বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতীয় চক্রান্ত বন্ধ করতে
দেশব্যাপী প্রতিরোধ গড়ে তোলার ডাক ছাত্রদের
স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হরণ করে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারত চক্রান্ত করছে এই অভিযোগ তুলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেশব্যাপী প্রতিরোধ গড়ে তোলার ডাক দিয়েছে। তারা ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জী ও ভারতীয় রাষ্ট্রদূত পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তীকে বাংলাদেশের শত্রু আখ্যায়িত করে তাদের বাংলাদেশের সীমানায় অবাঞ্ছিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। গতকাল নির্যাতন প্রতিরোধ ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ভারতীয় দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচী পালনকালে সংগঠনটি এই ঘোষণা দেয়।
সংগঠনটি অবিলম্বে ভারতকে বাংলাদেশে পরিকল্পিত দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি, নির্বাচন বানচাল, সীমান্তে গুলি করে মানুষ হত্যা ও সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে কারগারে বন্দি রাখার ইন্ধন দান বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।
গতকাল বুধবার দুপুর ১২ টায় পূর্বঘোষিত ভারতীয় দূতাবাস কর্মসূচী উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে দলে দলে ছাত্ররা অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এসে সমবেত হয়। সাড়ে ১২ টায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীর একটি মিছিল ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে ভারতীয় দূতাবাসের দিকে যাত্রা শুরু করে। মিছিলটি চারুআমাদের কলা ইনস্টিটিউটের সামনে পুলিশি বাধার মুখে পড়লে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় বসে পড়ে। এ সময় বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে ভারত আমাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে সম্প্রসারণবাদী কর্তৃত্ব জাহির করতে চাচ্ছে। এ জন্য কৃষি ব্যবস্থা ধ্বংস করতে ফারাক্কাসহ অসংখ্য বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশকে মরুভূমিতে পরিণত করে চলেছে। সিডর, বন্যাসহ প্রাকৃতিক দূর্যোগ আঘাত হানায় দেশে খাদ্য উৎপাদন কম হওয়ার সুযোগ গ্রহণ করে ভারত চাল রপ্তানির উপর বারবার নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ভারতের পররাষ্টমন্ত্রী প্রণব মুখার্জী উপযাচক হয়ে বাংলাদেশে এসে ৩২০ ডলারে চাল দেয়ার কথা বললেও এখন ৪২০ ডলারেও সেই চাল দিচ্ছে না। বক্তারা অভিযোগ করেন চাল না দেয়ার পাশপাশি ভারত তাদের গোয়েন্দা সংস্থা র’ কে দিয়ে সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা বলেন, চাল নিয়ে ভারতের এই আচরণের ফলে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ ক্ষুধার যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে পড়েছে। কিন্তু সরকার কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।
বক্তারা বলেন, ১৯৭১ সাল থেকে ভারত বাংলাদেশের সাথে যে আচরণ করে আসছে তা সম্প্রসারণবাদী চক্রান্তের নামান্তর। এই চক্রান্ত বাস্তবায়নের জন্য ঘৃণ্য মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সাথে যোগসাজস করে ভারত বাংলাদেশের দুই সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে কারাগারে বন্দি করে রেখেছে। অসাংবিধানিক-অনির্বাচিত সরকারকে অব্যাহত সমর্থন যুগিয়ে বাংলাদেশের তেল-গ্যাস ক্ষেত্র , বন্দর, এয়ার ট্রান্সিট, সড়ক ও রেল ট্রান্সিট লুট করতে শুরু করেছে। এই লুটপাট অব্যাহত রাখার জন্য তারা প্রতিশ্রুত আগামী ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচালের নীল নক্সা বাস্তবায়ন করছে। নীল নক্সা বাস্তবায়নের জন্য প্রণব মুখার্জী ও তাদের রাষ্ট্রদূত পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। বক্তারা এই দুই ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশের ত্রি সীমানায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার জন্য সরকারকে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের আহ্বায়ক খোমেনী ইহ্সান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ও দেশ প্রেমিক কোন ছাত্র বাংলাদেশের বর্তমান সঙ্কট দেখে চুপ করে থাকতে পারে না। মুখ বুঝে মেনে নিতে পারে না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদী তস্করদের দক্ষিণ এশিয় এজেন্ট ভারতের বাংলাদেশ বিরোধী চক্রান্ত। তিনি বলেন, ভারতীয় চক্রান্তের ফলেই আজ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে দুই নেত্রী কারাগারে বন্দি রয়েছেন। কিন্তু বিশ্ব বেহায়া স্বৈরাচারী এরশাদ বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ থাকলেও কিছু হচ্ছে না কিন্তু খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা দোষী প্রমাণিত না হলেও জামিনে মুক্ত হতে পারছেন না। এরশাদ মুক্ত বাতাসে ঘুরে র’ এর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন না হওয়ার ভবিষ্যত বানী করছে। আর জাতীয় সংসদ ভবন দুই প্রধান নেত্রীকে নিয়ে অবরুদ্ধ গুয়ান্তানামো বে কারাগারে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ যেই চেতনা ১৯৫২ সাল থেকে লালন করে আসছে তার বলে বলীয়ান হয়ে আমরা মনে করি এই অবস্থার অবসানে সংগ্রাম করা আমাদের জাতীয় কর্তব্য। তিনি এই কর্তব্য পালনের জন্য ছাত্র সমাজকে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করে গণ প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তিনি দেশ রক্ষার মহান দায়িত্ব পালনের জন্য শিগগির কঠোর কর্মসূচী দেয়ার ঘোষণা দেন। তিনি এসব কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য ছাত্র সমাজকে বুকের রক্ত ঢেলে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন কেউ ছাত্র সমাজকে বাঁধা দেয়ার সাহস দেখালে কঠোর জবাব দেয়া হবে।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, নীলয় সরকার, ভাস্কর সাহা, পার্থ দেব মন্ডল প্রমুখ। এ সময় সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় আইন সম্পাদক আবু সাইদ, সহ আইন সম্পাদক রাজিব আহসান, আসাদুজ্জামান আসাদ, আলমগীর হোসেন সোহান, আতিকুজ্জামান রিপন, হুমায়ুন কবির, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক, রেজাউল করিম রেজা, আব্দুল করিম সরকার, মিজানুর রহমান সোহাগ, এইচ এম কামরুল হাসান কচি, জাহাঙ্গীর কবির মিন্টু, আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
৯ এপ্রিল ২০০৮-এর ভারতীয় দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচি

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




