somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উপন্যাসের উপাত্ত প্রয়োজন, শুধু প্রেম উপজীব্য নয়

২২ শে এপ্রিল, ২০১০ সকাল ৯:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



তাহমিনা কোরাইশী। বাংলা সাহিত্যে অত্যন্ত পরিচিত একটি নাম। সাহিত্যের সকল শাখাতেই তাঁর সরব উপস্থিতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স ডিগ্রি শেষে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে যোগ দেন। দীর্ঘ সাতাশ বছর চাকরি ও সাহিত্যচর্চা এবং বেড়ে ওঠায় এক সফল নারীর ইতিহাস তিনি। নির্মল হাস্যেজ্জ্বল নিভৃতচারী এই মানুষটি এবারের সাাৎকার পর্বে মুখোমুখি হয়েছিলেন। সাাৎকার নিয়েছেন সাইফ বরকতুল্লাহ ।

সাইফ বরকতুল্লাহ : লেখালেখির শুরু কবে থেকে?
তাহমিনা কোরাইশী : ছোট বেলা থেকে সাহিত্য পরিমন্ডলে বেড়ে ওঠা। শান্তিনগর নানা বাড়ির শেষ মাথায় প্রফেসর মনসুর উদ্দীনের বাড়ি। তিনি আমার নানীর বড় ভাই। আমার খালা লেখিকা হাজেরা নজরুল। এ বাড়িতে অনেকেই আসতেন কবি, কথাসহিত্যিক, সাংবাদিক তাঁদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছি। প্রথম লেখার হাতেখড়ি ১৯৬৬ সালে স্কুলের দেওয়াল প্রত্রিকায়। তখন থেকে জাতীয় দৈনিকে লিখেছি ছোটদের পাতায়। গল্প, কবিতা, ছড়া। দৈনিক আজাদের মুকুলের মহফিল, ইত্তেফাকের কচিকাঁচার আসর, পাকজমাহুরিয়াত, বাংলার বাণীর সাত ভাই চম্পা, পূর্বদেশের চাঁদের হাট, দৈনিক জনকণ্ঠ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লিখেছি।
ছোটদের পাতায় লিখতে লিখতে আমার বেড়ে ওঠা। ঐ সময় যারা আমার সাথে লিখেছে সেই বন্ধুরা আজ প্রত্যেকেই প্রতিষ্ঠিত লেখক। অনেকেই এক নামে পরিচিত। সুখ্যাতির শীর্ষে তারা। আমি ওদের সঙ্গে চড়তে পারিনি সিঁড়ি। কিন্তু আমি খুশি কারণ ওরা আমার বন্ধু।
আমরা জানি আপনি বিমান বাংলাদেশে এয়ারলাইন্সে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন। এইযে সাহিত্যচর্চা, চাকরি, সংসার, সন্তান, লেখাপড়া একসাথে কি ভাবে করলেন? ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত লেখালেখির মধ্যে ছিলাম। আমার অবশ্য বেশ অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যায়। যখন রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অর্নাস প্রথম বর্ষের ছাত্রী। ১৯৭৩ জানুয়ারিতে বিয়ে হয় মুিক্তযোদ্ধা ওমর কোরাইশীর সাথে। সেই নতুন পথে যদিও বাধা ছিল না। তবুও ঘর-সংসার-সন্তান-লেখাপড়া তার সাথে লেখালিখি। বেশ কষ্ট হয়েছে। তবুও আনন্দের সঙ্গে চাকরিও নিয়েছি বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইসেন্স বিভাগে। তখন চাকরির জন্য চট্টগ্রামেই থেকেছি। আমার স্বামীর ব্যবসার কাজে সুবিধার জন্য চট্টগ্রামে প্রায়ই থেকেছি। সব কিছু মিলিয়ে একেবারে নাকাল অবস্থা। তাই কিছুকাল বিরতি আমার লেখালিখির। শুরু হয় তিনটা পুত্রসন্তানকে বড় করার যুদ্ধ। স্বামী ব্যবসায়ী কখনও দেশের বাইরে কখনও দেশেই অবস্থান এক এক সময় এক এক জায়গায়। চাকরিতে আমি বিদেশ বা স্বদেশ কোথায়ও স্পোর্টিং-এ যাইনি শুধু সন্তানদের কারণে।
