বাসায় আমরা মাত্র তিন জন মানুষ, যার মধ্যে আমিই বড়। সম্পূর্ণ সুস্থ একজন মানুষ এরকম কেন করছে, ঠিক কি হয়েছে, কিছুই বুঝতে পারছি না। বোকার মত নাম ধরে ডাকা ডাকি করছি। কিছুক্ষণ মুখে পানি ছিটিয়ে দিলাম। কোন পরিবর্তন নেই। তারপর আস্তে আস্তে যেন আরো নেতিয়ে পড়তে লাগল। আমরা বাকি তিনজনেরই তখন মনে হয়েছে, এই মানুষটা মারা যাচ্ছে...
রাত তখন সাড়ে দশটা। উদভ্রান্তের মত বাসার নিচে গেলাম। নিচে কয়েকটা ডিসপেন্সারি আছে। ডাক্তারও বসে। গিয়ে দেখি একটাতেও ডাক্তার নেই। এতক্ষণে মনে পড়ল ডা. আবিদ ভাইয়ের কথা। ফোন করলাম। আবিদ ভাই বললেন, পার্কিনিল একটা খাইয়ে দিতে। আর খেয়াল রাখতে যেন দাতের কামড়ে জিহ্বা কেটে না যায়।

আমি তাড়াতাড়ি পার্কিনিল কিনে নিয়ে বাসায় ঢুকে দেখি সব শান্ত। নেশাগ্রস্থের মত ঘুমাচ্ছে। আমাদের বুকে পানি ফিরে আসল।
পরদিন আবিদ ভায়ের পরামর্শে নিউরো মেডিসিনের ড. নারায়ন চন্দ্র কুন্ডুর কাছে গিয়ে এপিলেপ্সি সম্পর্কে যেটুকু জানা গেল, সেটা সবারই জানা থাকা দরকার বলেই আমার মনে হয়। তাহলে এধরণের পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রেখে সব কিছু সামাল দেওয়া সম্ভব। কারণ এপিলেপ্সির প্রকাশটা আশে পাশে থাকাদের মধ্যে যতটা আতংক উদ্রেক করে, বাস্তবে ততটা ভয়াবহ নয়।
এপিলেপ্সি হল এক ধরণের সাময়িক ব্রেইন ডিসঅর্ডার। খৃষ্ট জন্মের প্রায় ৪০০ বছর পূর্বে হিপোক্রেটাস নামের একজন গ্রিক ডাক্তার প্রথম এই ধারণা দেন। সাধারণত ব্রেইনের নার্ভ সেলগুলোর একটি গুচ্ছ যদি কিছু সময়ের জন্য অস্বাভাবিক সংকেত দিতে শুরু করে, তাহলেই মানুষ তার স্বাভাবিকতা হারাতে শুরু করে। আক্রমণের তীব্রতা অনুযায়ী রোগী এসময় কান্নাকাটি করতে পারে, স্বস্থান থেকে পড়ে যেতে পারে এবং অস্বাভাবিক ধরণের খিচুনি হতে পারে। এপিলেপ্সির তীব্রতা এক দুই মিনিটের বেশি থাকে না কিন্তু এই অল্প সময়ের ভেতরেই রোগীকে সর্বশ্রান্ত করে ফেলে। আক্রমণকালীন সময়ের কোন কিছুই রোগীর নিয়ন্ত্রণে থাকে না এবং পরবর্তীতে সে এগুলোর কিছুই মনে রাখতে পারে না।
সাধারণত একবারের আক্রমণ দ্বারা কাউকে এপিলেপ্সি রোগি হিসেবে সনাক্ত করা যায় না। তবে প্রথম আক্রমনের সর্বোচ্চ দু’বছরের মধ্যে আবারও আক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। যদি দু’বছরের মধ্যে আক্রমণটা ফিরে আসে, সেক্ষেত্রে অবশ্যাম্ভাবীভাবেই ধরে নেওয়া যায় আগামী দুবছরের মধ্যে আবারও এই আক্রমণ ফিরে আসবে। তবে প্রথম আক্রমণের দুই মাসের মধ্যে যদি পুণরায় আক্রান্ত না হয়, তাহলে যত দিন যাবে, পুনরাক্রমণের সম্ভাবনা ততই কমতে থাকবে।আধুনিক চিকিৎসায় এপিলেপ্সি হিসেবে চিহ্নিত হওয়া প্রায় ৮০ শতাংশ রোগিকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় যেখানে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ এপিলেপ্সি রোগিকে সম্ভাব্য সবধরণের চিকিৎসা সত্ত্বেও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না।
এপিলেপ্সির সবচেয়ে ভয়ংকর দিক হল, এর কোন পূর্ব লক্ষণ নেই। যেকোন সময়ে, যেকোন স্থানে আক্রমণটা হতে পারে। এমনকি টয়লেটে থাকা অবস্থায়ও। সেক্ষেত্রে এপিলেপ্সির আক্রমনজনিত কারণে মৃত্যু না হলেও অস্বাভাবিক স্থানে, অস্বাভাবিকভাবে পতন বা ধারালো কোন কিছুর উপরে পতনের ফলে রোগির মৃতু হতে পারে। এজন্য ডাক্তারগণ এধরণের রোগিকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে বলেন। আমাদের সমাজে প্রচলিত “আগুন ও পানি দেখলে এপিলেপ্সি রোগির রোগ বাড়ে” ধারণা সৃষ্টির পেছনেও এই কারণই বিদ্যমান।
নোট: এপিলেপ্সি সমন্ধে আরো বিস্তর আলোচনা করা সম্ভব। কিন্তু যেহেতু আমি ব্যক্তিগতভাবে ডাক্তার নই, তাই ওয়েবসাইট ঘেটে ঘেটে মেডিকেল টার্মিনোলজিগুলোর ভুল অনুবাদের সম্ভাবনা বাড়াবে যা হয়ত সঠিক বার্তা দেবে না। অতএব থেমে যাচ্ছি। তবে এপিলেপ্সি সমন্ধে প্রাথমিক আলোচনায় কোন অংশ যদি যোগ করতে হয়, তাহলে সামহোয়্যার ইনে যারা ডাক্তার আছেন, সংশোধন করে দেবেন। সবশেষে আপনার আশেপাশের কাউকে এ রোগের আক্রমণে আতংকিত হবেন না। বরং নজর রাখুন যেন দাতের কামড়ে জিহ্বা বা ঠোট যেন কেটে না যায়, অথবা রোগি অন্য কোনভাবে যেন আহত না হয়।
নিচে কয়েকটি লিংক দিয়ে দিলাম, কাজে লাগতে পারে-
বাংলাদেশে নিউরোলজির ডাক্তারদের ঠিকানা_১
বাংলাদেশে নিউরোলজির ডাক্তারদের ঠিকানা_২
বাংলাদেশে নিউরোলজির ডাক্তারদের ঠিকানা_৩
বাংলাদেশ নিউরোলজিস্ট সোসাইটি
এপিলেপ্সি সম্পর্কে জানুন
এপিলেপ্সিতে প্রাথমিক চিকিৎসা
ইন্টারন্যাশনাল ব্যুরো অব এপিলেপ্সি
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০২০ সকাল ১১:১২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




