রাসময়ী দেবী বাবার বাড়ীতে এসেছেন তিনদিন হল। রাসময়ী দেবীর দু:শ্চিন্তা তার সংসারের কী হল কে জানে! উদগ্রীব হয়ে আছেন চলে যাবার জন্য। কিন্তু মা স্বরস্বতী দেবী উনার মেয়েকে আরও ক’টা দিন কাছে পেতে চান। পীড়াপীড়ি করাতে আজ্ও রয়ে গেলেন।
চৌধুরী বাড়ী ; একসময় বেশ প্রভাব ছিল ; যেমন ছিল বিত্তবৈভব তেমনি ছিল প্রভাব। গ্রামের লোকজন এ বাড়ীটাকে এবং এ’বাড়ীর লোকজনদেরও বেশ সম্মান ্ও সমীহ করেই চলত। বিপদে-আপদে চৌধুরী বাড়ীতে সবাই ছুটে আসত। কিন্তু বর্তমানে তার কোনটাই নেই। কিছুদিন আগেও এ’বাড়ীর সুনাম বেশ সুরক্ষিত ছিল। বর্তমানে তার ছিটে-ফোট্াও নেই।
পিতা বিশাল চৌধুরীর মুত্যুর পর সুদর্শন চৌধুরী চলেছেন পিতার ঠিক বিপরীত আদর্শ নিয়ে। কাজকর্ম বলতে তো কিছুই করেন না তার ্ওপর কার কী জবর দখল করে ভোগ করা যায় তা নিয়েই সর্বণ ব্যস্ত থাকেন। বিশেষ করে কোনরকম উপার্জন না থাকাতে বংশ পরম্পরায় পাওয়া বিশাল সম্পত্তি এক এক করে বিক্রি করে শেষ করেছেন। আর কারও না কারও সাথে জমি সংক্রান্ত অথবা অন্য কোন মামলা-মোকদ্দমা লেগেই আছে। প্রতি পদে পদে কুটবুদ্ধি খাটাতেই ব্যস্ত সময় কাটান সুদর্শন চৌধুরী । বারান্দায় বসে বসে হুকা টানছেন আর ধ্যানমগ্ন হয়ে ভাবছেন মেয়ে রাসময়ী দেবীর শ্বশুড়ের রেখে যাওয়া বিষয় সম্পত্তির কথা।
রাসময়ী দেবী পাশ দিয়েই যাচ্ছিলেন; সুদর্শন বাবু ডাক দিলেন। কাছে এসে রাসময়ী দেবী দাড়ালেন এবং জানতে চান- বাবা, কিছু বলবে ?
পাশের চেয়ারটা দেখিয়ে দিয়ে বলেন-বস মা, তোমার সাথে জরুরী কিছু কথা আছে।
রাসময়ী দেবী শাড়ির আচল ঠিক করতে করতে চেয়ারটায় বসেন। এবং কিছু একটা শোনার জন্য উদগ্রীব হয়ে তাকিয়ে থাকেন।
হুকায় একটা লম্বা টান দিয়ে ধোয়া ছাড়তে ছাড়তে সুদর্শন বাবু বলতে শুরু করেন- তোমরা তো আমার কথাটা শুনলে না।
কী কথা বাবা ?
কেন তোমাকে আর প্রিয়নাথকে যে বলেছিলাম, তার কতটুকু কী করলে?
