ফটোগ্রাফটির দিকে নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে আছে ইফতি।তার চোখে মিশে আছে ভয়ংকর বিতৃষ্ণা আর অবজ্ঞার ছাপ।ঘৃণায় আর ভর্ৎসনায় তার ঠোটের একপাশ বাঁকা হয়ে আসছে।মাথার উপর ঘোরা সিলিং ফ্যানটির শা শা শব্দ যেন হাহাকারের মত শব্দ করছে।হাহাকারের মত সেই শব্দ ইফতির বুকের মাঝে কেমন যেন অদ্ভুত শূন্যতা তৈরী করেছে।প্রচন্ড অভিমানে ছবির মানুষটিকে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে - "একদিন বিচ্ছুরিত আলোক আভায় উদ্ভাসিত করেছিলাম তোমাকে।আজ কালের আবর্তনে দিগন্তবিস্তৃত আলোর বন্যা নয় , একমুঠো রোদ্দুরের অপেক্ষায় বসে ছিলাম আমি।অথচ তুমি আমাকে সুক্ষ্ম সূচীভেদ্য্ আলোকছটাও দিতে পারলেনা।আফসোস...আজ তুমি কত অসহায় ! কতটা নিঃস,রিক্ত !!!ধিক্কার তোমাকে, ধিক্কার তোমার এ জীবনকে।"অথচ এইচ,এস,সি তে ভাল রেজাল্ট করার পর মা-বাবার সাথে তোলা এ ছবিটি কতই না প্রিয় ছিল ওর।পত্রিকায় প্রকাশের পর কত জনকেই না দেখিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই।আর আজ এই ছবি জন্ম দিচ্ছে শুধুই দীর্ঘশ্বাস আর সোনালী সেই দিনগুলির কথা।স্কুল-কলেজে সে সবসময় ফার্স্ট হত এমনকি তার ধারে কাছে কেউ থাকতো না।শিক্ষকরা সবসময় বলতো এই ছেলে একদিন অনেক বড় হবে।এখনো লোকে একজন নিখুঁত ভাল ছাত্রের উদাহরণ দিতে গেলে নির্দ্বিধায় ইফতির নাম বলে।কত না প্রাইজে ভর্তি তার বাসার কেবিনেট।ভার্সিটিতে ভর্তি হবার পরও অনেক প্রাইজ পেয়েছে ইফতি।কখনো ক্রিকেট খেলে,কখনো বাস্কেটবল খেলে,কখনো বা মঞ্চে অভিনয় করে।কিন্তু আর কখনো পড়াশুনার জন্য পায়নি।এখানে এসে হঠাৎ করে সে আবিষ্কার করলো তার আর সেই ক্ষমতাটা নেই।অনেক চেষ্টা করেও সে কোথাও খুজে পেলনা পড়াশুনা করার প্রাণশক্তি।মা-বাবাকে ছেড়ে শত শত মাইল দূরে পড়তে এসে ইফতি মাথার উপর কোন ছায়া খুজে পেলনা।এক এক করে তিনটি বছর চলে গেল।ভাল রেজাল্ট তো দূরের কথা কিছু বিষয়ে পাশই করতে পারলোনা সে।অথচ একটু ভাল করার জন্য কত জনকেই না আঁকড়ে ধরেছিল সে।সাগরে ডুবন্ত মানুষ যেমন খড়কুটা পেলেও সেটা আঁকড়ে ধরে ভেসে থাকার চেষ্টা করে তেমনি কত মানুষকে সে অবলম্বন করতে চেয়েছিল।কিন্তু কোথাও আশ্রয় মেলেনি।সবাই স্বার্থপরের মত নিঃশ্বব্দে চলে গেছে তার জীবন থেকে।তার সমস্ত অর্জন আজ তার কাছে ব্যর্থতা হয়ে ফিরে এসেছে।তার সাফল্যের ঘর আজ শূন্য,রিক্ত।তার ভালবাসার মানুষটিও আজ তাকে ছেড়ে চলে গেছে।সে সবিস্ময়ে লক্ষ্য করলো তাকে ফিরিয়ে আনার মত ন্যুনতম যোগ্যতাটুকুও আজ তার নেই।অথচ আগে কত মেয়েকেই না সে ফিরিয়ে দিয়েছে শুধুমাত্র পড়াশুনার জন্য।সময় হলে সব হবে এই ছিল তার ধারনা।কিন্তু সময় তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।তার কল্পনার সেই সুসময় আর আসেনি।কালস্রোতে আজ ইফতি আবিষ্কার করলো সে বড় নিঃসঙ্গ এবং একাকী।তার মনের ভিতরে যে বিষন্নতা আর হতাশা কাজ করছে তা কাটিয়ে উঠার কোন ক্ষমতা তার মধ্যে নেই।হারিয়ে যাওয়া ইফতিকে সে আর কখনো খুজে পাবেনা,কখনোই না।নিজের প্রতি প্রচন্ড অভিমানে তার চোখ ছলছল করছে।নাহ্,তার চোখ দিয়ে পানি পরবে না।কবেই তার চোখের পানি শুকিয়ে গেছে।এই নিষ্ঠুর পৃথিবীকে তার চেনা হয়ে গেছে।এখানে তার চোখের পানির কোন মূল্য নেই,তার ইচ্ছার কোন মূল্য নেই।এ পৃথিবী ব্যর্থ মানুষকে গ্রহন করে না।তীব্র ঘৃণায় ইফতির নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।ইচ্ছে করছে চিৎকার করে নিষ্ঠুর এই পৃথিবীকে ভেঙ্গে চুরমার করে দিতে।চিৎকার করে বিধাতাকে বলতে ইচ্ছে করছে - হে বিধাতা ,আমি পুনঃজন্মে বিশ্বাস করিনা।কিন্তু ফের যদি আমার জন্ম হয় তবে আমাকে যেন আর কখনও ইফতি হয়ে আসতে না হয়,কোনদিনও আসতে না হয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১:১৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




