২০০৯ এর ফেব্রুয়ারিতে বিডিআর হেড কোয়ার্টারে বিডিআর বিদ্রোহ স্বতঃস্ফূর্ত ছিল, না এর পেছনে কোন ষড়যন্ত্র ছিল সে প্রশ্ন আমরা যারা বেঁচে আছি, বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে আমরা যারা রাজনীতি করছি, তাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কিন্তু বিদ্রোহীদের ক্ষোভের মুখে পড়ে যারা এই বিদ্রোহে প্রাণ হারিয়েছেন, অথবা কোন কিছু বোঝার আগেই যিনি বড় অসময়ে বিদায় নিয়েছিলেন সেদিন, তাঁর কাছে, তাঁর পরিবারের যারা বেঁচে আছেন এখনও, তাদের কাছে এই প্রশ্ন অতটা গুরুত্বপূর্ণ না, যতটা গুরুত্বপূর্ণ পরিবারের প্রধান ব্যক্তিটির অবর্তমানে এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার উপায় অন্বেষণ করতে পারা।
বিডিআর বিদ্রোহের পর বাংলাদেশ সরকার এবং বেসরকারী ব্যাংক পরিচালকদের সংগঠন বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ব্যাংকস বিদ্রোহে শহীদদের পরিবারগুলোর সহায়তায় এগিয়ে এসেছিল অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত নিয়ে।
এই পরিবারগুলোর শিক্ষিত সন্তানদেরকে সক্ষমতা অনুযায়ী বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংকে এমপ্লয়মেন্ট করার পাশাপাশি প্রতি বছরে একটি নিদৃষ্ট পরিমাণ অর্থ সাহায্য দেওয়ার জন্য শহিদ পরিবারগুলোকে ভাগ করে নেয় ব্যাংকগুলো। যেটা এখনও চলছে। প্রতি বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এই অর্থ হস্তান্তর করা হয়। এ বছরের অর্থও হস্তান্তর করা হবে আগামী কাল। আর সরকার নিহতদের শহিদ ঘোষণা করে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করেছিল।
কিন্তু এই সামান্য সম্মাননাও আজ শ্রেণী বিভাজনের মুখে পড়েছে। বিডিআর বিদ্রোহে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তার পাশাপাশি কয়েকজন বিডিআর সদস্য এবং সাধারণ মানুষও জীবন হারিয়েছিলেন। এর ভেতরে বিডিআর এর একজন সুবেদার মেজর ছিলেন, নাম নুরুল ইসলাম। বিডিআর বিদ্রোহের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় বিদ্রোহী বিডিআর জওয়ানরা তাঁকে নৃসংশভাবে হত্যা করে অন্যান্য শহিদ সেনা সদস্যদের সাথে তার মৃতদেহকেও গণকবরে নিক্ষেপ করে। অন্যান্যদের সাথে তিনি বিদ্রোহে শহিদ হলেও রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত হওয়ার সৌভাগ্য হয়নি তাঁর। মৃত্যুর প্রায় ৬ মাস পরে সরকারি সিদ্ধান্তে তার কবরে গার্ড অব অনার দিয়ে রাষট্রীয় মর্যাদা প্রদান করা হয়।
তারপরও বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিডিআর বিদ্রোহে শহিদ এই সুবেদার মেজরের পরিবার রয়ে গেছে অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার হয়েই। শহিদ সেনা সদস্যগণের পরিবারগুলাকে যেখানে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে পরিবার প্রতি ১০ লাখ টাকা, সেনা প্রধানের তহবিল থেকে পাঁচ লাখ টাকা, পারিবারিক নিরাপত্তা প্রকল্প থেকে আট লাখ টাকা, পারিবারিক পেনশন ৫০-৬০ লাখ টাকা, মিরপুর ডিওএইএস-এ চার কাঠার প্লট এবং বিএবি’র পক্ষ থেকে মাসিক চল্লিশ হাজার টাকা করে ১০ বছরের জন্য অনুদান দেওয়া হয়েছে সেখানে কেন্দ্রীয় সুবেদার মেজরের পরিবার পেয়েছে শুধুমাত্র বিডিআর কল্যাণ তহবিল থেকে এককালীন ১০ লক্ষ টাকা, ছেলের চাকুরী আর দুই বছরের জন্য বিডিআর হেড কোয়ার্টারের অভ্যন্তরে থাকার সুবিধা, যা এবছরেই শেষ হয়ে যাবে। তারপর সামনে থাকবে শুধু অন্ধকার অনিশ্চিত।
আজব এই দেশে বড়ই অদ্ভূত বিচার।
ঘটনাক্রমে এই পরিবারের এক ছেলে অফিসে আমার সহকর্মী। যে বয়সে ছেলেটির বন্ধুদের সাথে হল্লা করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছুটে বেড়ানোর কথা, সেই বয়সে ছেলেটি অসময়ে পিতা হারানোর দুর্বিসহ স্মৃতির সাথে তিন সদস্যের পরিবারের ভার কাঁধে বয়ে বেড়াচ্ছে। কৈশোরের আভা পেরুনোর আগেই জীবনের কদাকার দিকগুলোর সাথে পরিচিত হয়ে যাচ্ছে। অথচ এমনটা হওয়ার কথা ছিল না।
গত কয়েকদিন ধরে পত্রিকা, টিভি চ্যানেলে এই পরিবারের বঞ্চনার কথা প্রকাশিত হয়েছে। ভাবার কোন কারণ নেই যে এটা তাদের ভালবাসা বা দায়িত্ববোধের চরম পারাকাষ্ঠা প্রদর্শন। বরং এটা মিডিয়ার এই রমরমা যুগে হট কেক ইস্যু নিয়ে ব্যবসা করা। ফেব্রুয়ারি পার হয়ে গেলেই বিডিআর বিদ্রোহের নির্যাসও শেষ হয়ে যাবে। মিডিয়াও ভূলে যাবে এই পরিবারের কাহিনী। তারা মেতে উঠবে মার্চের কোন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে।
তবুও আমার আশা, এক সাহসী বীরের পরিবারের প্রতি বঞ্চনার কথা জানুক সবাই। জানুক এমন মানুষদের দ্বিচারিতার কথা, যাদের আমরা দেবতা জ্ঞান করি।
শ্রেণী বিভাজনের গল্প ও বিডিআর বিদ্রোহে শহীদ একজন কেন্দ্রীয় সুবেদার মেজর নুরুল ইসলাম
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
হাদিকে গুলি করলো কে?
হাদিকে গুলি করলো কে?

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন
মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইতিহাসের সেরা ম্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমি আর এমন কে

যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।