এই প্রবীণ ভদ্রলোককে আমি গত বছর থেকেই দেখছি, হাফ পেন্ট পড়ে দৌড়াতে। বয়স অন্তত আশি হবেই। মোটিভেশন কোন লেভেলে আল্লাহই জানে...
কখনো চিন্তা করে দেখেছেন, কমলার মতো একটি কটকটে রং সাদা শিউলি ফুলের গোড়ায় থাকলে কতটা সুন্দর লাগে। ব্যাপারটা আসলে সমতা নিশ্চিতকরণ বা ভারসাম্য-বিধান। প্রায় প্রত্যেকদিন ড্রিঙ্ক করা জাপানিজরা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি গড় আয়ুর অধিকারী, এর পেছনের কারণটাও কিন্তু তাই। ২০১৩ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, এ দেশের প্রায় 91 শতাংশ মানুষ ড্রিঙ্কিং’কে নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য বলে মনে করে। আর অফিস শেষে বসের সাথে বার বা ইজাকায়ায় যাওয়া এখানকার অফিস সংস্কৃতির অন্যতম অনুষঙ্গ।
এমনও শোনা যায়, যে অধস্তন সহকর্মী বসকে ড্রিঙ্কিং’য়ে বেশি সময় দিতে পারে, অন্য সবকিছু ঠিক থাকলে তার প্রমোশন হয় আগে।তারপরও জাপানিজরা বেশিরভাগই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। এর পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। প্রথমত, তারা মাত্রাতিরিক্ত পান করে না অথবা করতে পারে নাহ। কারণটা জেনেটিক। এই অঞ্চল অর্থাৎ পূর্ব এশিয়ার (চায়না, জাপান বা কোরিয়া) মানুষদের নাকি এলকোহল ভাঙ্গার জন্য পাকস্থলীতে পর্যাপ্ত ALDH2 প্রোটিন নেই। ফলস্বরূপ তারা পান করার সময় লাল হয়ে যায় এবং পরবর্তী হ্যাং-ওভার অনেক বেশি সময় ধরে থাকে।
প্রবীণ দম্পতি, এই বাইকটা নিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন...
দ্বিতীয়ত, তাদের খাদ্যাভ্যাস ওদেরকে সুস্থ রাখতে অনেকটা সাহায্য করে। কম কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ উচ্চ পুষ্টি যুক্ত খাবার। ওদের একটা প্রবাদ যা বাচ্চাদের ছোটকাল থেকেই শেখানো হয় তা হল “হারা হাছি বুন”, অর্থাৎ ৮০% পূর্ণ হবার আগ পর্যন্ত খাও। এই আশি শতাংশের আবার অনেকগুলা ভাগ রয়েছে। ভাত অন্যতম প্রধান খাবার হওয়া সত্ত্বেও তারা আমাদের মত এত বেশি পরিমানে খায় না। আমার ল্যাবের পোস্টডককে দেখি একটা ছোট্ট বাটিতে করে ভাত নিয়ে আসে। আমাদের দেশের এক বছরের বাচ্চাকেও মনে হয় এর থেকে বেশি খাওয়ানো হয়। আর সাথে খায় প্রচুর সবজি আর মাছ অথবা মাংস। ওদের আর দুইটা জনপ্রিয় খাবার হচ্ছে ফারমেন্টেড বীন (নাত্তো) আর সকাল বেলায় ফল। যা পরিপূর্ণ পাঁচনে সহায়ক। ব্যাস, সকল খাবারের ভারসাম্য নিশ্চিত হয়ে যায়।
ঘুমিয়ে থাকে বাচ্চা স্বভাব সব বুড়াদের অন্তরে...
সবার শেষে, যেটা না বললেই নয় তা হল অন্তত সামারে প্রচুর শারীরিক পরিশ্রম বা আউটডোর একটিভিটি। প্রায় সবাই দৌড়ায়। পনের বছরের কিশোর থেকে শুরু করে আশি বছরের বৃদ্ধ পর্যন্ত, সবাই। খুব সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকলেই দেখা যায় শত শত মানুষ আসে সকালটা ক্যাম্পাসের খোলা বাতাসে দৌড়ানোর জন্য। আমার ৬০+ বয়স্ক প্রফেসর কয়েকদিন আগে দেখলাম পা ভেঙ্গে বসে আছে। তবুও স্ট্রেচারে ভর করে ডিপার্টমেন্টে হাজির। কিভাবে হল জানতে চাওয়ার পর বলে… আমিতো বৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছি আর বেশি শারীরিক পরিশ্রমের সুযোগ পাই না। তাই প্রতি সপ্তাহান্তে টেনিস খেলি। তা খেলতে গিয়েই এই অবস্থা। আশা করি খুব দ্রুতই আবার কোর্টে ফিরতে পারব। এই হচ্ছে ফিট থাকার জন্য তাদের মনোবল। সুস্থতো ওদেরই থাকার কথা, নয় কি??
আরটে পিয়াযা
শহর কর্তৃপক্ষও গরমের এ সময়টায় জনগনের বা বিশেষ করে ছাত্রদের জন্য নানা আউটডোর সার্ভিস ফ্রি করে দেয়। পাহাড়ে উঠার ক্যাবল কার থেকে শুরু করে চিড়িয়াখানার টিকিট পর্যন্ত। সেই সুযোগে আমরাও ঘুরে এসেছি মারুয়ামা জু। দেখলাম টেম্পারেট অঞ্চলের নানা পশুপাখি। গ্রিনহাউজে ট্রপিকেল আবহাওয়া তৈরি করে ঐখানকার নানা পশুপাখিকেও প্রদর্শনের জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। তাছাড়া এসময়ের সুন্দর আবহাওয়াকে কাজে লাগাতে গিয়েছি সুকিমাতসু পার্ক, মইরুনোমা পার্ক, শিরোগানেনো ফলস, মাশিকে মেমোরিয়াল পার্ক, আরতে পিয়াযযা স্কাল্পচার মিউজিয়াম ইত্যাদি দর্শনীয় স্থানে। যাদের সৌন্দর্য বর্ণনাতীত।
অন্যদিকে, ব্যস্ততায় হচ্ছে সময় যাপন, যার দরুন বার মাসে ১১টা যাপিত জীবন…
বনধু, পথ দেখায়
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:৪১