somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

পটল
ফাউল নামের দ্বিতীয় এবং একইসাথে দ্বিতীয় জীবনের প্রথম অধ্যায়। থাকি ঢাকা শহরের কমদামী কাঁচাবাজার থেকে শুরু কইরা সব বাজারেই। ঘুরি অলিগলি ঢাকা শহরে। এইটাই এখন স্থায়ী ঠিকানা। অবেলার বন্ধু http://www.facebook.com/potol1

মায়ের কাছে স্বীকারোক্তি

০৬ ই জুন, ২০১১ রাত ১০:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ভাই বোন আছে। বাবা আছে। কিন্তু ভাবনা কেবল মায়ের। আমি যতটুকু সবাইকে নিয়ে ভাবি, যত কিছু নিয়ে ভাবি, মা আমার তার চেয়ে বেশি যেন আমাকে নিযেই ভাবে।
আমার কয়েক বন্ধু পছন্দ করেনি। ভার্সিটি লাইফের শুরু থেকে অনেক দিন কেটেছে উদাসীনতায়। নিজেকে কেন জানি গোছানো কিছুতে আটকাতে পারতাম না। কিছুদিন হলো ভার্সিটির কিছুটা পর্ব আপাতত শেষ হয়েছে। নতুন করে হয়তো তা শুরু হবে!
এক সময় আলোর ইশারা খুঁজতাম অনেক। এখন খুঁজি না। বেশি আলো চাই না।
প্রকৃতির আলোই ঢের।
# মা-বাবা সবার ইচ্ছা ছেলেটা সরকারি বড় চাকুরে হবে। আমি তো সরকারি চাকর হবো না! এটা তাদের বলি না! পৃথিবীর রুপ দেখতে চাই, প্রকৃতির ঘ্রাণ নিতে চাই, আমি পৃথিবীময় ঘুরে বেড়াতে চাই। খেতে , পড়তে পারলেই আমি খুশি!
মা-বাবা, তোমরা কষ্ট পাও, তোমার ছেলে সরকারি বড় অফিসার, ম্যাজিস্ট্রেট হলো না! কিন্তু সেখানে কি আছে অনুগত থাকা ছাড়া অর কিছু! আমি তো অনুগত, থাকতে চাই না! স্বাধীনতা চাই। স্বাধীন ভাবে থাকতে চাই, যতটা সম্ভব।
# মা, তুমি জানো না, যখনই তোমার কথা ভাবি , প্রতিবার চোখে আমার কান্নার বৃষ্টি নয়, তুফান নামে। তোমাকে দেখিয়ে তো আর কাঁদতে পারি না! তুমি তখন যে অসুস্থ শরীর নিয়ে শুধু কেঁদেই যাবে! সে আমি চাই না!
তোমার ছেলে অনেক বড় কিছু হতে চলেছে-এ ভাবনাই তোমার মাঝে থাকুক।
তোমার বন্ধু, বান্ধবী, আত্মীয়দের ছেলে মেয়েরা বড় চাকরি করছে, কেউ নাকি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হয়েছে! তোমার ছেলেটা এখনও কিছু হলো না। স্বপ্ন যে তোমার কতো, ছেলেটা বড় চাকরি করবে! মাঝে মাঝে আমিও দেখি, তুমি আত্মীয়দের বলো, ছেলেটা কি করে! বিসিএস দিছিলো না! ও, দিবে!? আচ্ছা- তুমি পরক্ষণেই আমাকে বলো, কবে কি করবি! এভাবেই কি থাকবি ! মাঝখানে খবরের কাগজে কয়েকদিন ঘুরাঘুরি করায় তুমি বললে! এটা কি কুনু কাজ! সময় নষ্ট করে এইগুলা না করে বি্সি্এসটা দে!
ক্লাসের কয়েক বন্ধু আর ভার্চুয়াল কিছু বন্ধুও যেন তোমার সুরেই কথা বললো!
# মা, আমি তো বিসিএস ফরমই পূরণ করি নাই! তোমাকে তা বলা হয়নি!
আজকে জানি না, তোমার কষ্ট আর নিরব অভিমানের কথা ভেবে আমার কান্না পাচ্ছে। বাবা তো সব সময় তার দুনিয়ার কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকে। ছেলে মেয়ের কি হবে, কোনটা ভালো-সব দায়িত্ব যেন তোমার। তবে তোমার ছেলেটা মনে হয়, কিছু করতে পারবে না। বড় মানুষ হতে গেলে যে অনেক টাকা লাগবে- সে টাকা তোমার ছেলে কোথায় পাবে! খাইয়ে পরিয়ে মানুষ করলা ছেলেকে। এখন তাকে একটা চাকরি নিয়ে বিয়ে করতে বলবে কয়েকদিন পর। মা, এভাবেই কি প্রথার সাথে মিলিয়ে তাকে তুমি আটকে দিবে! একবার বলেছিলে ব্যাংকের কোনো একটা চাকরিতে ঢুকার চেষ্টা কর। অনেকেই আছে, বললে একটা ব্যবস্থা করে দেবে!
