"এক্সকিউজ মি, আঙ্কেল। ৩৫/৩ নম্বর বাড়ীটা, ঠিক কোথায় হবে বলতে পারেন?" ঠিকানা লেখা একটা কাগজ এগিয়ে দিয়ে প্রশ্ন করে মেয়েটা।
যথেষ্ট বিরক্তি নিয়ে মেয়েটার দিকে তাকালাম। লম্বা-সুশ্রী চেহারা, গায়ের রঙ তামাটে টাইপের, সানগ্লাস মাথার উপরে তোলা। ২১-২২ বছর বয়স হবে। কাঁধে কোমর পর্যন্ত ঝোলানো একটা ব্যাগ।
বিরক্ত হবার কারণ, মেয়েটা আমাকে আঙ্কেল সম্বোধন করছে। বিরক্তি চেপে বললাম, "সোজা গিয়ে রাস্তার ডানে দেখবা একটা হার্ডওয়ারের দোকান। ওই দোকানের পাশে, চারতলা বিল্ডিং টা।"
"থ্যাঙ্কস এ লট" বলে রওনা হলো সেদিকে। প্রত্যুত্তরে সৌজন্য দেখানোর প্রয়োজন মনে করলাম না। সামনের খালি রিক্সায় ভাড়া ঠিক করে উঠে পড়লাম।
সারাদিন মনের ভেতর একটা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। আজ ই প্রথম একজন তরুনীর মুখে আঙ্কেল ডাক শুনলাম। কত বয়স হলো আমার? ৩২-৩৩ না আরো বেশী। সার্টিফিকেটের ডেট অনুযায়ী ৩২ বছর নয় মাস ১৭ দিন । বন্ধু-বান্ধবেরা এই অনুযায়ী জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানায়। প্রকৃত জন্মদিন আর কখনো জানা হয়নি। আমার জন্মের সময় কেউ বার্থ সার্টিফিকেট নিয়ে মাথা ঘামাত না। চেহারায় কি ইতিমধ্যে বয়সের ছাপ পড়ে গেল?
পরের দিন কর্মস্থলে যাবার জন্য লোকাল বাসে উঠেছি। গরম আর ভীড়ের ভেতরে রীতিমত যুদ্দ্ধ করে দাঁড়িয়ে আছি। কন্ডাক্টর হাত বাড়িয়ে বলে উঠল, "আঙ্কেল, ভাড়াডা দ্যান"।
নিশ্চয় আমাকে না।পাশের ভদ্র লোকের দিকে তাকালাম। উনি নির্বিকার মুখে দাঁড়িয়ে আছেন। ভয়ে ভয়ে আবার কন্ডাক্টরের দিকে তাকালাম। হতচ্ছাড়াটা আমার দিকেই হাত বাড়িয়ে আছে।
একটা কথা বাবা প্রায় ই বলতেন। "ওয়ান ফাইন আফটারনুন, আই ফাউন্ড মাইসেলফ টু বি আন ওল্ড ম্যান"।
কখন যে এত সময় চলে গেল, টের পেলাম না। জীবন টা ফাস্ট ফরোয়ার্ডেড মুভির মত মনে হয়। এই তো কিছু দিন আগেও ক্যাম্পাসে বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে কত আড্ডা, ছেলেমানুষী করেছি। এখনো ইচ্ছে করে ঘুড়ি ওড়াই, ছোটবেলার মত মার্বেল, ডাঙ্গুলি খেলি। অথচ, চোখের সামনেই আরেকটা জেনারেশন কে বড় হতে দেখলাম। একদিন যাকে ঘাড়ে করে নিয়ে কত ঘুরেছি, ওই দিন তার বিয়ে হলো। কি অদ্ভুত। কি অদ্ভুত এই জীবন।
"সে যে আজ হলো কত কাল
তবু মনে হয়, যেন সেদিন সকাল"
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ৩:২২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




