somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” ঘোষণার শর্ত -১

১৮ ই জুলাই, ২০১০ ভোর ৬:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আস সালামু আলাইকুম!

আমাদের পূর্ববর্তী পোস্ট: ‘ইসলামের প্রথম স্তম্ভ: “শাহাদা” ’-এর ধারাবাহিকতায়, আমরা ইনশা’আল্লাহ, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” ঘোষণার শর্তগুলো একে একে আলোচনা করবো।

প্রথম শর্ত:
শাহাদার অর্থ সম্বন্ধে যে কারো মৌলিক কোন জ্ঞান থাকাটা আবশ্যক।
কারো বোঝা উচিত যে, শাহাদা কোন বিষয়কে নিশ্চিত করছে এবং কি কি বিষয়কে অস্বীকার করছে!! কুর’আনে আল্লাহ বলেন :

فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مُتَقَلَّبَكُمْ وَمَثْوَاكُمْ

“সুতরাং জেনে রাখো, আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ্ নেই, ক্ষমা প্রার্থনা কর তোমার এবং মু’মিন নর-নারীদের ত্র“টির জন্য। আল্লাহ্ তোমাদের গতিবিধি ও অবস্থান সম্বন্ধে সম্যক অবগত আছেন।”
(সূরা মুহাম্মদ, ৪৭ : ১৯)

এবং রাসূল (সা.) বলেছেন যে, “আল্লাহ্ ছাড়া কোন উপাস্য নেই (বা ইবাদতের যোগ্য কেউ নেই – কোন ইলাহ নেই) একথা জেনে যে মৃত্যুবরণ করবে - সে জান্নাতে যাবে।” (মুসলিম)

“শাহাদা” হচ্ছে “সাক্ষ্য”। কেউ যখন কোন সাক্ষ্য দেয়, তখন তাকে অবশ্যই জানতে হবে যে, সে কি সম্বন্ধে সাক্ষ্য দিচ্ছে [এমনকি মিথ্যা সাক্ষী দিলেও - কোন কোর্টে যখন কোন দুষ্টব্যক্তি মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়, তখনও তাকেও তার সাক্ষ্যের বিষয়বস্তু সম্বন্ধে ভালো করে জেনে নিতে হয়।]। এমন কোন কিছু – যা সম্বন্ধে তার কোন জ্ঞানই নেই – সেটা সম্বন্ধে কোন সাক্ষীর সাক্ষ্য, তা পার্থিব জীবনে যেমন কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না, তেমনি “শাহাদা”-র ব্যাপারেও সেরকমটা গ্রহণযোগ্য নয়।

আল্লাহ্ কুর’আনে আরো বলেন:
إِلَّا مَنْ شَهِدَ بِالْحَقِّ وَهُمْ يَعْلَمُونَ

“…..তবে যারা সত্য উপলব্ধি করে তার সাক্ষ্য দেয় তারা ব্যতীত।”
(সূরা যুখরুফ, ৪৩ : ৮৬)

দ্বিতীয় শর্ত:
“শাহাদার” বিষয়বস্তু সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া বা ইয়াক্বীন থাকা।
এ ব্যাপারটা হচ্ছে, সন্দেহ ও সংশয় পোষণ করার বিপরীত ব্যাপার। আসলে ইসলামে কুর’আন ও সুন্নাহয় যা নিশ্চিত করা হয়েছে – সে রকম যে কোন কিছুর ব্যাপারে যে কোন রকমের সন্দেহ পোষণ করাই হচ্ছে “কুফর” [এর ব্যতিক্রম হচ্ছে এমন একটা অবস্থা, যখন কেউ জানে না যে, কোন একটা বিষয়কে কুর’আন ও সুন্নাহয় নিশ্চিত করা হয়েছে - এবং অজ্ঞতাবশত সে বিষয়ে সে সন্দেহ পোষণ করে। কিন্তু একবার যখন সে জানে যে, কোন একটা ব্যাপারকে কুর’আন বা সুন্নাহয় সুনির্দিষ্টভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে, তখন সেই ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করার, তার আর কোন অজুহাত থাকে না।] ।

