
প্রকৃতি বরাবরই তার অপার সুন্দরযে সকলকে অভিভূত করে।পাহাড়েরে গা বেয়ে বয়ে যাওয়া জলের ধারার ছন্দময় শব্দে এক ধরনের মোহ আছে । আর বৃষ্টি পরবর্তী সময় এই সৌন্দর্য যেন পূর্ণটা পায়।
ঝর্ণা আর জলপ্রপাত দুটি শব্দ যেন এক অন্যের পরিপুরক কিন্তু দুইয়ের মধ্যে রয়েছে পার্থক্য।
তবে পার্থক্য টা কি উচ্চতায়?
বিশালতায়?
নাকি স্রোতের তীব্রতায়?
watch the full documentary in YouTube
হয়তো পাহাড়ি কোন নদী নামতে নামতে হঠাৎ খাড়া প্রান্ত থেকে নিচে পতিত হলো, আর তখনই সৃষ্টি হল একটি দৃষ্টিনন্দন জলপ্রপাতের।অন্যদিকে, জমা হওয়া বৃষ্টির পানি যখন মাটি ভেদ করে ভূপৃষ্ঠের উপরিতল থেকে নিচের দিকে নামতে থাকে তখন তা ঝর্ণার সৃষ্টি হয়।চট্রগ্রামের মিরসরাই থানার অন্তর্গত বারৈয়াঢালা উদ্যানের ভেতরে অবস্থিত খৈয়াছড়া ঝর্না আকার আকৃতি তে বাংলাদেশ বড় ঝর্না গুলর মধ্যে একটি।প্রায় ৫০ বছর আগে পাহাড়ি ঢলের ফলে এই ঝর্ণাটি সৃষ্টি হয়েছ ধারনা করা হয়।
২০১০ সালে সরকার বারৈয়াঢালা থেকে কুণ্ডের হাট ব্লক পর্যন্ত প্রায় ২৯৩৪ হেক্টর পাহাড়ি জঙ্গল জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করে। খৈয়াছড়া ঝর্ণা এই জাতীয় বারৈয়াঢালা উদ্যানের আওতাভুক্ত। এই উদ্যানে বেশ কয়েকটি ট্রেইল আছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় ট্রেইল খৈয়াছড়া।

কিভাবে যাবেনঃ
ঢাকাসহ বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে খৈয়াছড়ায় আসা যায়। ঢাকা বাস কাউন্টার থেকে চট্রগ্রামগামী বাস সার্ভিসে উঠে মিরসরাই থানা পার হয়ে বড়তাকিয়া বাজার নামতে হবে। নন এসি ও এসি বাসের ভাড়া যথাক্রমে ৫০০ থেকে ১৩০০ টাকার মধ্যে। সময় লাগে ৪-৫ ঘন্টার মত।এছাড়া ট্রেনে করে ফেনী বা চট্রগ্রাম নেমেও আসা যায়। আর চট্টগ্রাম থেকে আসতে হলে একেখান মোড় থেকে চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়ক গামী বিভিন্ন লোকাল বাসে পাওয়া যায়। চট্টগ্রাম শহরের থেকে বড়তাকিয়া দূরর্ত ৬০ কিলোমিটার। ভাড়া নিবে ৫০ থেকে ৮০ টাকা আর সময় লাগবে প্রায় ৫০ মিনিটের মত।

বড়তাকিয়া বাজারয়ের মূল সড়ক থেকে পূর্বদিকে তাকালে চোখে পড়বে খৈয়াছড়ায় লিখা বোর্ড। কিছু পথ এগুলে ওই রাস্তার মুখে দাঁড়িয়ে থাকা সিএনজিগুলোতে করে মাথাপিছু ১৫ টাকা দিয়ে অর্ধেক রাস্তা পর্যন্ত আগানো যাবে। বাকি পথ হেঁটে যেতে হবে। ঝর্ণায় যাওয়ার রাস্তা একটিই, তাই পথ হারানোর ভয় তেমন একটা নেই।যেখানে গাড়ি নামিয়ে দিয়েছে সেখান থেকে দশ পনের মিনিট হেঁটে গেলে একটা ছোট্ট বাজার দেখা মিলবে এইখান থকে চাইলে প্যান্ট ,আংক্লেট, পানি ইত্যাদি কিনতে পারবেন।এছাড়া অনেক গুল খাবারের হোটেল ও আছে চাইলে হোটেলে দুপুরের খাবার অর্ডার করে যেতে পারবেন। হোটেল এ খাবার অর্ডার করলে মোবাইল, ব্যাগ লকারে জমা রেখে যেতে পারবেন আবার আসার পর গোসল ও করতে পারবেন।

