মার্কিন আধিপত্যের দিন শেষ হয়ে আসছে
শহিদুল ইসলাম
১. আমরা এতকাল মনে করতাম যে বিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে পুঁজিবাদের সাম্রাজ্যবাদী বা ঔপনিবেশিক স্তর শেষ হয়েছে। পৃথিবী আজ ১৯২টি 'স্বাধীন' ও 'সার্বভৌম' রাষ্ট্রে বিভক্ত। কিন্তু বিগত দুই বছরের সামান্য পড়াশোনায় আমার সে ধারণার মৃত্যু ঘটেছে।
মার্কিন আধিপত্যের দিন শেষ হয়ে আসছে - শহিদুল ইসলাম
আমার বিশ্বাস দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হয়েছে যে সাম্রাজ্যবাদ বা উপনিবেশবাদ শেষ হয়নি বরং নতুন ধরনের এক পুঁজিবাদের শক্ত রশিতে গোটা পৃথিবী আজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সাম্রাজ্যের সঙ্গে আবদ্ধ হয়েছে। সে পুঁজিবাদের নাম করপোরেটতান্ত্রিক পুঁজিবাদ।
২. ১৯৮৯ সালে 'বার্লিন দেয়াল' ভেঙে পড়া এবং নব্বইয়ের দশকের শুরুতেই সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর মার্কিনপন্থী পণ্ডিতরা এতটাই উল্লসিত হয়ে ওঠেন যে তাঁরা ওই দশকে কিছু নতুন তত্ত্ব নিয়ে বিশ্বসভায় আবির্ভূত হন। ফুকুয়ামার 'ইতিহাসের সমাপ্তি' (১৯৮৯) এবং হান্টিংটনের 'সভ্যতার সংঘর্ষ' বই দুটি রাতারাতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত প্রচারমাধ্যমের জোরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। 'দুই সভ্যতার সংঘাত' ধারণার প্রবক্তা বার্নার্ড লুইস। ১৯৯০ সালে 'The Roots of Muslim Rage' প্রবন্ধে সর্বপ্রথম ওই শব্দবন্ধনীটি ব্যবহার করেন। তাঁর ওই ধারণা ধার করে স্যামুয়েল হান্টিংটন একটি নিম্নমানের বই লেখেন 'The Clash of Civilization'. বইটিতে হাজার হাজার তথ্য সংযোজিত হয়েছে। পাঠক পড়ে বিমুগ্ধ না হয়ে পারেন না। কিন্তু আমি 'নিম্নমানের' শব্দটি এ জন্য ব্যবহার করলাম যে তাঁর ওই সব তথ্য নির্ভুল নয়_Verify বা যাচাইযোগ্য। বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের দিকে তাকিয়েই আমার প্রথম এ কথাটি মনে এল। ভেরিফাই করে দেখি যে ১৯৯০ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সেনসাস রিপোর্টে কোথাও বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার শতকরা ২.৫ নয়। হান্টিংটনের বইটি প্রথম প্রকাশ হয় ১৯৯৬ সালে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান পকেট বই ১৯৯৬ সালের তথ্য অনুযায়ী জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৮১ শতাংশ। ১৯৯৭ সালের প্রথম 'টাচস্টোন' প্রকাশনায়ও তিনি এ ভুলটি সংশোধন করতে পারতেন। কিন্তু যে রাজনৈতিক ভাবাদর্শের আলোকে বইটি লিখিত হয়েছে, তা তাঁকে বিরত রাখে। যা-ই হোক, হান্টিংটনও ফুকুয়ামার ইতিহাসের সমাপ্তি তত্ত্বের জোর সমর্থক। তাঁরা মনে করেন করপোরেট পুঁজিতন্ত্রের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী যে সাম্রাজ্যবাদ গড়ে তুলেছে, তা-ই ইতিহাসের শেষ ধাপ।
৩. মার্কস 'কমিউনিজম'কে ইতিহাসের শেষ ধাপ মনে করতেন_এটা ছিল মার্কসবাদবিরোধী বুদ্ধিজীবীদের অন্যতম প্রধান অস্ত্র। তাঁরা ফুকুয়ামার সিদ্ধান্তের বিষয়ে কথা বলেন না। বর্তমান করপোরেট পুঁজিবাদই ইতিহাসের শেষ ধাপ। এ বক্তব্যের মধ্যে তাঁরা কোনোরকম 'নিয়তিবাদী' ত্রুটি চোখে দেখেন না। কিন্তু ফুকুয়ামার বইটি প্রকাশের মাত্র ১০ বছরের মধ্যে তাঁর সেই 'অসাধারণ' আবিষ্কারটি লোকচক্ষুর অন্তরালে হারিয়ে যায়। বইটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কিছু দিন বেস্ট সেলারের গৌরব অর্জন করেছিল। আজ আর সেই বইটি নিয়ে কেউ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন না। ১৯৯৬ সালে হান্টিংটনের প্রবল সমর্থনও ফুকুয়ামার