উসমানী খেলাফত বা অটোম্যান সাম্রাজ্য যেসব কারণে ইতিহাস থেকে মুছে গেছে সে গুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান কারণ হল জাতীয়তাবাদ। এ ক্ষেত্রে আরব উপদ্বীপে(peninsula) ব্রিটিশ রানীর খরচ করা পাউন্ডগুলো বিফলে যায়নি বরং আরবে সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদ উস্কে দিতে সফল হয়েছিল। ভাষা এক হওয়া সত্ত্বেও আরবরা পরস্পরের দুশমন। অপর দিকে ভিন্ন ভিন্ন ভাষা হয়েও ইউরোপ আজ এক প্ল্যাটফর্মে। আরব জাতীয়তাবাদ অনেকটা, "পুঁথিগত বিদ্যা পর হস্তে ধন"-এর মত, যা কিনা "নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়োজন"। তবে পাউন্ড স্টারলিংয়ের সবচেয়ে বড় সফলতা হল মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া নামে খ্যাত ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। ফল স্বরূপ, আরবরা পেয়েছে নিজেদের ভূমিতে কর্তৃত্বহীনতা, রক্তের বন্যা এবং সীমাহীন লাঞ্ছনা।
অপর দিকে ভারতীয় উপমহাদেশে ইন্ডিয়ান রুপি গুলোও বিফলে যায়নি। দালাল শ্রেণীর, কবি-সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, পা-চাটা সুশীল সমাজ গড়তে গান্ধী মার্কা রুপির ভূমিকা অনস্বীকার্য। তবে রুপির সবচেয়ে বড় সফলতা হল, 'বিভক্ত' বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ নামে একটি নতুন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় হয়। তবে বাংলাদেশ অভ্যুদয়ের পেছনে ইন্ডিয়ান রুপিই একমাত্র চালিকা শক্তি নয়। পশ্চিম পাকিস্থানিদের জাতীয়তাবাদী মনোভাব এখানে বড় ভূমিকা পালন করেছে। তারা বাঙ্গালীদের ভাই বলে বুকে টানার পরিবর্তে নিজেদের কে শাসক আর বাঙ্গালীদেরকে ভেবেছে প্রজা। ফলশ্রুতিতে যা হওয়ার তাই হয়েছে। বাঙ্গালীরা উপায়ান্তর না দেখে বিভক্তির পথ বেছে নিয়েছে। বিনিময়ে পেয়েছে নিজেদের ভূমিতে কর্তৃত্বহীনতা, নিজেদের বাজারের নিয়ন্ত্রণহীনতা, সীমান্তে রক্তের বন্যা, পেয়েছে ফেলানির লাশ আর সীমাহীন লাঞ্ছনা।
(নোটঃ 'বিভক্ত বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ' বললাম কারণ, পশ্চিম বঙ্গের মত বাঙ্গালী অধ্যুষিত বৃহৎ একটি অঞ্চল আমাদের সাথে যোগ দেয়নি। যোগ দেওয়ার কোন তৎপরতাও চোখে পড়ে না। তাদেরই বা দোষ কি, বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসীদের উচিত ছিল তাদের মাঝে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন গড়ে তোলা এবং বাংলাদেশের সাথে যোগ দিতে উৎসাহিত করা।)
আমার ভিউ হচ্ছে, "কিছু যদি করতে চাই তবে নিজের যোগ্যতা দিয়ে করবো। কারো সহযোগিতা যদি চাইতেই হয় চাইবো, তবে নিজের স্বকীয়তা হারিয়ে নয়"। দুর্ভাগা বাঙ্গালীরা শুধু স্বাধীন স্বকীয়তা হারাচ্ছে তা নয় বরং বিকিয়ে দিচ্ছে।