বাজারের ছোট কাঠের সেতু পার করার পর থেকে মুল ট্র্যাকিং শুরু হয়। দ্রুত গেলে প্রথম ধাপ পর্যন্ত যেতে আধ ঘণ্টা লাগবে। মূলত ঝিরিপথ পাশ ধরে হেঁটে এগুতে হবে। পথ এ বড় কোন পাহাড় পড়বে না তাই এই পথ বেশ সোজা।কিন্তু বৃষ্টি হলে কাদা ও পানি জন্য ট্র্যাকিং করা একটু কষ্ট সাধ্য হতে পারে। খালি পায়ে না যাওয়াই ভাল।সবথকে ভাল হব্য যদি ভাল গ্রিপ এর রানিং শু পরে ট্র্যাকিং করা যায়। বৃষ্টির জন্য কোথাও ঝিরির পানি বুক পর্যন্ত আবার কোথাও হাঁটু পর্যন্ত কাদা। খুব সর্তকভাবে পা দিতে হবে। পাহাড়ের মাটিগুলো পাথর এর মত শক্ত। উঁচুনিচু ঝিরিপথ ধরে কিছুক্ষণ এগুনোর পর কানে আসবে অবারিত জলধার পতনের শব্দ এর পরপরই চোখে পড়বে বিশাল এক ঝর্না।এটা খৈয়াছড়া ঝর্নার প্রথম ধাপ।
খৈয়াছড়া ঝর্ণার মোট ৯টি মূল ধাপ এবং অনেক গুলো ছোট ছোট বিচ্ছিন্ন ধাপ তা বাংলাদেশের কোন ঝর্ণাতে এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। তাই, খৈয়াছড়াকে বলা হয় বাংলাদেশের "ঝর্ণা রানী"।

প্রথম ধাপ থকে বাঁ দিকে পাহাড় বেয়ে উঠলে পড়ে দ্বিতীয় ধাপ। এর পর কিছু পথ ঝিরি ধরে এগুলে একসাথে তৃতীয় চতুর্থ ও পঞ্চম ধাপ। পাহাড়ি পথ একটু খাড়া কিন্তু বেয়ে উঠা যায়। ধাপগুলো পাশ বেয়ে নবম ধাপ পর্যন্ত উঠা যায় ।
মনে রাখবেন প্রতিটা ধাপে রাস্তা বেশ দুর্গম এবং পাথরের যায়গা পিচ্ছিল থাকতে পারে। তাই সতর্ক হয়ে পথ চলবেন। মারাত্মক কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ওই দুর্গম রাস্তা পাড়ি দিয়ে ফিরে আসা বেশ কঠিন হবে।এছাড়া আছে মৃত্যু ঝুঁকি। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ৫ বছরে ১১ জন পর্যটক নিহত ও শতাধিক পর্যটক আহত হয়েছেন।তবে একটু সাবধানতা অবলম্বন করলে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব।
কোথায় থাকবেন:
থাকার জন্য খৈয়াছড়া বা বড়তাকিয়া বাজারে কোনো আবাসিক হোটেল নেই। তবে নিকটস্থ থাকার হোটেলর জন্য আপনাকে যেতে হবে সীতাকুণ্ড বাজারে । সীতাকুণ্ড পৌরসভায় মোটামোটি মানের কিছু আবাসিক হোটেল আছে।এছাড়া আপনি চাইলে চট্টগ্রাম শহরে গিয়ে থাকতে পারেন।
খরচ কেমন হবে?
তেমন বড় কোন খরচ নেই।জনপ্রতি সর্বমোট খরচ ১০০০ টাকা থেকে ৩০০০ পর্যন্ত হতে পারে।
এই ট্রেইলটি শেষ করতে মোট ৬ থেকে ৮ ঘন্টা সময় লাগে।চাইলে রাতে তাঁবু নিয়ে ক্যাম্পিং ও করতে পারবেন।যদি দুইদিনের সময় নিয়ে যান তবে এইখানের আশেপাশে আর কিছু ট্রেইল এ যেতে পারবেন।

ঝর্ণার পানি বেশ ঠান্ডা।চারপাশের অসাধারণ মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য পর্যটকদের আগমন বাড়ার পর ঝর্ণাগুলোর ঝিরিপথ ক্রমশ নোংরা হয়ে যাচ্ছে।যেখানে সেখানে ময়লা, প্লাস্টিক এর বোতল ইত্যাদি ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে।প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই জায়গাগুলো আমাদের সকলের সহযোগিতা ছাড়া তার আসল রূপ ধরে রাখতে ব্যর্থ হবে।
#letshike, #খৈয়াছড়া, #khoiyachorawaterfall, #mirsharai, #sitakunda
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০২২ দুপুর ১২:৪৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