অনৈতিহাসিক সিদ্ধান্তটির অন্তর্জলী যাত্রা ঠেকাতে পারেনি। ওই বইটি প্রকাশের ঠিক ১০ বছর পর ডেভিড সি. কার্টেনের 'The Post-Corporate World : Life After Capitalism' (১৯৯৯) নামেই প্রমাণ হয় যে পুঁজিবাদের পরও পৃথিবী থাকবে, সমাজ থাকবে, মানুষ থাকবে। নামটি প্রমাণ করে যে সমাজ-সভ্যতার ইতিহাস চির পরিবর্তনশীল। তাই পরিবর্তিত পৃথিবীতে মানুষের জীবন কেমন হবে_সমাজের চেহারা কেমন হবে, তাই নিয়ে ভাবতে বসেছেন কার্টেন। ওই বইয়ে তিনি সিদ্ধান্তে আসেন যে পুঁজিবাদ গণতন্ত্র, বাজার অর্থনীতি ও নৈতিক সংস্কৃতির জাতশত্রু। তিনি আরো সিদ্ধান্তে আসেন যে আধুনিক করপোরেশনগুলো ব্রিটিশ রাজকীয় করপোরেশন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও হাডসন কোম্পানির উত্তরসূরি। ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের রানি পূর্ব গোলার্ধে ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে সেখানকার মানুষকে শোষণ ও অবাধে বাজার লুটপাট করার সনদ প্রদান করেন। ফুকুয়ামা যখন বলেন, 'পুঁজিবাদ'ই সমাজ বিবর্তনের শেষ ধাপ, তখন ভুলে যান যে উদ্ভবের পর থেকে পুঁজিবাদের রূপটি একই থাকেনি। বদলেছে। রজনী পাম দত্তের বিশ্লেষণ অনুযায়ী পুঁজিবাদের তিনটি স্তর চিহ্নিত করা যায়। ১৭৫৭ থেকে ১৮১৩ সাল পর্যন্ত পুঁজিবাদের অবাধ লুটপাটতন্ত্র। ১৮১৩ থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত স্তর ছিল শিল্প-পুঁজির স্তর। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পুঁজিবাদ এক নতুন স্তরে উন্নীত হয়। তা হলো ফিন্যান্স-পুঁজিবাদের স্তর। আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর শুরু হয় করপোরেট পুঁজিবাদী স্তর। প্রতিটি স্তরে শোষণ-লুণ্ঠনের পরিমাণ পূর্ববর্তী স্তরকে অতিক্রম করে গিয়েছিল। আরো দ্রুতগতিতে উপনিবেশগুলো থেকে সম্পদ কেন্দ্র অভিমুখে পরিচালিত হয়েছে অত্যন্ত সুশৃঙ্খল এবং বিজ্ঞানসম্মত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। করপোরেটতন্ত্রে তা হাজার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফুকুয়ামা করপোরেটতন্ত্রকেই ইতিহাসের শেষ বলে মনে করেছেন। কার্টেনের বইয়ের নামকরণই প্রমাণ করে যে তা নয়। করপোরেট-পরবর্তী পৃথিবী আসছে। সেনেগালে বসবাসরত মিসরীয় অর্থনীতিবিদ সামির আমিনও তেমনটিই মনে করেন। সিআইএ প্রকাশিত প্রতিবেদন 'দি ওয়ার্ল্ড ইন ২০২৫' পড়ে তিনি মন্তব্য করেছেন, 'মার্কিন আধিপত্যের দিন ফুরাচ্ছে।' (সমকাল, ২৬ মার্চ ২০১০)
৪. ডেভিড সি কার্টেন একজন এমবিএ ও পিএইচডি ডিগ্রিধারী, যিনি হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলে পড়াতেন। তিনি ফোর্ড ফাউন্ডেশনের জাতীয় পরিবার-পরিকল্পনা প্রজেক্টের প্রধান ছিলেন। সত্তরের দশকের শেষদিকে তিনি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আসেন। প্রথমে ফোর্ডের পক্ষে এবং পরে ইউএস এইডের উন্নয়ন ব্যবস্থাপনার উপদেষ্টা হয়ে কাজ করেন। ইউএস এইডের সাহায্য প্রক্রিয়ায় অবশেষে হতাশগ্রস্ত হন এবং পরের পাঁচ বছর তিনি এনজিওর সঙ্গে কাজ করেন। তিনি আবিষ্কার করেন, কেন উন্নয়ন প্রক্রিয়া ব্যর্থ হচ্ছে। তিনি দেখতে পান, এশিয়ায় দারিদ্র্য কিভাবে দিন দিন গভীরতর হচ্ছে; বৈষম্য বাড়ছে, পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে এবং সামাজিক বন্ধনগুলো ভেঙে পড়ছে। পরে তিনি উপলব্ধি করেন, শুধু এশিয়ায় নয়, বিশ্বের প্রতিটি দেশে উন্নয়নের নামে একই রকম ধ্বংসযজ্ঞ সংঘটিত হচ্ছে। তদুপরি তিনি বুঝতে পারেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই অবস্থা সমর্থন করছে এবং অবস্থা আরো খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি অনুশোচনায় ভেঙে পড়েন। বুঝতে পারেন, পৃথিবীকে বাঁচাতে হলে যুক্তরাষ্ট্রকে পরিবর্তিত হতেই হবে! সেই পরিবর্তনের আশা নিয়ে তিনি ১৯৯২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসেন। দুটি প্রভাবশালী বই লেখেন। ডযবহ ঈড়ৎঢ়ড়ৎধঃরড়হ ৎঁষব রহ ডড়ৎষফ ('৯৫) এবং The Post-Corporate World : life After Capitalism (১৯৯৯)।
