
অতিমাত্রায় বঙ্গবন্ধু বা শেখ মুজিব কথাটির ব্যবহার করে জাতির পিতার সম্মান টা রাখতে পারছি তো, নাকি অধিক সম্মান করতে গিয়ে আমরাই জোর করে তাঁকে নিচে নামিয়ে আনছি ?
শুরু করি একটা গল্প দিয়েঃ
আপনারা হয়তো জানেন বনমানুষের ২টা বাচ্চা হয় একসাথে। মা বনমানুষটি দুটো বাচ্চাকেই কিন্তু সমান আদর করে না । একটি অনেক আদর করে ভালোবেসে বুকে জড়িয়ে রাখে শক্ত করে। আরেকটির খবরও রাখে না। এদিকে যাকে অনেক ভালোবসে বুকে জড়িয়ে রাখে, তাকে ভালোবাসতে গিয়ে এমন জোরে বুকে চেপে ধরে তাতে করে সে শ্বাস যায় যায় অব্স্থা। শুধু তাই নয় সত্যিই একসময় মারা যায় । অন্যদিকে অপর বাচ্চাটি অনাদরে থাকলেও সে স্বাধীনভাবে বেড়ে ওঠে।
বাংলাদেশের এমন অবস্থা যায় হোক না কেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেটাই ভালো দেখবেন সেটার নামই বঙ্গবন্ধু বা শেখ মুজিব রেখে দিবেন। বঙ্গবন্ধু সেতু, বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ক, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ, শেখ মুজিব মেরিটিয়ান কলেজ, বঙ্গবন্ধু কন্ফারেন্স সেন্টার আরো কত কি! হাজারো নাম । বর্তমান প্রক্রিয়াধীন বঙ্গবন্ধু এয়ারপোর্ট। ভাসানী নভোথিয়েটার নামটি কি কারনে পরিবর্তিত হল, তার কারণ আমার বোধগম্য নয়। এর অর্থ দাঁড়ায় ভাসানী বাংলাদেশের জন্য কিছুই করেন নি। আরো যারা গুনী ব্যক্তিত্ব আছেন? কয়েকদিন পর আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তো এদের মনেই রাখবে না। তারা জানবে বাংলাদেশটাই বানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু!
বঙ্গবন্ধু যা করেছেন তা বাংলার মানুষের অন্তরে মিশে আছে। বাংলার মানুষ জানে সেটা। কিন্তু পাশাপাশি অন্যান্য যাদের অবদান আছে, তাদের নামেও কিছু নামকরণ করা হোক। বাঙ্গালীদের এখন জোর করে ওষুধ গেলানোর মত অবস্থা। আমরা শ্রদ্ধার সাথে জাতির পিতাকে স্বরণ করবো। কেন এখানে দ্বিধা দ্বন্দ্ব কাজ করবে। সব স্থানেই একই নামকরণ করলে মানুষ সেটা নিয়ে সমালোচনা করবে, এটাই স্বাভাবিক। এর প্রমাণ ও আমরা পায় অন্যান্য দল যারা আছে (আওয়ামী লীগ) ছাড়া তারা সংসদেও জাতির পিতাকে নিয়ে কটুক্তি করেন। আমি মনে করি এসব হচ্ছে একাধিক নামকরণের ফল। কিছু বিবেক বুদ্ধিহীন মাথা মোটা লোকজন নেত্রী সান্নিধ্য পেতে এমন উদ্ভট প্রস্তাব করে বাহবা কুড়ান। যার পরিনতি কখনই সুখকর হয় নি এবং হয় ও না।
১৯৭১ এ মুক্তিবাহিনীকে পরিচালনা করেন জেনারেল ওসমান গনি। কই! ওনার নামে তো কিছুই চোখে পড়েনা। তারপর্ও আমরা তাকে স্বরণ করি শ্রদ্ধার সাথে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল অথবা বাউল সম্রাট লালন ফকির। তাদের পরিচিতির জন্য তো এতো নামকরণ কোথাও করা নেই। তারপরও বাঙালী তাদের স্বরণ করি শ্রদ্ধার সাথে, ভালোবেসে। সবাই নিজ দায়িত্ববোধ থেকে এখনো এগিয়ে যায় ২১শে ফেব্রুয়ারী শহীদ মিনারে ফুল দিতে। কিন্তু জাতীয় শোক দিবস আমরা সাধারণ বাঙ্গালী কয়জনই বা এগিয়ে যায় টুঙ্গিপাড়া বা ধানমন্ডীতে ফুল দিতে। সামান্য কিছু নেতা কর্মী ই মাত্র এগিয়ে যায় টিভির শিরোনাম হতে। রাতে নেত্রী দেখবেন আমি ছিলাম, ফুল দিয়েছি এটুকুর জন্যই। বাকীটা প্রশাসন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে নিতান্তই সরকারের চাপে। ভারতে আজও মাহাত্বা গান্দীর নাম সবাই স্বরণ করে ভালোবেসে।
শুধু বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এতো আয়োজন না করে দেশের জন্য যারা প্রাণ দিয়েছেন, কিশোর যৌবণ পার করেছেন সবাইকে আসুন সম্মান জানায়। সবাই মিশে থাক আমাদের অন্তরে। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, তিনি থাকবেন জাতির পিতা হয়ে সব মানুষের হৃদয়ে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৩:০৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





