পর্ব ১
পর্ব ২
পর্ব ৩
মননের তখন ট্রেনিং চলছিল। সন্ধির শরীর খুব খারাপ। অনেক রকম জটিলতা দেখা দেয়। তার সাথে যোগ হয় কিছুই খেতে না পারা । মনন রান্নাবান্না, সেবা, অফিস সব কিছু একাই সামলাতে লাগলো। সব কিছুই ঠিক ছিল। কিন্তূ সন্ধি খেয়াল করলো মনন প্রায় সময়ই ঝিমায়। বড় বোতল থেকে আয়ুর্বেদিক বলে কাশির জন্য কি একটা ওষুধ খায়। সন্দেহ হয়। কিন্তূ মননকে বলে না কিছুই। কিছুদিন পর চলে আসে বাবার বাসায়।
অবশেষে অনেক প্রতীক্ষার পর এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। মননের পোস্টিং ঢাকার বাইরে। সন্ধির অস্থির লাগছে। মনন আসতে অনেক দেরী হবে। সারা রাত হাসপাতালের বেডে চললো স্যালাইন দেওয়া আর বিভিন্ন পরীক্ষা। আর আনাড়ি টাইপের ডাক্তারের কথাবার্তা। অনেক ভোরে মনন এলো । মননের হাত ধরে সন্ধির মনে হলো–সব ঠিক হয়ে যাবে। ভয়ের আর কিছুই নেই। সন্ধি যে ডাক্তারের আন্ডারে ছিল তিনি এলেন সকালে । এসেই বুঝলো অবস্থা বেশী সুবিধার না। আধ ঘন্টার মাঝেই সন্ধিকে ভয় পাবারও সুযোগ না দিয়ে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হলো। কিছুক্ষণ পরই তারা পেল এক স্বর্গীয় পরী। নাম রাখলো নীলিমা। নীলিমাকে নিয়ে বাসায় এলো। এর পরই শিওর হল মনন এখন ফেন্সিডিল খায়। অনেক মন খারাপ করে মননকে বোঝালো যেন এসব ছেড়ে দেয়। মেয়ের ভবিষ্যত, মান সম্মান সব কিছুর কথা চিন্তা করতে বলল । কেন খায় এ কথার জবাবে মনন বলে সন্ধির ব্যবহারের জন্যই নাকি সে এসব খায়। সন্ধি এ কথার মাথা মন্ডু কিছুই বুঝলো না। কিছুক্ষণ সেল্ফ ডিফেন্সের চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিল। তবে কথা নিল নীলিমার ৬ মাস বয়সের আগেই এসব ছেড়ে দিবে। ৬ মাস পর মনন বোঝালো সে এসব ছেড়ে দিয়েছে। সন্ধি আবারো বিশ্বাস করলো।আবারো ভুল করলো। কিছুদিন পরে দেশের বাইরে চীনে ১ বছরের জন্য একটি ট্রেনিং-এ মননের নাম এল । সন্ধি ভাবলো এবার একটা চাকরীর সন্ধান করতে হবে। নীলিমার ৮ মাস ৭ দিনের দিন মনন চলে গেল। সন্ধি তখন দ্বিতীয় বারের মতো কনসিভ করেছে। যা শুধুমাত্র মননের একারই সিদ্ধান্ত। সন্ধি এর কিছুই জানতো না। এ রকম কেন করলো জানতে চাইলে মননের সহজ সমাধান-“নষ্ট করে ফেল”। শুনে স্তম্ভিত হয়ে গেল সন্ধি। এত সহজ সমাধান? এত? এতটা সহজ???
