ভরত খালীর কালী মন্দিরটি দুইশত বছরেরও অধিক পুরানো। এই মন্দির সম্পর্কে কোন ইতিহাস পাওয়া যায় না। তবে প্রচলিত লোক কাহিনীতে জানা যায়, প্রায় দুই শত বছর পূর্বে ঘাঘট নদী দিয়ে একটি কাঠের গুঁড়ি ভেসে আসে। এক লোক এই কাঠের গুড়িটি তুলে এনে কুড়াল দিয়ে আঘাত করলে কাঠের গুড়ি থেকে রক্ত বেরিয়ে আসে। এটা দেখে ওই লোক ভয় পেয়ে যায় এবং কাঠের গুঁড়িতে আর কুড়ালের কোপ দেয়ার সাহস পায় না। এই ঘটনার সেই রাতেই সেখানকার জমিদার রমনী কান্ত রায় স্বপ্নে কালী দেবীর আদেশ পান যে, “আমি তোর ঘাটে এসেছি, তুই সমাদর করে পুজা দে”। এই স্বপ্ন দেখে পরদিন জমিদার কাঠের গুড়িটিকে কারিগর দিয়ে কালী মুর্তি তৈরী করে পুজা অর্চনা শুরু করেন।
প্রথমে তিনি একটি খড়ের ঘরে মুর্তি স্থাপন করে পুজা অর্চনা শুরু করেছিলেন, পরবর্তীতে খড়ের মন্দিরটিকে পাকা দালানে পরিণত করেন। সেই থেকে জাগ্রত কালী হিসাবে আজ অবধি এই মন্দিরে পুজা অর্চনা হয়ে আসছে।
মন্দিরের প্রধান দরোজা
সারা বছরই হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের এখানে আগমন ঘটে থাকে। তবে প্রত্যেক বছর বৈশাখ মাসে পুরো মাস জুড়ে পুজা উৎসব হয়ে থাকে। এখানে হিন্দু ধর্মের লোকজন তাদের মনোবাসনা পুরনের জন্য পাঠা বা কবুতর মানত করে থাকেন। বৈশাখ মাসের প্রতি শনি ও মঙ্গলবার পাঠা বলী দেয়া হয়। তখন গাইবান্ধা জেলা ছাড়াও অন্যান্য জেলা থেকেও প্রচুর হিন্দু ধর্মাবলম্বী লোকের আগমন ঘটে। এমন কি ভারত এবং নেপাল থেকেও অনেক লোক এসে থাকে। প্রতি বছর বৈশাখ মাসে কমপক্ষে দেড় হাজার পাঠা আর তিন হাজার জোড়ারও অধিক কবুতর এই কালী দেবীর চরণে উৎসর্গ করা হয়। কালী পুজা উপলক্ষ্যে পুরো বৈশাখ মাস জুড়ে মেলার আয়োজন হয়ে থাকে।
পাঠা বলী দেয়ার স্থান
১৯৯০ সালে যমুনার করাল গ্রাসে ভরতখালীর পূবাংশ ভেঙ্গে বিলীন হয়ে যায়। একটা পর্যায়ে নদী কালী মন্দিরের সীমায় এসে ঠেকলে সবাই ভেবেছিল এবার হয়তো কালী মন্দীরকে আর রক্ষা করা সম্ভব হবে না। আর মাত্র একশ হাত ভাঙলেই পুরো মন্দিরটি নদীর গর্ভে চলে যাবে। কিন্তু নদীর ভয়াবহ ভাঙন কালী মন্দীরের পূর্বপাশে এসে থেমে যায়। একটা পর্যায়ে কালী মন্দিরের সামনে চর পড়ে নদী আবার একমাইল পূর্বদিকে চলে যায়। কোন প্রটেকশন ছাড়াই নদী না ভেঙে কালী মন্দির থেকে দূরে চলে যাওয়ায় একটি কথা প্রচলিত আছে, যমুনা নদী কালী দেবীর সাথে দেখা করতে এসেছিল এবং দেখা করে তার পূর্বের জায়গায় চলে গেছে। আগে থেকেই এই কালী মন্দিরকে হিন্দু ধর্মের লোকজন জাগ্রত কালী মন্দির হিসাবে ¯্রদ্ধা ভক্তি করে আসছে, বর্তমানে যমুনা নদীর ভয়াবহ ভাঙন থেকে রক্ষা পাওয়ায় আরো এই কালী মন্দিরকে হিন্দু ভক্তবৃন্দ মনে প্রানে জাগ্রত কালী মন্দির হিসাবে বিশ্বাস করে থাকে।
মন্দিরের পিছনের বট মূলে প্রজ্জলিত দ্বীপ ও বিভিন্ন ভোগের সামগ্রী
মন্দিরের পূর্বপাশে ভক্তবৃন্দদের জন্য ছাউনি
এখান থেকেই যমুনা নদী পূর্ব দিকে ফিরে গিয়েছে
ভক্তবৃন্দের জন্য বসার ঘর
মন্দিরের পুরোহিতের থাকার ঘর