কথা যদি এভাবে বলি তাহলে সত্য মানুষ শেয়ার বোঝে না
আমাদের স্থানীয় সরকার দেশের মানুষ শেয়ার বাজার বোঝে না বলে মন্তব্য করেছেন। কথা বাস্তবে সত্যের আশপাশে আছে কিনা যারা শেয়ার বোঝে তারা হিসেব করে দেখুক। কালের কণ্ঠে সৈয়দ আশরাফের বক্তব্য দেখলাম তাতে বলা হয়েছে, "৯৯.৯৯ ভাগ মানুষ শেয়ার বাজার বোঝে না এবং তাতে জাতির আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটে না।" তিনি আরো বলেছেন, গণমাধ্যমে শেয়ার বাজার গুরুত্ব পাওয়ার মতো বিষয় নয়।
আমরা জানি না তাহলে কোন বিষয়টি তার কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। তিনি এটাও স্পষ্ট করেননি কে কে শেয়ার বোঝে। তিনি যদি কোন কোন বিষয় গুরুত্বপূর্ণ সে সম্পর্কিত একটি তালিকা দিতেন তাহলে আমরা অনেক কিছু বুঝতে পারতাম। আর সরকারের জন্য না নিজের জন্য সে সম্পর্কিত একটি বিষয় লিস্ট পেলেও আমাদের বুঝতে আরো সহজ হতো। যাইহোক, তার বক্তব্যে গণমানুষের আশা-আশাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে কিনা তা গণমানুষই বলুক। ছোট্ট করে বলে রাখি, প্রথম দিনের পৌরসভা নির্বাচনের ফলাফল সবার সামনেই আছে দেখে নিতে পারেন। মন্ত্রী মহোদয়ও নিশ্চয় দেখেন। আর না দেখার তো কোনো কারণও নেই, তিনি তো স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী। আর মন্ত্রণালয় তো সারা দেশের জনগণের সাথেই জড়িত। আবার তার উপর তিনি সরকার পরিচালনাকারী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে আসীন।
কথা যদি এভাবে বলি তাহলে সত্য যে ৯৯.৯৯ ভাগ মানুষই যদি শেয়ার মার্কেট সম্পর্কে সচেতন হতো বা বুঝতো তাহলে বাকি ০.০১ ভাগ মানুষ বাকি সবার অর্থ নিজের পকেটে নিতে পারতো না। স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর কথায় মাত্র ০.০১ ভাগ মানুষই বোঝে বলেই বাকিদের বোকা বানাতে পেরেছে। হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে শেয়ার থেকে যার খবর পত্রপত্রিকায় বলা হচ্ছে। বিভিন্ন টিভি আলোচনায় মিডিয়ায় শেয়ার কেলেঙ্কারীর কারসাজিতে কারা কারা জড়িত তাদের কথা আলোচনায় আসছে। এরা অবশ্যই দেশের মুষ্টিমেয় কিছু লোক। ঐ শতকরার বাকি ভাগেও আসে কিনা সন্দেহ। কোন কোন প্রতিষ্ঠান এই কারসাজির সাথে জড়িত তার ইঙ্গিত দেয়া হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী তো ইউনিপে২ইউ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নামও উল্লেখ করেছেন। তবে মনে হয় সেটা ভুলেই করেছেন। কেননা এটাও শোনা যাচ্ছে উনিপে২ইউ নামের এই প্রতিষ্ঠানের সাথে মন্ত্রীরাও জড়িত। কোনদিন যে এই প্রতিষ্ঠানকে আবার কে লাটে উঠায় বলা মুশকিল।
শেয়ার বাজারে জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটে না বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। কিন্তু বাস্তবে তো দেখেছি গত সপ্তাহ কি পরিমাণ উত্তপ্ত ছিল দেশ জুড়ে শেয়ায় নিয়ে। কারোরই সে খবর না দেখার কোনো কারণ আছে কিনা জানি না। আসলে দেশে লুটপাট, কারসাজি হাতে গোণা কিছু লোকই করে। এরা এসব বিষয় ভালো করেই বোঝে বলেই আর সকলকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজেদের ফায়দা হাসিল করে থাকে। আর আমাদের দায়িত্বশীলরা সংবাদের ভাষা শোনেন না বা দেখেও না দেখার ভান করেন বলেই এই শ্রেণীর সুবিধাই বাড়ে। কমার প্রশ্নই ওঠে না। আর পুঁজি হারানো, ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, অসহায় হওয়া সাধারণ মানুষের কান্না এদের দেয়াল ভেদ করে প্রবেশ করে বলে মনে হয় না।
একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছ থেকে যদি এধরনের কথা শুনতে হয় তাহলে তা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। সুবিদা ভোগীর আরো সুবিধা প্রাপ্তির লোভে নিষ্পেষণ বাড়াবে, তাতে জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জনগণের কান্না কান্নাই থেকে যাবে। জনগণকে এধরনেই কথা শুনতে হবে। আর জনগণ আশা আর ভাষা থাকবে ১২ তারিখের পৌরসভার ৭২টি আসনের ফলাফলের মতো। তাও অবশ্য এদের দৃষ্টিতে গোচরীভূত হবে কি?

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




