(মন্ত্রী ও মহারানীর প্রবেশ।)
.....গান ও নৃত্য।....পিয়ার কিয়া তো ডারনা কিয়া.....
(মহারাজের আগমন বার্তা ঘোষনা ও সন্ত্রস্ত মন্ত্রীর প্রস্থান। উদ্বিগ্ন মহারানীর ইতস্ততো পায়চারি)
আর্যকুলগৌরব, দেবদ্বিজ প্রতিপালক, ধর্মার্থবিৎ, সুবিজ্ঞ, দেশহিতৈষী, অত্র ভুখন্ডের একমাত্র অধিপতি, লালে লাল রাজেন্দ্র দুলাল, মহারাজ লালেন্দ্র রায় বাহাদুর হাজির......।
(মন্ত্রী ও সেনাপতির(সেনাপতির হাতে বেলুন লুকান থাকবে) সহিত মহারাজের প্রবেশ।)
মহারাজ: মহারানী... (ক্রোধান্বিত)
মহারানী: আজ্ঞা মহারাজ..।
মহারাজ: আপনার প্রতি আমার যে ভালবাসার সাগর ছিল তাহা মুহুর্তে ভাঙ্গিয়া চুরমার হইয়া গিয়াছে। আপনার প্রতি আমার যে বিশ্বসের পাহাড় ছিল তাহা মুহুর্তে শুকাইয়া মরুভুমিতে পরিণত হইয়াছে। আপনার প্রতি আমার যে ক্রোধ ও ঘৃনা কে নিষদ্ধ ও পরিত্যাগ করিয়াছিলাম মন্ত্রীর সহিত এই হিন্যতম দৃশ্য দেখিয়া তাহা এই আগুনে জ্বলিয়া পুড়িয়া ছারখার হইয়া.....এই কি বের কর....(সেনাপতির হাত থেকে বেলুন নিয়ে ফাটিয়ে)...ঠুস হইয়া গিয়াছে। তাহার যদি উপযুক্ত কারণ দর্শাইতে না পারেন তবে আপনার গর্দান যাইবে।
মহারানী: মহারাজ...না, না, না...মহারাজ..। আমার প্রাণনাথ...জীবন জীবনের স্বর্থে...আমার রাজেন্দ্র কুমার..।এই ছিল আপনার আমার প্রতি বিশ্বাস, আমার প্রতি ভালবাসা, ভালবাসার পাহাড়, তাহা কি এতই দুর্বল যে ভাঙ্গিয়া গেল। আর আপনার ভালবাসার সাগরের প্রবাহ কি এতই কম যে তাহা শুকাইয়া মরুভুমি হইয়া গেল। বলুন মহারাজ, বলুন...
মহারাজ: তবে কি আমার এই দুই চোখ কে অবিশ্বাস করিব?
মহারানী: না মহারাজ, আপনি যখন উপযুক্ত কারন দর্শাইতে বলিয়াছেন আমি তাহলে তাহাই করিব। মহারাজ, আপনার জীবনে তো শুধুই যুদ্ধ যুদ্ধ ল্যাংগুয়েজ ল্যাংগুয়েজ P.R.। আর এই রাজ্যের ভবিষ্যত তার কথা আমি বৈকি কে চিন্তা করিবে মহারাজ। তাই তো রাজ্যের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করিয়া আমি মন্ত্রীর সাথে পরামর্শ করিবার জন্যই আমি উহাকে অন্দরমহলে ডাকিয়াছিলাম। আর এই যদি আমার অপরাধ হয়, রাজ্যের ভবিষ্যত চিন্তা করা... তাহলে আমার গর্দানই শ্রেয়।
মহারাজ: না, মহারানী না। আমি ভুল দেখিয়াছি, আমি ভুল শুনিয়াছি। আপনি রাজ্যের ভবিষ্যত চিন্তা করিয়া মন্ত্রীর সহিত সদপরামর্শ করিয়াছেন। আমি খুশি হইয়াছি। আপনার প্রতি আমার যে ভালবাসার সাগর শুকাইয়া মরুভুমি হইয়া গিয়াছিল তাহা আবার ফুলিয়া-ফাপিয়া উঠিয়াছে। আপনার প্রতি আমার যে ভালবাসার পাহাড় ভাঙ্গিয়া চুরমার হইয়া গিয়াছিল তাহা আবার গজাইয়া উঠিয়াছে। আমি এতটাই খুশি হইয়াছি..স্বয়ং বিশ্বকর্মা ডিজাইনকৃত ও নির্মিত, এই নিন মহান উপহার।
মহারানী: বাহ মহারাজ, বাহ..আপনি মহান।
মহারাজ: যান মহারানী অন্দরমহলে আরাম করুন। আই এ্যাম কামিং সুন।
(রানীর প্রস্থান)
....মহামন্ত্রী.....
