somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধারাবাহিক উপন্যাস ׃ রঙমহল , পর্ব - ১১

০৩ রা জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ১০:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ধারাবাহিক উপন্যাস ׃ রঙমহল
= পার্থসারথি
নাটক-পাগল অনিমেষ নিজের কথাটুকু হাবিবের ওপর চালিয়ে দিলেন। হাবিব বুঝতে পেরেছে বউ'দিকে একটু নরম করবার প্রয়াসে অনিমেষের চালাকি। তা' করুক, তবুও যদি নাটকটা হয়।
তুমি বল আমি তোমাকে কীভাবে এবং কতটুকু সাহায্য করতে পারি।
তুমি নাটকের অর্ধেক খরচ দিবে। আর বাকী অর্ধেক আমরা বন্ধুরা মিলে জোগাড় করব।
রাসময়ী দেবী এবার একটু রহস্য করে বলেন- দেখি তোমার জন্য কতটুকু করতে পারি। অবশ্য হাবিব ঠাকুরপো বলে কথা, কিছু একটা তো করতে হবে।
প্লিজ বউ'দি অর্ধেক খরচ তোমাকে যেভাবেই হোক দিতে হবে।
রাসময়ী দেবী খুব কষ্ট করে হাসি চেপে রেখে একটু গম্ভীর হতে চেষ্টা করেন। কিন্তু হাবিব আর অনিমেষের মেঘাচ্ছন্ন মুখমন্ডল দেখে নিজেকে আর সামলাতে পারলেন না ; ফিক করে হেসে দিলেন, ঠিক আছে ঠাকুরপো কোন চিন্তা করো না। আমি রাজী, তবে একটা শর্তে ।
অনিমেষ এবং হাবিব একই সাথে উদগ্রীব হয়ে রাসময়ী দেবীর দিকে তাকিয়ে থাকেন। অনিমেষ বেশ দৃঢ়তার সঙ্গেই বলেন- তোমার যে কোন শর্ত আমরা বিনাশর্তে মানতে রাজী আছি।
রাসময়ী দেবী- আমি একদিন তোমাদের রিহার্সেল দেখব।
একদিন কেন, তুমি যদি চাও তবে প্রতিদিনই দেখাতে পারব।- অনিমেষের উত্তর।
এটা কি সম্ভব না-কি?- রাসময়ী দেবী একটু অবাক হয়েই বলেন।
হাবিব মাঝখানে বাগড়া দেন- আমি বউ'দির সামনে রিহার্সাল করতে পারব না।
অনিমেষ হাবিবের কথা একদম পাত্তা দেয় নি ; বউ'দিকে বলেন- বউ'দি তুমি যদি সাহায্য কর তবে তোমার শর্ত আমি অবশ্যই পালন করবো।
কীভাবে সম্ভব ?
প্রয়োজনে আমাদের কাছারি ঘরে রিহার্সাল করব।
সত্যি বলছ !- রাসময়ী দেবী বেশ উৎফুল্ল হয়েই বলেন।
সত্যি, সত্যি, সত্যি- তিন সত্যি বলছি। তবে বড়'দা যেদিন বাড়ীতে থাকবেন সেদিন বাদে।
তোমার বড়'দাকে আমি দেখব।
অনিমেষ খুশীতে আটকানা ; বউ'দি তোমাকে কী বলে যে ধন্যবাদ দেব বুঝতে পারছি না। দেখেছিস হাবিব, আমি তোকে বলেছিলাম না ? বউ'দি না করবে না ।
হাবিব বেশ খুশী হয়ে বলেন- আমি কিন্তু বউ'দির সামনে ,..।
হাবিবের কথা শেষ করতে না দিয়ে অনিমেষ বলেন- আরে ধ্যেত! সে চিন্তা পরে হবে।
হাবিবের হাত ধরে টানতে টানতে অনিমেষ বলেন- চল, বউ'দি আসি কাজ আছে। পরে তোমার সাথে কথা বলব।
হাবিব এবং অনিমেষ ঘরের বাইরে ব্যস্ত পা বাড়ায়।
রঘুনাথ দরজার আড়ালে দাড়িয়েছিল। রাসময়ী দেবী বৈঠক ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই প্রবেশ করল রঘুনাথ। এক হাতে গামছা জোড়ায় মুঠি দিয়ে ধরা আর অন্য হাতে থালা প্লেট গুছিয়ে নিয়ে চলে গেল।