# অনেক সময় লাস্যময়ী তুরণীর ভাব জগতে খেলা করলেও সে আর আমার কাছে টেকেনি! খবরের কাগজে কাজ করার কথা শুনে বেশি দিন স্থায়ী হয়নি কয়েকটি অন্তরঙ্গ আলাপচারিতা! কি হবে-কোনো ভালো চাকরি করার যার ইচ্ছা নেই! সময় নষ্ট করে আবার সাংবাদিকদের সাথে ঘুরে! পত্রিকায় কি ভালো মানুষ থাকে! -এরকম নানা উপহাস বা নীরব প্রশ্ন ছিল তরুণীদের! আমি এখনও এরকম নীরব উপহাসের পাত্র হই! কেউ তো মা তোমার ছেলের মনকে বুঝে না! তুমি হয়তো বলবে- কার এতা দায় পড়েছে! কে কার খবর রাখে! কারই বা ঠেকা পড়েছে! কিন্তু মা-এরকম ভনিতার সুর বা উপহাসের ভাব কারো দেখলে মনে কষ্ট পাই!
# মা, তোমার ছেলে তাদের সাথে মেলেনি। থেকে গেছে অগোছালো, যেমন খুশি তেমন চলো! সেজন্য তুমিও তো কতোবার বলো, গোসল করেছিস, সকালে কি দিযে নাস্তা করালি!শরীরটা শুকাচ্ছে কেন! ভালো ডাক্তার দেখা! তোকে বলে তো কোনো কাজ হয় না! এভাবে কয়দিন! দিন কি এমনিই যাবে! ভালো কিছু করার চেষ্টা কর। অথচ, তোমার অসুস্থ শরীর নিয়ে তুমি যে প্রতি ঘন্টায় কষ্ট পাও-তখন ডাক্তারের কথা বললে-বলো সেরে যাবে! ঠেলাঠেলির পরে যাও ডাক্তারের কাছে! কড়া নির্দেশন- রেস্ট নেওয়ার ও কাজে না জড়ানোর-তুমি দেখি তাই করো বেশি করে! তুমি কেন বলো মা আমাকে ডাক্তারের কথা! আমি তো বড্ড সুস্থ। জানি এসব বলে তোমাকে লাভ নেই! বললে কি আর শুনবে তুমি!! মনে আছে মা, যখন আমি ক্লাস ফোরে পড়ি, পেয়ারা গাছ থেকে পড়ে বাম হাত বাঁকা হয়ে গিয়েছিল! স্কুলের কয়েকজন বান্ধবী যেদিন বাসায় এলো আমাকে দেখতে, লজ্জায় আমি ঘুমের ভান করে শুয়েছিলাম, অসুস্থ হয়ে শুয়ে থাকার কি যে লজ্জা পেয়েছিলো তখন!! আর হাত মচকানোর পরে কি যে কান্না করছিলে তুমি! তারও আগে ক্লাস টুতে যখন পড়ি-রক্তশূন্যতার কারণে মালিবাগের এক হাসপাতালে (নাম মনে নাই) নিয়ে রক্ত দেয়া, আর কত কিছুই তো করেছ! তুমি যে নিজে কি করেছ তা বললে কোনোদিন শেষ হবে!!!! সে কিন্ডারগার্টেনের দিনগুলো থেকে আমি ডাক্তারকে ভয় পাই। ডাক্তার, ওষুধ এরপর কোনোদিনই আমার প্রিয় হতে পারেনি। তুমি তো জানো, ডাক্তারের কাছে যাওয়ার মতো রোগ আমার নে্ই। হলেও হয়তো যেতে হবে না, কারণটা হলো, আমি ডাক্তার, ও্ষুধ এড়িয়ে চলি। এসব ভালো করে জানো বলেই কি তুমি বারবার আমাকে বলো। তোমার গ্যাস্ট্রিক আর দুর্বল শরীরের সুস্থতার চেয়ে কি আমার ডাক্তার বাড়িতে যাওয়া বেশি জরুরি। তুমি তো বলবেই হ্যাঁ, এজন্যই বুঝি তুমি এমন করো!
# বলেছিলে ব্যাংকের চাকরির কথা। একবার তোমার জ্বালা যন্ত্রণায় আবেদন জমা দিয়ে আর সে এলাকায় যাই নি। কুনুদিন আবেদনপত্রও চোখে দেখিনি , দেখার চেষ্টাও করিনি সেই চাকরির। সকালে ঘুম থেকে উঠে- রাতে ঘুমের ঘোরে ফেরা এ কোনো চাকরি! তৃমিই বলো! দিনের আলোর পুরোটা যদি তুমি কাগজ-কলম ঘষে চালিয়ে দাও-সেটা কি জীবন !! জানি, তুমি চাইবে সেটাই করি। ছেলে ব্যাংকের অফিসার!! সরকারি চাকরির বয়স আছে, আবেদন করতে বলো তুমি! আমি যে সে কাজ করতে পারি না মা। এগুলো আমার ভালো লাগে না।
# চাই না আমি অঢেল টাকা; এত আভিজাত্য চাই না! কথিত সম্মান ও মাণ থাকুক তোমাদেরই কাছে, আমি হয়তো সম্মানিত হবো না! ঘুরতে চাই যত দূরে চোখ, হৃদয় যায়! আমি প্রকৃতির ছায়ায় থাকতে চাই।
তোমার সামনে গিয়ে এতো কথা কিভাবে বলি! বলতে গেলে যে সব কথা কান্না হয়ে ঝরবে! যত কিছু, যতো কাজ, তোমাক্ই মা মনে হয়।
ভালো কিছু, নিজের ভালোর জন্য কিছু বা কিছু খারাপ ভাবনা বা কাজ করতে গেলেও তোমার চিন্তা মনে আসে!
# মনের মাঝে খারাপ ভাবনাগুলো তোমার কথা ভেবে নিমিষেই গুড়িয়ে যায়! তোমার ছেলে তো ভালো , বড় কিছু হতে পারছে না! সে খারাপ কিছু করতে তোমার শাসনে বাধা পড়ছে! তুমি এমন কেনো!!
অবজ্ঞার পাত্রই কি থাকবে তোমার ছেলে! কি জানি মা- ছেলেটা নিজেও জানে না! তুমি যখন তার পাশে আছো, কিছু হয়তো হবে!
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুন, ২০১১ রাত ১২:০১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×