মন্ত্রী: আজ্ঞে মহারাজ।
মহারাজ: তুমি মহারানী কে এমন কি সদপরামর্শ দিয়াছ যা আমি দিতে পারিনাই? উপযুক্ত কারণ দর্শাইতে না পারিলে তোমার গর্দান যাইবে।
মন্ত্রী: হে দেবদ্বিজ প্রতিপালক, হে অত্র ভুখন্ডের একমাত্র অধিপতি, আমার এ মস্তক যদি আপনার হৃদয় পিপাসা মিটাইতে পারে তবে যে কোন মুহুর্তে আমি তা বিসর্জন দিতে প্রস্তুত মহারাজ। তবে, তবে মহারাজ, রাজ্যের প্রজারা ভবিষ্যত যুবরাজের আশায় আশায় দিশেহারা।
তাহারা যুবরাজের আশায় আপনার মুখের দিকে চাহিয়া আছে মহারাজ।
সেনাপতি: মহামন্ত্রী...। (সেনাপতির গর্জন)
মন্ত্রী: আপনার মুখের দিকে চাহিয়া আছে মহারাজ।
মহারাজ: তবে কি রাজ্যের প্রজারা আমাকে দুর্বল রাজা ভাবিয়াছে! তাহারা কি আমার সামর্থ নিয়া প্রশ্ন তুলিয়াছে!
মন্ত্রী: ক্ষমা করিবেন মহারাজ। আপনার সেবা করাই আমার জীবনের ব্রত। আমি অসংখ্য স্থান ভ্রমন করিয়া জানিতে পারিয়াছি, আরব্য ও পারস্য দেশের রাজারা এক দুর্গম জঙ্গলে গিয়া সাত দিন সাত রাত এক মহাযজ্ঞ সম্পন্ন করিয়াছে এবং তৎক্ষণাৎ তাহাদের গুপ্ত সন্তান লাভ হইয়াছে, মহারাজ। আপনি যদি টিংবিয়ার জঙ্গলে সাত দিন সাত রাত এক মহা যজ্ঞ সম্পন্ন করেন তবে যুবরাজ প্রপ্তির সম্ভাবনা রহিয়াছে, মহারাজ।
মহারাজ: ঠিক আছে। শুনিয়াছি টিংবিয়ার জঙ্গলে হিংস্র ভয়ংকর রাজ হংস থাকে এবং ইহাও শুনিয়াছি পুর্বে সেইখানে যে সমস্ত রাজারা যজ্ঞ সম্পন্ন করিতে গিয়াছিলেন তাহারা আর এই মঞ্চে ফিরিয়া আসেনাই। কিন্তু এই রাজ্যের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য যে কোন চ্যালেঞ্জ মেনে নিতে রাজি আছি। তবে মন্ত্রী..।
মন্ত্রী: আজ্ঞা, মহারাজ।
মহারাজ: যজ্ঞে যওয়ার ব্যাবস্থা কর।
মন্ত্রী: যর্থাথ মহারাজ, এক্ষুনি ব্যাবস্থা করিতেছি।
মহারাজ: সাথে দুইজন মহারানী কে রাখিও।
মন্ত্রী: তাহাই হইবে মহারাজ, চলুন।
(সকলের প্রস্থান; অতঃপর, মহারাজের প্রবেশ)
মহারাজ: মহারানী, মহারানী...মন্ত্রী, সেনাপতি তোমরা কে কোথায় আছ..আমি যজ্ঞ থেকে জীবিত ফিরিয়া আসিয়াছি। আমি সেই হিংস্র ভয়ংকর রাজহংস ভক্ষন করিয়া ঐখানে জীবন ধারন করিয়াছিলাম। আমি আবার ফিরিয়া আসিয়াছি...মহারানী তোমরা কে কোথায় আছ, আস...