মৌলবাদী বন্ধুবর 'হিজবুল্লাহ ' ফোনে একদিন কথা প্রসঙ্গে বলছিল, "এখন শীতকালীন ওয়াজ-মাহফিল খুব জমজমাটভাবে চলছে। কয়েকদিন পর আমাদের এখানে মাহফিল হবে। হাসেম মোল্লা ভাই প্রধান অতিথি থাকবেন"। আমি বললাম, "হাসেম মোল্লা ভাই তো সত্য বলতে দ্বিধা করে না, সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলে, সে ক্ষেত্রে পুলিশ প্রশাসন বা সরকার কিছু বলবে না"? সে বলল, "ও... লেডি হিটলারের কথা বলছ"! লেডি হিটলার বলতে কাকে বুঝাতে চাইছে, প্রথমে বুঝতে না পারলেও, বুঝতে খুব বেশি সময় লাগেনি। আমি বললাম, ব্যক্তিগতভাবে আমি হিটলারকে খুব পছন্দ করি। কারণ হিটলার যা করেছেন তাঁর নিজ জাতির শ্রেষ্ঠত্বের জন্য করেছেন। তাঁর(বাংলার লেডি হিটলার) মধ্যে যদি হিটলারের গুণাবলী থাকত অন্তত সীমান্তে কোন স্বজাতির (বাঙ্গালী) লাশ পড়ত না। পিলখানায় সেনাদের বেঘোরে মরতে হতো না। পার্বত্য অঞ্চলকে টেররিস্ট লিডার সন্তু লারমার হাতে ছেড়ে দিত না। সুতরাং ওনাকে লেডি হিটলার বলা উচিত নয়। এতে জাতীয়তাবাদী হিটলারের অপমান হয়।
বুদ্ধিমানেরা হয়তো বলতে পারেন হিটলার তো পৃথিবীর সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তি এবং শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের পদ্ধতিতে ভুল ছিল। শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের পদ্ধতিটা ভুল ছিল নাকি শুদ্ধ ছিল সেটা হিটলার জয়ী হলেই বুঝতে পারতেন। অন্যায় যেখানে প্রতিষ্ঠিত পরাজিতরা সেখানে সবসময় বেঠিক পথে থাকে, যদিও জয়ীরা পারমাণবিক বোমা ফেলে মানবজাতিকে ধ্বংস করতে দ্বিধা করে না তবুও তারা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকারী হিসেবে স্বীকৃত।
চার্লি চ্যাপলিন একটা কথা বলেছিলেন, "একজন মানুষকে হত্যা করলে আপনাকে 'হত্যাকারী' বলা হবে আর মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ হত্যা করলে আপনাকে 'বীর' বলে পুরস্কৃত করা হবে"। যেমন, লেনিন, স্টালিন, মাও সেতুং, বুশ। লক্ষ লক্ষ মানুষ হত্যা করেও তারা ত্রাণকর্তা হিসেবে পরিচিত। এখানে ব্যতিক্রম হল, এডলফ হিটলার। তিনি বীরত্বের সাথে লক্ষ লক্ষ মানুষ হত্যা করলেন কিন্তু আফসোস বীরত্বের পুরষ্কার পেলেন না, পেলেন বিশ্ববাসীর সীমাহীন ঘৃণা আর অভিসম্পাত।
জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে আমার মূল্যায়ন, ইহা একটি হাতিয়ার, যা দ্বারা নিজ জাতিকে ঐক্যবদ্ধ এবং শত্রু জাতিকে বিভক্ত করে দুর্বল করে দেয়। বাঙ্গালীরা যদি এই হাতিয়ারকে কাজে লাগাতে পারে তাহলে আমি বলব বাঙ্গালীরা দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম জাতি।
পুনশ্চঃ রাঘব বোয়াল কবি গুরু যেখানে ভারত মাতার জয়গান গেয়েছেন সেখানে আমি পোনা মাছ হয়ে যদি বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের ভাঙ্গা ঢোল বাজাই ব্যাপারটা 'সুশীল সমজ কিভাবে দেখবে' ভেবে ভয়ে আছি।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৭:৩৩