আমি কে, কি করি ইত্যাদি বিষয়ে না যাই। সেই পাটিগণিতের "মনে করি" অভ্যাসটা আর একবার ঝালিয়ে নিলেই এবারও সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, আশা রাখি। মনে করেন, অনেক দিনের পুরানো বই এর আলমারিতে সামনের কয়েকটা পাতা হারানো একটা নোটবুক...
আজ এত দিন পর মনে হচ্ছে সব মরিচীকা! না, আমি জীবনের লক্ষ অর্জনের কথা বলছি না। বলছি আমার প্রনয়নীর কথা।আমার প্রানেশ্বরীর কথা। জ্ঞান বোধ হারালেও আমার ঠোটের মাঝে যে মেয়েটির নাম উৎচারিত হয় সে মেয়েটির কথা। ওর নাম অধরা। শুধু অধরের মাঝে থেকে অ-ধরাই রয়ে গেলো। গরীবের গর্ব সততা। সততার অহংকার নিয়ে দরিদ্র বেঁচে থাকে। ভালবাসার মানুষটি হল সম্পদ, এই সম্পদ হারালেও মানুষ ভালবাসার গর্ব নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে। কিন্তু এই ভালবাসার স্বীকৃতিটুকুও হারালে সে কি নিয়ে বাঁচে? সাবানের ফ্যানায় ফু দিয়ে বুদ্বুদি উড়ালে তার মাঝে শুন্যতা থাকলেও জগৎছবির রঙীণ প্রতিবিম্ব তাতে দেখা যায়। প্রেয়শীর কঠিন শব্দের স্পর্ষে সে রঙিণ স্বপ্ন আমার ঠুস করে উবে গেল। ও বলে আমি নাকি ভালবাসতে জানি না। আমি বলি..
আমি সম্রাট শাজাহান নই-
তাজমহল গড়ার ক্ষমতা আমার নেই
তবে, ভালবাসতে আমি জানি।
তোমার অভাবে তপ্ত মরু, সেখানে আমি
জলের হাহাকারে বাঁচতে জানি।
আমার ভালবাসায়
কুশুমের কমলতা নেই,
আছে আদিম গুহামানবের রুক্ষতা; তাই মনে সংশয়..
আমার ভালবাসাকে ভুল বুঝনা!
কালমেঘের তিক্ততা নিশ্চই তার
ঔষধীগুণ খর্ব করে না!
আবার ভাবি তাই তো ও তো ঠিকই বলে, ভালবাসতে জানলে ও তো আমাকে অন্তত ভুল বুঝতো না। দির্ঘশ্বাস ফেলে স্মীত হেসে ভাবি, এ অভিমান কে দেখবে? তাই আপন মনে ঝড় তুলে সুনামীর প্রবল ঢেউ এ সব ভাসিয়ে দেই আাবার, রঙের তুলিতে মেঘ ঝরিয়ে রঙধনু তুলি; ভালবাসি তাই দুরে ঠেলতে পারিনা।
শুনেছিলাম রবি ঠাকুরের অমিত, লাবণ্যকে ভালবেসেছিলেন কিন্তু পরে বিয়ে করেছিলেন কেতকীকে। যতিশংকরকে এ প্রসংগে অমিত বলেছিলেন,"অক্সিজেন এক ভাবে বয় হাওয়ায় অদৃশ্য থেকে, সে না হলে প্রাণ বাঁচে না। আবার অক্সিজেন আর-এক ভাবে কয়লার সঙ্গে যোগে জ্বলতে থাকে, সেই আগুন জীবনের নানা কাজে দরকার– দুটোর কোনোটাকেই বাদ দেওয়া চলে না।" কিন্তু অমিত বাবু, সুযোগ পেলে আপনাকে জাননাতাম- ওটা একই অক্সিজেনের দুটো গুন; আপনি চেষ্টা করলে একজনের মাঝেই বহুরূপ খুজে পেতেন। আমি যে দুটো হাত দিয়ে জীবিকা নির্বাহের জন্য উপার্জন করি, সে হাত দিয়েই আহার মুখে তুলি। দিনের শেষে আমি তো সেই দুটো হাতই খুজে পাই! বিষয়টা স্পষ্ট করতে অমিত আরো বলেন," কেতকীর সঙ্গে আমার সম্বন্ধ ভালোবাসারই, কিন্তু সে যেন ঘড়ায়-তোলা জল– প্রতিদিন তুলব, প্রতিদিন ব্যবহার করব।আর লাবণ্যর সঙ্গে আমার যে ভালোবাসা সে রইল দিঘি, সে ঘরে আনবার নয়, আমার মন তাতে সাঁতার দেবে।" কিন্তু অমিত, আপনি কি নিজের অজান্তে কাতকী কে ছোট করলেন না? "দশ" এর মাঝে তো "এক" এর গুণ বিদ্যমান তবু "এক" কে কেন আলাদা করে পকেটে গুজবেন? দিঘি ঘরে আনতে না পারলে, ঘরকে তো দিঘির পাশে নেওয়া যায়! সামনে পাঠ্যপুস্তক রেখে অন্য পুস্তকের ধ্যান করলে; কপাল যদি খারাপ থাকে, পরীক্ষার হলে শশ্য ফুল দেখার সম্ভাবনা থাকে।
অন্যদিকে ছলনাময়ী লাবণ্য, শোভনলালের স্ত্রী অমিতকে চিঠিতে লিখেছেন,
"... তোমারে যা দিয়েছিনু তার
পেয়েছ নিঃশেষ অধিকার।
হেথা মোর তিলে তিলে দান,
করুণ মুহূর্তগুলি গণ্ডূষ ভরিয়া করে পান
হৃদয়-অঞ্জলি হতে মম।..."
বেচারা শোভনলাল! গৃ্হকর্তা উদাসীন থাকলে অতিথি বিব্রত হন। শুধুমাত্র আন্তরিকতার সাথে আপ্যায়ন করলেই অতিথি পরিত্রিপ্তি পান।
আমি জগতের সকল নারীকেই ছলনাময়ী বলি না। কারন, মধু শুধুমাত্র তখনই মধুর যখন তা আস্বাদন করা হয়!
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০১১ ভোর ৪:২৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