মহারানী: মহারাজ, মহারাজ, মহারাজ..আপনি ফিরিয়া আসিয়াছেন...এত খুশি, এত খুশি আমি কোথায় রাখি মহারাজ।
মহারাজ: আহাঃ..।
মহারানী: মহারাজ, আরও একখানি খুশির সংবাদ রহিয়াছে মহারাজ।
মহারাজ: সংবাদ! খুশির সংবাদ। মহারানী, আমার সমস্ত রাজ্যের রানীদের মধ্যে আপনিই সেরা। বলুন, কি সেই খুশির সংবাদ? তাহা আমায় কি মহামন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করিতে হইবে?
মহারানী: সব কথা কি আমাকেই বলিতে হইবে মহারাজ? আপনি তাহলে কি বুঝিবেন..মন্ত্রীকেই জিজ্ঞাসা করুন।
(রানীর প্রস্থান)
মহারাজ: ঠিক আছে। মহামন্ত্রী..।
(বাচ্চা কোলে মন্ত্রীর প্রবেশ)
মন্ত্রী: আজ্ঞা করুন মহারাজ।
মহারাজ: যজ্ঞ থেকে ফিরিয়া আসিয়া আমি এই রাজপুত্রের মুখ দর্শন করিব ইহা তো আমি ভাবিতেও পারিনাই। (মন্ত্রীর কাছ থেকে বাচ্চা কোলে নিতে নিতে..) ইহার চাইতে খুশির সংবাদ আর কি হইতে পারে? কাল সারা রাজ্যে সাধারন ছুটি ঘোষনা করে দিও।
মন্ত্রী: যথা আজ্ঞা মহারাজ। মহারাজ, এর এক খানা নাম ঠিক করিয়া দিন।
মহারাজ: ইহাই রাজ্যের ভবিষ্যত উজ্জ্বল করিবে। বল ইহার কি নাম হইতে পারে।
মন্ত্রী: যেহেতু ইহাই আপনার বংশ এই প্রথম ফুল ফুটিল ইহার নাম ফুলকুমার রাখিয়া দিন মহারাজ।
মহারাজ: ঠিক বলিয়াছ। তাহলে আজ হইতে ইহার নাম ফুলকুমার।
মন্ত্রী: যর্থাথ সুন্দর নাম হইয়াছে মহারাজ।
মহারাজ: তবে মন্ত্রী আমি চাই, এই যুবরাজ ফুলকুমার বুদ্ধিতে, নীতিতে তোমারই মত হয়। আর শক্তিতে ও রাজ্য পরিচালনায় আমারই মত হয়।
মন্ত্রী: তাহাই হওয়ার কথা, মহারাজ।
মহারাজ: ইহা শুনিয়া আমি যার পর নাই খুশি হইয়াছি।
মন্ত্রী: মহারাজ, আজকের এই খুশির মহুর্তে আপনার হৃদয়কে শক্ত করিতে হইবে। যুবরাজ জন্মলাভ করিয়াছে এক বিশাল অভিশাপ
লইয়া।
মহারাজ: আবার অভিশাপ!
মন্ত্রী: প্রতি মুহুর্তে যুবরাজের বয়স টেন টু দি পাওয়ার ছিক্স করিয়া বাড়িতেছে মহারাজ। তাকে যদি বাচাইতে চান তবে কঠিন পরিক্ষা দিতে হইবে মহারাজ।
মহারাজ: কি পরিক্ষা, বল। যদি বলিতে না পার তবে তোমার গর্দান যাইবে।
মন্ত্রী: এ বিপদ হইতে পরিত্রানের একমাত্র উপায় বিবাহ।
মহারাজ: বিবাহ!
মন্ত্রী: আজ রাত্রে যে মেয়ের বয়স ১২ বছর পুর্ন হইবে তাহার সাথে বিবাহই পারে যুবরাজকে রক্ষা করিতে।
মহারাজ: সে কি যে কোন মেয়ে হইলেই হইবে?
মন্ত্রী: আজ্ঞে মহারাজ।
মহারাজ: ঠিক আছে তাহলে এই বয়সেও আমি বিবাহ করিতে রাজি আছি।
মন্ত্রী: মহারাজ! বিবাহ আপনার সাথে নয়, যুবরাজের সাথে করাইতে হইবে।
মহারাজ: তুমি একথা আগে বলনি কেন!