এভাবেই চাকরি জীবনের ২৭ বছর পার করেছি। কমার্শিয়াল কর্মকর্তা হিসেবে ২৩ বছর চট্টগ্রাম এবং ৪ বছর ঢাকায়। ব্যবসায়ী স্বামী চট্টগ্রামেই তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান।
কি লিখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন? মনে যখন যে বিষয় অনুরণন তোলে তাই লেখার চেষ্টা করি। মনে করেন যখন কোন গল্প লিখি তার ফাঁকে ফাঁকে ছড়া লিখতে পছন্দ করি। এর মানেই এই নয় যে ছড়া লিখতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। গল্প, কবিতা, ছড়া, উপন্যাস সবই লেখার চেষ্টা করি। উপন্যাসের উপাত্ত প্রয়োজন, শুধু প্রেম উপজীব্য নয়। প্রেম বিরহ তো আছেই আঞ্চলিক উপাখ্যান, তথ্য-উপাত্তভিত্তিক, সৃষ্টিধর্মী এসবও ভীষণ প্রয়োজন। উপন্যাস বড় ক্যানভাসের বিষয়। তাই সময় নিয়ে লিখবো। একটা উপন্যাস অবশ্য লিখেছি।
আপনার একটা ছড়ার বই এর নাম ‘হৈলুল্লোড়’। এ নাম সম্পর্কে যদি কিছু বলেন ? আমার নাতনির বয়স যখন এক বছর তখন ওর জন্য একটা ছড়ার বই লিখি। বেশির ভাগ ছড়াগুলোই ওর নামে বইটির নাম “হৈলুল্লোড়”। সে এখন সাড়ে চার বছরে। বলে দাদী ঐ বই এর ছড়া সব আমার মুখস্ত। পড়া শেষ। আরো বই লিখো আমার জন্য। ইচ্ছে আছে আরো লিখার।

আপনার লেখার মধ্যে বারবার মুক্তিযুদ্ধ উঠে আসছে এর কারণ কি? আমি তো একজন মনে-প্রাণে মুক্তিযোদ্ধা। একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী। সেই রাতে মানে ২৫ শে মার্চের রাতে আমার হাতধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল নরপশু পাকিস্তানী সৈন্যরা। আল্লাহ্র অশেষ রহমত বেঁচে গেছি। মিরাকেল ঐ রাতে যে বাড়িতে ওরা গেছে সে বাড়িতে কেউ কি বেঁচেছে? সেই আতঙ্কিত মুহূর্ত আমার পিছু ছাড়েনি বহু বছর। সেই উত্তাল মাচের্র দিন। চারদিকে রাজনীতির লু হাওয়া। আমার নানী বাড়িতে বেড়াতে গেছি। আমার বয়সী আমার ছোটখালা ওর পিড়াপিড়িতে রয়ে গেলাম। ছোটমামা তখন সবুজবাগে থাকতেন। মেজখালা খালু তার ছেলেমেয়ে এ বাড়িতেই। বিকেল থেকে অবস্থা ভালো না। রাত যত বাড়ছে থমথম পরিবেশ। খালা বললেন ক্যু হয়ে যাবে। আর্মি নামলে কি হয় বলা যায় না। পুলিশ লাইন পাশেই। তোরা খাটের নিচে চুপ করে থাক। রাত ১২ টার পর থেকে গোলাগুলির আওয়াজ। রাত যত বাড়ছে ততই কাছে আসছে বীভৎস শব্দ। পাশের বড় রাস্তায় ট্যাঙ্কের আওয়াজ, ভারি যানবাহনের আওয়াজ, গোলাগুলির আওয়াজ তীব্র হলো। রঙ্গীন তীব্র আলোর ঝলকানি দরজা জানালার ফাঁক দিয়ে ঠিকরে আসছে। আগুনের পোড়া গন্ধ। পুলিশ লাইন পুড়ছে গোলা বারুদের তীব্র গন্ধ বাতাসে। রাত তিনটা কি সাড়ে তিনটা বাজে। বাইরে আমাদের বিশাল টিনের গেটে বুটের লাথি এবং রাইফেলের বাটের বেদম শব্দ। গেট ভেঙ্গে তারপর ঐ একই ভাবে ঘরের দরজা ভেঙ্গে ওরা ভেতরে। ভাঙ্গা দরজার পাল্লা দিয়ে পাকহানাদার বাহিনীর ৬/৭ জন ভেতরে। মিশক্রিয়েন্ট কাঁহা? মিশক্রিয়েন্ট!
