যে গান আমি বুনি আমার শব্দে
যে কথা আমি লিখি আমার গল্পে
তাহা বাংলা,বাংলা,বাংলা!শুধুই কি বাংলা নহে ?
যে কথা আমি বলি এই ভাষাতে
যাহা নাহি পারি বলিতে আর কোন ভাষাতে
তাহা বাংলা,বাংলা,বাংলা!! শুধুই কি বাংলা নহে ?
যে ভাষার তরে দিয়েছি প্রান
যে ভাষার তরে শহীদের রক্ত বহমান
তাহা বাংলা,বাংলা,বাংলা!! শুধুই কি বাংলা নহে ?
মায়ের মুখের বুলি আর আচলের ঘ্রাণ
কোথা সেই শান্তি আর মান
তাহা বাংলা,বাংলা,বাংলা!!শুধুই কি বাংলা নহে?
মা, মাতৃভূমি আর মাতৃভাষা !!! একে অন্যের সাথে এমন রুপে ঠাসা যে আলাদা করে দেখার আসলে জোইই নেই।আর এটি বোধয় কিছু উষ্ণ রক্তের তরুণদের কাছে আরও বেশী অর্থক ছিল আমাদের চেয়েও। তাই হয়ত আজ আমরা আমাদের ভাষায় কোথা বলি আর বাস করি আমাদের ভূমিতে।
এই পৃথিবীর সবচেয়ে “আবেগ পাগল”(আবেগপ্রবনতা আমাদের জন্য নহে) জাতি যারা তার মাতৃভুমির জন্যই নয় বরং প্রান দিয়েছি তার ভাষার জন্যও বটে। আমরা গর্বিত এবং আমাদের গর্বের জায়গাটিতে যদিও কোন স্বীকৃতি বা অনুমোদনের প্রয়োজন নেই তবুও আমরা আনন্দিত ইউনেস্কো আমাদের এই ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এটি অদ্বিতীয় একটি নিদর্শন যা আর হবে কিনা সন্দেহ।
ভাষা মানুষকে পূর্ণ করে । ঠিক আমাদের জাতিকে যেমন পূর্ণতা এনে দিয়েছিল আমাদের ভাষা আন্দোলন । ইতিহাসের দিকে যাচ্ছি না তবে একটু দৃষ্টি দিতে চাই বর্তমান আর ভবিৎসতের দিকে।
ভাষা নিয়ে কিছু আতলামি যুগে যুগে সব ভাষাতেই ছিল এবং আমাদের এইখানেও আছে তবে আমাদের একটু বেশীই বৈকি ঐযে বলেছি “আবেগ পাগল” তবে এইখানে এটিই ভাল দিক যে আমাদের চিন্তায় আমরা বাংলা এখনো আছে এবং তাই আমরা চিন্তা করি এবং সমালোচনা করি।
প্রথমে একটি বিষয় খেয়াল রাখা প্রয়োজন আমাদের ভাষার ব্যাবহারকারী যদিও শুধুই আমরা তবে যেহেতু আমাদের ভাষা, সেহেতু এটি একরকম আমাদেরই দায়িত্ব হয়ে পড়ে যে আমাদের ভাষাটিকে “প্রমট” করা এবং এই দায়িত্ব এখন আরও সুবিশাল হয়ে ন্যাস্ত হয়েছে আমাদের উপর কেননা এটি আন্তর্জাতিকভাবে এখন স্বীকৃত।
এখন প্রশ্ন হল একদিনের “ভাষা উৎসব” (২১শে ফেব্রুয়ারি) উদযাপন করে দায় শেষ করার সময় বোধয় শেষ হয়ে গিয়েছিল বহু পূর্বেই কিন্তু সেটা অনুধাবন করে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবার উপায় এখনও বোধ করি বের করতে পারিনি যা আসলেই পরিতাপের বিষয়।
আমাদের পরিকল্পনা এবং চিন্তাগুলি আসলে গরম ভাতের ধুয়ার মতন শেষ হয়ে যায় কিছুদুর পরেই। তাই আমাদের প্রথমে উচিৎ দিন থেকে বের হয়ে মাসে প্রবেশ করা এবং ধীরে ধীরে সেটি হতে হবে গোটা বছরব্যাপী । তাই তার পথ পরিক্রমায় আমি আমাদের ভাষার মাসটিকে গুরত্ত দিতেই আজ আমার লিখাটি লিখলাম কিছু আবেগ প্রকাশ এবং অসমাপ্ত কাজের দিকে নজর দিব বলে।
