এবারের মেলায় বাঙলায়ন থেকে প্রকাশিত আমার প্রথম কবিতার বই নাচপ্রতিমার লাশ থেক প্রথম দশটি কবিতা-
নাচপ্রতিমার লাশ
পিয়াস মজিদ
হি ম বে হা লা
১.
ছোট নদী পাহাড় বাগিচা রক্তের নির্ঝর। পাতা ও পাপড়ির অলিন্দ। সন্ধ্যার ঝিলিমিলি তারপর সমুদ্রকুহক; জলের বিষণœ রেখা। শ্যাওলার সবুজ গন্ডোলা। চাঁদচূর্ণ ছিটকে ছিটকে ভৌতিক আভা, নত্রত, মেঘমালার গোপন অসুখ। মৃত্যু ও সুন্দরের যুগলবন্দি। লেট দেয়ার বি লাইট, লেট দেয়ার বি ডার্ক। জীবনের জটিল সারগাম। ধাতব ফুলের তোড়ায় তোমাকে স্বাগত। বেঁচে থাকার এই রিক্যুয়াম, সোনাটায়
২
আমাকেই শোনাবে সে লবণহীন সমুদ্রের আখ্যান। হিরার কুচি, সোনার কুচি ভরা প্রান্তরের গান। সৃষ্টির আদি থেকে জন্মান্ধ সুুন্দরের যোনিমুখে দাঁড়িয়ে যে জপছিল প্রবেশের মন্ত্র। উত্তরে পেল মনসার বাগানে ফোটা থোকা থোকা বিষের বকুল। হিমের কুঠারে ছিন্নভিন্ন রাতের হেরেম তন্ন তন্ন করে সে বের করে আনল মৃত নর্তকীর শ্বাস। সঙ্গে বিষণœ রুমঝুম; একজোড়া কান্ত নূপুরের
৩
মাছপরীদের দ্বীপ, দগ্ধ সারস, হিমঝোপ পেরিয়ে যাব নীল ঘাসের বনে। কৃষ্ণকুসুম ফোটার পেয়েছি সজল সংকেত। সিল্কবৃষ্টির সাথে ফিরে ফিরে আসছে না কি আমার লুপ্ত অনুভব যত! চাঁপাপুর হয়ে অধিপাহাড়ের চূড়ায় কারা বসিয়েছে এত এত নিভন্ত ফুলের ফোয়ারা? যখন অক্টোপাসের মুখে মেঘের মুণ্ডু, মৃত্যুরসে থই থই মাঠের সবুজ। শেফালির স্তূপে ডুবেছিলাম। হাত-পা ছড়াতে দেখি স্মৃতিদাগ, শরতের। কাছে দূরে গোলাপের গন্ধগর্জন। শীতমহলের সাথে জেগেছে সোনালি-রক্তিম অজস্র ঝরোকা আর আকাশে একটা চাঁদে পাওয়া সূর্য
৪
তোমার নাচের ভেতর পতন জাজ্বল্য দেখে খোলা রাখি সুরহীন গানের দুয়ার। দিনরাত। রাতদিন। সে দুয়ারে দ্রবীভূত তারাদের তাঁবু, নিধুবন আর লেলিহান গোলাপ। দূরে ভেঙেচুরে পড়ে সমুদ্রের ফেনিল স্থাপত্য। সহস্রঘুমের শেষে আজ জাগরুক শুধু মাল্লাদের শত শত লবণডানা। এবং হেমন্তই সব জিঘাংসার বাহক; যে বারংবার ঠেলে দেয় ঐ নারীনিশিপরিখায়। নূরজাহান আজ জলশাও প্রেতায়িত। রক্তসবিতায় আমি অস্তমিত চাঁদনি
৫
পরিরা পিরিচে ঢেলে দিচ্ছে হিংস্র আলোর দ্যুতি। দৈত্যের ওপর লালগোলাপের ভার। যাদুদগ্ধ রাতের পোড়া ডানাকুলে ঋষিসমুদ্রের বাধ ভেঙে গেছে; নিখিলে নিখিলে কামজোয়ারের শ্যামজল। মারবেল ফলের মওসুম শেষে শুষ্ক বাগিচা ঘুরে কুড়িয়েছি সান্ধ্যকুয়াশা, মৃত্যুসংকেত, ব্যথার নীলাভ ঘূর্ণি। আড়ালে থেকে এই ধ্বংসদৃশ্য সায় দিয়ে গেছে সুবর্ণসিংহ এবং হিরাহরিণের দল। কাকলিসমেত উড়ে গেল পাখি; তার পালকের খাপে পোরা রক্তঝোরা। আর সবুজ লণ্ঠনে দেখা যায় আজকের এই খুন, আয়রনি সব রূপহারা রাজহাঁসের নিরুপম কবর
