
২০১৭ সাল থেকে বাম হাঁটু নিয়ে ভুগতেছি। পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পিজি হাসপাতাল পর্যন্ত অনেক ডাক্তারের কাছেই গিয়েছি কিন্তু কাজ হয় নাই বরঞ্চ আরো হাঁটুর ব্যাথায় কিছুদিন লাঠি ভর দিয়ে হাঁটতে হয়েছে। হাটলেই হাঁটু ফুলে যায় এবং প্রচন্ড ব্যাথা করে। অবশেষে গেলাম বেঙ্গালোরে। মজুমদার সাউ হাসপাতালের অর্থপেডিকসের সিনিয়র ডাক্তার দেখানোর পরে তিনি এক্সরে দেখে বললেন, আপনার হাঁটু ক্ষয় হয়েছে এটা রিপিয়ের করতে হবে। বললাম কিভাবে রিপিয়ার করবেন? বলল, হাঁটু কেটে প্লাস্টিকের হাঁটু লাগাতে হবে। বললাম টাকা লাগবে কত? বলল, তিন লাখ রুপি।
দ্বিধা দ্বন্দে পড়ে গেলাম, তিন লাখ রুপি মানে বাংলাদেশের প্রায় চার লাখ টাকা। চার লাখ টাকা না হয় খরচ করলাম কিন্তু নাচারাল হাঁটু কেটে প্লাস্টিক হাঁটু লাগানোর পর যদি ঐ হাঁটুও ক্ষয় হয় তখন কি হবে। নাচারাল হাঁটু কোন না কোন ঔষধে রিপিয়ার হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিন্তু প্লাস্টিক তো প্লাস্টিকই, ও তো আর নাচারাল হাঁটুর মতো ঔষধে রিপিয়ার হবে না। প্লাস্টিক লাগানোর পরে যদি সমস্যা দেখা দেয় তখন না আবার পুরো হাঁটুটাই কেটে ফেলতে হয়, এই ভয়েই হাঁটুর চিকিৎসা না করে শুধু হার্টের চিকিৎসা করে দেশে ফিরে এলাম।
বাংলাদেশে এসে ছয় মাস পর পর হার্টের চেকাপ করতে ঢাকা যেতে হয়। সিডিউল অনুযায়ী গত ডিসেম্বরে হার্ট চেকাপের করতে গেলাম। আমি যে ডাক্তার দেখাই সে ডাক্তার কনফেরেন্সে যোগ দেয়ার জন্য আমেরিকা চলে যাওয়ায় অন্য এক ডাক্তার দেখালাম। ডাক্তার আমার দেহ চেকে করে কাগজপত্র ঘেটে জিজ্ঞেস করলেন আপনি সকাল বিকাল কতটুকু হাঁটেন? বললাম, আমি তো হাঁটতে পারি না, হাঁটলেই হাঁটু ফুলে যায় ব্যাথা করে। ডাক্তার আর কিছু বললেন না শুধু হাঁটু দেখলেন। আমার হাঁটুর অবস্থা দেখে ঘচঘচ করে প্রেসক্রিপশ লিখে দিলেন। প্রেসক্রিপশন দেখে আমার চক্ষু চড়ক গাছ, দুই একটা নয় ১৭টি ঔষধ লিখে দিয়েছেন। ওনার এতো ঔষধ লেখা দেখে বিরুক্ত হয়ে মনে মনে বললাম ইনি ডাক্তার না ঔষধ কোম্পানির এজেন্ট। এতো ঔষধ তো কোন ডাক্তারকেই লিখতে দেখি নাই, এতো ঔষধ কেন লিখেছেন এই প্রশ্ন ডাক্তারের মুখের উপরে বলতেও পারছি না বললেই উল্টো দু’কথা শুনিয়ে দেবে।
যাই হোক ডাক্তার যখন লিখেছে উনার সাজেশন মতই ঔষধ খাওয়া শুরু করলাম। এক মাস পরে দেখি পায়ের ব্যাথা অনেকটা কম কম মনে হয়। এখন একটু একটু করে হাঁটতে পারি। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন দেখে যতটা না বিরুক্ত হয়েছিলাম পায়ের ব্যাথা কমায় এখন অনেকটা আনন্দ লাগছে। আবার গেলাম ডাক্তারের কাছে। এবার হাঁটুর জন্য দুইমাসের ঔষধ দিয়ে দিল। পুরো ঔষধ খাওয়ার পর এখন হাঁটুর ব্যাথা অনেক কমেছে ৯০% সুস্থ্যবোধ করছি। আগে একশত গজ হাঁটতে পারতাম না এখন দুই তিন মাইল পর্যন্ত হাঁটতে পারি। শুধু হাঁটতে না পারার কারণে আমি এতদিন কোথাও ভ্রমণ করতে পারি নাই এমন কি আত্মীয় স্বজনের বাড়িতেও যাতায়াত কমে গিয়েছিল। এখন আবার আমার আগের মতো ভ্রমণ করতে ইচ্ছা করছে কিন্তু হাঁটু ভালো হলে কি হবে হার্ট তো আর ভালো হয় নাই, যে কারণে ইচ্ছা থাকার পরও ভ্রমণ করা যাচ্ছে না ।
তবে স্মরণীয় বিষয় হলো আমার হাঁটুর চিকিৎসা যিনি করেছেন তিনি কিন্তু হাঁটুর ডাক্তার নন তিনি একজন সিনিয়র হার্টের ডাক্তার।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