মন্ত্রী: মহারাজ, আপনি অত সত্তর ১২ বছরের মেয়ে খুজিয়া বাহির করুন। আমি ততক্ষন যুবরাজের দেখভাল করি।
মহারাজ: তুমি অন্দরে মহারানীর কাছে রাখিয়া আইস। আমি এই ব্যাপারে সেনাপতির সাথে কথা বলিব।
মন্ত্রী: যথা আজ্ঞা মহারাজ।
(মন্ত্রীর প্রস্থান)
মহারাজ: সেনাপতি...।
(সেনাপতির প্রবেশ)
সেনাপতি: আজ্ঞা মহারাজ।
মহারাজ: আজ এই মুহুর্তে যে মেয়ে ১২ বছরে পদার্পন করিয়াছে, সেই মেয়ে খুজিয়া লইয়া আইস।
সেনাপতি: যথা আজ্ঞা মহারাজ। আমাকে একটু ফেসবুক সার্চ করিতে দিন।
মহারাজ: ঠিক আছে।
সেনাপতি: পাওয়া গিয়াছে।
মহারাজ: পাওয়া গিয়াছে!
সেনাপতি: পাওয়া গিয়াছে যে, এই মেয়ে এ সময় ১২ বছরে পদার্পন করিয়াছে। কিন্ত মহারাজ তাহার নাম তো বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না।
মহারাজ: ঠিক আছে, ইহার এ্যাবাউট অংশ দেখ।
সেনাপতি: মহারাজ ইহার প্রফাইলে ৩ খানা মিউচুয়াল ফ্রেন্ড দেখা যাইতেছে।
মহারাজ: তাহার প্রফাইলে কি আমি মিউচুয়াল ফ্রেন্ড নেই।
সেনাপতি: না মহারাজ, আপনার নাম তো দেখা যাইতেছে না।
মহারাজ: কি! এত বড় স্পর্ধা। যাও উহার বিরুদ্ধে আমি গর্দান এ্যাট সাইট জারি করিলাম।
সেনাপতি: যথা আজ্ঞা মহারাজ।
(উভয়ের প্রস্থান)
বিরতি
(মহারাজের প্রবেশ)
মহারাজ: আজ দেখিতে দেখিতে যুবরাজের ২০ বছরে পদার্পন করিয়াছে। তাহাকে যদি এক্ষনে বিবাহ দিতে না পারি তবে বড়ই সংকটে পড়িতে হইবে। সেনাপতি....।
সেনাপতি: আজ্ঞে মহারাজ।
মহারাজ: যুবরাজকে তলব কর।
সেনাপতি: যথা আজ্ঞা মহারাজ।
সুদর্শন, সুপুরুষ, ড্যান্স মাস্টার, অত্র ভুখন্ডের একমাত্র যুবরাজ হাজির.....।
(নৃত্য..ও গান..।সঙ্গি সহিত যুবরাজের প্রবেশ; মহারাজ ও সেনাপতির প্রস্থান। নৃত্য শেষে যুবরাজ সঙ্গি সহিত প্রস্থান এবং মহারাজের প্রবেশ পিছু পিছু সেনাপতি ও যুবরাজের প্রবেশ।)
মহারাজ: গৃহে নৃত্যশিল্পী থাকায় নৃত্যটা ভালই রপ্ত করিয়াছে।
যুবরাজ: পিতাশ্রী, আমায় স্মরণ করিছিলেন?
মহারাজ: হ্যা যুবরাজ ফুলকুমার, এ রাজ্যের একমাত্র যুবরাজ এবং ভবিষ্যৎ অধিপতি। তোমাকে আমি স্মরণ করিয়াছি একটি জরুরি কারনে।
যুবরাজ: বলুন পিতাশ্রী।
মহারাজ: এ রাজ্যের পরম্পরা এবং ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করিবার জন্য তোমাকে ব্যাঘ্র শিকারে যাইতে হইবে।
যুবরাজ: কি বুলছেন মহারাজ? আইজ পর্যন্ত একখান মাছিও নিজে হাতে মারিনাই, সেনাপতিরে দিয়া মারাইছি। আর আপনি বুলছেন বাঘ শিকারে যাইতে হবে! এ আমি পাইরবনা মহারাজ। আমি বড় নাজুক।
মহারাজ: কেন, cph kommune এ যে gratis কোর্স রহিয়াছে তাহা কি তুমি সম্পন্ন করনাই।
যুবরাজ: উহা সবে শুরু করিয়াছি মহারাজ।
মহারাজ: ঠিক আছে, তোমাকে ব্যাঘ্র শিকারে যাইতে হইবে না। তাহার পরিবর্তে টিংবিয়ার জঙ্গলে তোমার জন্য একখানা গাছের সাথে একটি হরিণ বাধিয়া রাখিয়াছি। তুমি যাও উহা শিকার করিয়া লইয়া আইস।
যুবরাজ: মহারাজ, আপনি তো বুঝিতেই পারিলেন না। ঐ হরিণ যদি দড়ি থেকে ছাড়াইয়া ছুটিয়া যায়, তারপর যদি আমাকে ঘাস মনে করিয়া খাইয়া ফ্যালে...তখন কে, কে, কে আমাকে বাচাবে হরিণের কাছ থেকে?
