১ম পর্ব২য় পর্ব[গাঢ়]
রফিকের ডায়েরি থেকে
জানিনা কীভাবে প্রেমে পড়লাম। আমি জীবনে যে খুব সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাটিয়ে দিয়েছি তা নয়। প্রেম করেছি নীলার আগেও কয়েকটি। ঢাকায় একা থাকলে যতটুকু নষ্ট হওয়া যায় হয়েছি। পরে সময়ের সঙ্গে শুধরে গেছি। একবার তো পারুলকে বিয়ে করবো বলে বেরও হয়েছিলাম কিন্তু পরে আর হয়নি। তবে নীলাকে ভালোবেসেছি মোহাচ্ছন্ন হয়ে। ও সব জানে। অবশ্য আমি যেটুকু জানিয়েছি। ওর সঙ্গে প্রেমের শুরুটা কাকতালীয়। বৃষ্টির দিন। সন্ধ্যায় টিউশনিতে যাচ্ছি। হঠাৎ বৃষ্টি। আমি এক বাসার সামনে দাঁড়ালাম বৃষ্টি থেকে বাঁচতে। হঠাৎ উপরে তাকাতেই লক্ষ্য করলাম বাড়ির বারান্দায় অদ্ভুত সুন্দরী এক মেয়ে। হালকা নীল সালোয়ার, গায়ে চাদর। চোখে চোখ রাখতেই তার ভূবণ ভোলানো হাসি। আমি হারিয়ে গেলাম। কিন্তু সেও যে এত দ্রুত হারাবে ভাবিনি। হঠাৎ এক টুকরো কাগজ। প্রেমপত্র ভেবে পকেটে গুঁজলাম। ওখানে পড়লে মেয়েটি লজ্জা পবে ভেবে বৃষ্টিতেই ছুটলাম। যা হয় হবে। বাসায় গিয়ে দেখি ওটা সাদা কাগজ। এমন মেজাজ খারাপ হয়েছিল যা বলার না। এরপর প্রতিদিন ওই বাড়িতে উঁকি দিয়েছি। যে বিশাল বাড়ি, ভেতরে ঢুকতে সাহস হয়নি। কিন্তু বড়লোকের মেয়ে বলেই এসব তামাশা করবে? এরতো কোনো মানে হয়না। বেশ কয়েকদিন পর আরেক বৃষ্টির দিনে তাকে পেলাম, সেই বারান্দা, সেই বৃষ্টি, সেই হাসিতে। ও নেমে এলো। এসে ক্ষমা চাইলো। আমি মনে মনে বললাম, ওই সাদা কাগজেই আমি সব বুঝে গেছি। কিছু লেখনি তাতে কি হয়েছে।
এরপর পরিচয় .......... কয়েক মাসের মধ্যেই ওকে নিজের করে পেতে বিয়ের সিদ্ধান্ত। ভেবেছিলাম বিয়ের পর নীলার বাবার কেস টেসের মধ্যে পড়বো। কিছুই হলোনা। নীলা বললো, 'তার আর ওই বাড়িতে ফিরে যাওয়া হবেনা'। আমি বলালাম, 'যাক বাবা ঝামেলা তো হয়নি'। আর শিল্পপতি বাবার একমাত্র মেয়ে ক'দিনই বা রাগ করে থাকতে পারবে। পরে তো রাজ্যসহ রাজরানী_সবই আমার। আমি আর নীলা, অনেক সুখের সংসার আমাদের। নীলা চাকরী করে ওর এই মেন্টালিটিও আমার খুব প্রিয়। ......... আহা কী সুখের জীবন
এরপর কয়েক মাস পর। নীলা বাসাতেই ছিল। রফিক অফিস থেকে একটু তাড়াতাড়িই ফিরলো। ফিরে এসে যা দেখলো তার জন্য রফিক মোটেও প্রস্তুত ছিলনা। এক ভদ্রলোক নীলাকে বিশ্রি ভাষায় গালাগাল করছে। এক পর্যায়ে গায়ে হাত তুলতে উদ্যত হলে রফিক থামায়। পরে জানা যায় লোকটি নীলার ভাই। কিন্তু এ জানাটাও যখন মিথ্যে হলো তখন একে একে সব মুখোশ খুললো সত্যের। নীলার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক থাকার কারনেই আজ তার বাবার সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়েছে। নীলার আসল পরিচয় জানতে পেরে লোকটি উদ্যত হয়ে এসেছে তার ঝাল মেটাতে। লোকটি চিৎকার করে বলছে 'তুই তো একটা ......শ্যা', আরো অনেক অকথ্য গালি। লোকটির হাতে কয়েকটি পরুনো পত্রিকা। পত্রিকায় নীলার ছবি। ছবির ক্যাপশনে লেখা 'ধর্ষিত নীলিমা রায়'। একদল ডাকাত গভীর রাতে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে ........। রফিকের স্তব্ধতাও হারায়। আরো কিছু স্থানীয় পত্রিকা নীলার ছবি ছাপিয়ে তাকে নষ্টা মেয়ে প্রমান করেছে।
একটি সংবাদ
মগবাজার দিলু রোডের 6 তলায় নীলা নামে এক মেয়ের আত্মহত্যা। পরদিন পত্রিকার খবর এক পতিতাকে বিয়ে করে ফেঁসে যায় রফিকুল নামে এক যুবক ....... আরো অনেক কেচ্ছাকাহিনী। কয়েক বছর পর রফিক এখন অফিসে অনেক মনোযোগি। সে এখন যথেষ্ট ধার্মিকও। কিন্তু গভীর এক পাপ বোধে ভোগে সে সবসময়। প্রতিবছর নীলার মৃতু্যদিনে সে ওই বাড়িটার সামনে রাতে পায়চারি দেয়। জোছনা রাতে নীলা তার দিকে চেয়ে হাসে ভূবন ভোলানো হাসি। পরনে সেই হালকা নীল সালোয়ার, গায়ে সেই চাদন জড়ানো। .......... আর কেউ না জানুক রফিক তো জানে নীলার চলে যাওয়ার রহস্য!

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