৫. করপোরেটতান্ত্রিক পুঁজিবাদে রাষ্ট্র ক্রমশ দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে পড়ছে। এখানে গণতন্ত্রকে নিলামে তোলা হয়। 'গণতন্ত্র' আজ কেনাবেচার পণ্যে পরিণত হয়েছে। বৈশ্বিক পুঁজিবাদ (ষেড়নধষ ঈধঢ়রঃধষরংস) গণতান্ত্রিক নয় এবং তা বাজার অর্থনীতির প্রতিটি নিয়ম ভঙ্গ করে। করপোরেটতন্ত্রে বাজার নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাষ্ট্র হারিয়ে ফেলে। রাষ্ট্রের চেয়েও বড় অর্থনৈতিক সংস্থা করপোরেটগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। আমাদের মতো ছোট্ট দেশে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে 'সিন্ডিকেট' নামের এক 'অশরীরী' সংস্থা, সরকার যার নাগাল পায় না। আমরা ক্রমেই 'অর্থের' ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠছি। জীবনের যা কিছু প্রয়োজন তার জন্য চাই অর্থ। অথচ সেই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব তাদের হাতে চলে গেছে, যারা 'অর্থ-শক্তিকে' নিয়ন্ত্রণ করে এবং সিদ্ধান্ত নেয়_কে ধনী হবে আর কে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। পুঁজিবাদে অল্পসংখ্যক মানুষ শ্রমজীবী মানুষের শ্রম আত্দসাৎ করে। ১৯৯১ সালে পৃথিবীতে বিলিয়নিয়ারের সংখ্যা ছিল ২৭৪ জন, ১৯৯৬ সালে সে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৪৭ জনে। তাদের মোট সম্পত্তির পরিমাণ পৃথিবীর দরিদ্রতম মানুষের অর্ধেকের সম্পত্তির সমান। ১৯৯৬ ও ১৯৯৭ সালের মধ্যে মাত্র এক বছরে একজন বিলিয়নিয়ার মাইক্রোসফট করপোরেশনের বিল গেটস তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ১৮ বিলিয়ন ডলার বাড়িয়ে নিয়েছিলেন, যা জিম্বাবুয়ের ১১ মিলিয়ন মানুষের রোজগারের সমান। অর্থাৎ ১১ মিলিয়ন (এক কোটি ১০ লাখ) = একজন। আমরা যদি একটি করপোরেশনের মোট বিক্রির পরিমাণ একটি রাষ্ট্রের জিডিপির সমান ধরি, তাহলে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ১০০টি অর্থনীতির মধ্যে ৫১টি করপোরেশনের, আর মাত্র ৪৯টি জাতীয় অর্থনীতি।
কার্টেন বলছেন, 'আমরা আরো দ্রুতগতিতে বেহিসাবি করপোরেট শক্তির দিকে ধাবিত হচ্ছি।' ১৯৯২ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের করপোরেট সম্পত্তির পরিমাণ প্রতিবছর শতকরা ৫০ ভাগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৯৯৫ সালে বড় ২০০টি করপোরেশনের যৌথ বিক্রির পরিমাণ ছিল পৃথিবীর জিডিপির শতকরা ২৮ ভাগ। অথচ তারা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার শতকরা এক ভাগের ১/৩ অংশেরও কম মানুষকে চাকরি দিয়েছে। পুঁজিবাদের এই রূপ কিভাবে উন্নত দেশগুলোকে ধ্বংস করছে, তার প্রমাণস্বরূপ কার্টেন সোভিয়েত ইউনিয়নের কথা উল্লেখ করেন। একসময় সোভিয়েত ইউনিয়নের অর্থনীতি ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী এবং পশ্চিমা শক্তির জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। আইএমএফ ও পশ্চিমা বিশেষজ্ঞের পরামর্শে পুঁজিবাদ গ্রহণ করার পর সে রাশিয়া একটি তলাহীন বাক্সে পরিণত হয়েছে। মাত্র সাত বছরের ব্যবধানে জিডিপি অর্ধেকে নেমে এসেছে। পুঁজি বিনিয়োগ ৯০ শতাংশ এবং মাংস ও পশুসম্পদ ৭৫ শতাংশে নেমে এসেছে। পুরুষের গড় আয়ু ৫৭-তে নেমে এসেছে এবং ১৫ মিলিয়ন মানুষ অভুক্ত আছে।
