somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘোড়া ভূত (গল্প)

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

লম্বা ভুত বাস্তবে ভূত না হয়ে গয়া পাগলী হওয়ায়, সাহস কিছুটা বেড়ে গেল। দ্রুত হাঁটতে লাগলাম। হাঁটতে হাঁটতে হিন্দু বাড়ি পার হয়ে এলাম। হিন্দু বাড়ির কয়েক শ’ গজ পূর্বে ফাঁকা মাঠের মাঝে রাস্তার বাম পার্শ্বে একটি কদম গাছ। এই কদম গাছের নিচে কালী মন্দির। কালী মন্দিরের এই জায়গাটিতে ভূতের ভয় আছে। এখানে নাকি রাতে প্রায়ই ঘোড়ার রুপ ধারন করে মানুষকে ভয় দেখায়। অনেকেই এখানে ভয় পেয়েছে। যারা ভয় পেয়েছে তাদের অনেক কাহিনী মানুষের মুখে শুনেছি। সেই সব ঘটনা মনে পড়ে গেল। ভয়ে গা ছমছম করতে লাগল। তার পরেও সাহস করে আস্তে আস্তে কদম গাছের কাছে চলে এলাম। গাছের কিছু পশ্চিম পার্শ্বে থাকতেই কালী মন্দিরের দিকে তাকালাম। কোন কিছু দেখা গেল না। উত্তর দক্ষিণ দুই দিকেই ভাল করে তাকালাম কোন কিছু চোখে পড়ল না। কিন্তু পূর্ব দিকে তাকাতেই হতভম্ব হয়ে গেলাম। কদম গাছের ঠিক নিচে সত্যিই একটি ঘোড়া দেখা যায়। ঘোড়াটি পূর্ব দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ে অন্তরাত্মা শুকিয়ে গেল। এখন কি করি? বাস্তবে অনেক ঘোড়া দেখেছি কিন্তু ভূতুরে ঘোড়া কখন চোখে দেখিনি। হঠাৎ সেই ঘোড়ার কবলে পড়ে ভয়ে কাঁপতে লাগলাম। দাঁড়িয়ে থাকার শক্তিও যেন লোপ পেয়ে গেল। দুই হাঁটু ঠক্ঠক্ করে কাঁপতে লাগল।

ভূতুরে ঘোড়ার কবল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য উপায় খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু ভয়ের চোটে কোন বুদ্ধিই মনে পড়ছে না। অনেক চেষ্টার পর আগুনের কথা মনে পড়ল। সাথে আগুন থাকলে ভূত কাছে আসে না। সেই কথা মনে হতেই পকেট থেকে দিয়াশলাই বের করে জ্বালালাম। ম্যাচের আগুন জ্বালিয়েও কোন লাভ হলো না। ঘোড়া যেমনি দাঁড়িয়ে ছিল তেমনি পূর্বদিক মুখ করে দাঁড়িয়ে রইল। ঘোড়ার কাছে যাওয়া তো দূরের কথা এক পা সামনে আগানোর সাহস হচ্ছে না। প্রেতাত্মা ঘোড়া কখন কি করে বসে সেই ভয়ে শরীরের লোম খাড়া হয়ে উঠল। ভীত অবস্থায় কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে আবার ম্যাচ জ্বালালাম। কিন্তু তবুও লাভ হলো না। ঘোড়া আগের মতই দাঁড়িয়ে থাকল। বুঝতে পেলাম পিছনে ফিরে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই।

মনে মনে চিন্তা করলাম ফিরেই যখন যাবো তখন শেষ চেষ্টাটা করে দেখি। কিন্তু ভয়ে কোন কিছু করার সাহস পাচ্ছি না। যদি ভূতুরে ঘোড়া ভয়ঙ্কর রুপ ধারন করে ঘাড় চেপে ধরে। তখন কি করব?
অনেকের কাছে শুনেছি তিনবার গলা খাঁকারি দিলে নাকি ভূত চলে যায়। সেইটা মনে হতেই জোরে জোরে তিন বার এ্যাহ্হু--- এ্যাহ্হু--- করে গলা খাঁকারী দিলাম। গলা খাঁকারী দিয়ে হিতে বিপরীত হলো। ঘোড়া চলে যাওয়া তো দূরের কথা বরঞ্চ ঘাড় ঘুরিয়ে বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকালো। ঘোড়ার তাকানোর ভাব দেখে মনের মধ্যে যে টুকু সাহস ছিল তাও উবে গেল। এবার দৌড় দেয়া ছাড়া উপায় নেই।