খালাখালু আমরা সবই সামনে দাঁড়িয়ে আয়তুল কুরশি, কালেমা তৈয়ব, সুরা ফাতেহা, সুরা এখলাস সব গড়গড় করে পড়তে লাগলাম। তোদের বিশ্বাস করাতে মরিয়া হয়ে উঠিলাম। আমরা মুসলমান। এদের মধ্যে একজন সিপাহী আমার হাত ধরে হেচকা টান দেয়। আমি ভয়ে চিৎকার করি। খালা হাত জোড় করে প্রাণ ভিা চায়। বলে আপকা লারকি কা মাফিক। প্লিজ উসকো ছোড় দিয়ে। উসকো ছোড় দিয়ে। কান্নার রোল ঘরময়। কি জানি কি হলো। আল্লাহর রহমতে নাজির হলো ঐ মুহূর্তে ওখানে । ওদের মধ্যে ছিল এই সৈন্যদের কমান্ডার সে বললো, ছোড় দি জিয়ে....
বলে গটগট করে বেড়িয়ে গেলো।
আমি তো কিংকর্তব্যবিমূঢ়! হার্ট বিট উচ্চ মাত্রায় ছিল। খালা বললেন। এখন রাত চারটা বাজে ওরা আবার আসবে। তোদের দুইজন মেয়েকে দেখে গেছে। এর পরে আসলে সোজা ভেতরের দরজা দিয়ে বাগানে চলে যাবি। সেই আতংক কাটেনি। যদি মরে যেতাম, যদি ধরে নিয়ে যেত। কত কিছুই তো হতে পারতো। অনেক কাল কাউকেই বলিনি নিজের মধ্যে নিজেই জ্বলেছি।
মূলত এটাই কারণ।

এছাড়া লেখার মধ্যে আর কোন্ কোন্ বিষয় এসে যায় আপনার? মুক্তিযুদ্ধ ছাড়াও বিভিন্ন বিষয় তো আছেই। মানুষের জীবন, তাদের দু:খকষ্ট, অধিকার, নারীর চাওয়া-পাওয়ার ইচ্ছে কতকি তুলে নিয়ে আসি বন্ধ্যা জীবন থেকে উত্তরণ। শুধু নারী কেন, সমাজের অবয়। এ যুগের ছেলেমেয়েরা যুযোপযোগী হয়ে বেড়ে ওঠা। আলোর নিচে আঁধারকে চিহ্নিত করা। বহুমাত্রিক উপাদান থাকতে হয় লেখায়। আমি যখন ছোটদের জন্য লিখি অর্থাৎ শিশুতোষ তখন আমার মধ্যে ঘুমিয়ে থাকা শিশুমনটি নড়েচড়ে বসে। ভালোলাগে ওদের জন্য কিছু লিখতে। ছড়ার-ছন্দে কবিতায় সুবাসে গদ্যের বিশ্লেষণে বড় ক্যানভাসে উপন্যাস লেখার ইচ্ছে অবশ্যই আছে।

আমরা জানি আপনার কোন ভাই ছিল না। সেেেত্র ভাইয়ের অনুপস্থিতি অনুভব করতেন ? মা নূরজাহান খান। আমরা ছয় বোন। ছয় বোনই চাকরি করি। কেই ডাক্তার কেউ ইঞ্জিনিয়ার কেউ সরকারি কর্মকর্তা। স্ব স্ব েেত্র সবাই প্রতিষ্ঠিত। ভাই নেই বলে আমাদের বাবা মায়ের কোন দু:খ ছিল না। ছেলেদের মতো করেই তারা আমাদের মানুষ করেছেন। মেয়েরাও বাবা-মাকে সুখের চাদরে জড়িয়ে রেখেছে। ছয় মেয়ের স্বামীরা খুবই ভালো। আমার মা বাবা চাইতেন আমরা লেখাপড়া করে মানুষের মতো মানুষ হয়ে গড়ে উঠি। আমার বাবা খুব শান্তি মাটির মানুষ ছিলেন। আমরা মাকে ভয় পেতাম।
