somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাংবাদিকদের সাংঘাতিক হয়ে ওঠা প্রশ্নবিদ্ধ বিবেক সর্ষের ভূতের আরো ভূতুরে আত্মপ্রকাশ

২৫ শে জুন, ২০১২ বিকাল ৪:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘটনাটা খুবই পীড়াদায়ক। সমাজের অন্যতম একটি শক্তিশালী স্তম্ভ ‘মিডিয়া’ আজ নিজেই আক্রান্ত। সমাজের যে আয়নায় মানুষ সমাজকে দেখতে চায়, দেখতে পারে, দেখতে ভালোবাসে তার জন্য যারা কাজ করছে তারা আজ নিজেরাই কঠিনভাবে আক্রান্ত। আবার তারাই আজ হিরো-জিরো-ভিলেনের ভূমিকায়। তাদের কেউ কেউ আজ দর্পন না হয়ে দাপুটে হওয়ার প্রচেষ্টায় লিপ্ত। আর এই দাপুটের যে প্রচেষ্টা এতদিন গোপনে ছিল তা আজ প্রকাশ্যে।

তারা আজ কি দেখাচ্ছে? এরাই বুঝি এতদিন বিবেকের তাড়না শিখিয়েছে আমাদের? এরাই বুঝি সমাজের দর্পণ? গোটা সাংবাদিক সমাজ কি এই শ্রেণির প্রতিফলন? না কি এটা একটি বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত ঘটনা?

সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের পর সাংবাদিক মহলের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম এটা একটি সুখকর বিষয়। সংবাদ শিল্পে কোনো মাফিয়া চক্র আছে কিনা তা আমাদের মতো পাঠকের কাছে বোধগম্য না হওয়াই স্বাভাবিক। তবে এখন মনে হচ্ছে এখানে এমন কোনো শক্তি আছে যারা ঐক্য চায় না। তারাই দীর্ঘদিন এই গোষ্ঠীকে বিছিন্ন বিভক্ত বিক্ষিপ্ত করে রেখেছিল। কয়েক জন সাংবাদিকের হাতে গোটা সমাজের মার খাওয়া প্রীতিকরও নয় সুখকর নয়।

২৪ জুনের সাংবাদিক কৃর্তক সাংবাদিক আক্রান্ত হওয়া ঘটনা গোটা দেশকে নাড়া দিয়ে গেল। এটিএন বাংলার কয়েক জন সাংবাদিকের হাতে গোটা সাংবাদিক সমাজ মার খেল। তবে যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রচেষ্টা সাংবাদিক গ্রুপগুলোর ভিতর ইদানীং লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে এই ঘটনা কোনো বিভক্তির রেখা টানতে পারেনি। হয়ত এটা ফাটলের একটি উদ্দেশ্যও হয়ে থাকতে পারে। কমিউনিটির ঐক্যচিন্তা তাদের ঐক্যকে এই ঘটনায় আরো শক্ত হয়ত করেছে। তবে গুটি কয়েক দাপটে শক্তির হাত থেকে সাধারণ সাংবাদিকরা কি স্বাধীন পেশাজীবী? প্রশ্নটা আরো জোরালো হলো।

এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমানের বিপক্ষে বক্তব্য দেয়ার এটিএনের সাংবাদিকরা ক্ষুদ্ধ হয়েছে। বক্তৃতার কথাকে তারা প্যাচ ধরেছে। অথচ বাস্তবে দেখা গেছে কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের মিডিয়াকেও দেখা গেছে যে কোনো ধরনের মামলা বা দোষ-নির্দোষ সম্পর্কিত বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে ব্যক্তি বিশেষের প্রতি কোনো আইনী ফায়সালা হওয়া বা অভিযুক্ত হওয়া ছাড়াই বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত করতে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যক্তি আক্রোশের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটাতেও দেখা গেছে। তীর ছোঁড়া হয়েছে নানা সময়ে নানা ব্যক্তির দিকে। এটা কমবেশি এই মিডিয়া দুটোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। সাংবাদিকরা যে জনগণের দোহাই দেয় সেই জনগণ হলুদ সাংবাদিকতা কি জিনিস তা অতীতে নানা সময়ে টের পেয়েছে। এখন বুঝতে পারছে এটা কেন হয়।