আবেগের পর যেই কাজগুলির কথা বলবো সেগুলি আসলে সব দেশই যে করে তা নয় তবে আমাদেরকে করতে হবে কেননা ঐ যে আমাদের একটি দায়িত্বও বর্তায় আমাদের ভাষাকে প্রমট করার পাসাপাসি এটিকে সবার কাছে পরিচিত করেও তুলতে হবে কেননা আমাদের বাংলার একটি আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা এবং স্বীকৃতি আছে।
সেটির জন্য আমরা "ব্রিটিশ কাউঞ্চিল" "আমেরিকান সেন্টার" এরকম ইন্সটিটিউট গড়ে তুলতে পারি বিহিন্ন দেশে আমাদের দূতাবাসের তত্ত্বাবধানে এবং যদিও ফিনান্স একটি সমস্যা কিন্তু সরকার যদি একবার উদ্যোগ নেয় আমার মনে হয় পিছাতে হবে না কেননা আমাদের যেই পরিমান প্রবাসিরা আছেন তারা দেশ ও দেশের ভাষা এবং সংস্কৃতির প্রতি ভীষণরুপে আবেগপ্রবন এবং তারাই এই কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবেন বলে আমার ধারনা। প্রয়োজন একটু সুন্দর উদ্যোগের।
আর ভাষা নিয়ে কিছু আতলামিও আমাদের মাঝে যে ভাষার শুদ্ধি বজায় রাখতে হবে অথবা মিস্রন করা যাবে না ইত্যাদি ইত্যাদি, কিন্তু ইনারা ভুলে জান যে ভাষার মৌখিক রিতি পরিবর্তনীয় এবং পরিবর্ধনযোগ্য তাতে কিন্তু ভাষার স্থায়ী লিখিতরুপ সেটিতে আঘাত হানে না । ইংরেজির চেয়ে তো আমাদের ভাষা বেশী পরিবর্তন হচ্ছে না তাই না যেহেতু এটি আন্তর্জাতিক ভাষা এবং এর অন্য ভাষার ব্যাবহারকারিও বেশী। ভাষায় প্রতিদিন নতুন নতুন শব্দ আসবে এবং ভাষাকে করবে আরও সমৃদ্ধ । এতে করে আমরাও সক্ষম হব আমাদের নতুন নতুন অনুভুতিগুলু প্রকাশ করতে।
দেখুন এইবার সামনের দিনগুলির জন্য একটি কথা বলি আমাদের ভাষার উপরই আমরা সম্পূর্ণ নির্ভর হতে পারি অন্যদের ভাষার প্রয়োজন নেই। কখনই মনে করবেন না যে ইংরেজি ভাষার ভাষাভাসি বেশী হলেই যে আমরা এগিয়ে যাবো কেননা এতে করে কিন্তু জ্ঞ্যান অর্জিত হবে না দেখুন চীন,ভিয়েতনাম,উত্তর কোরিয়া,জার্মানি,ইতালি আরও কত আছে হিসেব করা যাবে না যেসব দেশে ইংরেজি ব্যাবহার হয় একেবারেই কম বরং এরা ওই ভাষার প্রতি শত্রু ভাবাপন্ন। সুতরাং এই যে নীতিনির্ধারকগণ যদি একটু কথা কমিয়ে কাজের দিকে মনোযোগ দেন বড় বড় বিজ্ঞ্যান এবং ব্যাবসায়ের বইগুলির বঙ্গানুবাদ করতে পারেন তাহলে আমার বিশ্বাস যে আমাদের ছেলে মেয়ে আরও বেশী জ্ঞ্যান অর্জন করতে পারবে কিন্তু না আমাদের রক্ত থেকে তো এখনো ব্রিটিশদের অভ্যাস যায় নি এখনো এইখানে দুই লাইন ইংরেজি বলা মানুষ বেশী প্রাধান্য পায় ,আমি নিজেও সেই সুভিধা নিয়ে থাকি কিন্তু একজন মানুষ অনেক জ্ঞ্যানি কিন্তু শুধু মাতৃভাষা বাংলাই জানে তাহলে কি সেই জ্ঞ্যানির জ্ঞ্যান জলে যাবে ? আমার মনে হয় ভাববার জায়গা রয়েছে অনেক এখনো।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:০৫