আন্দোলনের ১৭ তম দিন আজ। এতদিনের এই আন্দোলন থেকে আমাদের পাওয়া কী?
মূল দাবিটা রাজাকারদের ফাঁসি। সেটা এখনো পুরণ হওয়া বাকি। কিন্তু এরই মধ্যে আসলে এই আন্দোলন থেকে এই দেশ আর তার মানুষের পাওয়া অনেক।
একটা বিল পাশ বা আইন করতে যেখানে দিনের পর দিন চলে যায়, সেখানে এই আন্দোলনের ফলে বিল পাশ বা আইন করা হয়েছে মাত্র দুই-তিনদিনের মধ্যে। যে আইনের ফলে কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য আপিল করা যাবে। আন্দোলনে দেশবাসীর নৈতিক বিজয়টা হয়ে গেছে এখানেই।
দেশের মানুষের মধ্যে নাকি একতা নেই। এই আন্দোলন জবাব দিয়েছে দীর্ঘদিনের সেই নেতিবাচক ধারণার। প্রথমে এক হয়েছে তরুণরা, তাদের সাথে পরে একাত্মতা প্রকাশ করে যোগ দিয়েছে দেশের সর্বস্তরের সববয়সী মানুষ। সবার এই এক হওয়াটাও অনেক বড় পাওয়া।
যারা বলে থাকেন, মেয়েদের ঘর থেকে বের হওয়া কিংবা পোষাকই ইভটিজিং বা ধর্ষণের কারণ, এই আন্দোলন তাদের জন্য রীতিমতো দাঁতভাঙা জবাব। পহেলা বৈশাখ, বসন্ত বা একুশে ফেব্রুয়ারির মতো আনন্দ-বেদনার দিনগুলোতেও ইভটিজিং বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। অথচ এই যে এত বিশাল আন্দোলন, এত মানুষ, তবুও নারীর প্রতি অবমাননাকর বা ইভটিজিং-এর কোনো উল্লেখযোগ্য ঘটনা এখানে ঘটছে না। আন্দোলনকে যারা উৎসব হিসেবে নিয়েছেন কিংবা এসেছেন মজা দেখতে বা বিশৃঙ্খলা করতে, তাদের কেউ কেউ টিজ করার চেষ্টা করতে গিয়েও খুব বেশি সফল হন না আন্দোলনকারীদের একাত্মতার কারণে। এই আন্দোলনই প্রমাণ করে, একজন মানুষ যখন পাশে থাকা বিপরীত লিঙ্গের মানুষটিকে সম্মান করে, তাকে বিকৃত মানসিকতা দিয়ে বিচার করে না, তখন সেখানে অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটে না। এই উপলব্ধি আর প্রমাণও তো কম পাওয়া নয়।
দেশের মানুষের এক হয়ে জামাত-শিবিরকে প্রত্যাখান করার ব্যাপারটাও দারুন পাওয়া। যুদ্ধাপরাধী আর ধর্মব্যবসায়ীরা বুঝে গেছে, মানুষ সচেতন হয়েছে, হচ্ছে। তাদের চোখে ধুলো দিয়ে ধর্মের অপব্যবহার আর হানাহানি করে নিজেদের স্বার্থোদ্ধারের সুযোগ আর নেই।
এই আন্দোলন শুধু যুদ্ধাপরাধী আর জামাত-শিবিরের জন্যই না, বরং সরকার ও বিরোধীদলসহ দেশের সকল রাজনৈতিক দল, দুর্নীতিবাজ আর অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে এক কঠোর হুশিয়ারি। সরকার, বিরোধীদল কিংবা শাসক তথা শোষকগোষ্ঠী থেকে শুরু করে দুর্নীতিবাজ কিংবা ছিঁচকে চোর--সবাই এখন যেকোনো অন্যায় করার আগে আরো সতর্ক হবে। কারণ দেশের মানুষ দেখিয়ে দিয়েছে, অন্যায় মেনে নিয়ে চুপচাপ বসে থাকার দিন শেষ। যেকোনো পরিস্থিতিতে তারা এক হতে জানে। জানে প্রতিবাদ করতে, দাবি আদায় করতে।
তবে সবচেয়ে বড় পাওয়াটি হচ্ছে তরুণ নেতৃত্ব। এই আন্দোলনের একটা সমন্বয় কমিটি আছে বটে, কিন্তু সত্যিকার অর্থে সর্বস্তরের মানুষ যখন দলবেঁধে আন্দোলনে এসেছে, তখন তারা কোনো কমিটির কাছে যায়নি। তারা তাদের মতো করে জায়গা নিয়ে বসেছে, শ্লোগান দিয়েছে, প্রতিবাদের ধরন আর মাধ্যম ঠিক করেছে। স্কুল, কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের কত-শত ছেলেমেয়ে এসেছে। তারা কেউ কোনো কমিটি বা নির্দিষ্ট দলের নেতৃত্ব মেনে প্রতিবাদ করেনি। নিজেদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছে নিজেদেরই কেউ। ফেসবুকে পলিটিক্যাল ভিউতে 'আই হেট পলিটিক্স' লিখে রাখা রাজনীতিবিমুখ শিক্ষার্থীটিও এই আন্দোলনে যোগ দিয়ে পেয়েছে সুস্থ রাজনীতির প্রাথমিক পাঠ, হয়েছে রাজনীতি সচেতন। তারুণ্যের এই রাজনীতি সচেতনতা আর নেতৃত্বই সুস্থ রাজনীতি চর্চার বিকাশে সহায়ক হবে। দূর করবে দুর্নীতি আর অন্যায়। এই আন্দোলন তাই আমাদের আর আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য মহান এক উপহার, বিশাল এক পাওয়া।
নিজেকে অভিনন্দন জানাতে পারেন আপনি। অনেক অনেক পাওয়া আর বিজয়ের এই আন্দোলনের সাথে জড়িত আছেন বলে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




