somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভরতখালীর কালী মন্দির

২৫ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ৮:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক



ভরত খালীর কালী মন্দিরটি দুইশত বছরেরও অধিক পুরানো। এই মন্দির সম্পর্কে কোন ইতিহাস পাওয়া যায় না। তবে প্রচলিত লোক কাহিনীতে জানা যায়, প্রায় দুই শত বছর পূর্বে ঘাঘট নদী দিয়ে একটি কাঠের গুঁড়ি ভেসে আসে। এক লোক এই কাঠের গুড়িটি তুলে এনে কুড়াল দিয়ে আঘাত করলে কাঠের গুড়ি থেকে রক্ত বেরিয়ে আসে। এটা দেখে ওই লোক ভয় পেয়ে যায় এবং কাঠের গুঁড়িতে আর কুড়ালের কোপ দেয়ার সাহস পায় না। এই ঘটনার সেই রাতেই সেখানকার জমিদার রমনী কান্ত রায় স্বপ্নে কালী দেবীর আদেশ পান যে, “আমি তোর ঘাটে এসেছি, তুই সমাদর করে পুজা দে”। এই স্বপ্ন দেখে পরদিন জমিদার কাঠের গুড়িটিকে কারিগর দিয়ে কালী মুর্তি তৈরী করে পুজা অর্চনা শুরু করেন।


প্রথমে তিনি একটি খড়ের ঘরে মুর্তি স্থাপন করে পুজা অর্চনা শুরু করেছিলেন, পরবর্তীতে খড়ের মন্দিরটিকে পাকা দালানে পরিণত করেন। সেই থেকে জাগ্রত কালী হিসাবে আজ অবধি এই মন্দিরে পুজা অর্চনা হয়ে আসছে।


মন্দিরের প্রধান দরোজা

সারা বছরই হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের এখানে আগমন ঘটে থাকে। তবে প্রত্যেক বছর বৈশাখ মাসে পুরো মাস জুড়ে পুজা উৎসব হয়ে থাকে। এখানে হিন্দু ধর্মের লোকজন তাদের মনোবাসনা পুরনের জন্য পাঠা বা কবুতর মানত করে থাকেন। বৈশাখ মাসের প্রতি শনি ও মঙ্গলবার পাঠা বলী দেয়া হয়। তখন গাইবান্ধা জেলা ছাড়াও অন্যান্য জেলা থেকেও প্রচুর হিন্দু ধর্মাবলম্বী লোকের আগমন ঘটে। এমন কি ভারত এবং নেপাল থেকেও অনেক লোক এসে থাকে। প্রতি বছর বৈশাখ মাসে কমপক্ষে দেড় হাজার পাঠা আর তিন হাজার জোড়ারও অধিক কবুতর এই কালী দেবীর চরণে উৎসর্গ করা হয়। কালী পুজা উপলক্ষ্যে পুরো বৈশাখ মাস জুড়ে মেলার আয়োজন হয়ে থাকে।


পাঠা বলী দেয়ার স্থান

১৯৯০ সালে যমুনার করাল গ্রাসে ভরতখালীর পূবাংশ ভেঙ্গে বিলীন হয়ে যায়। একটা পর্যায়ে নদী কালী মন্দিরের সীমায় এসে ঠেকলে সবাই ভেবেছিল এবার হয়তো কালী মন্দীরকে আর রক্ষা করা সম্ভব হবে না। আর মাত্র একশ হাত ভাঙলেই পুরো মন্দিরটি নদীর গর্ভে চলে যাবে। কিন্তু নদীর ভয়াবহ ভাঙন কালী মন্দীরের পূর্বপাশে এসে থেমে যায়। একটা পর্যায়ে কালী মন্দিরের সামনে চর পড়ে নদী আবার একমাইল পূর্বদিকে চলে যায়। কোন প্রটেকশন ছাড়াই নদী না ভেঙে কালী মন্দির থেকে দূরে চলে যাওয়ায় একটি কথা প্রচলিত আছে, যমুনা নদী কালী দেবীর সাথে দেখা করতে এসেছিল এবং দেখা করে তার পূর্বের জায়গায় চলে গেছে। আগে থেকেই এই কালী মন্দিরকে হিন্দু ধর্মের লোকজন জাগ্রত কালী মন্দির হিসাবে ¯্রদ্ধা ভক্তি করে আসছে, বর্তমানে যমুনা নদীর ভয়াবহ ভাঙন থেকে রক্ষা পাওয়ায় আরো এই কালী মন্দিরকে হিন্দু ভক্তবৃন্দ মনে প্রানে জাগ্রত কালী মন্দির হিসাবে বিশ্বাস করে থাকে।


মন্দিরের পিছনের বট মূলে প্রজ্জলিত দ্বীপ ও বিভিন্ন ভোগের সামগ্রী


মন্দিরের পূর্বপাশে ভক্তবৃন্দদের জন্য ছাউনি


এখান থেকেই যমুনা নদী পূর্ব দিকে ফিরে গিয়েছে


ভক্তবৃন্দের জন্য বসার ঘর


মন্দিরের পুরোহিতের থাকার ঘর
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ৮:৩০
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×