রামপুরার হাজীপাড়ায় গ্যারেজের পাশে মাইজু পাগল থাকে। রাতে গ্যারেজ পাহারা দেয়। মইজু পাগলকে প্রথম যখন দেখি তখন ১৯৯৮ সাল হবে। আমি ইন্টার পড়ছি। সারা রাত পাগলা ঘুমায় না। ঘুমায় না কেন জিজ্ঞেস করলে বলে, রাজাকারগুলার জ্বালায় ঘুমামু কেমনে? আমি অবাক হয়ে যাই।
- রাজাকার? কোথায়?
- রাইতে আইসেন দেখামুনে।
অনেক কষ্টে বাসায় বুঝিয়ে রাতে গিয়ে শুনি মইজুর ঘর থেকে জোরে জোরে আওয়াজ আসছে। গালি-গালাজ আর চটাস চটাস শব্দ।
- আয় সাঈদী, আয়.....আর কত রক্ত খাবি...আয়..চটাস্...হা হা হা ... দিছি কুচলায়া... এইবার কোন হুমন্দির পুত... ভাবছোস তোরে চিনি নাই? ওরে মাউরা আমার জাউরা ভূত..... মুজাহিদের বাচ্চা.....তুইও রক্ত খাবি? খা..... দিলাম তোরে পিস্যা দুই আঙ্গল দিয়া.... আয় আর কে আছস...
ভয়ে ভয়ে জানালা দিয়া উকি দিলাম। আস্তে আস্তে ডাকলাম,
- মইজু ভাই আসবো?
- আসেন, তয় রাজাকারগুলারে সামলাইয়া কইলাম...
- কই তোমার রাজাকার?
- এই যে ...
ঘরের টিম টিমে আলোয় মইজু পাগলা তার জীর্ণ আঙ্গুল যেদিকে তাক করেছে সেটা তার খাট। খাটে একটা ময়লা তোষক। প্রথমে বুঝিনি। অনেকক্ষণ ভালো করে খেয়াল করার পর বুঝতে পারলাম রাজাকার রহস্য। বড় বড় কালো কালো ছাড়পোকা।
- ছাড়পোকারা রাজাকার? বিড়বিড় করে বললাম, পাগল আর কাকে বলে!
- এরা ছাড়পোকা?? কি কন! এগুলান আমার রক্ত খাইয়া শেষ কইরা দিলো! হেই গন্ডগোলের সময় রাজাকারগুলা শর্কি দিয়া গুতায়া গুতায়া যেমনে রক্ত বাইর করতো, এইগুলাও তো হেমনি। আমি তো হুনছি গোনাম আযম, সাঈদী, মুজাহিদি - এরা সব বলে গেলাস গেলাস মুক্তিগো রক্ত চুমুক দিয়া খাইতো.... সবকি তাইলে মিছা?
এই কথার কি জবাব দেব? আমিও তো জানতাম না মুক্তিদের এত রক্ত ঝরিয়ে ওরা কি করেছিলো?
সাঈদী, নিজামী, মুজাহিদ-দের গ্রেফতারের পর আবার দেখা মইজু পাগলার সাথে। এবার পুরা পাগল হয়ে গিয়েছে। দেখলাম বিএনপি-র হরতালের দিন লুঙ্গি মাথায় বেধে শাখারীবাজারের মোড়ে ট্রাফিক সামলাচ্ছে। ২০০৫-র পর ফের দেখা। আমাকে দেখে চিনতে পারলো, লজ্জাও পেলো বোধহয়। একটা সিগ্রেট চাইলো। দিলাম।
- কি মিয়া তোমার রাজাকারদের গ্রেফতার করলো, এইবার আর তোমাকে কামড়াতে পারবেনা!
- সবই ঠিক্। কিন্তুক দুইটা প্রইশ্ন।
- কি?
- এ্ক লম্বর, এগর বিচার কইরা, পাবলিকের ট্যাকা খরচা কইরা লাভ কি হইবো? এর থিকা, জেলের ভিতরে চাইর নেতারে যেমনে মারছিলো হেমনে মারন যায় না? হেরা তো ভালা আছিলো, আর এই আন্ধার রাইতের ছাড়পোকাডিরে মারতে পারুম না, এইটা কেমন কথা?
আমার তো আক্কেলগুড়ুম।
- দুই লম্বর, বড় গুলার পর ছোটো গুলার কি হইবো? এহনই পিশা না মারতে পারলে তো এগুলাও বড় অইয়া রক্তচোষাই অইবো।
আশে-পাশে তাকিয়ে আস্তে আস্তে কেটে পড়লাম। এমনই বিএনপি-রাজাকারের থুড়ি জামাতের ডাকা হরতাল। মইজু পাগল হলেও, আমি তো আর পাগল না।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০১০ সকাল ৮:০২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



