম সূè পরিবর্তনের আচ পায় অনিমেষ। আর বউ’দি তো সাথে আছেই। শুধু মা'র জন্য বউদি চুপচাপ আছে। চলবে,..


০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×