দৌড় দেয়ার আগে এ্যাহ্হু---- করে আরেকবার খুব জোরে একটা গলা খাঁকারী দিলাম। জোরে গলা খাঁকারীর শব্দ শুনে ঘোড়া এবার ভালভাবে নড়েচড়ে উঠল। প্রথম গলা খাঁকারীর পর ঘোড়া শুধু ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকিয়েছিল। এবারের গলা খাঁকারীতে ঘোড়া পুরো শরীর ঘুরিয়ে পশ্চিম মুখী হয়ে দাঁড়াল। ঘোড়ার তাকানো দেখে কলিজা ধক্ করে উঠল। হাতা পা কাঁপতে লাগল। কাঁপতে কাঁপতেই ঘেড়ার দিকে তাকিয়ে আছি। বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা সম্ভব হলো না। ঘোড়া এক পা দুই পা করে আমার দিকেই এগিয়ে আসছে। যেই না ঘোড়া আমার দিকে এগিয়ে আসছে অমনি পিছন দিকে ঘুরে দে দৌড়। দৌড়ে হিন্দু বাড়ির কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। দাঁড়িয়ে পিছন ফিরে আবছা অন্ধকারে ভাল করে আবার তাকালাম। তাকিয়ে দেখি ঘোড়া তখনও আমার দিকেই আসছে। ঘোড়ার আসা দেখে একমুহুর্ত দেরি না করে আবার দৌড়। দৌড়ে সোজা হিন্দু বাড়ির উঠানে গিয়ে দাঁড়ালাম। মনে মনে চিন্তা করলাম হিন্দু বাড়ির কাউকে ডাক দেয়া দরকার। কিন্তু চিন্তা করার আগেই ঘোড়া হিন্দু বাড়ির উঠানে এসে হাজির । এখন দৌড় দিব না চিৎকার দিব বুঝে উঠতে পারছি না। একলাফে হিন্দুদের থাকা ঘরের পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। মনে মনে ভাবতে লাগলাম এরপরও যদি ঘোড়া আমার দিকে এগিয়ে আসে তাহলে এমন জোরে একটা চিৎকার দিবো যেন এক চিৎকারে হিন্দু বাড়ির সবাই জেগে উঠে।

ঘরের বেড়া ঘেষে দাঁড়িয়ে ঘোড়ার দিকে তাকিয়ে আছি। ঘোড়া কোন দিকে যায় কি করে সব আবছা অন্ধকারে খেয়াল করছি। কিন্তু না, ঘোড়া আমার দিকে না এসে সোজা দক্ষিণ দিকে চলে গেল। গোয়াল ঘরের পাশেই খোলামেলা গরুর ঘর ছিল। সেখানে গিয়ে দাঁড়াল। তখন বুঝতে পেলাম এই ঘোড়া ভূতুরে ঘোড়া নয়, এটা এই বাড়ির বাস্তব ঘোড়া। কিছুদিন আগে লক্ষীকান্ত এই ঘোড়াটি কিনে এনেছে। রাতে হয়তো ছেড়ে দিয়ে রেখেছে। লক্ষীকান্তর ঘোড়ার ভয়ে এতক্ষণ আমি যে ভাবে নাস্তানাবুদ হলাম, সেটা মনে হতেই রাগে দুঃখে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। উঠান থেকে একটা গাছের ডাল হাতে নিয়ে ঘোড়ার পিঠে সপাং করে জোরে একটা বাড়ি মেরে রাস্তায় চলে এলাম।

(চলবে----)
প্রথম পর্ব পড়তে নিচে ক্লিক করুন
লম্বা আঁচলের ভুত (গল্প)
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:০৯
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদের উচ্চ কক্ষের নির্বাচন আগে দিয়ে দেখতে দিন কে বাঘ কে বিড়াল?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪৬



সব দলের অংশগ্রহণে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদের উচ্চ কক্ষের নির্বাচন আগে দিন। কোন দলকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে কি করেনি সেইটাও জাতিকে দেখতে দিন। পিআর পদ্ধতির জাতীয় সংসদের উচ্চ... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×