মহারাজ: তাহাই তো, আমি তো কোন মুল্যেই আমার একমাত্র যুবরাজ ফুলকুমার কে হারাইতে পারিনা। সেনাপতি...
সেনাপতি: আজ্ঞা করুন মহারাজ।
মহারাজ: শুনিয়াছি তোমার ছেলে হরিণ মারার চোথা লিখিয়াছে।
সেনাপতি: হ্যা মহারাজ, আমার ছেলে হরিণ মারার চোথা লিখিয়া ৪ খানা হরিণ মারিয়াছে।
মহারাজ: এ তো বড় আনন্দের সংবাদ। তবে যাও এই মুহুর্তে তোমার ছেলেকে মঞ্চে হাজির কর।
সেনাপতি: যথা আজ্ঞা মহারাজ। পুত্র ডিযে..ডিযে শকুনি....কোথায় বাবা..?
(ডিযে শকুনির প্রবেশ)
ডিযে: আমাকে স্মরণ করিয়াছেন পিতাশ্রী?
সেনাপতি: মহারাজ একখানি নির্দেশ দিবেন..
ডিযে: মহারাজের নির্দেশ আমার শিরধার্য। আপনি আজ্ঞা করুন মহারাজ।
মহারাজ: সুযোগ্য সেনাপতির উত্তম ছেলে ডিযে শকুনি, শুনিয়াছি তুমি হরিণ মারার চোথা লিখিয়াছ?
ডিযে: আপনি যর্থাথই শুনিয়াছেন মহারাজ।
মহারাজ: এই রাজ্যের ভবিষ্যতের জন্য, এই রাজ্যের এক মাত্র যুবরাজ ফুলকুমার অতি শিঘ্রই টিংবিয়ার জঙ্গলে হরিণ শিকারে যাইবে।আমি তাহার সহিত তোমাকে প্ররন করিতে চাই।
ডিযে: যুবরাজের দেখভালের সুযোগ পাইয়া আমি নিজেকে ধন্য মনে করিতেছি মহারাজ। আপনি আজ্ঞা করুন।
মহারাজ: সেনাপতি, তবে তুমি ইহাদের শিকারে যাইবার ব্যাবস্থা কর।
সেনাপতি: যথা আজ্ঞা মহারাজ।
যুবরাজ: পিতাশ্রী আপনি আমাকে আশীর্বাদ করুন যেন আমি জীবিত ফিরিয়া আসিতে পারি।
(যুবরাজের মাথায় হাত রাখিয়া মহরাজ, ছু...ও ফুৎকার এবং প্রস্থান; যুবরাজ স্টেজের এক প্রান্তে অপেক্ষা করবে অন্য প্রান্তে সেনাপতি ও তার পুত্রের পরামর্শ)
সেনাপতি: শোন ডিযে, এই-ই সুযোগে যুবরাজকে শেষ করিয়া দিবি।
(সেনাপতির প্রস্থান)
ডিযে: চলুন যুবরাজ..
যুবরাজ: চলো, শিকারে তো যাব...শিকার তো আর করা হবে না, আমরা একটু গান বাজনা এগুলো করলে হয়না? আর তুমি খাবার-দাবার ঐ সবের ব্যাবস্থা রেখেছো তো?
ডিযে: সবই ব্যাবস্থা আছে যুবরাজ আপনি শুধু চলুন।
(উভয়ের প্রস্থান ও আবার প্রবেশ)
যুবরাজ: কি ব্যাপার এই খানে এত অন্ধকার কেন?