সাংবাদিকদের বিবেক বলা হয়ে থাকে বলে বাস্তব ক্ষেত্রেও অনেক জিনিস থেকেই তাদের বিবেককে সংযত রাখতে হয়। অথচ তারা সাংঘাতিক ক্ষেত্রে যে সাংঘাতিক হয়ে ওঠেন তা আবারো জনগণের কাছে পরিষ্কার করে দিল। অনভিপ্রেত অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা সাংঘাতিক ভাবে সাংবাদিক সমাজে ঘটে গেল। যে সাধারণ জনগণ সাংবাদিকদের ‘সাংঘাতিক’ হিসেবে ইঙ্গিত করতো, আজ তাদের কোটেই ‘সাংঘাতিক’ভাবে সাংবাদিকতার ‘সাংঘাতিক’ গুটি আপনা থেকেই এসে ধরা দিল।

যে অস্বস্থিকর ঘটনা সাংবাদিক সমাজের কলঙ্ক লেপন করল তা গোটা সাংবাদিক সমাজের জন্য সাংঘাতিক একটি কালো অধ্যায় হয়ে জায়গা করে নিলো। বিগত দিনগুলোতে পত্রপত্রিকায় সাংবাদিক নিপীড়ন-নির্যাতন, হয়রানী, হত্যার মতো ঘটনায় সাংবাদিক সমাজ যেখানে আতঙ্কিত সেখানে এসবকে আরো উস্কে দিল ২৪ জুনের ঘটনা। তাও আবার প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে, সাংবাদিকদের হত্যা, নিপীড়ন-নির্যাতন বিরোধী সমাবেশের ‘খোদ’ ভিতরেই। সর্ষের ভূত আরো ভূতুরে হয়ে উঠল বুঝি। এর পিছনে কারা জড়িত, কোন শক্তির বলয়ে এটা ঘুরপাক খাচ্ছে তা প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।

প্রায় অধিকাংশ প্রিন্ট, ইল্ট্রেনিক আর অনলাইন মাধ্যমের বক্তব্য এটিএন বাংলার দিকেই বিরুদ্ধেই। এই অনভিপ্রেত ঘটনার জন্য তাদেরকে দায়ী করলো। সিনিয়র জুনিয়র সহ জড়িয়ে পড়া এই ঘটনায় নয় সাংবাদিককে তাদের সংগঠনগুলো থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিতে হলো। অথচ এটিএন সাংবাদিকরা তাদের বক্তব্যকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ভাবে তুলে ধরে দোষ চাপিয়ে দিল উল্টো তাদের ঘাড়ে। ইটিভিকে দেখা গেছে একজন সাংবাদিক আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা ভাবে ডেকে নিচ্ছে আর এরপরই সংঘবদ্ধ আক্রমণের ঘটনা ঘটল। এটি তাদের পূর্বপরিকল্পিত কিনা জানি না। তবে পরিকল্পিত না হলে হলে বক্তৃতার সময় বাধা না দিয়ে প্রতিবাদ না করে আলাদা ভাবে ডেকে নিয়ে সকল এটিএনের সাংবাদিক একত্রে মিলে কিভাবে কাজটি করল? এটা মনে হয় সাংবাদিকতার মাস্তানী যা জনগণ গোপনে বুঝতো বলে গোপন রাখতো তা এখন প্রাকশ্য হলো।

তাদের মনঃপুত না হলে তো তারা নেতৃবৃন্দকে জানাতে পারতো। তাদের কাছে প্রতিবাদ জানাতো। তারা যেটা জাতিকে জনগণকে শিখাতে চায় সেটার বাস্তব ব্যবহারিক প্রয়োগ তারা দেখিয়ে সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারতো। উল্টো বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হলো। তারা যে বিবেকের কাছে প্রশ্ন তুলতো সেই প্রশ্নই আজ প্রশ্নবিদ্ধ বলে মনে হচ্ছে। তারা যে বিবেকের কাছে প্রশ্ন তুলত সেই বিবেকের কাছে তারাই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কিনা সেই প্রশ্ন আজ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে দেখা দিয়েছে।

সাংবাদিকদের সাংঘাতিক হয়ে ওঠা প্রশ্নবিদ্ধ বিবেক সর্ষের ভূতের আরো ভূতুরে আত্ম প্রকাশ এর কোনোটা প্রকৃতপক্ষে দেশের জন্য কল্যাণকর নয় তা শুধু আমরা জনগণ বুঝলেই হবে না তা গোটা সাংবাদিক সমাজকে নির্মমভাবে উপলব্ধি করতে হবে।

২৫.০৬.২০১২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×