ঘটনাটা খুবই পীড়াদায়ক। সমাজের অন্যতম একটি শক্তিশালী স্তম্ভ ‘মিডিয়া’ আজ নিজেই আক্রান্ত। সমাজের যে আয়নায় মানুষ সমাজকে দেখতে চায়, দেখতে পারে, দেখতে ভালোবাসে তার জন্য যারা কাজ করছে তারা আজ নিজেরাই কঠিনভাবে আক্রান্ত। আবার তারাই আজ হিরো-জিরো-ভিলেনের ভূমিকায়। তাদের কেউ কেউ আজ দর্পন না হয়ে দাপুটে হওয়ার প্রচেষ্টায় লিপ্ত। আর এই দাপুটের যে প্রচেষ্টা এতদিন গোপনে ছিল তা আজ প্রকাশ্যে।
তারা আজ কি দেখাচ্ছে? এরাই বুঝি এতদিন বিবেকের তাড়না শিখিয়েছে আমাদের? এরাই বুঝি সমাজের দর্পণ? গোটা সাংবাদিক সমাজ কি এই শ্রেণির প্রতিফলন? না কি এটা একটি বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত ঘটনা?
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের পর সাংবাদিক মহলের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম এটা একটি সুখকর বিষয়। সংবাদ শিল্পে কোনো মাফিয়া চক্র আছে কিনা তা আমাদের মতো পাঠকের কাছে বোধগম্য না হওয়াই স্বাভাবিক। তবে এখন মনে হচ্ছে এখানে এমন কোনো শক্তি আছে যারা ঐক্য চায় না। তারাই দীর্ঘদিন এই গোষ্ঠীকে বিছিন্ন বিভক্ত বিক্ষিপ্ত করে রেখেছিল। কয়েক জন সাংবাদিকের হাতে গোটা সমাজের মার খাওয়া প্রীতিকরও নয় সুখকর নয়।
২৪ জুনের সাংবাদিক কৃর্তক সাংবাদিক আক্রান্ত হওয়া ঘটনা গোটা দেশকে নাড়া দিয়ে গেল। এটিএন বাংলার কয়েক জন সাংবাদিকের হাতে গোটা সাংবাদিক সমাজ মার খেল। তবে যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রচেষ্টা সাংবাদিক গ্রুপগুলোর ভিতর ইদানীং লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে এই ঘটনা কোনো বিভক্তির রেখা টানতে পারেনি। হয়ত এটা ফাটলের একটি উদ্দেশ্যও হয়ে থাকতে পারে। কমিউনিটির ঐক্যচিন্তা তাদের ঐক্যকে এই ঘটনায় আরো শক্ত হয়ত করেছে। তবে গুটি কয়েক দাপটে শক্তির হাত থেকে সাধারণ সাংবাদিকরা কি স্বাধীন পেশাজীবী? প্রশ্নটা আরো জোরালো হলো।
এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমানের বিপক্ষে বক্তব্য দেয়ার এটিএনের সাংবাদিকরা ক্ষুদ্ধ হয়েছে। বক্তৃতার কথাকে তারা প্যাচ ধরেছে। অথচ বাস্তবে দেখা গেছে কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের মিডিয়াকেও দেখা গেছে যে কোনো ধরনের মামলা বা দোষ-নির্দোষ সম্পর্কিত বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে ব্যক্তি বিশেষের প্রতি কোনো আইনী ফায়সালা হওয়া বা অভিযুক্ত হওয়া ছাড়াই বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত করতে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যক্তি আক্রোশের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটাতেও দেখা গেছে। তীর ছোঁড়া হয়েছে নানা সময়ে নানা ব্যক্তির দিকে। এটা কমবেশি এই মিডিয়া দুটোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। সাংবাদিকরা যে জনগণের দোহাই দেয় সেই জনগণ হলুদ সাংবাদিকতা কি জিনিস তা অতীতে নানা সময়ে টের পেয়েছে। এখন বুঝতে পারছে এটা কেন হয়।
