ধারাবাহিক উপন্যাস ׃ রঙমহল
পার্থসারথি
জ্বী ।- হাবিবের সংক্ষিপ্ত উত্তর।
গিন্নীমা , ফজলু সাহেব বড়কর্তার খুব ঘনিষ্ট লোক ছিলেন।
নামটা শোনার পর মমতাময়ী দের্বীও মনে পড়ে যায় ; স্বামী নারায়ণ সরর্কারও বেশ বলতেন ফজলুর রহমান সাহেবের কথা। বেশ পরোপকারী লোক। মমতাময়ী দেবী জানতে চান- তোমার বাবা কেমন আছেন ?
আব্বা গতবার ইন্তেকাল ফরমাইয়াছেন।- বলে হাবিব একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন।
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মমতাময়ী দেবী উচ্চারণ করেন- ভগবান উনাকে যেন স্বর্গবাসী করেন। তোমার আব্বাজান চলে গেলেন আর আমি জানতেই পারলাম না।
কী করে জানবে মা ?- অনিমেষ কিছুটা হামলা করেই বলে।
কেন !- মমতাময়ী দেবীর চোখে-মুখে রাজ্যের বিস্ময়।
ওদের সাথে তো আমাদের ওঠা-বসা নেই। সুতরাং না-জানাটাই স্বাভাবিক।
মমতাময়ী দেবী দু:খ ভরা কন্ঠেই বলেন- অনি , তুই সত্যি কথাই বলেছিস বাবা। র্তোর ওপর শুধু শুধু রাগ করি। তা হাবিব তোমার আম্মাজান এখন কেমন আছেন ?
জ্বী, আল্লাহর রহমতে ভালই আছেন।
আমার আদাব জানিও তোমার আম্মুকে।
জ্বী, আচ্ছা জানাব।
এবার খাবারের প্লেটের দিকে তাকিয়ে মমতাময়ী দেবী বলেন- একি ! বাবা, তুমি কিছুই খেলে না ?
হাবিবের মুখ থেকে আবার কথা কেড়ে নিয়ে অনিমেষ বলেন- ও খাবে কী, আমি হলে এতণ বসতামই না।
হাবিব মমতাময়ী দেবঅর উদ্দেশে বলেন- খালাম্মা, কিছু মনে করবেন না। আমি এখনই খাচ্ছি- এই বলে খুবই আড়ষ্ট হাত বাড়ায় প্লেটের দিকে।
মা একটু বস না !- অনিমেষ বলতে বলতে মমতাময়ী দেবীর এক হাত ধরে টেনে নিয়ে এসে একটা চেয়ারে বসালেন।
কোন সাড়া-শব্দ না করে রাসময়ী দেবী্ও বৈঠক ঘরে প্রবেশ করলেন। অনিমেষ খুশীতে আটকানা হয়ে বলেন- বা ! এই না বলে বউ’দি। তোমাকেই দরকার। না, বলতেই তুমি এসে হাজির। এ যেন মেঘ না চাইতেই জল। এস, বউ’দি বস বস।- মমতাময়ী দেবীর পাশের চেয়ারটা দেখিয়ে অনিমেষ বললেন।
রাসময়ী দেবী উনার শ্বাশুড়ীর পাশের চেয়ারে বসলেন। মুখে হাসির বর্ণচ্ছটা খেলে যাচ্ছে। হাসির রেশ টেনেই বললেণ- তা’ ঠাকুরপো এই অভাগিনীকে যদি এতই দরকার তবে ডেকে পাঠালেই পারতে।
তোমাকে ডেকে পাঠাব কী, আমি তো সেই কখন থেকে ঘুর ঘুর করছি। তোমাকে ডাকার সুযোগই পাচ্ছি না। যাক ভালই হল। কী বলিস হাবিব ?
হাবিব মুচকি মুচকি হাসে ; এখন্ও আড়ষ্টভাব কাটাতে পারেনি। অনিমেষের সাথে বন্ধুত্ব অনেক দিনের। কিন্তু বাবু বাড়ীতে খুব একটা আসা-যাওয়া নেই। ইদানিং অবশ্য আসা যাওয়া হয়। তবে অনিমেষের মা এবং বউ’দির সামনে এভাবে বসে কখন্ও কথা হয় নি।
অনিমেষ হাবিবকে যেন খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলেন। তারপর খোচা দিয়ে বললেন- কিরে হাবিব তুই এমন করে ছোট হয়ে যাচ্ছিস কেন ?
