somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেউ কি নিরাপদ এই সব বিএনপির সন্ত্রাসীদের থেকে?????? ছিঃ!!

২৮ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হরতালে দুটি স্কুলে হামলা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ আহত ১৪

লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের দুটি স্কুলে আজ বৃহস্পতিবার সকালে হামলা চালিয়েছে হরতালের সমর্থকেরা। এতে তিন শিক্ষক ও ১১ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।
হরতালে স্কুল খোলা রাখায় ইউনিয়ন বিএনপির এক নেতার নেতৃত্বে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেছেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, লালমনিরহাট জেলা শহর থেকে ১২-১৩ কিলোমিটার দূরে তিস্তা নদীর পাড়ে খুনিয়াগাছ ইউনিয়নে পাশাপাশি স্কুল দুটি অবস্থিত। আজ ১৮ দলীয় জোটের ডাকা হরতালের দ্বিতীয় দিনে খুনিয়াগাছ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও খুনিয়াগাছ উচ্চবিদ্যালয় খোলা ছিল।
স্কুল সূত্র ও স্থানীয় লোকজন জানান, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হরতালের সমর্থক একদল দুর্বৃত্ত লাঠিসোঁটা নিয়ে স্কুল দুটিতে হামলা চালায়। এ সময় তাদের হামলায় খুনিয়াগাছ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুল হাই, শিক্ষক নাজনীন জাহান ও সাবিনা ইয়াসমিন এবং অন্তত ১১ শিশু শিক্ষার্থী আহত হয়। আহত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক চিকিত্সা দেওয়া হয়েছে।
স্কুল এলাকায় বিএনপির স্থাপন করা দুটি বিলবোর্ড নষ্ট হওয়া এবং হরতালের দিন স্কুল খোলা রাখার অভিযোগে এ হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের চড়-থাপ্পড়, কিল-ঘুষি ও লাঠি দিয়ে মারধর করে।
ঘটনা সম্পর্কে খুনিয়াগাছ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুল হাই বলেন, ‘হামলাকারীরা অমানুষের মতো ক্লাস চলাকালীন সকাল সাড়ে ১০টায় বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে। তারা বিদ্যালয়টিতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। শ্রেণীকক্ষের বেঞ্চ, অফিসকক্ষের চেয়ার-টেবিলসহ অন্যান্য আসবাব ভাঙচুর করে হামলাকারীরা। তারা অফিসের কাগজপত্র ও ফাইল ছিঁড়ে ফেলে।’
আবদুল হাই বলেন, ‘হামলাকারীদের বাধা দিতে গিয়ে আমি এবং স্কুলের অপর দুই শিক্ষক সাবিনা ইয়াছমিন ও তাজনীন জাহান লাঞ্ছিত হয়েছি। স্কুলের কমপক্ষে ১১ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। অনেকে ভয়ে বই-খাতা ও স্যান্ডেল ফেলে চলে যায়।’
একই সময় হামলাকারীদের অপর একটি দল খুনিয়াগাছ উচ্চবিদ্যালয়ে হামলা চালায়। এ সময় সেখানে অ্যাসেম্বলি চলছিল। হামলাকারীরা স্কুলের জাতীয় পতাকা নামিয়ে সেই বাঁশ দিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের তাড়া করে। এ সময় স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীতি নেমে আসে।
খুনিয়াগাছ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেন বলেন, ‘স্কুল এলাকায় লাগানো বিএনপির কয়েকটি বিলবোর্ড কে বা কারা নষ্ট করেছে। সেই কারণে এবং হরতালের দিন বিদ্যালয় খোলা রাখার অভিযোগে আমাদের ওপর হামলা হয়েছে। এই হামলায় স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর এক ছাত্রী আহত হয়েছে।’
হামলার ঘটনার একপর্যায়ে খুনিয়াগাছ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা নাজনীন জাহান স্কুলের মাইকে গ্রামবাসী ও অভিভাবকদের সাহায্য চান। মাইকিং শুনে শত শত অভিভাবক ও স্থানীয় লোকজন ছুটে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
শিক্ষিকা নাজনীন জাহান বলেন, ‘নিজের নিরাপত্তার কথা না ভেবে স্কুলের আমানত এবং দেশ ও জাতিসহ পরিবারের সম্পদ শিশু শিক্ষার্থীদের হামলার হাত থেকে বাঁচাতে বিদ্যালয়ের মাইকে এলাকাবাসীসহ অভিভাবকদের এগিয়ে আসতে বলেছি।’ তিনি বলেন, ‘আমি বলেছি, স্কুলে হামলা হয়েছে। ওরা আমাদের লাঞ্ছিত করছে। ছাত্র-ছাত্রীদের মারছে। আমরা কিছুই করতে পারছি না। দয়া করে অভিভাবক ও এলাকাবাসী এখানে আসুন। হামলাকারীদের ঠেকান। আমাদের বাঁচান।’
নাজনীন জাহান বলেন, এই মাইকিংয়ের পর স্কুলের চারদিক থেকে গ্রামবাসী, অভিভাবক ও অন্যরা এগিয়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
হামলার শিকার খুনিয়াগাছ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র আহত মাসুদ রানা বলে, ‘ওরা স্কুলের স্যারোক মারছে, মোকো থাপড়াইছে, ধাক্কেয়া ফেলে দিছে, কইছে হরতালের দিনত স্কুলে আসলে আবার মারিম, তোমরা কন তাইলে আমরা কি স্কুলত পড়বার পাবারনং।’
মাইকিং শুনে এগিয়ে আসা অভিভাবক মো. নুরুন্নবী বলেন, ‘স্কুলের আপার মাইকিং শুনিয়া স্কুলোত আসি দেখোং সে এক ধুলায় অন্ধকার, ছাওয়া পাওয়া যায় যেদিকে পাবারনাকছে কান্দাকাটি করি দৌড়ে পালাবার নাগছে। আমরা আসলে হামলাকারীরা পালেয়া গেইছে।’
এ ঘটনায় জেলার শিক্ষক ও অভিভাবকসহ শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্কের পাশাপাশি ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সংবাদ পেয়ে লালমনিরহাট সদর থানার পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। লালমনিরহাট সদর থানার ওসি জমির উদ্দিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘ঘটনার সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। জেলা শহর থেকে সেখানে শিক্ষকতা করতে যাওয়া শিক্ষকদের পুলিশের গাড়িতে করে শহরে নিয়ে আসা হয়েছে। স্কুল দুটির পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে।’
লালমনিরহাট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম মোসলেম উদ্দিন এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. নবেজ উদ্দিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। তাঁরা বলেন, এ ধরনের ঘটনা নজিরবিহীন ও ন্যক্কারজনক। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া না হলে হরতালের দিন বিদ্যালয় খোলা রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
হামলার ঘটনার সময় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও স্থানীয় সাংসদ মোতাহার হোসেন লালমনিরহাট জেলায় ছিলেন।
ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘ওই স্কুল এলাকায় আমাদের দলের বিলবোর্ড আওয়ামী লীগের লোকজন নষ্ট করেছে।’ তিনি দাবি করেন, ‘আজকের ঘটনার সঙ্গে বিএনপি বা এর অঙ্গসংগঠনের কেউ জড়িত নয়। বিএনপির লোকজন হরতালের সমর্থনে পিকেটিং করলেও কেউ হামলা বা ভাঙচুর করেনি। তারা নিজেরাই নিজেদের ওপর হামলা চালিয়ে আমাদের দোষারোপ করছে।’
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×