সাংবাদিকদের বিবেক বলা হয়ে থাকে বলে বাস্তব ক্ষেত্রেও অনেক জিনিস থেকেই তাদের বিবেককে সংযত রাখতে হয়। অথচ তারা সাংঘাতিক ক্ষেত্রে যে সাংঘাতিক হয়ে ওঠেন তা আবারো জনগণের কাছে পরিষ্কার করে দিল। অনভিপ্রেত অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা সাংঘাতিক ভাবে সাংবাদিক সমাজে ঘটে গেল। যে সাধারণ জনগণ সাংবাদিকদের ‘সাংঘাতিক’ হিসেবে ইঙ্গিত করতো, আজ তাদের কোটেই ‘সাংঘাতিক’ভাবে সাংবাদিকতার ‘সাংঘাতিক’ গুটি আপনা থেকেই এসে ধরা দিল।
যে অস্বস্থিকর ঘটনা সাংবাদিক সমাজের কলঙ্ক লেপন করল তা গোটা সাংবাদিক সমাজের জন্য সাংঘাতিক একটি কালো অধ্যায় হয়ে জায়গা করে নিলো। বিগত দিনগুলোতে পত্রপত্রিকায় সাংবাদিক নিপীড়ন-নির্যাতন, হয়রানী, হত্যার মতো ঘটনায় সাংবাদিক সমাজ যেখানে আতঙ্কিত সেখানে এসবকে আরো উস্কে দিল ২৪ জুনের ঘটনা। তাও আবার প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে, সাংবাদিকদের হত্যা, নিপীড়ন-নির্যাতন বিরোধী সমাবেশের ‘খোদ’ ভিতরেই। সর্ষের ভূত আরো ভূতুরে হয়ে উঠল বুঝি। এর পিছনে কারা জড়িত, কোন শক্তির বলয়ে এটা ঘুরপাক খাচ্ছে তা প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।
প্রায় অধিকাংশ প্রিন্ট, ইল্ট্রেনিক আর অনলাইন মাধ্যমের বক্তব্য এটিএন বাংলার দিকেই বিরুদ্ধেই। এই অনভিপ্রেত ঘটনার জন্য তাদেরকে দায়ী করলো। সিনিয়র জুনিয়র সহ জড়িয়ে পড়া এই ঘটনায় নয় সাংবাদিককে তাদের সংগঠনগুলো থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিতে হলো। অথচ এটিএন সাংবাদিকরা তাদের বক্তব্যকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ভাবে তুলে ধরে দোষ চাপিয়ে দিল উল্টো তাদের ঘাড়ে। ইটিভিকে দেখা গেছে একজন সাংবাদিক আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা ভাবে ডেকে নিচ্ছে আর এরপরই সংঘবদ্ধ আক্রমণের ঘটনা ঘটল। এটি তাদের পূর্বপরিকল্পিত কিনা জানি না। তবে পরিকল্পিত না হলে হলে বক্তৃতার সময় বাধা না দিয়ে প্রতিবাদ না করে আলাদা ভাবে ডেকে নিয়ে সকল এটিএনের সাংবাদিক একত্রে মিলে কিভাবে কাজটি করল? এটা মনে হয় সাংবাদিকতার মাস্তানী যা জনগণ গোপনে বুঝতো বলে গোপন রাখতো তা এখন প্রাকশ্য হলো।
তাদের মনঃপুত না হলে তো তারা নেতৃবৃন্দকে জানাতে পারতো। তাদের কাছে প্রতিবাদ জানাতো। তারা যেটা জাতিকে জনগণকে শিখাতে চায় সেটার বাস্তব ব্যবহারিক প্রয়োগ তারা দেখিয়ে সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারতো। উল্টো বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হলো। তারা যে বিবেকের কাছে প্রশ্ন তুলতো সেই প্রশ্নই আজ প্রশ্নবিদ্ধ বলে মনে হচ্ছে। তারা যে বিবেকের কাছে প্রশ্ন তুলত সেই বিবেকের কাছে তারাই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কিনা সেই প্রশ্ন আজ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে দেখা দিয়েছে।
সাংবাদিকদের সাংঘাতিক হয়ে ওঠা প্রশ্নবিদ্ধ বিবেক সর্ষের ভূতের আরো ভূতুরে আত্ম প্রকাশ এর কোনোটা প্রকৃতপক্ষে দেশের জন্য কল্যাণকর নয় তা শুধু আমরা জনগণ বুঝলেই হবে না তা গোটা সাংবাদিক সমাজকে নির্মমভাবে উপলব্ধি করতে হবে।
২৫.০৬.২০১২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




