somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাবার হাতের ব্যানারে লেখা “রাজাকারের ফাসি চাই”

১৫ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার বাবাকে নিয়ে আমি গর্ব করি, আমি গর্ব করি মিলিটারী চাচা, এহসাক চাচা কিংবা আব্দুল চাচাকে নিয়েও। আমার বাবা তাদের মত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। তবে তিনি ছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের(উল্লেখিত তিন’চাচার)প্রানের বন্ধু, তাদের সহকারী।
৭১রে যুদ্ধ শুরু হলে বাবার বন্ধু এহসাক(পরবর্তীতে স্কুল মাষ্টার),আব্দুল চাচা(কাপড়ের দোকানদার), আর মিলিটারী (তার আসল নাম আমি আজও জানি না)তিনজন বাড়ী থেকে পালিয়ে ভারতে চলে যান মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষন নিতে। তাদের সাথে বাবা যেতে চাইলেও উনারা বাবাকে সাথে নেন নি। কারন আমার বড়ভাইয়ের বয়স মাত্র ২’বছর। ছোট সন্তান আর পরিবারের একমাত্র অবলম্বনকে তারা ছিনিয়ে নিতে চাননি।
তবে বাবাকে তারা ঠিকই ব্যবহার করেছেন। হঠাত এহসাক চাচার আগমন হয় আমাদের বাড়ীতে, শত বিপদের মাঝেও বাবা তাকে আশ্রয় দেন যদিও রাজাকাররা জানতে পারলে ফলাফল কি হবে তা বাবা ভাল মতই জানতেন।
চাচার কথামত বাবা মুক্তিযোদ্ধাদের সরঞ্জাম, বন্দুক, মর্টার ইত্যাদি থেকে শুরু করে যাবতীয় দ্রব্যাদি যমুনা থেকে সখীপুর, অন্য চাচাদের কাছে পারাপাড় করতেন। বলে রাখা দরকার চাচারা “কাদেরীয়া বাহিনীর” যোদ্ধা ছিলেন।
নৌকা চালক ছিলেন বলে রাজাকাররা তাকে কোনদিন সন্দেহ করত না। তাছাড়া আমার ফুফুর বাড়ী ময়মনশিংহ হওয়ার ফলে বাবার গতিবিধি কেউ লক্ষ করত না। বাবা এভাবেই যুদ্ধ না করেও আমার কাছে আরব্য উপন্যাসের নায়কের থেকে বেশি প্রিয়।
২০১১ সালে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় বাড়ী যাই। তখন আমাদের ঈদ মাঠ নিয়ে পাশের গ্রামের সাথে তুমুল গণ্ডগোল হয়। মারামারিতে অনেকেই আহত হন। তবে ভাগ্য ভাল কেউ মারা যায়নি। সেদিন দেখলাম আমার বৃদ্ধ বাবার হাতে লাঠি। বাবা ঈদ মাঠ রক্ষার্থে ওখানে যাবেন। আমি বাবাকে বললাম, বাবা, সংসারের ভার বইতে বইতে তুমি ক্লান্ত, আমি যাব, এক পরিবার থেকে একজন সহীদ হলেই যথেষ্ট।
বাবা বললেন, আমার কবরে কি তুই যাবি?? আমাকেই তার(আল্লাহর)কাছে জবাব দিতে হবে। শুধু সহীদ হলেই সব হল না, আর লাঠি ধরলেই যোদ্ধা হয় না, তুই কলম ধর। তোর কলম আমার লাঠির থেকে কয়েক হাজারগুন শক্তিমান। আমি সেদিন কেদে ফেলেছিলাম আমার অশিক্ষিত বাবার মুখে এমন কথা শুনে।
কয়েকদিন আগে বাবাকে দেখলাম, বাজারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে মানব বন্ধনে ব্যানার হাতে তাতে লেখা;-
রাজাকারের ফাসি চাই
আমি ভাবতে বাধ্য হই যে মানুষ দেশের জন্য মৃত্যুর ঝুকি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করে, আবার সেই মানুষই ঈদমাঠের জন্য লাঠি হাতে নেয়। ধর্মীয় অনুভুতিতে কারো সাথে কোন আপস নয়।।কখনও আপস করা হবে কিন্তু সেই সাথে সত্য প্রচার থেকেও দূরে থাকা যাবে না। ধর্মের নামে ব্যবসাকে সমর্থন করা যাবে না। তাই বাবার দেয়া আদর্শকে বুকে ধরে, আমিও বলে উঠি
যুদ্ধাপরাধীদের ফাসি চাই

শেষকথা, ধর্মের জন্য, সত্যের জন্য, ন্যায় বিচারের জন্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হওয়া আবশ্যক। যতদিন দেশপ্রেমিক, প্রকৃত ইসলামপ্রেমী মানুষ থাকবে যুদ্ধাপরাধের বিচার হবেই হবে।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×