এই যে আপনার সাহিত্যচর্চা এতে কার উৎসাহ বেশি ছিল? প্রথমত নিজের মধ্যে কিছু থাকাটাই বেশি প্রয়োজন। সেই ইচ্ছের প্রতিফলন ঘটে লিখনিতে। জীবনের প্রথম শব্দটি মা। ছোটবেলা মায়ের উৎসাহই বেশি প্রয়োজন। মা সবসময়ই বলতেন লেখার অভ্যাসটা যেন না ছাড়ি। আমার আবার সেলাই, রান্না, গাছ-পালা অনেক ধরনের শখই ছিল। মা বলতেন অন্য কিছু কিনতে পাওয়া যাবে কিন্তু প্রতিভা নিজের ওটাকে লালন করতে হয়। চর্চা করতে হয়। পরবর্তীতে স্বামী সব ব্যাপারেই উৎসাহিত করতেন। লেখালেখি, চাকরি, সেলাই, রান্না আমাকে একজন বায়োনিক ওম্যান হিসেবেই চাইতেন। সব ব্যাপারেই আমি সবার ওপরে থাকি। কিন্তু তা কি সম্ভব। নিজের সীমাবদ্ধতাও তো আছে।
আপনার বই এর সংখ্যা কত? এ যাবৎ মাত্র ১৮টি বই আমার বেরিয়েছে। শিশুতোষ বই, ছড়া আমার খেলার সাথী, টুপুর টাপুর মিষ্টি দুপুর, হৈলুল্লোড়, ছড়ার বনে হারিয়ে যাবো
কিশোর গল্পের বই, বামন মামা, পল্টুর কাঁঠাল চুরি
গল্প গ্রন্থ, হলদে পাতার গুঞ্জন, অমানিশার আগুন, কুয়াশার দেওয়ালে যে সূর্য,
উপন্যাস, যে জলে চন্দন ঘ্রাণ
কাব্যগ্রন্থ, খোলা চিঠি, তখন এখন, হঠাৎ তোমাকে দেখা, ফিরে কি আসা যায়, দিনের পরে বেঁধেছি নূপুর
আপনার চাকরি জীবন কেমন কেটেছে? এয়ার লাইন্স এর জব চার্মিং জব। সুযোগ-সুবিধা এবং স্যালারি সবই ভালো। বিশেষ করে দেশ ভ্রমণের সুবিধা। ফ্রি টিকেটে অনেক দেশ ঘুরেছি। লন্ডন, আমেরিকা, নেপাল, মালয়েশিয়া, হংকং, ব্যাঙ্কক, সিঙ্গাপুর, দুবাই, সৌদি আরব, ভারতের বিভিন্ন স্থানে।

আপনার শৈশব সম্পর্কে অথবা বেড়ে ওঠার গল্পটা যদি বলেন? পিছনে ফিরে তাকাতে ভালোলাগে। হাতছানিতে ডাকে বর্ণীল সেই শৈশব। বলে আয় ফিরে আয় কাঁচা-মিঠে স্বাদে। সত্যি ছিল মধুর সেই ছোট বেলা। ভাবুক মন তখন থেকেই ভাবনার দোল খেতো। চুরি করে কাঁঠালের মোচা মরিচ-বাটা-লবনের যৌথস্বাদে কী যে উপভোগ্য ছিল! যদিও শহরেই মানুষ হই তবুও পেয়েছি গ্রাম বাংলার স্বাদ।
জন্ম নানার বাড়ি শান্তিনগরে। ১৯৫৪ সালের ১৪ ই নভেম্বর। বাবা রেলওয়ের কর্মকর্তা ছিলেন। ফলে ঢাকার বাইরেও কাটাতে হয় কিছুু সময়। কিন্তু লেখার শৈশব-কৈশোর বেড়ে ওঠা ঢাকাতেই। শান্তিনগরের তেঁতুলতলার বাড়িতে শৈশব কেটেছে। তারপর বাবা বাড়ি করে এলেন সবুজ বাগ বৌদ্ধ মন্দিরের পাশে। সেই বাষট্টির কথা। তখন ঐ দিকটা কে গ্রামই বলা চলে। সন্ধ্যা হলেই শেয়াল ডাকতো পাশেই পুকুর, ডোবা এবং বিশাল ঝিল ছিল। বুিড়গঙ্গার পানিতে ভরে থাকতো। কত যে সাঁতার কেটেছি ঐ জলে, নৌকায় বেড়িয়েছি। পুকুরে মাছ ধরেছি। আজ আর ঐদিন কোথায়? ধান তেগুলোর জায়গা জুড়ে এপার্টমেন্টের দৌরাত্ম্য।
