somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডাইনী (একটি প্রতিশোধের গল্প)

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চাঁদ সুন্দর, কিন্তু ধরা যায় না ছোয়া যায় না। তেমনি কিছু মেয়ে আছে, যারা চাঁদের মতই সুন্দর। তাদেরকেও ধরা যায় না ছোয়া যায় না। শুধু দূর থেকে দেখলে একটা অস্ফুটিত হাহাকার আর আফচোসের কয়েকটা শব্দ ঠোট গলে বেড়িয়ে যায়। নীলাও সুন্দর চাঁদের মতই সুন্দর কিন্তু নীলা কে ধরা যায় ছোয়া যায়। মেয়েটা কেমন যেন, হাতের কাছেই থাকে । চাইলেই যে কেউ ধরতে পারে ছুতে পারে। বড্ড শরীর ঘেঁষাঘেঁষি স্বভাব। নীলা কে যেদিন প্রথম দেখি, আমি হা করে তাকিয়ে ছিলাম। তারপর থেকে যতবার দেখেছি শুধু তাকিয়েই থেকেছি। কখনো কাছে যাওয়ার সাহশ পায়নি। ছোটবেলায় নানী গল্প শোনাতো। যত রাক্ষুশি-ডাইনি আছে তারা নাকি সুন্দরী মেয়েদের রূপ ধারণ করে পৃথিবীতে আসে। তারপর থেকে সুন্দরী মেয়ে দেখলেয় আমার ভয় করে, হৃদপিণ্ড কেমন যেন কাঁপতে থাকে। নীলাকে দেখলেও কাঁপে, বুক ধরফর করে ওঠে। চাঁদের কলঙ্ক আছে, চাঁদের কলঙ্ক কি? আমি জানি না। নীলারও কলঙ্ক আছে, ক্যম্পাসের সবাই জানে। রাতুলের সাথে নীলার সম্পর্ক ছিল। রাতুলের সাথে থাকা অবস্থায় নিলয়ের সাথে নীলা কে দেখা গেল। নীলয়ের গার্লফ্রেন্ড ছিল রিয়া। রিয়া, নীলার মত অত সুন্দর না তবে বেশ মিষ্টি মিষ্টি চেহারা। একটু বোকাসোকাও বটে। এই বোকা মেয়েটাই ভয়ংকর একটা কাজ করে বসলো। পুরো ক্যম্পাসে রটিয়ে দিলো নীলা মানুষ না, একটা ডাইনী। সে যে ছেলের দিকে হাত বাড়াবে সেই ছেলেয় তার বশ হয়ে যাবে, প্রমাণও মিললো হাতেনাতে। এইতো সজীবও এসে বললো সেও নীলার সাথে রাত কাটিয়েছে। মেয়েটা বড্ড দয়াশীল। যেই হাত পেতেছে তারই দু হাত পূর্ণ করে দিয়েছে।