খুব কষ্ট হচ্ছিল সন্ধির। নীলিমা এত ছোট। নিজের শরীর এত খারাপ। সব মিলিয়ে দম বন্ধ হয়ে আসতো ওর। ডেলিভারির দিন এগিয়ে আসছে আর সন্ধির ভয় বাড়ছে। মনন নাই। ভরসা পাচ্ছে না একদম। মনে হচ্ছে নীলিমাকে এতিম করে মরে যাবে। ঠিক হলো অপরেশনের আগে মনন ছুটি নিয়ে দেশে আসবে। আসার আগে বারবার বলল এয়ারপোর্টে যেন কেউ না আসে। খামাখা সবার কষ্ট। আসার পর ব্যাগ খুলতেই পেল ফেন্সিডিল জাতীয় ওষুধ। সন্ধি অনেক কান্নাকাটি করলো। এতদিন নিজের বা শ্বশুর বাড়ির কাউকেই জানায়নি মননের এই বাজে নেশার কথা। এবারও জানালো না কাউকেই। মনে করলো জানালে তো নিজের মাথাই নিচু হয়ে যাবে সবার সামনে। সন্ধির ভাবলো মা-বাবার মনে কষ্ট দেবার শাস্তি সে পাচ্ছে। আবার সেই অপারেশন থিয়েটার। আরেকটা ছোট পরীর জন্ম হলো। কি যে সুন্দর। নাম রাখলো রোদেলা। রোদেলার জন্মের পরপরই মনন ফিরে গেল চায়নায়। ফিরল্ রোদেলার বয়স যখন প্রায় ৬ মাস।
দু’কন্যাসহ এবার সন্ধি গেল সংসার করতে। কিন্তু সন্ধির ষষ্ঠ ইন্দ্রীয় কিসের যেন ছন্দ পতন টের পাচ্ছিল। মনন সবসময়ই দায়িত্ব সচেতন। সেটা পরিবারই হোক বা অফিস। এখনো তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু জীবন বীণার সুরে কোথায় যেন একটা ছেঁড়া তারের আভাস পাচ্ছিল। মননের কাছে অনেক জানতে চেয়েছে। কিন্তু মনন হেসে উড়িয়ে দিয়েছে সে কথা। এরই মাঝে সন্ধি কয়েকবার ফেন্সিডিল-এর অস্তিত্ব ঘরে ফেলেছে। মান-অভিমান-ঝগড়া সবই হয়েছে। মনন সারাদিনই এমন কি অনেক রাত পর্যন্ত অফিসে থাকে। বাসায় আসলে সারাক্ষণ থাকে কম্পিউটারের সামনে। সন্ধি আর ধৈর্য্য ধরে রাখতে পারে না।
সন্ধি: সারাদিন কম্পিউটারে বসে কি কর?
মনন: কাজ।
সন্ধি: এখানে এড্রেসে দেখছি সারিয়া তাসনীম। এটা কে?
মনন: ওর ভাই আমাদের সাথে চীনে গিয়েছিল্ । দূর্ঘটনায় মারা গেছে। ওখান থেকে ওদের ফ্যামিলিতে টাকা পাঠানো হয়েছিল সবাই চাঁদা তুলে। ফ্যামিলিটা নীডি। মেয়েটা স্কুলে চাকরী করে।
সন্ধির মনটা মায়ায় ভরে গেল। আহারে।
একদিন হঠাৎ করেই সন্ধি মননের ই-মেইলের পাস ওয়ার্ড জানতে চায়। মনন একটু চিন্তা করে বলে দেয়। সেদিনই সন্ধি মেইল চেক করে দেখে চীনে যেয়েই মনন বিভিন্ন ভাবে নতুন বন্ধুর সন্ধান করেছে। অনেকের মধ্যে থেকে এক ডিভোর্সি মেয়েকে ও পছন্দ করেছে বন্ধু হিসাবে। যার নাম “সারিয়া তাসনীম”। ওদের অনেক ই-মেইল পড়ে সন্ধি। যার কথা এবং বিষয়বস্তু অনেক বেশী নোংরা। রোদেলা হবার সময় মনন চীন থেকে আসার সময় এয়ারপোর্টে যেতে সবাইকে কেন নিষেধ করেছিল তাও স্পষ্ট হলো। কথা ছিল সারিয়া শাড়ী পরে এয়ারপোর্টে ওকে রিসিভ করতে আসবে।
এসব পড়ে সন্ধির খুব কষ্ট লাগে –যে সময়টাতে ও এত কষ্ট করেছে, একদিকে অন্ত:সত্ত্বা অপরদিকে ছোট্ট নীলিমা, মনন কাছে নাই-কি যে কষ্টের সময় পার করেছে। সারাদিন এস এম এস আদান-প্রদান করতো মনন-সন্ধি। এত এস এম এস ফোনে রাখা সম্ভব না আবার মননের লেখা এস এম এস ডিলিট করে দিতেও খারাপ লাগতো। এ জন্য সন্ধি সব এস এম এস যত্ন করে খাতায় লিখে রাখতো। মনন রোজ একবার করে ফোন করতো। এত কষ্টের মাঝেও সন্ধির তখন ফোনে মননের ভয়েস শুনলেই ভাল লাগায় সারা শরীর অবশ হয়ে আসতো। নিজেকে পৃথিবীর সেরা সুখীদের একজন মনে হতো।
অথচ সেই মনন এতটা প্রতারক? এতো বড় চিট! দু’জনের সাথে একই রকম আচরন একই সাথে-এটা কেমন করে পারলো মনন? কেমন করে? দু:খে-অপমানে মরে যেতে ইচ্ছা হলো। সারাক্ষণ মনে হতে থাকলো কেউ যেন হৃৎপিন্ডটা ছিড়ে বের করে নিয়ে আসতে চাইছে।
চলবে...

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