“শাহাদা” ঘোষণাকারীর হৃদয়ে তাকে “শাহাদা”-র সত্যতা সম্পর্কে একদম নিশ্চিত হতে হবে। “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” সাক্ষ্য দেবার সময় তার অন্তর কোন দিক দিয়েই এর সত্যতা সম্বন্ধে সামান্যতম বিচলিত বা অনিশ্চিত হতে পারবে না। সত্যিকার বিশ্বাসী – যাদের অন্তরে কোন সংশয় থাকে না বা অন্তর বিশ্বাস জ্ঞাপন করতে গিয়ে কাঁপে না – আল্লাহ্ কুর’আনে তাদের বর্ণনা করেন:

إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آَمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا وَجَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أُولَئِكَ هُمُ الصَّادِقُونَ
“তারাই মু’মিন যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনে, পরে সন্দেহ পোষণ করে না এবং জীবন ও সম্পদ দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে, তারাই সত্যনিষ্ঠ।”
(সূরা হুজুরাত, ৪৯ : ১৫)

একইভাবে রাসূল (সা.) বলেছেন যে, “এমন কেউ নেই যে, ‘আল্লাহ্ ছাড়া কেউ ইবাদতের যোগ্য নয় এবং আমি আল্লাহর রাসূল’ এই ঘোষণা সমেত আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে এবং এই ঘোষণা সম্বন্ধে তার কোন সন্দেহ থাকবে না – অথচ সে জান্নাতে যাবে না।” (মুসলিম)

অপরপক্ষে, আল্লাহ্ মুনাফিকদের এমন সব ব্যক্তি বলে বর্ণনা করেছেন, যাদের অন্তর সন্দেহযুক্ত। উদাহরণ স্বরূপ আল্লাহ্ বলেন:

إِنَّمَا يَسْتَأْذِنُكَ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ وَارْتَابَتْ قُلُوبُهُمْ فَهُمْ فِي رَيْبِهِمْ يَتَرَدَّدُونَ
“শুধু তারাই আপনার কাছ থেকে (জিহাদে যাবার ব্যাপারে) অব্যাহতি চায়, যারা আল্লাহ্ এবং শেষ বিচারের দিনে বিশ্বাস করে না এবং যারা অন্তরে সন্দেহ অনুভব করে। আর তাই সেই সন্দেহের বশবর্তী হয়ে তারা দোদুল্যমান [দ্বিধাগ্রস্ত] হয়।” (সূরা তওবা, ৯ : ৪৫)

অনেক ‘আলেমই এ ব্যাপারে মত ব্যক্ত করেছেন যে, কারো ঈমানের জন্য তার কামনা-বাসনা বা রিপুর তাড়নার চেয়ে, তার অন্তরের রোগ – অর্থাৎ সংশয় ও সন্দেহ অনেক বেশি বিপজ্জনক। এটা এজন্য যে, কোন ব্যক্তির কামনা-বাসনা কখনো পরিতৃপ্ত হতে পারে এবং এসবের বশবর্তী থাকা অবস্থায়ও সে জানতে পারে যে এগুলো সঠিক নয়। সুতরাং কখনো সে সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হতেও পারে এবং ঐ সব কুকর্ম ছেড়ে, সে সবের জন্যে তওবাও করতে পারে। অপরপক্ষে সন্দেহ ও সংশয় কারো অন্তরকে কুরে কুরে খায় এবং এভাবে চলতে থাকলে কেউ সম্পূর্ণরূপে ইসলাম ত্যাগ করতে পারে – অথবা – অন্তরে সত্য প্রতিষ্ঠিত না থাকা অবস্থায়, সে ইসলামের বাহ্যিক ব্যাপারগুলো লোক দেখানো ভাবে অনুশীলন বা সম্পাদন করে যেতে পারে।

সন্দেহের সবচেয়ে বড় ঔষধের একটি হচ্ছে জ্ঞান অর্জন । কুর’আন ও সুন্নাহর সঠিক জ্ঞান, কোন বিশ্বাসীর সকল বা বেশিরভাগ সংশয়ই দূরীভূত করে। অধ্যয়ন ও অনুধাবন করার প্রচেষ্টা থেকে কেউ নিশ্চয়তা [বা certainty ] লাভ করতে পারে। এবং কেউ যখন বেশী বেশী করে দ্বীনের উপর পড়ালেখা করে, তখন তার বিশ্বাস দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হতে থাকে।
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×