৬
চন্দ্রমন্থনের রাত আবার। খয়েরি খেলায় নীল নিমজ্জন শুধু। বুদ্ধগয়ার পথে হিংসাসূর্যের বিভা। নরকের ফুল আছে গাছে। রক্তাভ ঊষার এলোচুল চুইয়ে তিক্ত সুরভি ঝরে। ডানে ত্রসরেণু, বায়ে পাপের ত্রিভুজ। সেদিকেই মৃত্যুময়ূর পেখম খুলে দেখায় খাঁজ কাটা পরমের গুপ্তজ্ঞান। আমরা মূর্খদের রাজাপ্রজা পিশাচস্রোত ঠেলে উদ্ধার করি বিত সমুদ্রকণ্ঠা
৭
শ্রীময় বসুধার উপর গ্রহণলাগা তপনের ভার। তারা আছে ঝিলমিল। তপন ও তারার সংঘাতে জ্বলছি। পাহাড় ভেঙে টিলাপাখি ছুটেছে। কোথায় সে তিক্ত গোলাপের ঝাড়, পালকছেড়া নীল রাজহাঁস? হিমকুঠারের কোমল ঘায়ে যুগল গলছে করোটি ও কণ্ঠা। সকাল শেষে সহস্র সন্ধ্যা পায়ে পায়ে ঢুকেছে গান্ধর্ব ঝড়ে। মৃত্যু তোমার অমল রাগে আবার অজস্র তারা ও তপন। জ্বলে নেভে, ছড়ায় রক্তশোভা
৮
জলআঁধারে আলো নেমে গেল রাজহংসরূপে। মুক্তাপ্লাবনে ভেসে যাবে মধ্যরজনী গান। পিছে রেখে পারুলবন ফুটেছে থোকা থোকা রোদনের ফুল। হাওয়াও আজ হন্তারক। নিরঞ্জন নদীতে ধ্র“পদ, খেয়াল আর যত মিথুন। সুরের শত্র“ যে মেয়ে তারও হাতে বেলোয়ারি চুড়ি। ণপ্রভা তারার নীলিমা দেখে নিদ্রা ভুলে এক অসুখী যুবা নির্বিকার গড়ে যাচ্ছে তাসের পাহাড়। কী সব অলংকারে রাতের গলায় অমিতাভ মৃত্যুর হার
৯
চাই আরোগ্য বলে মৃত্যুসদনে ভিড় করেছে সবাই-পরিযায়ি পাখি, মুকুটখসা রানী কিংবা নামহারা পতঙ্গ কোন। শেষ শ্রাবণের জলগুলো শীতের ভেলায়। দূরের লুণ্ঠনধারায় মাধবীর হৃত যত শ্বাস। তাকে ঘিরে গান হয়, ভোরে মেশে রজনী। অমা শেষে শুরু আরো এক হিরণ্যদুপুর। কঠিন শিলায় গোলাপ তোমার কোমল গুপ্তঘাত। ঝিলিমিলি খোলা নিঝুম সন্ধ্যা ; আগে পিছে কিছু কামুক সিদ্ধার্থ। আরোগ্য পড়ে থাকে। সূর্যাস্ত দেখার ছলে শশী ছুটে যায় মৃত্যুকুসুমটিলায়
১০
সোনার পাহাড় থেকে দেখা যায় জটাময় চাঁদ। বজ্রবৃরে গলায় যখন নৃমুণ্ডের মালা। রক্তভাসানে সাত ভুবনের লতাপাতা, সমুদ্রচুল আর রুপালি যত রূপকের ভার। টিকলিপড়া মেয়ে ঊর্মিজন্ম পেয়ে ছুটে যায় মায়ামোহনায়। তার নাচের করাতে গলে গুপ্তপারদ। রাত্রিপ্রহারে বেঁকে যাওয়া ভোরের কণ্ঠে মরচে পড়া জ্যোৎস্নার ইতিকথা যত। আর এমন হেমন্ত, বিকেলের এত মন্দাক্রান্তা ঢেউ তবু দেখ মীরা, অগ্নিরতেœ পুড়ছে কেমন তোমার ভজন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