ডিজে: আমরা জঙ্গলে আসিয়া পড়িয়াছি মহারাজ।
যুবরাজ: তাই নাকি, জঙ্গলে অন্ধকার হ্য় আমি তো জীবনে দেখি নাই।
ডিযে: ঐ দেখুন যুবরাজ, আপনার পিতাশ্রী আপনার জন্য হরিণ বধিয়া রাখিয়াছে।
যুবরাজ: ওরে বাবা, এ হরিণ মানুষ খায়? ইহা যদি ছুটিয়া আসিয়া আমাকে খাইয়া ফ্যালে?
ডিযে: পারতপক্ষে মানুষ খায় না তবে রাজ বংশের রক্ত পাইলে দুই-একটা চাখিয়া দ্যাখে বটে।
যুবরাজ: বল কি? আমি পারিব না। এ কাজ আমাকে দিয়া হইবে না। তুমিই কর।
ডিযে: আপনাকে পারিত হইবে যুবরাজ। রাজ বংশের মর্যাদা রক্ষার্থে আপনাকে হরিণ মারিতেই হইবে। ধনুক ধরুন...
(যুবরাজ জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যাবে)...ভালই হল, আমাকে কিছুই করিতে হইল না। এখানেই মরিয়া পড়িয়া থাক তুই।
(নৃত্যরত জ্যোৎস্নার প্রবেশ..)
জ্যোৎস্না: কি গভির জঙ্গল.....একটা প্রানী..ওমা এ কোন যুবক। পোষাক-আষাকে তো ভদ্র ঘরের সন্তানই মনে হয়। যুবরাজ নাকি? আমার কাছে তো কলসিও নেই।কি দিয়ে এখন জ্ঞান ফিরাই।
(হাতে থুতু নিয়ে যুবরাজের মুখে ছিটিয়ে জ্ঞান ফিরান) যুবরাজ....
যুবরাজ: আমি, আমি কোথায়....।
জ্যোৎস্না: যুবরাজ, আপনি জঙ্গলে।
যুবরাজ: আমি কোথায়....।
জ্যোৎস্না: যুবরাজ, আপনি জঙ্গলে, যুবরাজ।
যুবরাজ: ওরে বাবা রে...ওরে বাবা।
জ্যোৎস্না: যুবরাজ, এ কি এক্সপ্রেশন?
যুবরাজ: তুমি কি হরিণ?
জ্যোৎস্না: না যুবরাজ, আমি বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না। কথা দিয়ে কথা রাখিনা।
যুবরাজ: আমি বেরিয়ে আসলে তুমি আমাকে খেয়ে ফেলবে না তো।
জ্যোৎস্না: না যুবরাজ। আমি মানুষ খাইনা। আপনি আসতে পারেন।
যুবরাজ: তুমি সত্যি বলতিছ?
জ্যোৎস্না: আজ্ঞে হ্যা যুবরাজ। আসুন, আসুন...।
যুবরাজ: ওমা হরিণ এমন সুন্দর হয় নাকি.. কে বলেছে হরিণ মানুষ খায়, কে বলে হরিণ হিংস্র প্রানী, হরিণ অতীব সুন্দরী প্রানী। হরিণকে দেখলে প্রেমে পড়া যায়, এমন কি বিয়ে ও করা যায়। তুমি আমাকে বিয়ে করবে বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না?
জ্যোৎস্না: যুবরাজ, প্রেম পর্যন্ত ঠিক ছিল। বিয়ে একটু অধিক...।
যুবরাজ: কেন সমস্যা কি?
জ্যোৎস্না: সমস্যা আছে।
যুবরাজ: কি সমস্যা?
জ্যোৎস্না: কোথায় আমি(হাত উচুতে প্রদর্শন), কোথায় আপনি (হাত নিচেতে প্রদর্শন)
যুবরাজ: কি প্রাচ্য সম্রাজ্যের একমাত্র যুবরাজকে তুমি দেখচ্ছ, কোথায় তুমি আর কোথায় আমি?
