somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাপানে যাপিত জীবন- পর্ব ১১

১১ ই ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এই প্রবীণ ভদ্রলোককে আমি গত বছর থেকেই দেখছি, হাফ পেন্ট পড়ে দৌড়াতে। বয়স অন্তত আশি হবেই। মোটিভেশন কোন লেভেলে আল্লাহই জানে...

কখনো চিন্তা করে দেখেছেন, কমলার মতো একটি কটকটে রং সাদা শিউলি ফুলের গোড়ায় থাকলে কতটা সুন্দর লাগে। ব্যাপারটা আসলে সমতা নিশ্চিতকরণ বা ভারসাম্য-বিধান। প্রায় প্রত্যেকদিন ড্রিঙ্ক করা জাপানিজরা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি গড় আয়ুর অধিকারী, এর পেছনের কারণটাও কিন্তু তাই। ২০১৩ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, এ দেশের প্রায় 91 শতাংশ মানুষ ড্রিঙ্কিং’কে নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য বলে মনে করে। আর অফিস শেষে বসের সাথে বার বা ইজাকায়ায় যাওয়া এখানকার অফিস সংস্কৃতির অন্যতম অনুষঙ্গ।

এমনও শোনা যায়, যে অধস্তন সহকর্মী বসকে ড্রিঙ্কিং’য়ে বেশি সময় দিতে পারে, অন্য সবকিছু ঠিক থাকলে তার প্রমোশন হয় আগে।তারপরও জাপানিজরা বেশিরভাগই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। এর পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। প্রথমত, তারা মাত্রাতিরিক্ত পান করে না অথবা করতে পারে নাহ। কারণটা জেনেটিক। এই অঞ্চল অর্থাৎ পূর্ব এশিয়ার (চায়না, জাপান বা কোরিয়া) মানুষদের নাকি এলকোহল ভাঙ্গার জন্য পাকস্থলীতে পর্যাপ্ত ALDH2 প্রোটিন নেই। ফলস্বরূপ তারা পান করার সময় লাল হয়ে যায় এবং পরবর্তী হ্যাং-ওভার অনেক বেশি সময় ধরে থাকে।


প্রবীণ দম্পতি, এই বাইকটা নিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন...

দ্বিতীয়ত, তাদের খাদ্যাভ্যাস ওদেরকে সুস্থ রাখতে অনেকটা সাহায্য করে। কম কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ উচ্চ পুষ্টি যুক্ত খাবার। ওদের একটা প্রবাদ যা বাচ্চাদের ছোটকাল থেকেই শেখানো হয় তা হল “হারা হাছি বুন”, অর্থাৎ ৮০% পূর্ণ হবার আগ পর্যন্ত খাও। এই আশি শতাংশের আবার অনেকগুলা ভাগ রয়েছে। ভাত অন্যতম প্রধান খাবার হওয়া সত্ত্বেও তারা আমাদের মত এত বেশি পরিমানে খায় না। আমার ল্যাবের পোস্টডককে দেখি একটা ছোট্ট বাটিতে করে ভাত নিয়ে আসে। আমাদের দেশের এক বছরের বাচ্চাকেও মনে হয় এর থেকে বেশি খাওয়ানো হয়। আর সাথে খায় প্রচুর সবজি আর মাছ অথবা মাংস। ওদের আর দুইটা জনপ্রিয় খাবার হচ্ছে ফারমেন্টেড বীন (নাত্তো) আর সকাল বেলায় ফল। যা পরিপূর্ণ পাঁচনে সহায়ক। ব্যাস, সকল খাবারের ভারসাম্য নিশ্চিত হয়ে যায়।


ঘুমিয়ে থাকে বাচ্চা স্বভাব সব বুড়াদের অন্তরে...

সবার শেষে, যেটা না বললেই নয় তা হল অন্তত সামারে প্রচুর শারীরিক পরিশ্রম বা আউটডোর একটিভিটি। প্রায় সবাই দৌড়ায়। পনের বছরের কিশোর থেকে শুরু করে আশি বছরের বৃদ্ধ পর্যন্ত, সবাই। খুব সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকলেই দেখা যায় শত শত মানুষ আসে সকালটা ক্যাম্পাসের খোলা বাতাসে দৌড়ানোর জন্য। আমার ৬০+ বয়স্ক প্রফেসর কয়েকদিন আগে দেখলাম পা ভেঙ্গে বসে আছে। তবুও স্ট্রেচারে ভর করে ডিপার্টমেন্টে হাজির। কিভাবে হল জানতে চাওয়ার পর বলে… আমিতো বৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছি আর বেশি শারীরিক পরিশ্রমের সুযোগ পাই না। তাই প্রতি সপ্তাহান্তে টেনিস খেলি। তা খেলতে গিয়েই এই অবস্থা। আশা করি খুব দ্রুতই আবার কোর্টে ফিরতে পারব। এই হচ্ছে ফিট থাকার জন্য তাদের মনোবল। সুস্থতো ওদেরই থাকার কথা, নয় কি??


আরটে পিয়াযা

শহর কর্তৃপক্ষও গরমের এ সময়টায় জনগনের বা বিশেষ করে ছাত্রদের জন্য নানা আউটডোর সার্ভিস ফ্রি করে দেয়। পাহাড়ে উঠার ক্যাবল কার থেকে শুরু করে চিড়িয়াখানার টিকিট পর্যন্ত। সেই সুযোগে আমরাও ঘুরে এসেছি মারুয়ামা জু। দেখলাম টেম্পারেট অঞ্চলের নানা পশুপাখি। গ্রিনহাউজে ট্রপিকেল আবহাওয়া তৈরি করে ঐখানকার নানা পশুপাখিকেও প্রদর্শনের জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। তাছাড়া এসময়ের সুন্দর আবহাওয়াকে কাজে লাগাতে গিয়েছি সুকিমাতসু পার্ক, মইরুনোমা পার্ক, শিরোগানেনো ফলস, মাশিকে মেমোরিয়াল পার্ক, আরতে পিয়াযযা স্কাল্পচার মিউজিয়াম ইত্যাদি দর্শনীয় স্থানে। যাদের সৌন্দর্য বর্ণনাতীত।
অন্যদিকে, ব্যস্ততায় হচ্ছে সময় যাপন, যার দরুন বার মাসে ১১টা যাপিত জীবন…


বনধু, পথ দেখায়



সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:৪১
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×