আগের দিনে প্রতিটি বাড়িতে ফুল ফলের বাগান ছিল। আমাদেরও ছিল শেগুন, মেহেগনি, বকুল, কদম, শেফালি, হাসনাহেনা, গোলাপ, বেলী, পেয়ারু, আম, জামÑÑনিজের হাতে মায়ের সাথে আমরা সব বোনেরা কাজ করেছি। গাছের শখ এখনও রক্তে নেশা জাগায়। বাধ্য হয়ে আমাদের গাছ কাটতে হয়েছে। জীবনের প্রয়োজনে। বাসস্থানের প্রয়োজনে। এপার্টমেন্ট তৈরি করেছি আমরাও। আমরা ভীষণ কষ্ট পেয়েছি। আমার মা আরো বেশি। এই টুকু সান্ত্বনা মা তার সেগুন গাছটির একটি পালঙ্ক তৈরি করেছেন। ওটাতেই মা ঘুমান।
জীবনকে কিভাবে দেখেন? জীবনে চড়াই উৎরাই তো আছেই। সেই বাঁকগুলো সার্থকভাবে চলতে পেরেছি । অল্পে ভেঙ্গে পড়িনি কখনও। সোনা পুড়ে খাঁটি হয়, সম্পর্ক পুড়ে রয়ে যায় কিছু ব্যথা। তবুও ওতে সুখ আছে। জীবন কঠিন পাথুরে রাস্তা পথ কেটে কেটে নিজেই তৈরি করেছে পথ। এতে আনন্দ অনেক বেশি। যতটুকু অর্জন নিজেদের ঘামে, শ্রমে। কেউ হাতে তুলে দেয়নি কিছু।
আপনি বলেছিলেন আপনার স্বামী একজন মুক্তিযোদ্ধা । আমার স্বামী একজন মুক্তিযোদ্ধা। দুই নম্বর সেক্টরের খালেদ মোশারফের আন্ডারে ছিলেন। ওর বন্ধু মানিক মুক্তযুদ্ধে শহীদ হয়েছে। যখন ওরা মেলঘর ক্যাম্পে ছিল তখন বেশ মন খারাপ করতো বেশির ভাগ ছেলেরাই। মানিক ভাইকে ও পোতো কি মা মা করিস! মায়ের জন্য কাঁদিস। আমি তো মা কাকে বলে কিছুই বুঝি না। ওর চার বছর বয়সে মা মারা গেছে ১২ বছরে বাবা। ওমর কোরাইশী এখনও একটা সবুজ মনের মানুষ।
কোথায়ও অপূর্ণতা আছে কি? জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতে উৎরে গেছি। তিন ছেলেকে মানুষ করতে পেরেছি। বড় দুটোকে বিয়ে করিয়েছি। একটা নাতি আছে সাড়ে চার বছরের। বড় ছেলে ওর বাবার সাথে ব্যবসা শিখে গেছে। দ্বিতীয় ছেলে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে আছে। তৃতীয়টা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে।
অপূর্ণতা একটু তো আছেই। যতটুকু লেখকসত্তার বিকাশ ঘটার কথা ছিল ততটা হয়নি। ইচ্ছে তো আকাশ ছোঁয়ার। নিজের অবস্থান দৃঢ় করার। অতৃপ্ত মন আমাকে করেছে কাঙালি। চেষ্টা করে যাবো কিছু ভালো লেখা লিখবার। সময়ের সাথে পাল্লায় হেরে গেছি। ৬০/৭০টি বই হয়নি ঠিকই কিন্তু চেষ্টা করবো ভালো লেখার।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×