চন্দ্রালোকে চমকে যাওয়ার মত দৃশ্যটিতে চোখ আটকে যায় ত্রিশোর্ধ পারুর। টলটলে চোখ মেলে সে দেখে একটি কুৎসিত দৃশ্য। কুৎসিত এবং ভয়ংকর। পায়ে হেটে চলা অবিন্যস্ত পথের পাশে পড়ে আছে পুরুষ এক। রক্তাক্ত, নিস্তেজ। হাপঁর থেমে যাওয়ার পূর্ব মুহুর্তের মত ক্ষীণ ভাবে ওঠানামা করছে পুরুষের বুক। প্রাণের উপস্থিতি-সবল নয়, র্দুবল। জীবনের রৈখিক আকৃতি দিগন্তে বিলীন হওয়ার অপেক্ষায়।
ধর্ষিত হওয়ার পর একটা অদ্ভুত অনুভূতি হয়েছিল পারুর। জীবনের কৃত্রিম বেড়াজাল থেকে মুক্তি পাওয়ার অনুভূতি। শরীরে লেগে ছিল দাগ-ভালবাসাহীনতার, কাপুরুষতার, অপবিত্রতার। মনটা পবিত্র হয়ে উঠেছিলো দেবতাদের মত। আত্মহত্যার বদলে মন নেচে উঠেছিলো মুক্তির আনন্দে। মুক্তি নিজের, মুক্তি নারীত্বের। মুক্তি পরাধীনতার, একাকী জীবনযাপনের। নতুনভাবে কিছু না হারানোর ভয়হীনতার।
পথচারীর সহযোগীতায় রক্তাক্ত পুরুষকে পারু নিয়ে এলো নিজ আবাসে। নার্সিং শেখা ছিল তার-জীবনের প্রয়োজনে-সেবাব্রতী হতে। শিকারীরা উপড়ে নিয়েছে উভয়চোখ নৃশংসভাবে। উপড়ানো চোখের কোটর থেকে অশ্র“র বদলে বের হয়েছিলো রক্ত। গরম এবং তাজা। রক্ত শুকিয়ে আস্তর পড়েছে মুখে। রক্তের পলি। যেন মুখে লাল কাপড় বেধাঁ ষাড়। নিস্তেজ।
পরিচর্যায় অভ্যস্থা, পুরুষের খুব কাছে আসতেই তীব্র গন্ধে চমকে ওঠে। তীব্র কারণ পরিচিত। অনেকদিন পরে নিজের সত্ত্বায় প্রবল আলোড়ন অনুভব করে সে।
সযতেœ মুখটা পরিষ্কার করল পারু। চিনল তবে চমকাল না। ভালবাসাহীন কাপুুরুষ এক। মুক্তিদাতা অথচ দাগ সৃষ্টিকারী।
ঈশ্বর করুনাময় কিন্তু প্রতিশোধ গ্রহণকারী। দীর্ঘদিন অন্বেষণ করেও যে শত্র“ ছিলো তার নাগালের বাইরে, ঈশ্বর তাকে এনে দিয়েছে তার দোরগোড়ায়। আক্রোশে ফুঁসে উঠল পারু। তীব্র এবং প্রতিহিংসাময়। হঠাৎ ফুঁসে ওঠা সমুদ্র, ভাসিয়ে নেয়া জলোচ্ছাস। জলোচ্ছাস আক্রোশের, প্রতিশোধের। হননের। কয়েক মুহুর্তের অবহেলার অথবা ত্বরাণ্বিত-রূদ্ধ শ্বাসনালী। মুহুর্তে নিস্পন্দ হাঁপর।
ঝড় থামলে শান্ত হয় জলোচ্ছাস। মানবতার সেবায় আত্মউৎসর্গকারীণির হৃদয়ে অন্যরকম অনুভূতি হয়, ভালবাসার নয়, ঘৃণার নয়, ক্ষমার নয়। প্রতিশোধ গ্রহণের। না শত্র“কে হত্যা করে নয় -বাচিঁয়ে রেখে। কিন্তু অন্ধ তো পারবে না চিনতে প্রতিশোধ গ্রহণকারিণীকে।
তাহলে?
নিজের চোখ অন্ধকে দান করে প্রতিশোধ গ্রহণ করতে বড্ড ইচ্ছে করে পারুর--------------।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