রাসময়ী দেবী চুপ থাকেন। দৃষ্টি মাটির দিকে।
শোন এখন চুপ করে থাকলে জীবনে কিন্তু আপসোস করেও কুল পাবে না।
রাসময়ী দেবী কোন কথা বললেন না। কিন্তু সুদর্শন বাবু বলেই চলেন- শোন মা, তোমাদের বয়স অল্প তাই এখন বুঝতে পারছ না। কিন্তু পরে বুঝলেও কোন লাভ হবে না।
বাবা, আমার শ্বশুর মহাশয় যেভাবে রেখে গেছেন তাতে কেউ ঠকবে না। তাছাড়া আমার সব দেবররা তোমার জামাইয়ের কথাতেই চলে। তোমার জামাই যা বলে ্ওরা তাই মেনে নেয়।
শোন, প্রিয়নাত দিনরাত পরিশ্রম করে এ সম্পত্তি আগলে রেখেছে। নয়ত বার ভূতে লুটেপুটে খেত। আর বাকীগুলো ধর্মের ষাড়ের মত ঘুরে বেড়ায়। যত ঝক্কি-ঝামেলা ্ওই প্রিয় নাথের। ্ও,..হ্যা,.. অনিমেষ, ্ওইটাতো সারাদিন নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়াতেই ব্যস্ত।
বাবা অনিমেষ এখন্ও লেখাপড়া করছে। লেখাপড়ায় খুব ভাল।
্ওর ভাল দিয়ে তোমার কী হবে। সতীন শ্বাশুড়ীর ছেলে কোনদিন কাজে আসবে না। একটা কথা জেনে রাখবে পর কোনদিন আপন হয় না।
রাসময়ী দেবী মনে মনে ভাবেন ; শ্বাশুড়ী মমতাময়ী দেবীতো মায়ের চেয়েও বেশি আদর করেন। কোন ছেলেকে উনি কখন্ও ভেদাভেদ করে দেখেন না। যেমন ভালবাসেন অনিমেষকে তেমনি অন্য সবাইকে। তাছাড়া অনিমেষ হল পরোপকারী ছেলে নিজের চেয়ে পরের মঙ্গলটাকেই বেশি প্রাধান্য দেন। ত্রিনাথটা একটু ভবঘুরে টাইপের। না লেখাপড়া করে না ব্যবসায় জড়িত হতে চায়। বড়’দা বলতে পাগল। তবে ্ও নিজেরটা বেশ ভাল বুঝে। দেবর শম্ভূনাথটা খুবই ন্যায়বান লোক। কম কথা বলার লোক। এবং ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রিয়নাথের একমাত্র সার্বক্ষণিক সঙ্গী।- রাসময় দেবী ভাবতে ভাবতে বেশ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন।
কী ব্যাপার, কোন কথা বলছিস না যে ?- সুদর্শন বাবু বেশ বিরক্তিভাব নিয়ে তাকান এবং আর্বাও বলেন- আমি কিন্তু তোর মঙ্গলের জন্যই বলছি। তুই জামাই বাবাজিকে একটু বুঝিয়ে বলিস। কিছুণ ভেবে আবার বলেন- থাক, তোকে কিছু বলতে হবে না, আমিই সব বুঝিয়ে বলব।
রাসময়ী দেবী কোন কথা না বলে উঠে চলে যান। গিয়ে সোজা মায়ের পাশে একটা পিড়ি টেনে বসেন। মা কিরণবালা দেবী রান্না-বান্না নিয়ে মহাব্যস্ত ; অনেকদিন পর আজ জামাই বাবাজী আসছেন।
মা তুমি তো সারাদিন রান্নার পেছনেই সময় কাটালে। অসুস্থ হয়ে যাবে তো। তাছাড়া তোমার জামাই বাবাজীর কী কোন ঠিক আছে ; হঠাত হয়ত খবর পাঠিয়ে দিল আজ আর আসতে পারবে না ; অমুক জায়গায় যেতে হচ্ছে।
মা প্রশ্নবোধক দৃষ্টি নিয়ে তাকান।
রাসময়ী দেবী- হ্যা মা, আমি ঠিকই বলছি। ্ওকে তো আমি চিনি।
দেখিস , অবশ্যই আসবে। তুই যেমন চিনিস আম্ওি চিনি জামাই বাবাজী কথার হেরফের করেন না। দেখবি ঠিক ঠিকই এসে হাজির হবে।- এই বলে কিরণবালা দেবী রান্নায় মনোযোগী হন।
আচ্ছা মা, মানলাম তোমার জামাই বাবাজী আসবে কিন্তু তাই বলে এত আয়োজন! ্ও কী এত কিছু খাবে নাকি ?- রাসময়ী দেবী মাকে এমনতর কথা বলে মায়ের কাজ কমাতে চায়।
তুই কী বুঝবি, আগে শ্বাশুরী হয়ে নে তারপর বুঝবি।
আমার এতকিছু বুঝতে হবে না মা। তুমি যেভাবে পরিশ্রম করছ আবার না অসুস্থ হয়ে পড় !
এই এতটুকুনে আমার কিছু হবে না। তাছাড়া রান্না-বান্না আমার প্রায় শেষ। এবার মিষ্টান্নটুকু শেষ করেই ্ওঠব। চলবে ,..

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




