somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আবেগ-ভালবাসাহীন জীবন শেকড়হীন বৃক্ষের মত মূল্যহীন।

২০ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৮:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বর্তমানে সবখানেই দেখি সত্যিকারের ভালবাসার নিদারূন অভাব। সম্পর্কগুলো কেমন ছাড়াছাড়া। স্বামী তার স্ত্রী কে ছেড়ে অন্য কোন নারীতে আসক্ত, স্ত্রী তার স্বামী বা তার পরিবারকে সহ্য করতে পারছে না অথবা স্বামীর অল্প আয়ে সন্তুষ্ট না। ফলাফল-বিচ্ছেদ। ছেলে-মেয়ে-সন্তানের হৃদয়-ভাঙা আকুতি শুনতেও অপারগ এই দম্পতিগণ।

চারপাশের মানূষগুলো কেমন যেন ভাবলেশহীন হয়ে যাচ্ছে দিনে দিনে। অন্য কারো দুঃখ-বেদনা-হাসি-আনন্দের উপলক্ষ্যগুলি আমাদের ভাল অনুভূতিগুলোকে নাড়াতে পারছে না। সবাই হন্তদন্ত হয়ে ছুটে চলেছি তুলনামূলক সস্তা-সহজলভ্য জিনিষের পেছনে। কেউ টাকা, কেউ সম্পদ, কেউ খ্যাতি অথবা ক্ষমতার জন্য। এখন মহামূল্যবান আবেগ-ভালবাসা কে মূল্যহীন, অপ্রয়োজনীয় মনে হয়।

সন্তান প্রতিষ্ঠিত হবার পর বৃদ্ধ বাবা-মায়ের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না। বৃদ্ধ বাবা-মা হয়তো রোগাক্রান্ত-দূর্বল। তাদের প্রতি মমতা দেখানো এবং সেবা-চিকিৎসার ব্যবস্থা করাটাও ছেলে-মেয়ের কাছে মনে হচ্ছে অপ্রয়োজনীয় বোঝাস্বরূপ।

আগে, কারো বাসায় কোন দূ;খের ঘটনা ঘটলে পাড়া-প্রতিবেশিরা ছুটে আসত, সান্ত্বনা দেবার জন্য বা সাহায্য করার জন্য। এখন, বাড়ীর নিচের ফ্লাটে, একজন বাবা মারা গেছেন। ছেলে-মেয়েরা কাঁদছে। উপরের ফ্লাটে চলছে হাই ভলিউমের গান।

ঈদে-পার্বণে, পাড়ার মানুষ, চেনা-অর্ধ চেনা-অচেনা সবাই সবার বাড়িতে যেত কুশল বিনিময়ের জন্য। প্রত্যেকে যথাসাধ্য আদর-আপ্যায়ন করত। এখন গরু কোরবাণী দিয়ে অধিকাংশ ঢুকিয়ে রাখা হয় ফ্রীজের ভেতরে, পরবর্তী রোযার ঈদ পর্যন্ত খাবার জন্য।

স্মার্টনেস বলতে বুঝতাম কারো আচরণ, কোন বিষয় সম্পর্কে ভাল ধারণা থাকা, যুক্তি দিয়ে সুন্দর করে কথা বলার ক্ষমতা, কোমল হৃদয়ের বহি;প্রকাশ, শৈল্পিক মন, চারিত্রিক দৃঢ়তা ইত্যাদি। এখন সেটা ঠেকেছে পোশাকের ডিজাইন, চুলের স্টাইল আর প্রচুর টাকা-পয়সার প্রদর্শনে। বিভিন্ন ছল-চাতুরীর মাধ্যমে কারো দৃষ্টি আকর্ষন করা অথবা অর্থের মাপকাঠিতে নিজেকে শ্রেষ্ঠ প্রদর্শন করতে পারলেই সে স্মার্ট।

আগে প্রেমিক-প্রেমিকারা নিজেদের ভালবাসা প্রকাশ করত সঙ্গোপনে। লাজুকতা কে মানুষের চারিত্রিক সৌন্দর্যের একটা অংশ বলে মনে করা হতো। এখন পরিশীলিততা মানে ব্যাকডেটেড। এখন প্রেমিক-প্রেমিকা ভালবাসা প্রকাশ করে-------'লট অব লাভ অ্যান্ড হান্ড্রেডস অফ কিস', অথবা 'মিস ইউ সো মাচ মাই হাবি' লিখে ফেসবুকে। যেন তাদের ভালবাসার মাত্রা টা ফেসবুকের হাজার জন কে না জানালে, সেটা পূর্ণতা পায় না।

ভালবাসার গোপন প্রকাশের মধ্যে যে মাহাত্ম্য আর স্বাভাবিকতা, সেটা কি
হাজার জনকে জানিয়ে ভালোবাসা প্রকাশের মধ্যে পাওয়া সম্ভব? বলা বাহুল্য, এই যে হাজার মানুষকে জানিয়ে আড়ম্বড়পূর্ণ ভালবাসার প্রকাশ, তার বেশীরভাগই কৃত্রিম, অগভীর। সামান্য কারণেই আজকের বন্ধনগুলি তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়াই তার প্রমাণ।

আমার মনে হয়, এই ভালবাসার অভাব বা অনুপস্থিতিই আজকের এই অনুভূতিহীনতার অন্যতম কারণ। এর থেকে বের হয়ে আসতে হলে মানব জীবন এবং তার উদ্দেশ্য ও উৎস সম্পর্কে জানতে হবে।

আমাদেরকে, আমাদের শেকড় খুঁজে বের করতেই হবে।

"Listen to the reed and the tale it tells,
how it sings of separation:

Ever since they cut me from the reed bed,
my wail has caused men and women to weep.

I want a heart torn open with longing
to share the pain of this love.

Whoever has been parted from his source
longs to return to that state of union.

At every gathering I play my lament.
I’m a friend to both happy and sad.

Each befriended me for his own reasons,
yet none searched out the secrets I contain.

My secret is not different than my lament,
yet this is not for the senses to perceive.

The body is not hidden from the soul,
nor is the soul hidden from the body,
and yet the soul is not for everyone to see.

This flute is played with fire, not with wind,
and without this fire you would not exist. "

Cry of the Reed
(from Masnavi, 1. 1-35)
Mewlana Jalal ad-Dīn Muhammad Rumi
Translation : Kabir Helminski

উদ্ধ্বৃতাংশটি প্রিয় ব্লগার, সিরাজ সাঁইয়ের এই লিঙ্ক থেকে নেয়া
View this link


২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×