জ্যোৎস্না: না যুবরাজ, গরিব আর বড়লোকে প্রেম হয়না যুবরাজ। তেলে, জলে, পিয়াজে, রসুনে যেমন মিশ হয়না.....গরিব আর বড়লোকে
প্রেম হয় না।
যুবরাজ: মানি না তোমার আদা, পেয়াজ, রসুন, বেগুন আর লবন...আমার ভালবাসা যদি সত্যি হয়ে থাকে তবে সকল সম্পত্তি ছেড়ে আমি তোমার টানে চলে আসব প্রিয়ে।
জ্যোৎস্না: নাহ। যুবরাজ।
যুবরাজ: হ্যা...
জ্যোৎস্না: বাবা-মায়ের অবাধ্য হওয়া খারাপ। কিন্তু, তার চেয়েও বড় কথা, সাম্রাজ্য ছেড়ে আসলে এ পার্লার এর খরচ মেইনটেইন করবে কি করে।
যুবরাজ: এগুলোর খরচ কত?
জ্যোৎস্না: খুব একটা বেশি না।
যুবরাজ: কত?
জ্যোৎস্না: ৫০ লক্ষ স্বর্ণমুদ্রা, এটাই।
যুবরাজ: ইশ রে.. (যুবরাজ উল্টো)
জ্যোৎস্না: যুবরাজ....যুবরাজ, এটা অল্প যুবরাজ।
যুবরাজ: (উঠতে উঠতে) বেশি হয়ে গেল না।
জ্যোৎস্না: মাত্র।
যুবরাজ: ঠিক বলছ, আমি তো এসব বিষয়ে জানিনা। ঠিক আছে, আমি মহারাজ কে রাজি করিয়ে কালকে আবার তোমার কাছে ফিরে আসব। কালকে তুমি এই সময় এইখনে উপস্থিত থেক। আমি আসছি জ্যোৎস্না, আমি আসছি.....।
(যুবরাজের প্রস্থান)
জ্যোৎস্না: মনে রাখবেন যুবরাজ, আমি বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না, কথা দিয়ে কথা রাখিনা।
(জ্যোৎস্নার প্রস্থান; মহারাজ ও সেনাপতির প্রবেশ)
মহারাজ: এই দৃশ্যটাও তো শেষ হইতে চলিল কিন্তু যুবরাজ তো এখনো হরিণ শিকার থেকে ফিরিল না!
(ডিযের প্রবেশ)
ডিযে: মহারাজ, মহারাজ....অতিব দুঃখের সংবাদ, মহারাজ।
মহারাজ: কি হইয়াছে? তোমাকে এমন বিমর্ষ দেখা যাইতেছে কেন?
ডিযে: টিংবিয়ার জঙ্গলে একটি হরিণ যুবরাজকে ঘাস মনে করিয়া খাইয়া ফেলিয়াছে, মহারাজ!
(মহারাজ শোকার্ত অবস্থায়, পেছনে ডিযে ও সেনাপতির উল্লাস)
মহারাজ: এই রাজ্যের একমাত্র যুবরাজ ফুলকুমারকে হরিণ ঘাস মনে করিয়া খাইয়া ফেলিয়াছে....। এই বয়সে কি আমার আবার যজ্ঞে যাওয়া সম্ভব হইবে?
সেনাপতি: কাদিবেন না মহারাজ। কাদিবেন না।
মহারাজ: ........ এই দুঃখ আমি কোথায় রাখিব..।
(ক্রোন্দনরত মহারাজের বিলাপ, সেনাপতির সান্তনা; ইতমধ্যে যুবরাজের দৌড়াইতে দৌড়াইতে প্রবেশ)
যুবরাজ: পিতাশ্রী......পিতাশ্রী.......পিতাশ্রী..।
মহারাজ: এ তো আমার যুরাজের গলা মনে হইতেছে।
(যুবরাজকে জীবিত দেখিয়া সেনাপতি তদ্বিয় পত্রকে প্রহার)
যুবরাজ: পিতাশ্রী।
মহারাজ: এ তো আমার যুরাজের মুখখানা দেখিতেছি।
যুবরাজ: আমি ফিরিয়া আসিয়াছি পিতাশ্রী।
মহারাজ: তুমি ফিরিয়া আসিয়াছ।
যুবরাজ: হ্যা পিতাশ্রী, আমি বাচিয়া ফিরিয়া আসিয়াছি।
মহারাজ: আমি অতিব খুশি হইয়াছি। আমি এতটাই খুশি হইয়াছি যে তোমার যে কোন ইচ্ছা আজ আমি পুরণ করিব। বল কি তোমার ইচ্ছা..