আমি নীলার থেকে দূরত্ব বজায় রেখেই চলতাম। তবুও সেদিন ক্লাস শেষে যখন বেড়োতে যাবো দেখি নীলা আমাকে ডাকছে । আমার পা থমকে গেল, মেরুদন্ড দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেল। আমি প্রাণপণে চাইলাম ছুটে পালাতে কিন্তু শরীর কিছুতেই নড়ছে না। পা দুটো যেন বরফ হয়ে গেছে। নীলা আমার হাত ধরে টানতে টানতে ক্যন্টিনে নিয়ে গেল। ক্যন্টিন ফাকাই ছিল তবুও নীলা আমাকে কোণার একটা সিটের দিকে নিয়ে গেল। বসতে বসতে বললো "তুমি যে আমাকে পছন্দ করো আমি জানি"। আমি হা করে নীলার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। নীলা ঠোটে হাসি টেনে বললো "যে দিন আমি তোমাকে প্রথম দেখি, সেদিনও দেখেছি তুমি আমার দিকে এমন হা করে তাকিয়ে আছো"। আমি ঠোট বন্ধ করলাম। নীলা আমার কানের আছে মুখ এনে বললো " কাজটা ঠীক করোনি একজন ডাইনিকে ভালোবাসা তোমার উচিত হয়নি। জানোতো, আমি একটা ডাইনী আর ডাইনীর সাথে যারা সঙ্গম করে তারা প্রত্যকেই মারা যায় । সজীব, নীলয়, রাতুল এরাও মারা যাবে অথোচো বোকারা এখোনো জানেই না"। আমি কিছু বলতে পারছিলাম না, অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম নীলার দিকে। এই মেয়েটা কি সব বলছে! নীলা নিজে থেকেই আবার বলতে শুরু করলো " শুনবে আমার ডাইনী হয়ে ওঠার গল্প?"। আমি মনেপ্রাণে চিৎকার করে বলেছিলাম না, শুনবো না কিন্তু মুখ দিয়ে কোন শব্দ বের করতে পারিনি। নীলা বলে চলেছে " সে দিন ছিল আমার বান্ধবীর এর ভাইয়ের বিয়ে। ঐ বাড়িতে আমার আগে থেকেই যাতায়েত ছিল তাই বাড়ীর সবাই আমাকে চিনতো। হটাত আমার ফ্রেশরুমে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ায় নীচ তালায় ভীর বলে আমি দোতালায় গেছিলাম। দোতালা ফাকাই ছিল। আমি বাথরুমে ঢোকার পড়েয় কারেন্ট যায়। জেনারেটর চালু করতে দেরী হচ্ছিলো বলে আমি বের হতে যাবো ঠীক তখনি একটা রাক্ষশ এসে আমার মুখ চেপে ধরে, ঠেলে নিয়ে যায় ভেতরে"। নীলা কাঁদছে, হাঊমাউ করে কাঁদছে। সান্তনা দেবার ভাষা আমার জানা নেই। আমি আমার হাত নীলার হাতের উপর রাখলাম। নীলা নিজেকে সামলে নিয়ে আবার বলতে শুরু করলো " ঘৃণায়-লজ্জায় সেই কথা আমি কাউকে বলতে পারিনি শুধু মা কে বলেছিলাম মাও চেপে যেতে বললেন। তখনো জানতাম না যে ঐ রাক্ষশটাই আমাকে অভিশপ্ত করেছে। রাতুল কে আমি ভালবাসতাম কিন্তু রাতুল আমাকে নিয়ে শুধুই খেলেছে। ওর আর আমার কিছু অন্তরঙ্গ দৃশ্য ধারণ করে দিনের পর দিন আমাকে ব্লাকমেল করেছে। প্রথম যেদিন আমি ভিডিওটা দেখেছিলাম এতটাই শকড হয়েছিলাম যে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম। ক্লিনিকে যেতে হয়েছিলো আর সেখানেই জেনেছি আমি এইচ আই ভি পজেটিভ। রাতুল আমাকে নীলয়ের শুতে বলেছিলো। আমার কি হয়েছিলো আমি জানি না রাগ, ক্ষোভ আর প্রতিশোধের নেশায় অন্ধ হয়ে আমি আমার এইডস এর কথা চেপে গেলাম। তারপর রাতুল যার যার সাথে বলেছে সবার সাথেই আমি রাত কাটিয়েছি। ওরা সবাই এখন আমার ভাইরাস বয়ে বেড়াচ্ছে। প্রতিটা ডাইনিই চায় তার অস্তিত্ব টিকে থাক"। আমি কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না আবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম নীলার দিকে। ওর চোখ গুলো কি গভীর! নীলা বলছিলো " এসব কথা আমি কাউকে বলিনি শুধু তোমাকেই বললাম।" আমি নীলার দিক থেকে মুখটা অন্য দিকে ফিরিয়ে বলেছিলাম" আমাকেই কেনো বললে?"। নীলা বললো "আমি খুব বেশী অসুস্থ হয়ে পড়েছি, বাবা আমাকে বাহিরে পাঠীয়ে দিচ্ছেন তিনি চান না তার মেয়ের কলঙ্কের কথা সবাই জেনে যাক আর কখনোই তোমার সাথে দেখা হবে না।" আচমকা আমার হাটতা চেপে ধরে বললো " সবার মত তুমিও নিশ্চয় আমাকে নষ্ট মেয়ে ভাবো কিন্তু বিশ্বাস করো আমি নষ্ট মেয়ে না, আর যে যাই ভাবুক তুমি আমাকে নষ্ট ভেবো না, প্লিজ।" বলেই নীলা কাদতে কাদতে চলে গেলো। আমার চোখের কোণে তীরতীরে ব্যাথা , ঝাপসা চোখে আমি নীলার চলে যাবার দিকে তাকিয়ে আছি।

সেদিনের পর থেকে নীলাকে আর কখনো দেখিনি। রাতুল মারা গেছে। সজীব, নীলয়ও অসুস্থ। আমার পাশের কেবিনেই ওরা আছে। আমিও ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছি। সেই দিনের সেই বিয়ের অনুষ্ঠান ছিলো আমার কাজিনের। সেখানেই নীলা কে দেখে আমি রাক্ষশ হয়ে উঠেছিলাম। সে কথা কেঊ জানে না, সবাই ভেবেছে আমিই ছিলাম নীলার শেষ শিকার কারণ আমার সাথেয় শেষ বার নীলাকে দেখা গেছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১১:১৫
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×