***

প্রতিদিন বিকাল চারটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে নাটকের রিহার্সাল। সার্বিক তত্ত্বাবধানে রাসময়ী দেবী। প্রথম দিকে অবশ্য মমতাময়ী দেবী আপত্তি জানিয়েছিলেণ। অনিমেষের ঐকান্তিক চেষ্টায় তা' সম্ভব হয়েছে। রিহার্সাল চলছে প্রায় পনের দিন। ইদানীং মমতাময়ী দেবীও ফাকে ফাকে এসে চুপি দিয়ে যান। রিহার্সাল শুরু মানেই কাছারী ঘর গমগম করে। বাবু বাড়ীর সবার মনোযোগ এই ঘরটির দিকে। রিহার্সাল শুরুর সাথে সাথে এক এক করে সবাই চুপি দেয় আবার কেউবা কতণ দাড়িয়ে থাকে। মেঝো ভাই শম্ভুনাথ্ও ব্যাপারটা জানে কিন্তু ব্যবসায়িক ঝামেলার দরুণ এসবের খবরাখবর রাখে না। শুধু জানেন না প্রিয়নাথ বাবু। বলি বলি করেও রাসময়ী দেবী বলতে সাহস পান নি। যদিও রিহার্সাল হচ্ছে কাছারী ঘরে ; ও ঘরে মুসলিমদের আসা-যাওয়া সেই অনেক আগ থেকেই; যার জন্য মমতাময়ী দেবীও তেমন আপত্তি করেন নি।
রাসময়ী দেবী আজ ঝা হৃদয়বালা দেবীকে সঙ্গে করে নিয়ে বসেছেন। হৃদয়বালা দেবীর মাঝে নতুনের সংকোচ এখন্ও কাটেনি। অবশ্য হৃদয়বালা দেবী প্রথমে আসতে চান নি। রাসময়ী দেবীর পীড়াপীড়িতে এসেছেন। এসে লাজুক দৃষ্টি নিয়ে চুপচাপ বসে আছেন। কিন্তু রাসময়ী দেবী রিহার্সালের মাঝে এটা-ওটা মন্তব্য ছুড়ে দিচ্ছেন যেন উনি নিজেই নির্দেশনার কাজে নিয়োজিত আছেন। হৃদয়বালা ঘোমটার নীচে চুপি চুপি হাসছেন। বিশেষ করে হাবিব যখন মহিলা কন্ঠে ডায়ালগ বলেন।
পুরো গ্রামেই কথাটা মোটামুটি ছড়িয়ে পড়েছে যে, বাবু বাড়ীর অনিমেষ বাবু একটা নাটক বানাচ্ছেন। মঞ্চ বানিয়ে সে নাটক পুরো গ্রামের লোকজনকে দেখাবে। এমনকি রিহার্সাল হচ্ছে ওই বাবু বাড়ীর কাছারিতে। কেউ কেউ আগ্রহভরা দৃষ্টি নিয়ে এগিয়ে যায় এবং রিহার্সাল দেখে আসে। তবে গ্রামের কিছু লোক এটাতে সমাজ নষ্টের গন্ধ পায়। বিশেষত শেখদের সাথে বেশি মেলামেশাটা ওদের একদম না-পছন্দ। শেখদের সাথে মেলামেশা কর ভাল কথা, তাই বলে একেবারে বাড়ীর ভেতরে নিয়ে গিয়ে রঙ-তামাসা ! তা'ও আবার বাড়ীর বউ-ঝি'রা শেখ বেটাদেও সামনে বেহায়ার মত বসে থাকে। ধর্ম বুঝি আর থাকল না। ঘোর কলি কালের বুঝি এই শেষ। বাবু বাড়ীর ছেলেগুলো হিন্দুদের জাত আর রাখবে না।- এমন অনেক কথা অবশ্য বিভিন্ন মুখে মুখে ঘুরে ফিরে অনিমেষের কানে আসে।
অনিমেষ কখন্ও রাগ করে না ; ওদের দোষ দিয়ে লাভ কী, ্ওদের তো আর এমন শিক্ষা নেই যা'তে করে ওরা বুঝতে পারে যে, মানুষ মানেই মানুষ। ধর্মের নামে ভেদাভেদ টেনে কিছু দুষ্ট এবং সুবিধাবাদী লোক তৃপ্তির ঢেকুড় তুলে এবং নিজেদেও আধিপত্য বজায়ের হাতিয়ারটা পোক্ত রাখে। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ থাকাটা অন্যায়।
নাটকটা অনিমেষের লেখা। যা'তে জাত ভেদাভেদ আর ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে মানুষে মানুষে এক হবার কথা ফুটে ওঠেছে। মানুষ মানুষের ভাই, বন্ধু, আত্মীয় এবং সবসময়ের সাথী। ধর্ম যার যার এবং সম্প্রীতি সৃষ্টির বলয়ে আমরা সবাই এক। আমার ধর্ম আমার কাছে, তোমার ধর্ম তােমার কাছে।
অনিমেষ, হাবিব, রাখাল, মজিবর এবং বৈদ্যনাথ ওরা একই কাসের বন্ধু। ওরা একসঙ্গে চলাফেরা করে এবং এই নাটকের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ফাক পেলেই ওরা সমাজের আনাচে কানাচে লুকিয়ে থাকা দু:খ-কষ্টগুলোকে মুছে ফেলতে চেষ্টা করে। কিছুদিন আগের এক ঘটনায় এক কন্যাদায় গ্রস্ত পিতা মুক্তি পেল। টাকার অভাবে মেয়ের বিয়ে দিতে পারছিলেন না ; ওরা পাচ বন্ধু মিলে ওই টাকা জোগাড় করে দেয়। এ’কথাটা অবশ্য অনেকেই জানে। কেউ হয়ত অসুস্থ ; টাকার অভাবে কবিরাজ দেখাতে পারছে না তখন ওরাই এগিয়ে যায়। মোট কথায় সমাজসেবী। এসব নানাবিধ কর্মকান্ডের জন্য ওরা পুরো গ্রাম জুড়েই ভাল ছেলে বলে পরিচিত। কেউ কেউ শুধু অতিরিক্ত মেলামেশা আর একসাথে উঠা-বসাকে গ্রাহ্য করতে পারছে না। মাঝে-মধ্যে হাবিব ও মজিবর রাগ করে মেলামেশা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু অনিমেষের কারণে আর দূরে থাকতে পারে না।
বেশ কিছু বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও নাটক সুন্দরভাবে মঞ্চস্থ হয়েছে। শেষ পর্যন্ত গ্রামের মুরুব্বিরা আগ্রহের সাথে উপস্থিত হয়ে নাটক দেখেছেন। এমনকি গ্রামের মহিলারাও এ নাটক দেখার সুযোগ পয়েছেন। মঞ্চের সামনে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা আলাদা বসার ব্যবস্থা করতে হয়েছিল। চলবে,..

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×