যুবরাজ: পিতাশ্রী আমি তো হরিণ শিকার করতে গিয়া হরিণ বশ করিয়া ফেলিয়াছি।
মহারাজ: হ্যা..
যুবরাজ: হ্যা পিতাশ্রী, আমি আপনার কাছে একটি ইচ্ছা প্রকাশ করিতে চাই।
মহারাজ: বল, তোমার যে কোন ইচ্ছা আজ আমি সানন্দে পূরন করিব।
যুবরাজ: পিতাশ্রী, আপনার যদি বিবাহের কোঠা পুরন হইয়া থাকে তবে আমি আপনার ছেলে হিসাবে এক খানা বিবাহ করিতে চাই, পিতাশ্রী।
মহারাজ: হাঃ হাঃ হাঃ। ইহা শুনিয়া আমি অতিব খুশি হইলাম। যোগ্য উত্তরসূরি হিসাবে তুমি যথার্থই চাহিয়াছ। এ তো তোমার অধিকার।
বল, কোন মিস ইউনিভার্স বা মিস ওয়ার্ল্ড কে তুমি বিবাহ করিতে চাও।
যুবরাজ: না পিতাশ্রী না, সে নয় কোন মিস ইউনিভার্স বা মিস ওয়ার্ল্ড। সে এক জন সামান্য বেদের মেয়ে।
মহারাজ: বেদের মেয়ে কোন বেদের মেয়ে?
যুবরাজ: বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না।
মহারাজ: সে কি কথা দিয়ে কথা রাখে না?
যুবরাজ: পিতাশ্রী! আপনিও......।
মহারাজ: না, বাবা, না.....তুই ভুল বুঝিস না। সে এক করুণ ইতিহাস। তুই যখন জন্মগ্রহনের পর টেন টু দি পাওয়ার সিক্স করে বাড়িতেছিলি এবং তাহা রোধ করিবার জন্য অতিসত্তর ১২ বছরে পদার্পন করিয়াছে এমন একটি মেয়ের সাথে তোর বিবাহ সম্পন্ন করান হইয়াছিল। এই মেয়েই হল বদের মেয়ে জ্যোৎস্না।
যুবরাজ: এই বেদের মেয়ে জ্যোৎস্নার সাথে আমার বাল্যকালে বিবাহ হইয়াছিল?
মহারাজ: হ্যা, এবং বিবাহের পরপরই আমি বেদের মেয়েকে বনবাসে পঠিয়েছি।
যুবরাজ: পিতাশ্রী, আপনি ঠিক করিয়া চিন্তা করিয়া বলিবেন।আপনি কি সত্য কথা বলিতেছেন। আমি কিন্তু অনেক দুর আগাইয়া গিয়াছি, পিতাশ্রী।
মহারাজ: হ্যা বাবা, আমি সত্যই বলিতেছি।
যুবরাজ: সত্যই...(যুবরাজ খুশিতে সঙ্গাহীন; অতপর চোখ ব্ন্ধ করে বলিতে বলিতে প্রস্থান).....জ্যোৎস্না, জ্যোৎস্না আমি আসিতেছি জ্যোৎস্না.....।
মহারাজ: ২০ আর ১২= ৩২.....বাবা, এই বয়সে গিয়া আর লাভ হইবে না বাব...থাম বাবা থাম।
ডিযে: কোন কথা হবেনা পিতাশ্রী (....পশ্চাদদেশ সেনাপতির দিকে আগাইয়া দিবে ও সেনাপতি আঘাত করিবে)
সেনাপতি : সারাদিন তো শুধ নারী আর জলসা নিয়ে পড়ে থাকিস। একটা ছোট্ট কাজ দিয়েছিলাম, ছোট্ট..বেদের মেয়ে জ্যোৎস্নাকে ধরে আনতে, তাও পারিসনি। যা এক্ষুনি বেদের মেয়ে জ্যোৎস্নাকে আমার পুত্রবধু করে নিয়ে আয়।
ডিযে: আপনি কোন চিন্তা করবেন না পিতাশ্রী। বেদের মেয়ে জ্যোৎস্নাই হবে আপনার পুত্রবধু আর ঐ সিংহাসন হবে আপনার। আপনি শুধু আর একবার আমকে
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:১০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