৬. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সারা পৃথিবীতে তার সাম্রাজ্যবাদী নীল-নকশা বাস্তবায়ন করে চলেছে। বলা যায়, পৃথিবী আজ যুক্তরাষ্ট্রের দখলে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইউরোপীয় সাবেক ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রগুলোও সে বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদের হিস্যা দাবি করছে। সে জন্যই ইউরোপীয় ইউনিয়ন গঠন করা। তবুও পুরো ইউরোপ অর্থে, অস্ত্রে আজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মুখাপেক্ষী। তাই গত ২৯ মার্চ সোমবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলোস সারকোজি নিউইয়র্কের বিখ্যাত কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতাদানকালে এই বলে যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান করেছেন যে যুক্তরাষ্ট্রের একার পক্ষে বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। ভবিষ্যৎ অর্থব্যবস্থার রূপরেখা প্রণয়নে ইউরোপের সঙ্গে একযোগে কাজ করার জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান। যে কথা বলে আমি লেখাটি শুরু করেছিলাম, সারকোজির এ বক্তব্য তার পক্ষে এক বড় প্রমাণ। সাম্রাজ্যবাদ শেষ হয়নি। চেহারা পাল্টিয়েছে। আরো বৈজ্ঞানিক সুশৃঙ্খলার সাহায্যে সাম্রাজ্যবাদ পুরো পৃথিবীকে গ্রাস করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ইউরোপের বিভিন্ন রাষ্ট্র উপনিবেশ গড়ে তুলেছিল। করপোরেট-পুঁজিবাদের কল্যাণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একাই বিশ্বময় তার উপনিবেশ স্থাপন করেছে। ১৯২টি 'স্বাধীন'-'সার্বভৌম' রাষ্ট্র তার বহিরাবরণ মাত্র। তাই ডেভিড সি কার্টেন উপসংহারে বলেন যে আমরা যদি এমন একটি পৃথিবী চাই, যেখানে জীবন বিকশিত ও উন্নত হবে, তাহলে আমাদের অবশ্যই পুঁজিবাদী মূল্যবোধ ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করতে হবে। সেখানে নতুন এক সমাজ কাঠামো গড়ে তুলতে হবে, যেখানে 'অর্থ' প্রভু নয়_'ভৃত্যে' পরিণত হবে। আজ অর্থ আমাদের জীবন নিয়ন্ত্রণ করছে_সেই অর্থ নিয়ন্ত্রণ করছে করপোরেটতন্ত্র_রাষ্ট্রের ভূমিকাকে দিন দিন ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। কতিপয় ব্যক্তিকে ধনীতে পরিণত করা হচ্ছে। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ জীবনধারণের নিম্নতম সুযোগও পাচ্ছে না। বিলিয়নিয়ার আজ ট্রিলিয়নিয়ারে পরিণত হচ্ছে। এই পৃথিবী স্বাভাবিক নয়। তাই এর ধ্বংস অনিবার্য। শোষক শ্রেণীর বিশ্বায়নের সঙ্গে সঙ্গে আজ শোষিত শ্রেণীরও বিশ্বায়ন ঘটছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সামির আমিনের ভাষায়, "বৈশ্বিক পুঁজিবাদী ব্যবস্থার প্রান্তদেশে অবস্থিত ধনতান্ত্রিক দেশ আঞ্চলিক অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে জোটবদ্ধ হচ্ছে। এসব শাসকশ্রেণী চলমান বাজার অর্থনীতিতেই সন্তুষ্ট থাকবে এমন নয়, বরং এসব দেশ বৈশ্বিক কর্তৃত্বের প্রশ্নে ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের একচেটিয়া আধিপত্যকে খর্ব করবে। সাধারণভাবে কয়েক দশক ধরে প্রতীয়মান হচ্ছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের 'আধিপত্য' ধসে যাচ্ছে এবং 'দি ওয়ার্ল্ড ইন ২০২৫' প্রতিবেদনেও সেটি দেখা যাচ্ছে।" (সমকাল, ২৬ মার্চ ২০১০)
লেখক : শিক্ষাবিদ
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১১:২২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