হাবিব কোন কথা বললেন না। মমতাময়ী দেবী ও রাসময়ী দেবীর দৃষ্টি এখন হাবিবের ওপর। হাবিব যেন আরও গুটিয়ে যেতে লাগলেন।
রাসময়ী দেবী হাসতে হাসতে বললেন- এই যে ঠাকুরপো, এত লজ্জা কিসের ? আমি তো তোমার বউ'দি। আর মাকেও তো তুমি তোমার মায়ের মত মনে করতে পারো নাকি ?
হাবিব আড়ষ্ট ভাব কাটাতে সচেষ্ট হয়ে বলেন- না বউ'দি, লজ্জা কিসের। আমি ঠিক আছি।
অনিমেষ আবার খোঁচা মেরে বলেন- তাহলে তুই এভাবে গর্তেও ভেতর ঢুকে যাচ্ছিস কেন? লজ্জাই যদি না পাচ্ছিস তবে সোজা হয়ে বস। এত লজ্জা পেলে নাটক করবি কী করে?- শেষের কথাগুলো বলে মা ও বউ'দির দিকে দৃষ্টি ফেলেন অনিমেষ।
বউ'দির চোখ জোড়ায় মুহূর্তেই ভর করে রাজ্যের উদগ্রীবতা। এবং উচ্ছ্বাস ছাপিয়ে বলেই ফেলেন- তোমার বন্ধু নাটক করেন না-কি?
অনিমেষ এবার হাফ ছেড়ে বাঁচে এবং নিজেকে নিজে ধন্যবাদ জানায় মনে মনে। যাক তাহলে আসল কথাটা বলা হয়ে গেল। সুযোগে অনিমেষ বলেন- এর জন্যই তো হাবিব আমাদের বাড়ীতে এসেছে।
মমতাময়ী দেবী ও রাসময়ী দেবী আগ্রহভরা দৃষ্টি নিয়ে তাকালেন।
অনিমেষ সুযোগের সদ্ব্যবহার করেন এবং বলেন- সামনে মাসেই আমাদের নাটক মঞ্চস্থ হবে। ওতে হাবিব নায়িকার পার্টটা করবে।
আর তুমি নিশ্চয়ই নায়কের পার্ট ?- মুচকি হাসিটা ঠোটের উপর জড়িয়ে রেখে রাসময়ী দেবী অনিমেষকে বলেন।
হাবিব এবার বেশ অবাক হয়েই বলেন- বউ'দি আপনি কী করে জানলেন !
গব জানতে হয় না। কিছু কিছু জিনিস আন্দাজে বুঝে নিতে হয়। তোমরা দু’জন হলে হরিহর আত্মা। একজন যদি নায়িকা হবে তো আরেকজন কী হবেন সেটা তো বুঝতে অতি সহজ। তাছাড়া তুমি দেখতেও অনিমেষের চেয়ে সুন্দর। তা তোমাদের নাটক আমার দেখার ভাগ্য হবে তো ?
তোমরা বসে বসে গল্প কর, আমি চা পাঠিয়ে দিচ্ছি- এই বলে মমতাময়ী দেবী ধীর পদে চলে গেলেন।
রাসময়ী দেবী নিজেকে কিছুটা গুটিয়ে নিলেন এবং অনিমেষের উদ্দেশে বলেন- ঠাকুরপো, মা রাগ করেন নি তো !
অনিমেষের সাফ সাফ জবাব- মা রাগ করার কোন প্রশ্নই ওঠে না। যাক , যা বলছিলাম বউ'দি।
রাসময়ী দেবী বেশ আগ্রহ নিয়ে তাকান।
আমাদেও নাটকের রিহার্সাল পুরোদমে চলছে।
তো বেশ ভাল। কিন্তু মেয়েদের পার্টগুলো মেয়েদেও দিয়ে করালে ভাল হতো না ?
ওই বলা পর্যন্তই। এই তল্লাটে কেন, আশপাশের কোন গ্রামেও মেয়ে অভিনেত্রী পাওয়া দুষ্কর। হাবিবকে মেয়ে সাজালে কেউ বুঝতেই পারবে না।
হাবিব লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে যান। এবং অনিমেষের জবাবে বলেন- তোকেও কিন্তু দারুণ মানাতো।
রাসময়ী দেবী হাসতে হাসত গড়িয়ে পড়েন। কোন মতেই হাসি থামাতে পারছেন না।
অনিমেষ এবার একটু বিরক্তিভাব নিয়ে বলেন- বউ'দি, আসল কথায় আসি। যে জন্য তোমাকে খুজছিলাম। আমাদের নাটকের জন্য বেশ টাকা-কড়ির দরকার। খুব চিন্তায় আছি। শেষে-না নাটকটা বন্ধ হয়ে যায়। প্লিজ বউ'দি, তুমি যদি একটু সাহায্য কর! নয়ত হাবিব কিন্তু খুব কষ্ট পাবে। চলবে,..

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




